somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্যাম্পাসনামচা

০৪ ঠা জুন, ২০১১ রাত ২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই ব্যাপারে ভোন্দা রনি'র কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এন.ডি.সি-তে ওর সাথে আমার দেখা হতো প্রায় প্রতি সপ্তাহেই। টেরেন্স পিনেরো'র রুমে। হয়তো আমি তখন বিতার্কিক আপুদের ওয়াশরুম দেখিয়ে দেবার বদলে বকুল রোজারিও'র রুম দেখিয়ে সটকে পড়েছি, একই সময় রনি ফিজিক্স ল্যাবের এপার্টাসের যান্ত্রিক ত্রুটি দূর করার বদলে জোড়ে আছাড় মেরেছে। সুতরাং অক্সফোর্ড সু এর ওপরে দাঁড়ানো মূর্তিমান বিভীষিকা, পাইপ চিবোতে চিবোতে আমাদের গোষ্ঠি উদ্ধার করার যথেষ্ট কারণ খুঁজে পেয়েছেন। এভাবেই দুজনের বন্ধুত্ব।
যা বলছিলাম। আমি ভোন্দার কাছে কৃতজ্ঞ। আমাদের সম্বোধনের পাল্লাটা ছিলো অন্যরকম। 'বাচ্চা' শব্দটার আগে ইচ্ছেমত পশু-পাখি-সরীসৃপের নাম জুড়ে দিয়ে অবলীলায় নিজেদের ডাকতাম। শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে সেদিন ভোন্দা বসে ছিলো একদল আপুর সাথে। ঘাস না বাদাম চিবোচ্ছিলো দূর থেকে বোঝা যায়নি। আমারো ওখানে বসতে ইচ্ছে করছিলো, নেহাৎ ব্যাপারটা আত্মসম্মানবোধের সাথে সম্পৃক্ত-তাই আশে পাশেই ঘুরঘুর করছিলাম।
ভোন্দা আমাকে দেখে ডাক দিলো, এই শুয়রের বাচ্চা, এদিকে আয়।
সঙ্গে সঙ্গে হাসির হিড়িক। আপুদের।
কি সুন্দর হাসি!
কিন্তু রনি ব্যাটা এটা কি করলো? এত্তোজন আপুর সামনে প্রেস্টিজ ভর্তা করে দিলো? আজব! ঘরের কথা পরের সামনে বলার দরকার কি? রাগে মনে মনে ব্যাটারে গালি দিতে দিতে এগিয়ে গেলাম। চান্স পাওয়া গেছে আপুদের কাছে যাবার।
গিয়ে বুঝলাম ভোন্দা ততক্ষণে হিরো। কিছু আপু ওড়নায় মুখ ঢেকে তখনো হাসছে।
আমি খুব শান্ত ভাবে ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তার চেয়েও নিরীহ মুখ করে বললাম, 'জি আব্বু?'
আবারও হাসির হুল্লোড়। সেই থেকে ওর সাথে আমার পিতা-পুত্রের সম্পর্ক।
অদ্যাবধি।
জগতের সকল পশু-পাখি-সরীসৃপ আমাদের পিতৃত্বের দায় থেকে মুক্তি পেলো।

আসলে আমাদের আপুরা খুব ভালো ছিলো। যেমন মাসের শেষে যখন সিগারেট কেনার টাকা থাকতোনা, করুণ মুখ করে চাইলেই টাকা ধার দিতো। শোধ দিতে হতো না।
মাঝে মাঝে শপিং এ যেতো যখন, আমাদের সাথে ঝুলিয়ে নিয়ে যেতো আপুরা। কাজের বিনিময়ে দেনা শোধ আর কি। হালাল রোজগার। শপিং এ ঘোরাঘুরিটা যদিও পেইনফুল, তবে বেশির ভাগ সময়েই শপিং এর পরে নিয়ে যেতো কোন না কোন রেস্টুরেন্টে। শপিং নামক ব্যাপারটার প্রতি কৃতজ্ঞতায় মন ভরে যেতো। মাঝে মাঝে কোন কোন ড্রেসের দোকানে ঢোকার সময় উনারা আমাদের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখতো। ছোট ছোট প্যাকেট নিয়ে বেরিয়ে আসতো; 'কি কিনলা' জিগ্যেস করলে গাট্টা মারতো। আমরা বাইরে দাঁড়িয়ে ধুম্রশলাকায় জীবন খুঁজে পেতাম! উনারা যা খুশি কিনুক গে। আমাদের হালাল পয়সা।

একবার ক্যাম্পাসের প্রমিত বাংলা চালু করলাম। খুব চললো ক'দিন। সিগারেটকে বলতাম ধুম্রশলাকা। আচ্ছা এভাবে না বলে বরং কিছু তালিকা ঝুলিয়ে দেই।

গোল্ড লিফ সিগারেটঃ স্বর্ণ পত্র ধুম্রশলাকা
বাংলা ফাইভঃ ত্রি-পঞ্চ বঙ্গীয় ধুম্রশলাকা
ক্যাম্পাস বাসঃ অঙ্গনগাড়ি
কম্পিউটারঃ গণক যন্ত্র
মাদার বোর্ডঃ মা ফলক
হার্ড ডিস্কঃ শক্ত চাকতি
মোবাইল ফোনঃ চলমান দূরালাপনী
স্ট্যাটাসঃ সম্ভ্রম/মর্যাদা
রিক্সাঃ ত্রিচক্রযান
চাঃ চৈনিক পানীয়

ডিপার্ট্মেন্টের নাম, যেমনঃ
কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংঃ গণনাকারী যন্ত্র বিজ্ঞান ও প্রকৌশল।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিংঃ শিল্পোৎপাদন প্রকৌশল
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংঃ নাগরিক প্রকৌশল

ইত্যাদি।

একদিন এক অতি উৎসাহী ছোটভাইয়ের ছাত্রাবাসে গিয়েছি। প্রমিত বাংলার কারণে আমরা নিয়মিত বাংলাদেশ দূরদর্শন দেখি। সেখানে ছায়াছন্দ হচ্ছে। আমরা বসে বসে আরো কিছু বিলিতি শব্দের বঙ্গানুবাদ করছি। হঠাৎ সেই ছোট ভাই দূরদর্শন যন্ত্রের দিকে উদাস ভাবে তাকিয়ে বললো, "স্বর্গ ও নেশাগাছ পাশাপাশি দৌড়োচ্ছে।" ভাবলাম কোন কবিতার লাইন হবে হয়তো। বাহ! শতভাগ বিশুদ্ধ বাংলা। বাহবা দিতে দিতে যন্ত্রের দিকে তাকালাম, দেখি চিত্রনায়ক ফেরদৌস এবং নায়িকা পপি বনে বাদাড়ে দৌড়ে দৌড়ে নাচ গান করছে। বুঝলাম স্বর্গ ও নেশাগাছ পাশাপাশি দৌড়ানোর রহস্য। হায় বাংলা!

থাক, আর লিখতে ইচ্ছে করছেনা।
বাদ দেই।
আরেকদিন হবে।
কিংবা, আর হবেনা।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:৩৩
৪৬টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×