somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে আবিষ্কারগুলো কেড়ে নিয়েছিল আবিষ্কারকদের প্রাণ

২৪ শে নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রত্যেক আবিষ্কারকই তার আবিষ্কার নিয়ে গর্ববোধ করেন। আবিষ্কারক মাত্রই তার আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে এই পৃথিবীতে অমরত্ব লাভ করেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে পৃথিবীতে এমন বেশ কয়েকজন আবিষ্কারক রয়েছেন যারা প্রাণ হারিয়েছেন নিজের আবিষ্কারের হাতে। হতভাগ্য এমন কিছু উদ্ভাবক সম্পর্কে ইন্টারনেট অবলম্বনে জানাচ্ছি আমি বি,আর,তৌহিদ।

হেনরি উইনস্টেনলি


১৬৪৪ সালের ৩১ মার্চ এসেক্সে জন্ম নেয়া হেনরি উইনস্টেনলি ছিলেন বিখ্যাত ইংরেজ ইঞ্জিনিয়ার। যিনি প্রথম এডিস্টোন বাতিঘর নির্মাণ করেন। নিজের তৈরি এই বাতিঘর নিয়ে ভদ্রলোক খুব আত্মবিশ্বাসী ছিলেন এবং প্রচণ্ড ঝড়েও এই বাতিঘর ধ্বংস হবে না বলে অহঙ্কার করতেন। ১৭০৩ সালের ২৭ নভেম্বর, দিনটি ছিল মেঘলা। বড়সড় একটি ঝড় সাগর থেকে ধেয়ে আসছে দেখে হেনরি সবাইকে বললেন, তিনি তার নির্মিত বাতিঘরে সে রাত থাকবেন এবং প্রমাণ করে দেবেন, এই ঝড় তার বাতিঘরের কোনো ক্ষতি করতে সক্ষম নয়। সে রাতে হেনরি তার ৫ সহকারীকে নিয়ে বাতিঘরে থাকার সময় প্রচণ্ড ঝড়ে বাতিঘরটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় এবং সবাই মৃত্যুবরণ করে।



আলেকজান্ডার বগডেনভ


১৮৭৩ সালের ২২ আগস্ট পোল্যান্ডে জন্ম নেন বিখ্যাত রাশিয়ান চিকিত্সক, দার্শনিক ও কল্পবিজ্ঞান লেখক আলেকজান্ডার বগডেনভ। ১৯২৪ সালের দিকে তিনি বিশ্বাস করতে লাগলেন অল্পবয়স্ক কারও দেহ থেকে রক্ত গ্রহণের মাধ্যমে রক্ত গ্রহীতা দীর্ঘায়ু লাভ করতে পারেন। তিনি এ বিষয়ে পরীক্ষা করতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তার এই পরীক্ষায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অনেক বিখ্যাত লোকও অংশ নেন। এমনকি লেনিনের বোনও। এই করতে গিয়ে ঘটনাচক্রে তিনি একসময় যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী এক ছাত্রের রক্ত তার শরীরে প্রবেশ করান। এরপর জীবাণুতে আক্রান্ত হয়ে তিনি খুব দ্রুত মৃত্যুবরণ করেন। যদিও তার বেশ কয়েকজন সহকারী মন্তব্য করেছিলেন, ওই পরীক্ষায় তিনি অনেকটা সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।

ক্যারেল সোজেক


১৯৪৭ সালে চেকোশ্লোভিয়াতে জন্ম নেয়া সোজেক ছিলেন একজন স্টান্টম্যান। তিনি উপর থেকে গড়িয়ে পড়ার জন্য এক ধরনের ক্যাপসুল তৈরি করেন। এই ক্যাপসুলে করে নায়াগ্রা জলপ্রপাত থেকে গড়িয়ে পড়ে সবাইকে চমকে দেন তিনি। কারণ হালকা ছেঁড়া-কাটা ছাড়া তেমন কিছুই হয়নি তার।


এর কিছুদিন পর ১৯ জানুয়ারি ১৯৮৫-তে তিনি টেক্সাসের হিউস্টোন অ্যাস্ট্রোডোমে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। ১৮০ ফুট উপর থেকে নিচে রাখা জলপাত্রে গড়িয়ে পড়ার সময় তার তৈরি ক্যাপসুলে সমস্যা দেখা দেয়। ক্যাপসুলের স্পিল্গন্টারের আঘাতে ভয়াবহভাবে ক্ষতবিক্ষত হন সোজেক এবং মারা যান এর পরদিন।



ফ্রানত্জ রিচাল্ট
ফ্রান্সে বসবাসকারী ফ্রানত্জ একজন অস্ট্রীয় দর্জি ছিলেন। ভদ্রলোক একটি ওভারকোটের নকশা করেছিলেন যা একই সঙ্গে প্যারাসুটের কাজ করবে। প্রাথমিক অবস্থায় ডামি ব্যবহার করে বহুতল ভবনের উপর থেকে পরীক্ষা চালিয়ে তিনি সফল হন। এরপর তার এই অদ্ভুত পোশাক আরও পরিমার্জিত করে তিনি নিজে আইফেল টাওয়ার থেকে লাফিয়ে তার তৈরি ওভারকোট কাম প্যারাসুটের পরীক্ষা করতে চেষ্টা চালান। বন্ধুদের বারণ ও পুলিশি বাধা পেরিয়ে অবশেষে ১৯১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আইফেল টাওয়ার থেকে ওভারকোটটি পরে নিচে ঝাঁপিয়ে পড়েন।


কিন্তু ওভারকোটটি প্যারাসুটের মতো কাজ করেনি এবং নিচে বরফে পড়ে মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরদিনই মারা যান ভদ্রলোক।

অটো লিলিনথাল


লিলিনথালকে এভিয়েশনের অগ্রদূত বলা হয়। গ্লাইডারের (ইঞ্জিনবিহীন বিমান) আধুনিকায়ন ও উড্ডয়নে তিনি এত পারদর্শী ছিলেন যে লোকে তাকে গ্লাইডার কিং বলেই বেশি ডাকত।


৯ আগস্ট ১৮৯৬ সালে নিজের তৈরি একটি গ্লাইডারে করে ওড়ার সময় ভারসাম্য হারিয়ে ১৭ মিটার উপর থেকে নিচে পড়ে যান তিনি। মেরুদণ্ড ভেঙে মারা যান ওইদিনই।



উইলিয়াম বুলক


১৮১৩ সালে আমেরিকায় জন্ম নেয়া বুলক রোটারি প্রিন্টিং প্রেস তৈরি করেন ১৮৬৩ সালে। যন্ত্রটি মুদ্রণশিল্পে বিপ্লব এনে দেয় এর কার্যকারিতা এবং দ্রুতগতিতে মুদ্রণ সুবিধার জন্য। ১৮৬৭ সালে ভদ্রলোক তার নিজের আবিষ্কৃত একটি মেশিন মেরামত করার চেষ্টা করেন। এসময় পা দিয়ে একটি পুলিকে লাথি দিয়ে বসানোর চেষ্টা করার সময় তার পা মারাত্মকভাবে কেটে যায়। কয়েকদিনের ভেতর স্থানটিতে পচন ধরলে অপারেশন করানোর সময় তার মৃত্যু ঘটে।

জে. জি. প্যারি টমাস


ওয়েলসের বাসিন্দা টমাস একজন ইঞ্জিনিয়ার ও মোটর-রেসিং ড্রাইভার ছিলেন। ১৯২৬ সালে তিনি ১৭০ মাইল ঘণ্টায় গাড়ি চালিয়ে রেকর্ড গড়েন। কিন্তু বছর খানেক পরই তার প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যালকম ক্যাম্পবেল তার রেকর্ড ভেঙে দেন। টমাস এবার তার গাড়িকে নতুন করে সাজান। তিনি চেইন ও গিয়ার সিস্টেমে ব্যাপক পরিবর্তন এনে তার রেসিং কারকে আরও দ্রুতগতির করে তোলেন। ১৯২৭ সালের ৩ মার্চ রেকর্ড ভেঙে দেয়ার জন্য রেসে নামেন তিনি। কিন্তু তার নিজের ডিজাইনে করা চেইন ভেঙে গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়। মাথায় শক্ত আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

টমাস মিজলি
বিখ্যাত আমেরিকান কেমিস্ট মিজলি লেডেড পেট্রল এবং সিএফসি আবিষ্কার করেন। দীর্ঘসময় রাসায়নিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং লেড পয়জনে আক্রান্ত হয়ে এক সময় তার মধ্যে পোলিও’র লক্ষণ দেখা দেয়। কিছুদিনের মধ্যেই তার শরীর অবশ হয়ে পড়ে।


এই অবস্থাতেও তার আবিষ্কারের নেশা কাটেনি। নিজে অন্যের সাহায্য ছাড়াই চলাফেরা করার জন্য নিজ বিছানায় এক ধরনের কপিকল তৈরি করেন। কিন্তু কপিকলটির রশি তার গলায় ফাঁস লাগলে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান ভদ্রলোক।

মেরি কুরি


বিখ্যাত কেমিস্ট মেরি কুরি দুবার নোবেল জেতেন তার আবিষ্কারের জন্য। অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, তার মৃত্যুর পেছনেও জড়িয়ে আছে তার আবিষ্কার। কুরি রেডিয়াম ও পোলনিয়াম আবিষ্কার করেন। তেজস্ক্রিয়তা তত্ত্ব ও তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ পৃথকীকরণ কৌশল তার গবেষণার ফসল। দিনরাত ল্যাবরেটরিতে তেজস্ক্রিয় দ্রব্য নিয়ে অসতর্ক অবস্থায় গবেষণা করতেন বলে তেজস্ক্রিয়তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগতে শুরু করেন তিনি। রক্তস্বল্পতাসহ নানা সমস্যায় ভুগে অবশেষে ১৯৩৪ সালের ৪ জুলাই মারা যান কুরি।

কুপার পিপস কোল


১৮১৯ সালে ব্রিটেনে জন্ম নেয়া কোল ছিলেন রাজকীয় নৌবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন। তখনকার সময় যুদ্ধজাহাজগুলোতে কামান রাখার মঞ্চগুলো ঘূর্ণায়মান ছিল না। যার ফলে যুদ্ধের সময় কামান ব্যবহার সুবিধাজনক ছিল না। ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সময় কোল প্রথম ঘূর্ণায়মান টারিট আবিষ্কার করেন এবং পরে নিজ নামে পেটেম্লট নেন।
যুদ্ধের পর কোল তার নিজ জাহাজে এটি স্থাপন করেন এবং অযথা আরও বেশকিছু ভারি সরঞ্জাম দিয়ে জাহাজ সাজান। কোল যে নকশা এঁকেছিলেন, তৈরির সময় তার লোকেরা তা ঠিকমত অনুসরণ না করায় জাহাজ যথেষ্ট ভারি হয়ে যায়। ১৮৭০ সালে পরীক্ষামূলকভাবে সমুদ্র পাড়ি দেয়ার সময় ঝড়ো বাতাসের কবলে পড়ে ভারি এই জাহাজ উল্টে ক্যাপ্টেন তার ৫০০ নাবিকসহ মারা যান।


সোর্সঃ আমারদেশ

ছবিঃ গুগল



জানিনা আপনাদের কেমন লেগেছে এসব বিষয়ে জানতে।
যদি ভাল লেগে থাকে তবে কমেন্ট করবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।


সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:৫৭
৩৩টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×