somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বা একজন কলেজ শিক্ষকের চেয়ে একজন বাসের হেলপারের মূল্য আসলে বেশি নয় কি?

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এই ট্রলটি সরকারি কলেজের অনেক শিক্ষক শেয়ার করছে দেখছি -


দাদা পড়েছে-
কারক কাকে বলে, কত প্রকার ও কী কী?

পিতা পড়েছে-
কারক কাকে বলে, কত প্রকার ও কী কী?

ছেলে পড়েছে-
কারক কাকে বলে, কত প্রকার ও কী কী?
... ...
লাভ কী হইছে? বাংলাভাষা কতটুকু এগিয়েছে তাতে? বাংলার কেনো শিক্ষক আমাকে বুঝিয়ে দেবেন কি যে কারক নির্ণয়, সমাস নির্ণয় -এগুলো পড়ার প্রয়োজনটা কী?

একটু বলবেন কি, আপনার জানা আছে কি ভাষার উৎকর্ষ কীভাবে সাধিত হয়? কীভাবে একটি ভাষা সমৃদ্ধ হয়? কীভাবে ভাষায় নতুন নতুন শব্দ যুক্ত হয়?

ভাষা নিয়ে যারা কাজ করবে তারা ছাড়া অন্যরা কেন ব্যাকরণ পড়বে? কেন ব্যাকরণ মুখস্থ করে পরীক্ষায় পাস করতে হবে?

মাতৃভাষা লিখতে পড়তে বলতে শুনতে পারার জন্য ব্যাকরণ শেখা লাগে না। ব্যাকরণ শেখা লাগে একটি ভিন্ন ভাষা শেখার জন্য, ব্যাকরণ শেখা লাগে ভাষাটি নিয়ে গবেষণা করার জন্য, ভাষার উৎকর্ষ সাধনের জন্য, পুরাতন-অপ্রয়োজনীয় এবং ভুল অনেক ব্যাকরণ বাদ দিয়ে নতুন ব্যাকরণ আবিষ্কারের জন্য।

বাংলার শিক্ষক হিসেবে বাংলা ভাষা নিয়ে আপনার কী কী ভাবনা আছে? বাংলাভাষা কি উৎকর্ষের দিকে যাচ্ছে নাকি অপকর্ষের দিকে যাচ্ছে?

যা মুখস্থ করে আমরা শিক্ষক হই তাই আবার শিক্ষার্থীদের মুখস্থ করাই। তাই নয় কি? ঢালাভরা ছাড়া আর কী হচ্ছে এতে?


আপনি নিউটনের সূত্র মুখস্থ করেছেন, এখন আপনার ছাত্রকেও তাই করাচ্ছেন, তাই তো?

কোষের গঠন পড়েছেন, সুন্দর করে সারাদিন বসে কোষ এঁকেছেন, এখন খুব ভাব নিয়ে কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের একই কাম করাচ্ছেন, লাভ কী হচ্ছে এতে?

বিজ্ঞান কতটুক সমৃদ্ধ হচ্ছে? ঐ শিক্ষার্থীই বা কতটুক বিজ্ঞান মনস্ক হচ্ছে?
আপনিই বা কতটুক বিজ্ঞান মনস্ক হতে পেরেছেন? পড়ছেন বায়োলজি, কিন্তু ইভোলুশন মানতে চান না, আবার শক্তিশালী কোনো এন্টিথিসিসও বের করার চেষ্টা করেন না। করেন কি?


এর চেয়ে যারা পেঁপে গাছ লাগিয়ে ছয় মাস পর একশো মণ পেঁপে উৎপাদন করছে তার অবদান কি আপনার আমার চেয়ে অনেক বেশি নয়?

না, কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য শিক্ষকদের হেয় করা নয়, শিক্ষকরা সম্মানিত অাছেন এবং সম্মানিতই থাকবেন।

সমস্যা হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থায়। সমস্যা কতটা প্রকট তার প্রমাণ হচ্ছে- সরকারি কলেজের শিক্ষকরা বিভিন্ন রকম অপমানজনক ট্রল বানিয়ে বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের অপমান করছে। অর্থাৎ আপনাকে আপনি নিজেই নামাচ্ছেন।

একটা ট্রল দেখলাম, সেখানে তারা বলছে, “আমরা দিনে দশঘণ্টা করে পড়ে ক্যাডার হয়েছি আর অাপনারা ‘দুই লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়েছেন’। তাহলে আপনি আমি কি এক হলাম?”

জবাব আমি আগেই দিয়েছি? আপনার মত মুখস্থ করা শিক্ষক এবং আমার মত লেখকের চেয়ে নিরক্ষর কৃষকের মূল্য অনেক বেশি।

যেহেতু আপনি যা পড়ান এবং বেসরকারি কলেজের কোনো শিক্ষক যা পড়ান দুটোরই কোনো মূল্য নেই, তাই প্রকৃতপক্ষে শিক্ষকতার বিচারে কোনো পার্থক্য এক্ষেত্রে নেই। উল্লেখ্য, আমাদের প্রয়োজনীয় পড়াশুনাটুকু মূলত হাইস্কুল পাশ করার মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যায়।

পার্থক্য অন্য জায়গায় আছে- আপনি যা করেন এবং একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক যা করে তার মধ্যে কিছু পার্থক্য অাছে।

যেমন, বেসরকারি কলেজের শিক্ষকরা কিছু অন্যান্য উৎপাদনশীল পেশায় যুক্ত আছে, যেসবের মূল্য আছে। কেউ একটি দোকান করে, দোকানের দরকার আছে। কেউ কৃষি কাজ করে, সেটি তো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা যে মেধার কথা বলি, এটা আসলে মেধা নয়, চালাকি। কে কার চেয়ে বেশি চালাক, সেটি। সৃজনশীল বা উৎপাদনশীল মেধা ভিন্ন জিনিস, সে চর্চা আমাদের দেশে নেই। তারা ছিঁটকে পড়ে অনেক আগে।

কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গত পঞ্চাশ বছরে নতুন কী আবিষ্কার হয়েছে এদেশে? বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই যেহেতু কিছু হয় না কলেজের কথা আর বলে লাভ কি!

আপনি বেশি পড়াশুনা করেছেন (কী পড়েছেন আসলে?), কেন পড়ছেন? লক্ষ্যে অটুট থেকেছেন, সেটি ভালো, কিন্তু লক্ষ্যটা আসলে কী? যেহেতু লক্ষ্যটা শুধুমাত্র অর্থ এবং ‘সম্মানজনক’ (সামাজিক অহংকার) অবস্থান অর্জনের তাই এটিকে একান্ত নিজস্ব লক্ষ্য বলা যায়।

সার্বিক বিবেচনায়, বিশেষ করে এই সৃষ্টিছাড়া শিক্ষাব্যবস্থার কথা মাথায় রাখলে বলা যায়, আমার বা একজন কলেজ শিক্ষকের চেয়ে একজন বাসের হেলপারের মূল্য আসলে বেশি, বেশি হওয়া উচিৎ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৫৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×