বাংলার মানুষ মানসিক দিক থেকে জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না। এমনকি মৌলবাদকেও সমর্থন করে না। যদিও মৌলবাদকে একটা হাস্যকর শব্দে পরিণত করা হয়েছে। এখন কতিপয় লোক কোন ব্যক্তিকে ধর্ম নিয়ে কথা বললেও মৌলবাদী বলে ফেলে। অথচ সবার জানা উচিৎ ধর্ম ও ধর্মান্ধতা কি! যাইহোক, যেটা বলতে চাচ্ছিলাম- বাংলাদেশের মানুষ পৃথিবীর বর্তমান সময়টাকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারে। আমি নিজে দেখেছি, বুঝেছি, সমাজ ব্যবস্থার সাথে বাংলাদেশীরা আধুনিকায়ন হতে পারে। বলতে হচ্ছে- কয়দিন ধরে কারা ফেইসবুকে প্রচার চালাচ্ছে, পাকিস্থানী ক্রিকেটার শহীদ আফ্রিদি, ভারতীয় ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান, সাউথ আফ্রিকা ক্রিকেটার হাসিম আমলারা তাদের স্ত্রীদের নিয়ে বেরুলে পর্দার সাথে অর্থাৎ তাদের ভাষায় পায়ে মুজা থাকে, নাক-মুখও বাঁধা থাকে, চোখেও পারলে চশমা লাগিয়ে দেয়। অথচ আমাদের দেশের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, রিয়াদ-দের স্ত্রীরা প্যান্ট শার্ট পড়ে ঘুরে বেড়ায়। বাহ! কি চমৎকার সমালোচনা! যারা এগুলো প্রচার করছে, তাদের জিজ্ঞেস করা উচিৎ তাদের মা-বোন কোন পোশাকে বের হয়। দুঃখিত এই ভাষার জন্য। আসলে কতিপয় মানুষের অজ্ঞতার বড় অভাব। তাদের দেখা উচিৎ কোন জাতি, কোন দেশের সমাজ ব্যবস্থা কেমন! আমার দেশের পুরুষরা লুঙ্গি পড়ে, কিন্তু তাদের দেশের পুরুষরা পায়জামা বা প্যান্ট পড়ে। তাই আমাদের দেশের মা-বোন শাড়ি পড়ে, সেলোয়ার-কামিজ পড়ে অভ্যস্থ, আমরাও সেটা দেখে অভ্যস্থ, আমরা কতিপয় নষ্ট লোক ছাড়া কেউ কখনো মেয়েদের গলার রং বা পায়ের রং দেখতে উঁকি দেই না। তারউপর আমাদের দেশের আবহাওয়া মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকা কাপড়ের উপযোগী না।
এখন সৌদিআরব সহ মধ্যপ্রাচ্যে পুরুষরাইতো মাথা থেকে পা পর্যন্ত কাপড়ে ঢেকে থাকে। মাথায় মোটা একটা পাগড়ি লাগায়। তাই বলে আমিও কি সেই পোশাক পড়বো? হায়রে অন্ধ মানুষ, কোন কমেন্ট করার আগে বুঝে-শোনে-জেনে মন্তব্য করুন। পৃথিবীর জনসংখ্যার দিক দিয়ে যত মুসলমান আছেন, তাদের বেশিরভাগ মানুষ মধ্যপ্রাচ্যের দিকে বসবাস করেন। এমনকি আমরা জানি তারা ইসলামের রক্ষকও, তাদের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম আমাদের দেশেও এসেছে। অথচ এখন অনলাইনে বিভিন্ন ভিডিও দেখে ও ঐখানে ঘুরে আসা মানুষদের কাছ থেকে শোনা মতে দেখা যাচ্ছে, তারা এখনো মেয়েদের ভোগ পণ্য হিসেবে বিবেচিত করে। এমনকি দেখা যাচ্ছে, তাদের বাড়িতে যদি কোন চাকরানীও নিয়োগ করে, তার সাথেও শারিরিক সম্পর্ক করতে চায়। এমনও দেখা যাচ্ছে, যদি ঐ চাকরিরত মহিলা শারিরিক সম্পর্কে রাজি না হয়, তাকে কি অমানবিক অত্যাচর করা হয়। কিন্তু আমার দেশে কয়জন এমন করে, যারা করে তারা বদমাশ কয়েকটা। আর ওদের সমাজে সর্বত্রই বিরাজমান। তাই তাদের মত জানোয়ারদের কাছ থেকে হরিণ অর্থাৎ শিকার সমতুল্য প্রাণী যেমন সরিয়ে রাখা হয়, তেমনি নারিদের ঢেকে রাখতে হয়। নইলে তারা নারীদের পশুর মতো আক্রমণ করে। কিন্তু আমাদের বর্তমান বাংলাদেশে এমন কোথায় ঘটে! যে দুই একটা ঘটে, এমনতো ন্যাংটা দেশ লন্ডন-আমেরিকায়ও ঘটে।
বাংলাদশের সব মানুষ কিন্তু মুক্তমনা, তবে কেউ বর্তমান যুগের সাথে আর কেউ সেই আদিকাল ধরে আছে। এখনো আমার কষ্ট লাগে যখন দেখি কোন গ্রাজুয়েট লোকও কোন পীর বা ফকিরের কাছে পানি পড়া বা তাবিজের জন্য যায়। আবার দুঃখ লাগে যখন দেখি কোন গ্রেজুয়েট লোক কোন মাস্তান বা ঘুষ খোর বা অল্প শিক্ষীত নেতা বা নেত্রীর অধীনে রাজনীতি করে বা ঐ নেতা বা নেত্রীর পক্ষে কথা বলে। তবে আশ্চর্য হয়ে যাই, মানুষ আফগানিস্থানের বর্তমান অবস্থা, পাকিস্থানের বর্তমান অবস্থা দেখেও কোন জঙ্গি সংঘটনকে সমর্থন করে। আজো চায়ের টেবিলে বা কোন বাসার ড্রয়িং রুমে বর্তমান বিশ্বের আইএসএস, হুজি, জেএমবি, হেফাজত নিয়ে পক্ষ বিপক্ষে তর্ক-কুতর্ক হয়। আরো অবাক লাগে, কোন রাজনৈতিক নেতা বা নেত্রী যখন ওদের পক্ষে কথা বলে।
আমাদের সমাজে কতিপয় অতি উৎসাহি বা অতি ধার্মিকতার পরিচয় দানকারী লোক বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ইসলামের নামে প্রচার শুরু করেন। যেমন একবার বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী সাইদির পক্ষে তাকে চাঁদে দেখা গিয়েছে বলে প্রচার করা হলো, অনেক মানুষ তা বিশ্বাস করে হাঙ্গামাও করলো। হায়রে মুসলমান, তোমাদের বিশ্বাস এতই দুর্বল। মনে পড়লো এটা উক্তির কথা, 'এক গ্রামে বৃষ্টি হচ্ছে না বলে ক্ষেত-খামারের অবস্থা অত্যন্ত করুনীয় হয়ে পড়লো। মাঠে পানির অভাবে ফেটে যাচ্ছে, গাছগুলোর পাতার সাথে মাথা শুকিয়ে পড়ে যাচ্ছে, এমতাবস্থায় গ্রাম বাসি মসজিদের হুজুরের দারস্ত হলেন। খালি মাঠে বৃষ্টির জন্য দোয়ার আয়োজন করা হবে বলে ঘোষনা করা হলো। সারা গ্রামবাসী একত্রিত হলো, তার মধ্যে একজন এলো মাথায় ছাতা নিয়ে। সবাই হাসাহাসি করলো, হুজুরের প্রশ্নে সেই ছাতাওয়ালা লোকটি বলল, আমরাতো আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য দোয়া করতে এসেছি। আর বৃষ্টির মধ্যে ছাতা ছাড়া ভিজে যাবো।' লোকটির কথায় সবাই আশ্চর্য হয়ে গেল। অর্থাৎ এই লোকটিরই বিশ্বাস ছিল যে সে দোয়া করলে বৃষ্টি হবে। আর বাকিদের ঈমান দেখেন। তাই বলতে হচ্ছে, ইসলাম ধর্ম বলেন আর অন্য ধর্ম বলেন, সবটাই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে পালন করা হয়। কিন্তু মানুষের এই বিশ্বাসকে নিয়ে যখন মানুষ ব্যবসা করে, রাজনীতি করে, আমার অবাক লাগে কেউ কিছু বলে না। রাষ্ট কিছু বলতে গেলে সেই রাষ্ট কর্তাকেই আমরা বিধর্মী বলে আখ্যায়িত করে ফেলি। যেমন ধরেন বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন কোন মৌলবাদী জঙ্গি নেতার বিরুদ্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেন, তখন অনেকে এর সমালোচনা করেন। অনলাইন মাধ্যমে তাকে নিয়ে কটাক্ষ শুরু হয়ে যায়। কেন? এমনও দেখেছি, তাকে ফটোশপের কারসাজিতে মাথায় তীলক পড়িয়ে মন্দিরের পুজায়ও বসানো হয়। আজকে একটা জায়গায় দেখলাম একটা উলঙ্গ ছবির সাথে হাসিনার মাথা কেটে বসানো হয়েছে, এবং তাকে কমেডে বসিয়ে রাখা হয়েছে। সাথে দেখা যায় কোন বানর বা কুকুরের দেহের সাথে কোন মানুষের মাথা লাগিয়ে বলা হচ্ছে, ঐ লোকটা ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করেছে, কেউ লিখছে পবিত্র কুরআন শরিফে লাথি মারার জন্য আল্লাহ তায়ালা তাকে শাস্তি দিয়েছেন। এতো কষ্ট লাগে, মিথ্যা প্রচারের জন্য। আর করুনা হয়, ইসলাম যদি তারা মানে তবে তার বিধান অনুযায়ী এই মিথ্যা প্রচারের জন্য তাদের জন্য কি রকম শাস্তি অপেক্ষা করছে। আমারতো ঐ সব লোকের মা-বাবা বা পারিবারিক বা সামাজিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হয়।
যাই হোক, আজকে পত্রিকায় যখন দেখলাম ২৬জন বাংলাদেশিকে সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা আইএস এর সমর্থক। তারা সিঙ্গাপুরের বাইরে হামলার পরিকল্পনা করছিল। এমনকি একজন বংলাদেশি বাকিদের পুলিশ ধরছে শুনে পালাতে গিয়েছিল, তাকে আটকে জেল দেয়া হয়েছে, তার সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে দেশে ফিরে আসবে। এখন কথা হলো, এদের নিয়ে আমাদের করনীয় কি! বাংলাদেশ সরকার এদের নিয়ে কি ভাবছে! তেুতুল হুজুর শফি সাহেব কি ভাবছেন! খালেদা ফালূ ম্যাডামই বা কি ভাবছেন! এরা আয়-রোজগার করা অবস্থায় যদি এমন করতে পারে, তবে দেশে এসে বেকার অবস্থায় কি করতে পারবে না। পঞ্চাশ টাকা পেলে তাদের মায়ের গলায়ও চেপে ধরতে হাত কাঁপবে না। আর দেশ!
এদের নিয়ে ভাবার দরকার। এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট আইন দরকার। যারা জঙ্গি বাদের সাথে সম্পৃক্ত হবে। যাদের নাম আসবে, সবাইকে আত্মসুদ্ধির জন্য দীর্ঘ মেয়াদে কারাগারে আটকে রাখতে হবে, যতক্ষণ না সুদ্ধি হবে। সাথে যে নেতা বা যে ব্যক্তি এদের পক্ষে কথা বলবে তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০৬