somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যাপিত জীবন

১৮ ই মার্চ, ২০১০ সকাল ১১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি মানুষটা দেখতে বেশ ছোট খাট। ঠিক এই কারনে কিনা জানি না। আমার চাহিদাটা সবসময় বেশ কম। সেটা কাপড় চোপড়ের মতন অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই বলেন অথবা ক্যারিয়ারের মতন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি খুব বেশি চাই না। খুব অদ্ভুত ব্যাপার, আমার ছোট ভাই বোন দুইটার মধ্যেও এই ব্যাপারটা বেশ খুঁজে পাই। এর কারন মনে হয় অল্পতে ভাল থাকার দুর্লভ ব্যাপারটা কিছুটা হলেও আমরা আয়ত্ত্ব করতে পেরেছি। এই বাক্যটা পড়ে কি মনে হচ্ছে কিছুটা অহমিকা কিছুটা দাম্ভিকতার প্রকাশ? হলে হয়েছে, মধ্যবিত্ত নীতির মধ্যেই পড়ে এটা। অন্যের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন নিজস্ব কিন্ত খুব সামান্য বিষয়ে হাল্কা একটু দাম্ভিকতা মনের অজান্তেই হয়তো আমরা মধ্যবিত্তরা করে ফেলি আর পরক্ষনেই ইশ একটু বেশি হয়ে গেল, ভেবে লজ্জ্বা পাই। এভাবেই এগিয়ে যায় আমাদের প্রতিদিনের যাপিত জীবন।

শুক্র আর শনিবার আম্মা একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। সকাল ৯টায় আমার ঘুমের বারটা বাজানোর জন্য একটা ফোন করেন। এই কলের নাম হইল ব্রেকফাস্ট এলার্ট। ঘুম ঘুম ঘোরে ফোন ধরতেই আম্মা জিজ্ঞেস করে 'আজকে সকালে কি খাইছ? এখনো নাস্তা করো নাই? হায় হায়, উঠ তাড়াতাড়ি আর যাও নাস্তা করো। আজকে বাজার করতে হবে না? তার উপর জুম্মা আছে, বাজারে সব শেষ হয়ে যাবে। যাও তাড়াতাড়ি যাও।' এইটা নিশ্চয়ই বলতে হবে না যে ফোন রাখার সাথে সাথে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়ি এবং রিকারেন্ট এলার্মের মতন ১ ঘন্টা পরে আম্মা আবার ফোন করেন। একসময় বাধ্য হয়ে আমি বিছানা ছাড়ি। সেইদিনও শুক্রবার সকাল ৯টা বাজে, আম্মার ফোন পেয়ে আমি ঘুম ঘুম ঘোরে বললাম 'হ্যালো'। 'রাকিব, তুমি সুস্থ আছ? শরীর খারাপ করে নাইতো? আরো শুকায় গেছ নাকি? খাওয়া দাওয়া কর না? আমাকেতো কিছু বলও না।' উত্তেজনার আঁচ পেয়ে আমার ঘুম ছুটে গেল। আমি বোঝানোর চেষ্টা করলাম আমি ঠিক আছি, আর সাথে এটাও বোঝার চেষ্টা করলাম এসব কথা হুট করে কোত্থেকে আসলো। আগেরদিন রাতেই কথা হয়েছে। যা বুঝতে পারলাম তার সারর্মম অনেকটা এমন, আম্মা কয়দিন আগে একটা স্বপ্ন দেখছে আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছি। একা একা থাকি, ঠিক মতন সেবা করারও কেউ নাই। তাই অসুখে পড়ে আমি অনেক শুকিয়ে গেছি। এইটুকুতেই শেষ না। এইটুকু কাহিনী শুনে আমাকে কিছু বললে আমি হেসে উড়িয়ে দেব উনি খুব ভালো করেই জানেন। তাই উপযুক্ত প্রমান পাবার পরেই আমাকে ফোন দিয়ে এসব বলেছেন। প্রমানটা একটু দীর্ঘ, ধৈর্য্য নিয়ে পড়তে হবে।

গতমাসে সুন্দরবন বেড়াতে গিয়েছিলাম। ডিপার্টমেন্টের এক্স স্টুডেন্ট হিসেবে। (যারা জানেন না তাদের জন্য বলি, আমি শাহজালাল ইউনির সি,এস,ই র এক্স স্টুডেন্ট)। জাফর স্যারও গিয়েছিলেন ট্যুরে। কটকা বিচে গিয়ে হঠাৎ মনে হলো পাঁচ বছর ইউনিতে ছিলাম, স্যারের সাথে আমার কোনো ছবি তোলা হয় নাই। স্যার ঠিক সেই মুহুর্তে সুমনের (আমার বন্ধু, সাস্ট সি,এস,ই র বর্তমান শিক্ষক) ছেলেকে কোলে নিয়ে ছবি তুলছিলেন। স্যারকে বললাম স্যার আপনার সাথে আমার কোনো ছবি নাই, একটা ছবি তুলতে চাই। স্যার রাজী হলেন, আমি স্যারের পাশে দাড়ালাম। হঠাৎ কে যেন পাশ থেকে বললো স্যার এইটা আর আগেরটার (সুমনের বাচ্চা) মধ্যে সাইজে তেমন কোনো তফাৎ নাই। এইটারেও কোলে নিয়া নেন। স্যারের মাথায়ও কি ভুত চাপল কে জানে? স্যার বলে 'আসো তোমারে কোলে নিই। আমার ধরো আর শরীরটা একটু হাল্কা করো।' আমি স্যারের অবাধ্য হই নাই। ব্যস উঠে গেল একটা ইন্টারেস্টিং ছবি, যেটা দেখে অনেকেই ভাবল নতুন নতুন ফটোশপ শেখার ফলাফল। অনেকে প্রচন্ড হিংসিত হল। অনেকে বুড়া মানুষটারে কষ্ট দেয়ার জন্য তীব্র নিন্দা জানাল। অনেকে ছবির একটা কপি চাইল। তো এই ছবি তোলার বিষয়টা আমার কাছে ততটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় নাই যে এইটা আম্মাকে জানাইতেই হবে। কিছুদিন পরে আম্মা আমার বন্ধু ব্লগার চতুষ্কোণের বাসায় গেল, সেইখানে গিয়ে ল্যাপ্টপে ফেসবুকের মাধ্যমে এই ছবি দেখার পর তার মনে হল প্রায় ৬০ বছরের একজন বৃদ্ধ মানুষ তার তাগড়া জোয়ান ছেলেরে কোলে নিয়া নিল। নিশ্চয় ছেলে অসুস্থ হয়ে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এর চেয়ে বড় প্রমান কি আর কিছু হতে পারে? আমি কি বলবো বুঝতে না পেরে হাসতে হাসতে তাকে বললাম, আম্মা স্যারকে যত বুড়ো মনে হয় আসলে তত বুড়ো না। চুলটা একটু বেশি পেকে গেছে, এই যা। :) :)

এই সুস্থতা অসুস্থতা, কিংবা একা থাকা নিয়া আম্মার টেনশনের শুরু সেই ২০০২ সাল থেকে। তাকে এখনো বুঝাতে পারি নাই যে এই দীর্ঘ সময়ে এখন আমি অনেক কিছুই করতে পারি, হিসেব করে চলতে পারি। কাপড় ধোয়ার সময় সার্ফ এক্সেল দিয়া ভিজালে যে কাপড় ধোয়া সহজ হয় এইটা আমি অনেক আগে থেকে জানি। এখন আর বোঝানোর চেষ্টা করি না। মায়েরা মনে হয় এইসব করে অনেক বেশি আনন্দ পায়। অনেক বড় কোনো আনন্দের উপলক্ষ্য নাইবা এনে দিতে পারি, কিন্ত এইটুকুতে হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার মনে হয় আমার নাই। তাই শুধু হাসি, মনে মনে।

একটা দিনের শেষে কাগজ কলম নিয়ে ভাল সময় আর মন্দ সময়ের অনুপাত হিসেব করতে বসি না। সকালের শুনশান আবহাওয়াটা যতটা ভালো লাগে, বিকেলের মিষ্টি রোদের স্পর্শটাও ঠিক ততটাই ভালো লাগে। আর সন্ধ্যে ঘনিয়ে ধীরে ধীরে রাতের নীরবতা, মনে হয় একান্তই আমার নিজস্ব চাওয়া পাওয়ার সময়। সব মিলিয়ে বেঁচে থাকার প্রতিটা মুহুর্ত উপভোগ করে যেতে চাই। এ যেন যাপিত জীবনের প্রকৃতি থেকে সর্বস্ব নিংড়ে নেয়ার অবচেতন প্রতিজ্ঞা।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১০ সকাল ১১:৫১
৮০টি মন্তব্য ৮২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×