somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নেপাল ভ্রমণ: পর্ব-৪

২১ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পোখারা শহরে আসার সঙ্গে সঙ্গে ড্রাইভার বলল, আমরা এসে গেছি। লাগেজ পত্র নিয়ে কড়া রোদের মধ্যে নামলাম। স্থানীয় সময় বেলা আড়াইটা। ভেবেছিলাম পোখারায় শীত থাকবে। কোথায় কী? রীতিমতো ঘামছি সবাই।
নামতেই একদল গাইড ও হোটেল রিসিপশনিস্ট ছুটে এল। ঠিক যেন গাবতলীর বাস কাউন্টারের কর্মচারী! কোথায় যাবো, হোটেল ঠিক করা আছে কি না, এসব প্রশ্নে আমাদের ব্যতিব্যস্ত করে তুলতে লাগল।
আমি বললাম হোটেল ঠিক হয় নি। একজন বলল আমাদের হোটেলে উঠুন, গরম পানি, ঠান্ডা পানি, বাথ টাব, ওয়াইফাই ইন্টারনেট কানেকশন সহ নানা প্রলোভন দেখাচ্ছিল। আরো বলল, তাদের হোটেল থেকে নাকি পাহাড় আর লেক খুবই সুন্দর ভাবে দেখা যায়। ভাড়াও সস্তা। মাত্র ৮০০ রুপি। আমি কিছুটা কনফিউজড। কাঠমান্ডুতে আমার শ্যালকের বন্ধুদের সঙ্গে ফোনে কথা বললাম। ওরাও হোটেলের ওই কর্মচারীর সঙ্গে নেপালি ভাষায় বাতচিত করল ক্ষানিকক্ষণ। এরপর ট্যাক্সি ডেকে উঠে পড়লাম। গন্তব্য হোটেল।
শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে হোটেল। আসলে আমরা যেখানে উঠলাম সেটা পুরোটাই হোটেল পাড়া। থ্রি স্টার মানের সব হোটেল। আছে গেস্ট হাউজ জাতীয় হোটেলও। কিছুটা কক্সবাজারের মতো। আমাদের হোটেলের সামনে ফুলের বাগান। একটা আলসেসিয়ান কুকুর গেটে। চমৎকার বাড়ি। তিন তলায় এক রুমে উঠলাম। জানালা খুলতেই দেখলাম ফেওয়া লেকঘেষা পাহাড়। অপূর্ব দৃশ্য।
এবার ফ্রেশ হয়ে, গোসল সেরে, খানিক গোছগাছ করে দুপুরের খাবারের জন্য বের হলাম। আগেই বলেছিলাম, নেপালে বেলা একটার মধ্যে লাঞ্চ শেষ হয়ে যায়। আমাদের হোটেল খাবার অর্ডার দিয়েছিলাম। ওরা বলল এক ঘন্টা দেরি হবে। ঠিক করলাম বাইরের কোনো রেস্তরায় খেয়ে নেব। একফাকে হোটেলের গাইড এসে লম্বা একটা ফর্দ ধরিয়ে দিল।দর্শনীয় স্থানগুলা দেখতে কত খরচ পড়বে তারও একটা ধারণা দিল। প্রায় সাড়ে দশ হাজার রুপির কথা বললেন উনি। আমি বললাম, এখনই আমি কিছু বলতে চাইছি না। আগে খেয়ে আসি। কিন্ত হোটেলের মালিকের ভাই আমাদের পেছন ছাড়ল না। আমাদের বলল, চলুন খাইয়ে নিয়ে আসি। পাশেই বড় রাস্তার ধারে এক পাঞ্জাবি রেস্তরায় ঢুকলাম। ভাত তো আর পাব না। তাই পাঞ্জাবি খানার অর্ডার দিলাম। বাটার নান আর চিলি নান। সঙ্গে আলু মাসালা আর পাঞ্জাবি ডাল। একটু ঝাল বেশি। কিন্ত অনেক মজা ছিল খাবারটা। খাওয়ার পর আমরা লেকের ধারে হাটতে বের হলাম। দেখি সেখানে বাঙালি গিজ গিজ করছে। অনেকে নৌকাতে চড়ছে। আমার মেয়েও নৌকাতে ওঠার বায়না করতে শুরু করল।
আমরা একটু হাটাহাটি করলাম লেকের ধারের রাস্তায়। অসংখ্য বিদেশি পর্যটক ছবি তুলছে। একজন আবার চক দিয়ে রাস্তায় কি সব লিখছিল। মনে হয় কোনো বিজ্ঞাপন দিচ্ছিল। একটু পর আমরা আরেকটা ঘাটের সামনে এসে দাঁড়ালাম। দুই নৌকা দিয়ে ঘর বানানো এক প্রকার নৌকায় উঠলাম আমরা। তখন সন্ধ্যা নামছে। গোধুলীর ছায়া পানির ওপর পড়ছে।দুপাশে পাহাড় মাঝে লেক। সূর্য ডুবে যাচ্ছে। সে এক অসাধারণ দৃশ্য। দৃশ্যগুলো ধরে রাখতে হাতের ক্যামেরায় সাটার পড়তে লাগল দ্রুত।
লেকের মাঝখানে আছে একটা মন্দির। অনেকে সেখানে গিয়ে মন্দিরে ঢুকছেন।আমরা মন্দিরে ঢুকলাম না। বাইরে দাড়িয়ে বেশ কটা ছবি তুললাম। সন্ধ্যা হয়ে আসছে বলে মাঝি আমাদের তাড়া দিতে লাগল। আবার ফিরে এলাম নৌকায়।
লেকের পাশেই বিশাল বাঁশঝাড়। হাজার হাজার বক কিচিরমিচির করছে। সে এক অসাধারণ দৃশ্য। লেক পাড়ে অসংখ্য রেস্তরা। বার। গল্প গুজব চলছে। চলছে মদ, বিয়ার খাওয়া। এসব নিয়ে কারো কোনো বিকার নেই। এমনকি কেউ মাতলামো করছে না।
আমরা ফুটপাত ধরে মার্কেটের ভেতরে এগুতে লাগলাম। একসময় সঙ্গে থাকা লোককে বিদায় করে নিজেরা স্বাধীনভাবে ঘুরতে লাগলাম। কিছু কেনাকাটা করলাম। এরপর এক গাইড ঠিক করলাম। তরুণ এক ট্যাক্সি ড্রাইভার। বললাম পোখারার সব দর্শনীয় স্থান ঘোরাতে হবে। বলল ৩৫০০ রুপি লাগবে। আমি ২৫০০ বললাম। রাজি হলো না। পরে ২৮০০ তে দফারফা হলো। নেপালে এসেই এনসেলের সিম নিয়েছিলাম। ড্রাইভারের নম্বর নিলাম। গাইড ওই ড্রাইভারের নাম রোশান। ও বলল, আগামীকাল ভোর রাত ৪টায় উঠতে হবে। সান রাইজিং দেখার জন্য। অন্নপূর্ণা পাহাড়ে সূর্যোদয় দেখব। ভাবতেই এক্সাইটেড ফিল করছিলাম। গাইডের সঙ্গে কথা বলার পর একটু ঘুরাঘুরি করে একটি বড় বটগাছের নিচে বসলাম। সান বাধানো ওই জায়গাটার নাম সেন্টার পয়েন্ট। দেখি আমাদের পাশে এসে বসেছে এক তরুণ দম্পতি। বাঙালি। ভদ্রলোক ঢাকায় সনি র্র্যাঙ্গসে চাকরি করেন। আলাপ করলাম। বলল ঢাকা থেকে এসেছেন। কিন্ত টু্র প্যাকেজে এসেছে। অন্তত ২০০ জনকে এক সঙ্গে এনেছে ওরা। মাত্র দুটি জায়গায় ঘুরিয়ে বলেছে ঘোরা শেষ। খুবই আক্ষেপ করছিল। বলল ভুল করেছি। আমাদের কেমন খরচাপাতি হচ্ছে সেটা জানল। শোনার পর বলল এভাবে নিজেরা আসাই ঠিক।
হঠাৎ বৃষ্টি নামল ঝুপ করে। ওরা বিদায় নিল। আমরাও উঠে পড়লাম। হাটতে হাটতে একটা রেস্তরায় ঢুকলাম। সেখানে নেপালি খাবারের অর্ডার দিলাম। প্লেন রাইস, মাছ, শাক, ডাল, নেপালি সবজি তরকারি..এসব দিয়ে খেলাম। মন্দ না। আমাদের পাশের টেবিলে ইতালিয়ান, মেক্সিকান খাবারের ছড়াছড়ি। কেউ ড্রিংকস করছে। ইউরোপিয়ান একটা কান্ট্রির মতো মনে হচ্ছিল শহরটাকে। সামনেই অনেক ড্যান্স বার। ধুম ধুম আওয়াজে গান বাজছে। জোনাকি বাতি জ্বলছে। দেখে মনে হচ্ছিল যেন বিয়ে বাড়ি।
খাওয়া শেষ করে আমরা ছাতা মাথায় দিয়ে হোটেলের পথ ধরলাম।
রাতে ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিলাম। আবার যে উঠতে হবে ভোর ৪টায়। মোবাইলে এলার্ম দিয়ে ঘুমুতে চলে গেলাম। কাল যে অনেক জায়গায় ঘুরতে হবে!
আগামীকাল পড়ুন বাকি পর্ব।
আগের পর্বগুলা পড়তে এখানে ক্লিক করুন:

Click This Link

Click This Link

Click This Link
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×