"স্ট্রোক- বর্তমান সময়ের এক মহামারি"
আজ বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। কিছুদিন আগে আমার ভাগনি (বড় বোনের মেয়ে) আমাকে ফোন দিয়ে বলতেছে, মামা "আম্মু তো বিছানায় পড়ে আছে। ডান হাত-পা নাড়তে পারছে না।" আমি জানতে চাইলাম কথা বলতে পারতেছে কিনা? সে বলল "কথা বলতেও সমস্যা হচ্ছে।"
আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। মনে হল এই কি হল! এটা তো স্ট্রোকের নমুনা। পাগলের মত হয়ে গেলাম, বাবা মা সবাইকে কল দিলাম। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার জন্য বললাম।
আমার বড় বোনের বয়স ৪০ এর কম। তার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলেটা দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ে, মেয়েটা ক্লাস সিক্সে পড়ে। এমন অবস্থায় স্ট্রোক করলে কি পরিণতি হবে! চিন্তা করেই পাগলপ্রায়।
আমার এই ধরনের রোগি অনেক আছে। আমি তাদের চেহারা কল্পনা করলাম। তাদের কষ্ট বুঝায় চেষ্টা করলাম। এত খারাপ আমার জীবনেই কমই লাগছে।
স্ট্রোকের মত সব নমুনা হলেও স্ট্রোক না! সারাদিন অনেক কাজ করছে, শরীর দুর্বল ছিল। এখন ভাল আছে। যাই হোক আমার বোন এই যাত্রায় পুরোপুরি রক্ষা পেলেও আমার গভীরে একটা কষ্ট আর স্ট্রোক আতঙ্ক রয়েই গেছে। বোনের প্রেশার হাই। হাই প্রেশার রোগীদের এটা বেশি হয়।
স্ট্রোকের মহামারি কি যে ভয়াবহ- নিউরোলজিস্ট আর ফিজিওথেরাপিস্টরা সবচেয়ে ভাল জানে। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশী মুত্যুর কারণ স্ট্রোক।
সারাবিশ্বে প্রতি ৫ জনে ১ জন মহিলা, আর প্রতি ৬ জনে ১ জন পুরুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়।
স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগির বেঁচে থাকা যে কি কষ্টকর ব্যপার, ঐ রোগি, তার পরিবার আর আমরা জানি।
স্ট্রোকের পরবর্তী কষ্টকে আমর কাছে মনে হয়- থানা হাজতে একজন আসামীর পুলিশ রিমান্ডে থাকার মত অবস্থা , শুধু সেই না, পুরো পরিবারের একই অবস্থা । অবর্ণণীয় দু:খ কষ্ট সহ্য করতে হয় তাকে এবং তার পরিবারকে।
তবে আশার খবর হল প্রায় ৫০% স্ট্রোক কে আমরা প্রতিরোধ করতে পারি। নিচের নিয়ম গুলো মেনে চলে। যেমন :
১. স্বাস্থ্যসম্মত খাবার,
২. নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা,
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা,
৪. ধূমপান বর্জন করা,
৫. অ্যালকোহল পরিহার করা,
৬. টেনশনমুক্ত থাকা,
৭. কোন অবস্থাতেই প্রেশার বাড়তে না দেওয়া।
৭. নিয়মিত হেলথ চেকআপ করা।
স্ট্রোকের লক্ষণসমূহ:মনে রাখবেন, FAST শব্দটি
F - Face (মুখ) একপাশে বাঁকা হয়ে যাওয়া
A - Arms (হাত) এক হাত বা পা অবশ হয়ে যাওয়া
S - Speech (কথা) কথা বলতে কোন অসুবিধা
T - Time (সময়) তখনই সময় নষ্ট না করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
উপরের লক্ষণসমূহ দেখলেই বুঝবেন- আপনার রেগি স্ট্রোক করেছে। জরুরি ভিত্তিতে তাকে হাসপাতালে নেওয়া দরকার।
আর স্ট্রোক পরবর্তী পুনর্বাসনের জন্য সঠিক ফিজিওথেরাপির কোন বিকল্প নেই। সময়মতো সঠিক ফিজিওথেরাপি পেলে, আপনার রোগি ৮০-৯০% পর্যন্ত ভাল হয়ে উঠতে পারে ।
আসুন, স্ট্রোক সম্পর্কে জানি, নিজে সচেতন হই অন্যকে সচেতন করি।এই মহামারি সমস্যা থেকে দেশকে বাচাই।
ধন্যবাদ
ডা. সাইফুল ইসলাম (পিটি)
বি.এসসি ইন ফিজিওথেরাপি (ঢাবি-সিআরপি)
প্রতিষ্ঠাতা ও কো-অর্ডিনেটর
ভিশন ফিজিওথেরাপি এন্ড রিহ্যাব সেন্টার, উত্তরা, ঢাকা।
https://www.facebook.com/physio.Drsaiful/
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:১০