পার্কের বেঞ্চিতে পায়ের উপর পা তুইলা বসে আছে আবুল। আনমনে হাত চইলা গেল পপ কর্নের প্যাকেটে। হায় হায়। পপ কর্ন ও শেষ। আরতো সময় কাটে না। এইভাবে কতক্ষন বইসা থাকা যায়। তার উপর পায়ের উপর পা তুইলা বসতে বসতে ব্যাথা হইয়া গেল। চাইলেই পাও নামাইয়া বসা যাইতেছে না। প্রচন্ড চাপ পাইছে। একটু গিয়া যে চাপ কমাইয়া আসব তাও পারতাছে না বেচারা। হুট কইরা রক্তিম (!!!) আইসা যদি দেখে সে নাই, তাইলে তুলকালাম কান্ড বাধাইয়া বসবে। তারে কিছুতেই কিছু বুঝানো যাবে না। আবার রক্তিম আসার পর তারে এইটা বলাও যাবে না কিছুতেই। মহা সমস্যায় পরা গেল। একদিকে নিন্মচাপ আর অন্যদিকে রক্তিমের রক্তচক্ষু। ভাবতে ভাবতে মুখ চিমসায় যায় আবুলের। যাই হোক আপাতত একটা রিস্ক নিয়া চাপটা কমায় আসা দরকার মনে হইতাছে। ভাবতে ভাবতে যেইনা উঠতে গেল আবুল ওমনি রক্তিম আইসা হাজির।
“ওলে আমার কুটুকুটু আবুল, জান তুমি কেমন আছ। আহারে মুখটা এমন চিমায় আছে কেন? সকালে কিছু খাও নাই? তোমারে না বলছি সকালে সব কিছুর সাথে একটা কইরা ডিম খাবা। আইচ্ছা শোন এখন থেইকা ডিম বাদ। সকালে নাস্তার পর গরুর খাঁটি দুধ খাবা। তুমি এম্নিতেই সব কিছুতে ডিম পাও। আর এত ডিম খাইয়া কাম নাই। ”
কি বলবে কিছু ভেবে পায় না আবুল। কাষ্ট হাসি হাসে।
“তোমার চাকরীর খবর কি?”
“এখনো কোনো খবর নাই। তবে হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।”
“১ বৎসর ধইরাইতো শুনতাছি একি কথা। হবেটা কবে? যত্তসব। আমি কিন্তু আগেই কইয়া দিলাম। ভালো পাত্র পাইলেই বিয়া কইরা ফালামু।”
মনে মনে আবুল ভাবে, তাইলেতো আল্লাহ বাচায়। মাঝে মাঝে আবুলের মনে হয় এই মাইয়া তারে ভালা পায় কিনা? আবার মাঝে মাঝে ভাবে সে এই মাইয়ারে ভালা পায় কিনা? প্রথথম যখন দেখছিল মাইয়াটারে, আহারে কি মায়াবী চেহারা। কি শান্ত, আহাহাহা এক্কেরে যেন বনলতা সেন। ওই মায়াবী চেহারার আড়ালে যে সাক্ষাৎ ডাইনী বইসা আছিল সেইটা বুঝতে পারে নাই। এই গুলা ভাবতে ভাবতেই আবার চিৎকার,
“তোমারে না হাজার বার বলছি এই ক্ষ্যাত টি শার্ট পরবা না।তাও পরছ? পরছ পরছ, আবার কি মনে কইরা আমার সাথে দেখা করতে আসছ এইটা পইরা? গা থেইকা গন্ধ আসতেছে। পারফিউম মাখো নাই কেন? ঐটা কিন্না দিছি কি সাজাইয়া রাখার জন্য?”
ভয়ে চোখ মুখ কুচকে আসে আবুলের। কোনো ভাবে পালাতে পারলেই বাঁচে এখন।কিন্ত মনে হচ্ছে না আজকে এত সহজে ছাড়া পাবে। এইদিকে নিন্মচাপ চুড়ান্ত আকার ধারন করেছে। যেকোনো মুহুর্তে সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে। ঠিক এই মুহুর্তে কিভাবে এই কথাটা তোলা যায় ভাবছে আবুল। ভয়ে শিঁরদাড়া কাঁপছে তার। এমন সময় আবার একটা মাঝারী মানের চিৎকার।
“এই তোমারে যে সেইদিন আমার খালুর অফিসে যাইতে বলছিলাম যাও নাই কেন? পাইছ কি তুমি? নিজে একটা চাকরী জোগাড় করতে পার না, আর আমি খালুর কাছে মুখ বেইচা আসলাম তোমার জন্য, গায়ে লাগে না। বল, কি কারনে যাও নাই।এক্ষুনি বল।”
“ইয়ে, মানে। আসলে সকাল আটটায় যাওয়ার কথা ছিলতো। তুমিতো জান,এখন ঘড়ির কাটা এক ঘন্টা আগায় দিছে। আমার ঘড়ি ঠিক করা হয় নাই। তাই ঘুম থেকে উঠতে পারি নাই।”
“কি বললা? কি বললা তুমি? তোমার এত বড় সাহস তুমি ঘুমের জন্য খালুর অফিসে যাইতে পার নাই? দাঁড়াও আজকে তোমার সব গুলা চুল আমি টাইনা ছিড়ে ফেলব।”
“এই এই এই এই রক্তিম প্লিজ, মাফ করে দাও, আরে কি কর, লাগেতো।ওফ মাগো আমার চুল। কে কোথায় আছ বাঁচাও বাঁচাও।”
উপরের চাপ সামলাতে সামলাতে নিম্নচাপ আর ধরে রাখতে পারে না আবুল। হাত পা ছেড়ে দিল।ঘটে গেল ঘটনা। সে এক স্বর্গ সুখ। আহ্ সে কি শান্তি।
লাফ দিয়ে ধড়মড় করে ঘুম থেকে উঠে বসল আবুল। দর দর করে ঘামছে সে। যা হয়েছে সেইটা যে দুঃস্বপ্ন এইটা বুঝতে কিছু সময় লাগলো আবুলের। ঘাম মুছতে মুছতে মাথায় হাত দিয়া দেখে নাহ্ চুল ঠিকই আছে। একবার বিছানাটাও চেক কইরা নিল সে। নাহ্ কোনো দুর্ঘটনা ঘটে নাই। ছেলে বেলায় কত্ত হয়েছে এমন। একবার পাশের বাড়ির বুড়ার উপর ক্ষেইপা গিয়ে তার ফুলের বাগানে হিসু করার স্বপ্ন দেখে বিছানা ভাসিয়েছে। দুঃস্বপ্নের ঘোর কাটতে না কাটতেই মনে হল, শালা ভালোই হইছে কোনো গার্ল ফ্রেন্ড নাই।
বিছানা ছেড়ে নেমে বাথরুমে গিইয়া ফ্রেস হতে হতে গুন গুন কইর গান গাইছিল আবুল। আজকাল বাথ্রুমে গান গাওয়ার সময় খুব সতর্ক থাকে সে। কয়েকদিন আগে বাড়িওয়ালা নালিশ কইরা গেছে। হঠাৎ কইরা তার গানের আর্ত চিৎকারে নাকি বাড়িওয়ালার বাসার বয়স্ক বুয়া দুইবার অজ্ঞান হইয়া গেছিল। গোসল টোসল কইরা আরাম কইরা বসতেই না বসতেই কলিং বেল বাইজা উঠল। ডিং ডং, ডিং ডং
“কুরিয়ার।কুরিয়ার”
এক দৌড়ে আবুল দরজা খুলল। দেখল তার নামেই কুরিয়ার। সই কইরা তাড়াতাড়ি খামটা হাতে নিয়া দেখে শেষ যেই কোম্পানীতে সিভি পাঠাইছিল ওইখান থেইকাই চিঠি আসছে। মনের মইধ্যে কেমন যেন ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ অনুভূতি হইতে লাগলো। তবে খামের উপরে হাতের লেখাটা কেমন জানি চেনা চেনা লাগে। ওই কোম্পানীতে কি পরিচিত কেউ আছে? খাম খুলতে খুলতে ভাবতে থাকে আবুল। খামটা খুলতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল তার। একি, এযে তার পাঠানো দরখাস্তটাই। এইটা ফেরত আসল কেমন করে। বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতেই সে আবিষ্কার করলো খামের উপরে প্রাপক আর প্রেরকের ঠিকানা লেখার সময় ভুলে ইধার উধার হইয়া গেছেগা। এই জন্যই হাতের লেখাটা চেনা চেনা লাগতাছিল। লেখাটাযে তার নিজের।। মাথার চুল টেনে ছিড়তে লাগলো সে। রাগে দুঃখে ক্ষোভে তার মরে যেতে ইচ্ছে করলো। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললো বলে প্রায়। অবশেষে আবুল সিদ্ধান্তটা নিয়াই ফেললো। এ জীবন আর সে রাখবে না। এইখান থেকেই শুরু এই পর্ব, অবশেষে আবুল কহিল বিষাদে, এই জীবন আমি আর রাখপ না।
দোকান থেকে মোটা দড়ি কেনা হয়েছে। সেইটা ফ্যানের সাথে বাধাও শেষ। শুধু একটু ভয় লাগতেছে। নাহ মরার ভয় না। ডরে না বীর। ভয় লাগতেছে ফ্যানটা না ভাইঙ্গা পইড়া যায়। যাই হোক। গলায় একটা গামছা পেচাইয়া নিল সে। যাতে ব্যাথাটা কম লাগে। বাবার কথা মনে পড়ল আবুলের। চোখ ভিজে আসছে। বাবা বলতেন……... বাবা বলতেন, সব কিছুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে হয়। বিসমিল্লাহ বলে ফাঁসটা গলায় দিতেই মোবাইল বেজে উঠল। রিংটোনে সেই বিখাত বুরকা পরা মেয়ে গানের সুর। একবার চিন্তা করল। কোনো শুভ কাজে পিছন ফিরতে নাই। নাকি শেষ বারের মতন ফোনটা ধরেই ফেলবে সে? শেষ পর্যন্ত কৌতুহল জয়ী হইল। আবুল নেমে ফোন ধরল।
“হ্যালো স্লামালাইকুম।”
“হ্যালো ওয়ালাইকুম। মিঃ আবুল বলছেন?”
“জ্বী বলছি। কে বলছেন প্লিজ।”
“আমি গ্রামীন ফোন এইচ,আর থেকে বলছি।”
পরের পর্ব
অবশেষে আবুল কহিল আনন্দে, আর থাকিব না একা আগামী অর্থ বছরে।
এবার পাত্রী খোঁজার পালা।
বিঃদ্রঃ আবুলের মোবাইলের রিংটোন নিতে চাইলে এইখানে যান।
Click This Link
অবশেষে আবুল কহিল বিষাদে, এ জীবন আমি আর রাখপ না
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১০০টি মন্তব্য ৯৮টি উত্তর
পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন
আলোচিত ব্লগ
হার জিত চ্যাপ্টার ৩০
তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবনাস্ত
ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন
যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে
প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের দাদার দাদা।
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।
আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?
আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন