somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্যাম্পাসনামচা-২

০৯ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লিঙ্কঃ ক্যাম্পাসনামচা-১

ক্যাম্পাসে ঢুকেই বিরাট একটা সুযোগ পেয়ে গেলাম। ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাজেটের প্রোগ্রাম হবে-“যুগান্তর বৈশাখী বন্ধন উৎসব”। আমরা যারা ১/১, তাদেরকে ঘাড় ধরে নামিয়ে দেয়া হলো কাজে। আর আমাদের অবস্থা যা হলো তার প্রবাদ “যে বলে আয়লো, তার সাথেই যাইলো”। সারাদিন ক্লাসের ফাঁকে ‘এড’ ম্যানেজ করার গ্রুপের সাথে ছুটি; সন্ধ্যায় রিহার্সাল, রাতে রোড পেইন্ট করতে বসি। প্যাকড শিডিউল। তখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি আয়তনের রোড পেইন্ট করা হচ্ছে। প্রায় ৩০০০ স্কয়ার ফিট। প্রোগ্রাম হবে পুরো ৫ দিন। ব্যাগের ভেতর মার্কার, এন্টি-কাটার, স্কচটেপ, মন্দিরা, টুথব্রাশ, বাড়তি টি-শার্ট, পোস্টার পেপার-বলতে গেলে প্রায় পুরো সংসার নিয়ে ঘুরি। সারা ক্যাম্পাসজুড়ে একটা উৎসব উৎসব আমেজ। সিনিওর অনেকের সাথেই সেই সুবাদে খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে গেলো। উনাদের সাথে তুই-তুমি করে কথা বলতে শুরু করলাম। একদিন সন্ধ্যায় সেরকমই রিহার্সাল শেষ করে ‘ডি’ বিল্ডিং এর ১২২ নাম্বার রুমে ডাক পড়লো। গিয়ে দেখি, আমাদের জন্য একগাদা কর্কশিট অপেক্ষা করছে। মামুন ভাইয়ের নেতৃত্বে এগুলো কেটে বিভিন্ন ডিজাইন করতে হবে। ভাইয়ের তাড়ার ঠেলায় আর দেরি না করে বসে গেলাম। একনাগাড়ে কাজ করছি। ওদিকে মন পড়ে আছে রোড পেইন্টের ওখানে। সবাই কত মজা করছে, আর আমরা বসে আছি এই এক কোনায়। একটা সিগারেট ব্রেক নিলাম। সিঁড়ির ওখানটায় গিয়ে সিগারেট ধরাতেই হঠাৎ খেয়াল করলাম, মামুন ভাই রেলিং এ ঠেস দিয়ে ঝিমাচ্ছে। ইতোমধ্যেই ভাইয়ের সাথে বেশ সখ্যতা হয়ে গিয়েছে। আমি তার কাছে গিয়ে সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে বললাম, ‘কি ব্যাপার ভাই? আমরা কাজ করে মরতেছি, আর আপনে এইখানে বসে রাণীক্ষেত রোগির মত ঝিমাইতাছেন!’
হঠাৎ যেন বাজ পড়লো! ‘এই ছেলে, কোন সেমিস্টারে পড়ো? ফার্স্ট ইয়ারে এসেই পাখা গজাইছে! থাপড়াইয়া বৃন্দাবণ পাঠাইয়া দিব’...ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। এমন কিছুই তো বলিনি! এর আগে এর চেয়েও অনেক বড় বড়ো রসিকতা করেছি উনার সাথে, অনেক আদিরসাত্বক কৌতুকও উনি শুনিয়েছেন! এখন আবার ভাইয়ের কি হলো! এসব ভাবতে ভাবতে ভাইয়ের সামনে থেকে মানে মানে কেটে পড়ে, ১২২ নাম্বার রুমে গেলাম আবার। আমার সাথের বাকীরা ভাইয়ের সাথে আমার কথোপকথন শোনার সাথে সাথেই রুমে ঢুকে গিয়েছিলো। ওখানে গিয়ে আমি আবার বোকা বনে গেলাম। দেখি, শুভ অভিনয় করে একটু আগে মামুন ভাইয়ের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো সবাইকে বলছে, আর বাকীরা পেটে হাত দিয়ে গড়াগড়ি খেয়ে হাসছে। নিজেকে খুব বিব্রত লাগছে। এরকম একটা সস্তা মার্কা রসিকতায় মানুষ এতো হাসবে-আগে জানলে আমি আরো বিমূর্ত কিছু ছাড়তাম। যাই হোক, হাসতে হাসতেই শুভ বললো আমাকে, ‘চল, আখালিয়া বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে তোরে বিরানি খাওয়ামু। এইটা তোর পাওনা হইছে।‘ রাণীক্ষেত নামক রোগটার প্রতি কৃতজ্ঞতায় আমার মনটা ভরে গেলো। সাথে সাথেই রওনা হলাম আমরা। এককিলো হেঁটে যেতে যেতেই হাসির আসল রহস্যটা শুনলাম শুভ’র কাছে। ক্যাম্পাসে মামুন ভাইয়ের ছদ্মনাম-“মুরগি”।

এবারের ঘটনাটাও অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক। নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের নবীনবরণ অনুষ্ঠানের ব্যাকস্টেজ বানানো হবে। অতিথি কর্মী হিসেবে আমার ডাক পড়েছে। কাজ হবে সারারাত। পরের দিন অনুষ্ঠান। কাজ করছি আমি, শুভ, সজীব, পান্না, জাভেদ, মামুন সহ আরো কয়েকজন। যেহেতু সবচেয়ে কাছের বাজারটাও বেশ দূরে, তাই পর্যাপ্ত সিগারেট আনা হয়েছে। কাজ চলছে মিনি-অডিটরিয়ামে। বাঁশের কঞ্চি দিয়ে, আদিবাসী নারী-পুরুষের ক্ষেতে কাজ করার চিত্র বানানো হচ্ছে। সুক্ষ্ণ এবং দীর্ঘ কাজ। সমানে সিগারেট পুড়ছে। আমরা গল্প করছি, হাসাহাসি আড্ডার মাঝে সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। এমন সময়, রাত তিনটার সময় হঠাৎ খেয়াল করলাম সিগারেট শেষ। কাজ বাকী আরো অর্ধেক। মাথায় বাজ পড়লো। শুভতো চিল্লাপাল্লা লাগিয়ে দিলো-সিগারেট ছাড়া সে একটা বাঁশেও সে হাত দিবেনা। আর হাত যদি দেয়ই, তাহলে সেই বাঁশ কারো না কারো পশ্চাদ্দেশে খুঁজে পাওয়া যাবে। তার এহেন হুমকী শুনে, বন্ধু ‘আন্তর্জাতিক* (পাদটিকা দেখুন) পান্না’ পকেট থেকে ফিল্মী স্টাইলে একটা দোমড়ানো মোচড়ানো সিগারেট বের করে কাষ্ঠ হাসি দিয়ে বললো, ‘আল্লাহর কসম, এই একটাই আছে আমার কাছে।‘ সিগারেটের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে একে কয়েকবার বলাৎকার করা হয়েছে। তাতে কি? একটা সিগারেট, মানুষ আমরা নয় জন। গোল হয়ে বসলাম। তারপর পালাক্রমে একটান করে করে শেষ করলাম। কাজে কিছুটা গতি এলো। তেষ্টা মেটেনি, কি করবো? আধাঘন্টা পরে আবারও কাজে অরুচি। সবাই বসে বসে কাজ বন্ধ করে নিজেদের অবিবেচনাকে দোষ দিচ্ছি। হঠাৎ কেউ একজন খেয়াল করলো, পান্না পা টিপে টিপে কোথায় যেন যাচ্ছে। জাভেদ বললো, এখন কিছু বলিস না। দুই মিনিট পরে ওর পিছু নেব। যেই বলা সেই কাজ। ওর পিছু পিছু গেলাম। গিয়ে দেখি, ‘এ’-বিল্ডিং এর সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে পান্না মনের সুখে সিগারেট ধরাচ্ছে। ওকে আবার চ্যাং দোলা করে আনা হলো। তারপর আবার নয়জনের বৃত্ত ...। কিন্তু নাহ! কাজ আর শেষ হয়না। ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে। অসহায় ভাবে পান্নাকে খুঁজলাম। কি জানি, যদি আবার ওর কাছে কিছু পাওয়া যায়! খুঁজতে গিয়েই আবিষ্কার করলাম পান্না আমাদের আশে পাশে নেই। দলবেঁধে আবার বেরুলাম সবাই ওকে ধরে আনতে। নাহ। নেই কোত্থাও নেই। বিফল মনোরথ হয়ে ওকে গালাগালি করতে করতে অডিটরিয়ামে ঢুকেই দেখলাম, এক্কেবারে শেষ মাথায় অন্ধকারে একটুকরো লাল আগুন ওঠা নামা করছে। তাই দেখে আমরা যে দৌড়টা দিলাম, নির্ঘাৎ অলিম্পিকে সোনা জিততাম। সারি করে রাখা বেঞ্চগুলোকে টপকে টপকে সবাই পৌঁছে গেলাম আকাংক্ষিত লাল আগুনের কাছে। হ্যাঁ পান্নাই। পেছনে বেঞ্চের নিচে বসে চুপচাপ কার্যসিদ্ধি করছিলো। আবারও চ্যাং দোলা করে আনা হলো ওকে। ধমক দিয়ে উঠলাম, ‘ওই, সিগারেট দে’।
ঝুলে পড়লো পান্নার ঘাড়। স্লো মোশনে হাত বাড়ালো, ‘এই নে’।
সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়লাম।
দেখি, ওর বাড়ানো হাতে একটা ছোট করে কাটা কর্কশীট। তার মাথায় জ্বলছে লাল আগুন।
প্রতিশোধ।

পাদটিকাঃ

*আন্তর্জাতিক পান্নাঃ
বন্ধু পান্না, কোন এক চাঁদনীরাতে, সিলেট রাগিব রাবেয়া চা বাগানের সিঁড়িতে বসে তার প্রেমে তৃতীয় (দুষ্টুলোকে বলে চতুর্থ) ছ্যাঁকা খাবার পর, কিঞ্চিৎ তরল অবস্থায় একটা কবিতা লিখেছিলোঃ
“নিকষ কালো রাত
আকাশে আন্তর্জাতিক চাঁদ
তার পাশে গোটা গোটা-
লোকে বলে ‘তারা’;
আমি দিশেহারা।“


সেই থেকে সে আন্তর্জাতিক পান্না।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১২:০৭
৩৪টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×