জানালার গ্রীল গলে একমুঠো রোদ
শ্রাবনের মুখের উপর পড়লো।রোদ পড়তেই
ওর ঘুম ভেঙ্গে গেল।আজ নাকি
শ্রাবনের বিয়ে।বাড়ির চারপাশে
লোকজনে গিজগিজ করছে।ঘুম
ভাঙ্গলেও শ্রাবনের বিছানা ছেড়ে
উঠতে মন চাইলো না।তাই ও শুয়ে শুয়ে
ভাবছে।কত চড়াই উৎরাই পার হয়ে
তারা আজ এক হয়ে যাবে।সেই ছোট্ট
থেকে একজন আর একজনের পাশে
থাকা,সুখ-দুঃখ,মান অভিমানের পালা
পেরিয়ে বাধা পড়বে চিরবন্ধনে,যে
বন্ধন অবিচ্ছেদ্দ্য,একই সুতোই বাধা দুটো
গিঁট।যা আগলে রাখবে দুজন দুজনাকে
আমৃত্য পর্যন্ত।
.
.
শ্রাবন তখন ক্লাস ফোর এ পড়ে।অন্য একটা
স্কুল থেকে এসে এই স্কুলে ভর্তি হয়ছে।
সম্পুর্ন নতুন একটা পরিবেশ।তাই সব কিছুর
প্রতি ভাললাগা,কৌতুহল ইত্যাদি শিশু
বুকের মধ্যে দানা বাধেঁ ঘুরে বেড়াত।
শ্রাবন পড়ালেখায় ভাল ছিল।তাই অল্প
কয়েক দিনের মধ্যেই অনেক বন্ধু হয়ে
গেলো ওর।একদিন শ্রাবন বন্ধুদের সাথে
টিফিন টাইমে ক্রিকেট খেলছিলো।
হঠাৎ ওর চোঁখ যায় দুরে কয়েকটা
মেয়ের সাথে খেলারত একটা মেয়ের
প্রতি।কিরকম হাসি হাসি মুখ,চন্ঞ্বল,
হাসলে গালে ঢোল পড়ে,সমস্ত মুখে
মায়ার ছড়াছড়ি।
শ্রাবনের ভাল লেগে যায়
মেয়েটিকে।মনের মাঝে একটা অন্যরকম
অনূভুতি কাজ করে।
.
শ্রাবনের এক বন্ধু আবার এই সব বিষয়ে
ছিলো সবার থেকে এগিয়ে। তার নাম
ইমন। ইমন নাকি তখন তিন-চারটা মেয়ের
সাথে প্রেম করতো।স্কুলের সব মেয়ের
খোজ খবর ও রাখতো।নাম,বাবার
নাম,দাদার নাম সব কিছুই ছিলো ইমনের
নখদর্পনে।
শ্রাবন,ইমনকে ডেকে বলল,
--দোস্ত ঐই মেয়েটাকে আমার খুব ভাল
লাগছে।প্লিজ ওর সাথে আমার প্রেম
করাই দে।
--কোন মেয়েটা?
শ্রাবন আঙ্গুল উচিয়ে দেখিয়ে বলল,
--ওই যে ওইখানে কয়েকটা মেয়ের
সাথে খেলছে।নীল ড্রেস,মাথার
চুলগুলো সুন্দর করে বেনী করা।
--আরে ওকে তো আমি চিনি।ক্লাস
থ্রিতে পড়ে ।নাম: বৃষ্টি,বাবার
নাম:ডা.হারুন বিশ্বাস.......
--যাই হোক।তুই আমার প্রেমটা করাই দে।
--টেনস লস না বেটা।দাড়া আমি
দেখছি।
.
.
শ্রাবনের বন্ধুরা বৃষ্টিকে শ্রাবনের
কথা বললেও ওর কখন সাহস হয় না
বৃষ্টিকে ওর মনের কথা বলার।ওর কাছে
গেলেই শ্রাবনের কথা হারিয়ে যায়।
তাই আর বলাও হয় না।বন্ধুরা শ্রাবনকে
এই নিয়ে তিরষ্কারও করে।বলে,যা
বেটা,তোর সাথে আমরা নাই।বলতে
পারে না,প্রেম করতে আসছে।
.
শ্রাবনের বন্ধুরা বললেও বৃষ্টি রেসপনজ
করত না।মেয়েরা নিজে থেকে কখন
কিছু বলবে না বা সাড়া দেবে না
যতক্ষন না কাংক্ষিত মানুষটা তাকে
ভালবাসার কথা বলে।তার জন্য
অপেক্ষার জাল বুনতে থাকে।এতে যদি
সারা জীবন কেটে যায় তবুও তারা
অপেক্ষা করতেই থাকে।
.
এভাবেই একটা বছর কেটে গেল।ক্লাস
5-এর তখন শেষের দিকে।শ্রাবন সাহস
করে বলে প্রোপোজ করে বৃষ্টিকে।
প্রথমে না না করলেও কয়েকদিন পরে
রাজি হয়ে যায়।
শুরু হয় দুটি অবুঝ মনের একসাথে পথ চলা।
যারা ভালবাসা কি তাই জানে না।
.
হাই স্কুল,কলেজ,ভার্সিটির গন্ডি পার
হয়ে যায় দুজনার একসাথে কাটানো
মুহুর্তের মাঝে।সুখের সময়গুলি পার হয়ে
যায় খুব তাড়াতাড়ি।ভালবাসার
মানুষটা কাছে থাকলে থাকলে যুগ যুগ
সময়কে মনে হয় এক মুহুর্ত।
.
তবে এর মাঝে যে দুঃখের সময়
আসেনি তা নয়।পারিপারিক চাপ
আসছিলো ওদের খুব।মাঝে মাঝে
একমাস দুমাস কেউ কাউকে দেখেই নি।
তবুও তাদের ভালবাসাটা কমে যায়
নি।ভুলে যায় নি কেউ কাউকে,ছেড়ে
দেই নি চলার পথে দুজনার হাতখানা।
পরম মমতায়,ভালবাসায় আগলে
রেখেছে দুজন দুজনাকে। তবে সেটা
ঘটেছে হাই স্কুল লাইফে।কলেজ,ভার্
সিটিতে তেমন কোন সমস্যা হয় নি
ওদের।পারিবারিক চাপ টাও আসেনি
তখন।
.
ভার্সিটি শেষ করার পর শ্রাবন একটা
মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে
চাকরি পাই।তারপর বৃষ্টির বাবার
কাছে ওর বাবা মায়ের পাঠিয়ে দেয়
বিয়ের প্রস্তাব দিতে।তারা রাজিও
হয়ে যায়।শুরু হতে যায় নতুন একটা জীবন।
.
.
--এই শ্রাবন!কত সকাল হয়ে গেল আর তুই
এখন উঠিস নাই?ফ্রেস হবি কখন,গোসল
করবি কখন আর সবাই যাবেই বা কখন?
তাড়াতাড়ি উঠ।
মায়ের ডাক শোনে শ্রাবনের ভাবনার
ছেদ পড়লো।ভাবতে ভাবতে কখন যে
ঠোটের এক কোনায় একটা সোনালী
হাসি ফুটে উঠেছে ও বুঝতেই পারে
নি।শ্রাবন বলল,
--আসছি আম্মু।তুমি যাও।
.
*********************************************
*******************************
[বিঃদ্রঃ-> গল্পটা বাস্তব।আমি শুধু একটু
কল্পনার টাচ দিছি।আর ক্লোজ
ফ্রেন্ডের লাইফ স্টোরি থেকে
নেওয়া।যদিও তাদের এখন বিয়ে হয় নি
তবুও এখনও প্রেম টিকে আছে।এরকমই বা
থাকে কয়জনের।দোয়া করি তাদের
লাইফের বাকি অংশ যেন গল্পটার মতই
হয়।দুজন দুজনার হাতে হাত রেখে একই
ছাদের নিচে কাটাতে পারে
জীবনের বাকি অংশটুকু।আপনারাও
দোয়া করবেন প্লিজ]
.