somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার গ্রাম মসনী (মধ্যবিত্তের সংকট, মধ্যবিত্ত হয়ে ওঠার সংকট)

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মাত্র একদিনের জন্য বাড়িতে গিয়েছিলাম। গ্রামে গিয়ে আমার সবচেয়ে ভালো লাগে চেনা মানুষগুলোকে দেখতে এবং তাদেরকে বোঝার চেষ্টা করতে। আমার গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ বঞ্চিত এবং দরিদ্র, তবে হতদরিদ্র নয়। বঞ্চিত, কারণ, তারা কখনো নাগরিক সুবিধাগুলো ভোগ করেনি, তারা কখনো আড়ম্বর করার মত সামর্থ অর্জন করেনি। স্বচ্ছলতা বলতে তারা বুঝে এসেছে ঘরে চাঁল আছে কিনা এবং হাড়িতে ভাত আছে কিনা। দেরিতে হলেও গ্রামেও যখন আস্তে আস্তে বিশ্বায়নের ছোঁয়া লাগছে, মানুষগুলো বুঝেছে জীবন মানে শুধু এতটুকু নয়, বরং এর চেয়েও ঢের বেশি কিছু। বিশ্বায়নের সুবিধা কাজে লাগানোর সামার্থ তাদের নেই, কিন্তু দরিদ্রের (শিক্ষায়, মননে এবং সম্পদে) সম্বল- অহমিকাটুকু তাদের ডিজিটালাইজড হয়েছে। খুব বাধ্য না হলে কোনোদিন কাউকে তারা কেয়ার করেনি, নিজের প্রয়োজনটুকু বুঝে নেওয়ার জন্য সুক্ষ্ম তোষামেোদেও তারা পারঙ্গম নয়, এর চেয়ে কাউকে ছোট করা বা তাচ্ছিল্ল করাতেই তারা কিছু আনন্দ খোঁজে। কারো সমকক্ষ হয়ে ওঠার বা কারো চেয়ে বড় হয়ে ওঠার জন্য তারা যে মানদণ্ডগুলো ব্যবহার করে তা হাস্যকর হলেও সেগুলো নিষ্পাপই, হীনমন্যতা এবং জনম জনমের বঞ্চনা থেকেই তারা ওটি করে। কারো দামী মোবাইলটি দেখে ‘ক’ এর মা বলে বসবে আমার ছেলেরও এরকম মোবাইল আছে। কেউ বলবে আমার ছেলেও টাকা পাঠায়, সেই টাকা দিয়ে ঘর বানিয়েছি। কেউ বলবে আমার ছেলেও অনার্স পড়ে। ইত্যাদি। কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে কেউ বলবে আমার ছেলেও ঢাকায় থাকে। অর্থাৎ তুমিও ঢাকায় থাকো, আমার ছেলেও ঢাকায় থাকে, - কেচ্ছা খতম। কেউ তাদের ছোটো করতে যাচ্ছে না, বরং কেউ ভালবাসতে গেলে এ ধরনের বিপদের সম্মুখিন হতে হবে, তারা ভেবে বসবে- এই বোধহয় তারা ছোট হয়ে যাচ্ছে।


তাদের এসব আচরণে রাগ হতে পারে, কিন্তু আসলে রাগ করার মত কোনো বিষয় নয়, বরং বিষয়টি বিশ্লেষণ করতে হবে একটু গভিরে গিয়ে। গ্রামের মানুষগুলো খুব কাছাকাছি থাকে, একসাথে বেড়ে ওঠে, একসাথে তাদের ওঠাবসা, কেউ ভালো খেলে জানান দিয়ে খায়, কেউ না খেয়ে থাকলেও তা গোপন থাকে না। ফলে সেখানে প্রতিযোগিতাটা খুবই স্পষ্ট, বংশ পরম্পরায় একই ধারা সেখানে বহমান। কারো জন্য কারো যে একেবারে পোড়ে না তা হয়ত নয়; একইসাথে, বেশিরভাগ সময় মনে মনে এবং কদাচিৎ প্রকাশ্যে সবাই সবাইকে চ্যালেঞ্জও করে। তারা দিতে চায় বেশি, নিতেও চায় বেশি। কিন্তু এই দুটো তো তাদের পক্ষে একইসাথে সম্ভব নয়। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় রাঘব-বোয়ালরা (সমাজতন্ত্রের ভাষায়- শোষক শ্রেণি) সেটি সম্ভবপর করেছে, তারা আগে রাশি রাশি কেড়ে নেয়, তারপর একটু একটু করে দেয়। সমাজের ছাপোষা মানুষগুলো ঐ রাঘব বোয়ালদেরই মুখাপেক্ষি হয়ে রয়েছে, যেটা তারা জানে না, জানার সীমানাটা অতটা প্রসারিত হওয়া সম্ভবও নয় তাদের ক্ষেত্রে। রাঘব বোয়ালদের নাগাল না পেলেও তারা হররোজ নাগাল পেয়ে যায় ভাই, বন্ধু এবং নিকট প্রতিবেশীর এবং তাদের মধ্যেই চলে সব হিংসা-বিবাদ-বৈরিতা।


হয় নেতৃত্ব অথবা আনুগত্য, যে কোনো একটি বেছে নিতে হবে, অথবা খুব চৌকষ হলে দুটোই। কিন্তু ওরা আনুগত্যে নেই, নেতৃত্বেই সবার ঝোঁক; কিন্তু একইসাথে যথেষ্ট ঝোঁক নেই শিক্ষায়, সততায় এবং সৌজন্যবোধে। ফলে কর্মে এবং আচরণে মানুষগুলো লেজে-গুবুরে, ব্যর্থ এবং পিছিয়ে পড়া। তবে তারা তা মানছে না, তারা জোর করে যাচ্ছে পরিবেশ-পরিস্থিতির সাথে, তারা সবচে’ বেশি জোর করে যাচ্ছে নিজের সাথে। তারা তৈরি হচ্ছে না, পড়াশুনা করছে না, নতুন নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে না, তারা জিতছে না, তারা হারছেও না। যার কাছ থেকে জানার আছে তার কাছ থেকে জানছে না, যার কাছ থেকে শোনার আছে তার কাছ থেকে শুনছে না। তারা জিদ করছে, তারা অহংকার করছে, তারা পিছিয়ে পড়ছে, তারা প্রজন্মকে পিছিয়ে রাখছে। তাদের জীবনধারায় ভুল স্পষ্ট, কিন্তু এমন কেউও এগিয়ে আসছে না যে ঘরের খেয়ে, নিজে ছোট হয়ে হলেও তাদের ভুল ভাঙ্গাতে পারে, তাদের পাশে দাঁড়াতে পারে। পরিণতিতে একটি সম্ভাবনাময় জনপদ রয়ে যাচ্ছে সেই একই তিমিরে।

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১৮
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো - ছবি ব্লগ

লিখেছেন শোভন শামস, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯

"পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো", কিংবা "পোস্টকার্ড রো" বা "সেভেন সিস্টারস" নামে পরিচিত, বাড়িগুলো। এটা সান ফ্রান্সিসকোর আলামো স্কোয়ার, স্টেইনার স্ট্রিটে অবস্থিত রঙিন ভিক্টোরিয়ান বাড়ির একটি সারি। বহু... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×