somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঝিনাইদহের বাড়ি

১৭ ই জুলাই, ২০০৮ সকাল ৮:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার জন্ম বাংলাদেশের ঝিনাইদহে।

শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে যেতে হত।রানাঘাটে ট্রেন থামলে খুব মজা হত।ছোটকাকা আমাদের জন্য প্রচুর খাবার কিনে আনতেন।শালপাতার ঠোঙায় করে সিঙাড়া,নিম্‌কি ও রানাঘাটের পান্তুয়া খেতাম।তার যে একটা অপূর্ব গন্ধ ছিল আজকাল আর কোনো খাবারেই পাওয়া যায় না।তারপর ট্রেন ছেড়ে দিত।চুয়াডাঙ্গা আসলে নেমে যেতাম।ওখান থেকে পালেদের বাস চলত।সেই বাসে করে আমরা ঝিনাইদহে পৌছাতাম।

বাড়িটার কথা এখনও ছবির মত মনে আছে।টাউনের উপর বিরাট পাকা বাড়ি।উচুঁ উচুঁ থাম দেওয়া,দরজা বিরাট বড় কাঠের সিংহদুয়ার তারপর দেউড়ি।দেউড়ি পেরিয়ে বিশাল উঠান ,উঠানের দুপাশে তিন খানা করে ঘর,তারপাশে ঘোরানো সিঁড়ি।সিঁড়ি পেরিয়ে রান্নাঘর,খাবার ঘর,ভাড়ার ঘর উঠানের একপাশে বাঁধানো ইঁদারা।তারপাশে স্নান ঘর উঠানের পেছনে গোয়ালঘর।যেখানে তিনটে গরু ও বাছুর বাধা থাকত,লক্ষী,সরস্বতী,সুরভী।সামনের দিকে এগোলে ফুলের বাগান,অন্যদিকে কাকাবাবুর ডিস্পেন্সারী।

কাকবাবু ছিলেন হোমিওপ্যাথ ডাক্তার।প্রচুর পসার ছিল।তিনি ওই বাড়িতেই থাকতেন।ঠাকুরদাদা মাএ ৩৪ বছর বয়সে মারা যায়।তিনি সিমেন্ট বালি,সুড়কির ব্যবসা করতেন।বিশাল গুদাম ঘর ছিল।বাইরের দিকে প্রছুর বালি জড়ো করা থাকত।আমরা তার ওপর উঠে চোর চোর খেলতাম।মা,কাকিমা চিঁড়ে কুটতেন,যাঁতায় করে ডাল ভাঙতেন,সর দিয়ে ঘি তৈরী করতেন।বড় বড় মেটে হাঁড়ি কাঁধে ঘোল নিয়ে বিক্রী করতে আসত।ঘোলের মধ্যে বড় বড় বলের মত মাখন ভাসত দেখতাম।সে মাখনের খুবই স্বাদ ছিল।হাটের দিকে চাষীরা তরিতরকারী,আম নিয়ে বিক্রী করতে যেত।কাকবাবু চার টাকা করে পন হিসাবে দু ঝুড়ি করে আম কিনতেন।বাড়ির সামনে একটা সিনেমা হল ছিল।তারপর ছিল হাঁসপাতাল।তারও কিছু দূরে ছিল মদনমোহনের মন্দির।সেখানে ঘুরে ঘুরে বেড়াতাম।

কখনো কখনো বাজারে যেতাম।সেখানে কাছিম দেখে ভাবতাম এ আবার কি একবার মুখ বের করছে আবার ঢোকাচ্ছে তারপাশেই দেখতাম বাস যাচ্ছে,বাসের কাঁচে চুন দিয়ে লেখা “মাগুরা”,তা দেখে কল্পনা করতাম মাগুরা কতদূর।দেখতাম ময়রারা বড় বড় সাইজের রসগোল্লা তৈরী করছে,দু পয়সা করে একএকটা রসগোল্লা পাওয়া যেত।

বাজারের কাছে বাবাদের কাকা থাকতেন।তিনি বিলাতে গিয়ে মেম বিয়ে করেছিলেন।পিসিমা কোনোকোনোদিন আমাদের ওখানে নিয়ে যেতেন।আমার তিন পিসিমা ছিল।মেজোপিসিমা বিধবা ছিলেন।তার মেয়ে আমার বয়সী ছিল।আমরা দুজনে তার বাড়িতে যেতাম,পিসিমা যেতেন সেলাই শিখতে।মেম ঠাকুমাকে দেখতে খুব সুন্দর।তিনি বাঙালীদের মত শাড়ি,সিঁদুর পরতেন।আমরা বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখতাম কি সুন্দর দেখতে।উনি দিদিকে ফ্যানিস আর আমাকে ডলিস বলে ডাকতেন।

ছোটোবেলায় দেখেছি পিসিমারা আর অন্য পাড়ার মেয়েরা একসাথে ছোরা খেলা শিখত।বাঘাযতীন ঝিনাইদহে থাকতেন শুনেছি তিনি ঠাকুরদার বন্ধু ছিলেন।আমাদের বারির উনানে অস্ত্রসস্ত্র লুকিয়ে রাখতেন।আমার ঠাকুরদা অল্প বয়সে মারা গিয়েছিলেন।আমরা তাঁর ঠাকুরদা ঠাকুমাকে দেখেছি।কনেজপুরে বাবাদের আর একটা বাড়ি ছিল।সে বাড়িতে আমরা গিয়েছি। বাবার ঠাকুরদা আগে ওখানেই থাকতেন পরে ঝিনাইদহে বাড়ি করেছিলেন।

ঝিনাইদহের সেই বাড়ির স্মৃতি আজও আমার মনে গেঁথে আছে।আর কি কখনও সেখানে যেতে পারব?
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×