somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিঞ্চিৎ রম্য ! আমি যখন লিখক ছিলাম । :P

০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এক কালে আমি মস্ত লিখক ছিলাম ।আমার লিখার সুখ্যাতি নিজ বাড়ীতো বটেই ,পুরো গ্রামেই চাউর হইয়া গিয়াছিল ।

বাড়ি ,গ্রাম কি বলিতেছি ; আমার পাঠক ছিল ব্রহ্মাণ্ড বিস্তৃত । তাবৎ বিশ্বের তৃষ্ণার্ত পাঠকগন আমার লিখার জন্য তীর্থের কাকের মত হা করিয়া থাকিত । যাহার রেশ ধরিয়া আমার গুণমুগ্ধদল দলে দলে আমার দ্বারে হাজীর হইতেন ।
আগেই বলিয়াছি , আমি ছিলাম মস্ত লিখক । তাহাবৎ লিখনি প্রত্যাশীদের বসাইয়া রাখিয়াই তাৎক্ষনিক তাহাদের চাহিদা মাফিক লিখা লিখিয়া তাহাদের সম্প্রদান করিতাম । তাহারাও হাস্য বদনে ফিরিয়া যাইতো ।

পাশের বাড়ীতে এক নারী সমাবেশে আমার এক ভগিনী হাজির ছিল । (তার মুখ নিঃসৃত) হাজেরিনে মজলিশে একথা সেকথার পর এক মহিলা আক্ষেপ করিয়া আমার এক জেঠাইমাকে বলিতেছেন ,''অবা আঁর হোলা বিদেশতুন কোন টেঁআ হইসা হাঁড়ায় না ,কত কষ্ট করিয়ের ।''
কিরূপ পরামর্শ প্রদান করিবেন তাহা যেন জেঠাইমার জিহ্বার অগ্রভাগেই মৌজুদ ছিল ।
-'' আরে কি কস টেঁআ হাডায় না , অমুকের হোলার আতে চিড়ি লেয়া ,দেখবি কেমনে টেঁআ আইয়ে ।''

বলা বাহুল্য বোধ করিতেছি যে ''অমুকের হোলা''টাই এই অধম লিখক ।
এতক্ষনে পাঠককুলের গোচরে আসিয়াছে যে , আমি কি টাইফের লিখক ছিলাম ।

সেকালে গ্রামে পত্র লিখকের বড়ই আকাল ছিল । যাহারা চিঠি পত্র লিখিত বা পড়িতে পারিত তাহাদের রীতিমত ''মাস্টর'' বলা হইত ।
বয়সে পিচ্ছি ছিলাম বলিয়া আমি ''মাস্টর'' নামটা ফাটাইতে পারিলাম না , আফসোস !

প্রোষিতবর্তিকা এক ভ্রাতৃবধূ অনেকদিন ধরিয়া এক খানি পত্র লিখিয়া দিবার তরে আমার পিছু লইয়াছে ।
আমি আজ,কাল,পরশু বলিয়া ''দাম'' দেখাইতেছিলাম ।

একদা বিদ্যালয় গমন প্রাক্বালে ভ্রাতৃবধূটি আমার হস্তে এক খানা ''ইনকিলাব'' ধরাইয়া দিলো । সাথে মধ্যপ্রাচ্যের ডাক মাশুল আট টাকা ।
ভাবনায় পড়িলাম এই পত্র উনি কাহার হস্থে লিখাইলেন । পাশের বাড়ীতে এক নববধূর আগমন ঘটিয়াছে । দুই তিন কেলাশ পাশ দিয়াছে বলিয়াও শুনিয়াছিলাম । এই বধূটি আমার প্রতিধন্ধি হইয়া উঠিতেছে কিনা বুঝিতেচিলাম না ।

পোষ্টাপিসে গমনান্তে ''জেব'' হইতে পত্র খানা হস্তে নিয়া দেখি , এর জোড়া মুখ আলগা হইয়া আছে । ভাত দিয়া আঠা কর্ম সারানোয় এমনটি ঘটিয়া থাকিতে পারে ।

অনধিকার চর্চা বশতঃ ( ঠিক অনধিকার চর্চাও নহে ,প্রতিধন্ধি , প্রতিপক্ষ সম্পর্কে সম্যক ধারনা লাভার্থে টুকটাক গোয়েন্দাগিরির প্রয়োজনীয়তা রহিয়াছে) পত্রের মুখান্মেশ ঘটাইয়া দেখি , ভিতরে এক খানা সাদা কাগজ , কয়েক গাছি লম্বা চুল আর কিছু তিব্বত পাউডার ।
আহারে ! আহারে !!

ইশকে খত লিখিবার বেলায় আমার খ্যাতি সম্পর্কেও বিদগ্ধ প্রেমিকরা অবগত ছিল । ভ্রাতুষ্পুত্র মিন্টু ( আমরা সমবয়সী) ছিল আমার বান্ধা কাস্টমার । চা, বিস্কুট বা বিড়িতে দুই তিন টান জাতীয় কিঞ্চিৎ সন্মানির বিনিময়ে সে আমার কাছ হইতে অনেক লিখা হাতাইয়া নিয়াছে ।

তাহার হস্ত লিখা ছিল জীবন্ত ''হিব্রু লিপি'' , মহেঞ্জোদারোতে প্রাপ্ত প্রাচীন শিলালিপির সাথে যার কিঞ্চিৎ মিল ছিল ।

তাহার কিয়ৎ শিক্ষিত প্রণয়িনীরা হিব্রু পাঠে পারঙ্গম ছিল না বিধায় তাহারা এই লিপির মর্মোদ্ধার করিতে ব্যার্থ ছিল । তদ্দরুন মিন্টুও হালে পানি পাইতেছিল না ।

অগত্যা সে কোনরূপ কপি ব্যাতিরেকে আমার লিখা প্রেমপত্র খানা তাহার ১৩ নম্বর প্রেমিকার বইয়ের অভ্যন্তরে সমর্পণ করিয়াছিল ।
ইহা লইয়া বিদ্যালয়ে মহা হুলুস্থুল !

এই হস্তলিপি কাহার তাহা নির্ণয়ে প্রধান শিক্ষক উমেশবাবুকে শার্লখ হোমস হইবার প্রয়োজন ছিল না ।

অনেক দিবস পর একটা ''ছেঁচা'' কর্মের উপলক্ষ পাইয়া তিনি ঈষৎ পুলকিত । সাহাব উদ্দিনকে ''খাজুরের ডাণ্ডা'' আনিবার নির্দেশ দান করিয়া তিনি দুই খানা আবুল বিড়ি ছাইয়ে রূপান্তর ঘটাইলেন । ( সেকালে ধূমপান এখনকার মত এত আপত্তিকর বিষয় হইয়া উঠেনি , অফিস ,আদালত,শ্রেনিকক্ষে এর যথেচ্ছ ব্যাবহার ছিল ।)

সাহাব উদ্দিন অনেক দিন ধরিয়া এরূপ একখান পত্র লিখিয়া দিবার জন্য আমার শরন নিয়া আছে । এখন পর্যন্ত চা বিড়ির দর্শন ঘটেনাই দেখিয়া আমি নানাহ বাহানায় তাহাকে ৩ মাস ঘুরাইয়াছি ।

এইক্ষণে তাহার শোধ লইবার একটা মওকা আসিয়া তাহার হস্তে ধরা দিবে ,এইটা তাহার কল্পনারও অতীত ছিল ।

''মওকা''র সবর্চ্ছো ব্যাবহার নিশ্চিত কল্পে সে খর্জূর বৃক্ষের সবচাইতে মোটা ডাণ্ডাগুলিই ভাঙ্গিয়া আনিয়াছে । তাহার ভাব দেখিয়া মনে হইতেছিল , আস্ত খর্জূর বৃক্ষটি ভাঙ্গিয়া আনিতে পারিলেই সে অধিক তৃপ্ত হইতো ।

ফিসফাস করিয়া সেলিমের সাথে পরামর্শ করিলাম । সে ধন্বন্তরি এক উপায় বাতলাইয়া দিল । সেলিম একবার ধূম্র পান করিতে যাইয়া ধরা পরিয়াছিল । এই তরীকা প্রয়োগ করিয়া পূর্বে সে উমেশ বাবুর বিড়ির আদালত হইতে পিষ্ঠ অক্ষত রাখিতে সফল হইয়াছিল ।

শিক্ষক প্রবর ধুম্রএস্তেমাল করিয়া শরীরে পূর্ণ শক্তি সঞ্চয় করিয়া উঠিয়া দাঁড়াইলেন ।

সেলিম ছিল ''চিকন'' কর্মে মহাজ্ঞ্যানী । সুতরাং ''মহাজ্ঞ্যানী মহাজন, যে পথে করেছে গমন --'' আমিও সেই পথে ক্লাসের পেছনের ভাঙ্গা বেড়া দিয়া ''খিচ্ছা'' দৌড়, একেবারে বীরের মত পলায়ন ।

সেই দিবস হইতে লিখক তাহার সাহিত্য কর্মের প্রেমপত্র শাখা হইতে অবসর লইয়াছিল ।

এক সময়ে প্রবাসীরা দেশের একখানা পত্রের জন্য অধীর অপেক্ষায় থাকিতো , দেশের স্বজনরাও অনুরূপ । সেই দিন বহু আগে গত হইয়াছে । প্রিয়জনের মনের আকুতি মিশানো সেই চিঠি সাহিত্য এখন বিলুপ্ত । সে স্থান দখলে লইয়াছে মোবাইল ফোন , ইন্টারনেট ।

অনেক সময় শেফালী ঘোষের একখান সঙ্গীত মনে পড়ে -

''ঘৃত,মধু,দুধের সর ,তুইলা রাখছি শিকার পর ,
আইসা বন্ধু খাইবা তুমি বসিয়া নিরলেরে ,
যারে যা চিঠি লেইখা দিলাম সোনাবন্ধুর নামেরে ----''

কিংবা মহাদেব সাহার সেই বিখ্যাত কবিতা - চিঠি দিও ।

করুণা করে হলেও চিঠি দিও,
খামে ভরে তুলে দিও আঙ্গুলের মিহিন সেলাই
ভুল বানানেও লিখো প্রিয়, বেশি হলে কেটে ফেলো তাও,
এটুকু সামান্য দাবি, চিঠি দিও,

আহ ! বড় নস্টালজিক হইয়া পড়ি ।
রবি বাবুর সাথে সুর মিলাই ,''পুরনো সেই দিনের কথা ভুলবো কিরে হায় -----।''
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৩৬
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×