ফেসবুকের বরাতে জেনেছি সেলিম আনোয়ার ভাই কোরবানীর গরু কিনেছেন ৭১ হাজার টাকা দিয়ে, চামড়া বিক্রি করেছেন ৪০০ টাকা। ব্লগার জুলিয়ান সিদ্দিকী ৬৭ হাজার টাকায় কেনা গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন ১২০ টাকায়।
আমি কিনেছি তাদের চেয়েও কম দামে। চামড়া ব্যাপারি না আবার আমার কাছে উলটা টাকা চায়; এই ভয়ে আমি শংকিত ছিলাম।
ঈদের আগে এক সকালে গোস্ত বাজার গেলাম। দেখলাম এক পিচ্ছি একটা ছাগলের চামড়া এনেছে বিক্রি করার জন্য। বিক্রিও করেছে। মুল্য ১০ টাকা। গোস্ত ব্যবসায়ী কালামকে বললাম, ছোট ছেলে দেখে ঠকাচ্ছো?
কালাম হেঁসে বলল- না ভাইয়া, বড় কেউ আনলে কিনতামই না! ছোট ছেলে দেখে দয়া পরবশ হয়ে ১০ টাকা দিলাম। চামড়াটা আমার কোন কাজে লাগবেনা, খালে ফেলে দেব।
বললাম- বিষয় কি?
সে জানালো- সরকার কতৃক এবার লবন দেয়া ছাগলের চামড়ার মুল্য নির্ধারন করা হয়েছে বর্গফুট ১৩ টাকা। আর গরুর চামড়া ৩৫-৪৫ টাকা। একটা ছোট ছাগলের চামড়ায় ১ বর্গফুটের বেশি হয়না। লবন লাগে এক কেজি, যার মুল্য ১২ টাকা। এবার আপনিই বলেন আমি একে ঠকিয়েছি কিনা?
ছেলেটার সাথে আলাপচারিতায় জানলাম- সদকা করা ছাগলের চামড়াটা কে জানি তাকে আল্লাহর ওয়াস্তে দিয়েছে। ২০ টাকা সিএনজি ভাড়া দিয়ে এসেছে, যাওয়ার ভাড়া নাই, হাতে আছে ১০ টাকা। কিভাবে বাড়ি যাবে এই ভেবে সে অশ্রুসজল।
সারা পৃথিবীতে চামড়ার এত চাহিদা, আন্তর্জাতিক বাজারে যেখানে প্রতি বর্গফুট চামড়ার মুল্য ১৩৪ টাকা সেখানে আমাদের দেশে চামড়ার মুল্য ৩৫ টাকা কেন? চামড়ার মুল্য কম হলে চামড়াজাত পণ্যের মূল্যওতো কম হওয়ার কথা! অথচ এক জোড়া চামড়ার জুতা কিনতে দেখি ৬/৭ টা গরুর চামড়ার সমান মুল্য দিতে হয়, এর কারন কি? ইউরোপে চামড়ার একটি মানিব্যাগ বিক্রি হয় বাংলাদেশী ১০ হাজার টাকায়। এ চামড়া নিশ্চয় এরা ৩৫ টাকা দরে কিনে এত মুনাফা করেনা। চড়া মুল্য দিয়ে চামড়া কিনতে হয় বলেই সে সব দেশে চামড়াজাত দ্রব্যের এত দাম!!
বিষয়টা অনেকের জানা থাকার কথা। এক সময় চামড়া এমন দামী বস্তু ছিল যে, চোরেরা গরু জবাই করে শুধু চামড়া নিয়ে যেতো। গরুর শিংএ একটা চিরকুট লিখে যেতো, ‘হালাল ভাবে জবাই করা হয়েছে।‘
সিন্ডিকেট করে এখন চামড়ার দাম এত কমানো হয়েছে যে, এখন চোররা চামড়া না নিয়ে মাত্র আধা কেজি গোশত নিয়ে গেলেও চামড়া নেয়ার থেকে বেশি লাভবান হবে।
বিভিন্ন মাধ্যমে দেখেছি সিন্ডিকেট ওয়ালাদের জব্দ করতে চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলা সহ অনেকে অনেক প্রস্তাব দিয়েছেন। চামড়া যে খাওয়াও যায় এ বিষয়ে কেউ কিছু বলেননি। চামড়া কিন্তু খাদ্য হিসাবে অতি সুস্বাদু। চামড়ার স্বাদের সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। অনেকেই হয়তো চোখ কপালে তুলে বলবেন, ‘আমি আবার চামড়া খাইলাম কখন?’
তাদের জ্ঞাতার্থে- চামড়া না খেলেও গরুর পায়ার নেহারী নিশ্চয় সকলের খাওয়া হয়েছে। এই পায়ার খুরের উপরের অংশটি কিন্তু চামড়া সহ নেয়া হয়। সেদ্ধ করার পর লোম উঠে যায়, এর পরে খুরের সাথে ওই চামড়াটিও রান্না করা হয়, যা খেতে অতি সুস্বাদু।আমাদের এলাকায় কোরবানের গরু যারা কাটা কুটি করে এরা গরুর মাথার চামড়াটি রান্না করে খাওয়ার জন্য নিয়ে যায়, এদের জিজ্ঞেস করে জেনেছি এটা খেতে নাকি খুব টেস্টি।
আফতাব ডেইরী সহ কিছু কিছু স্থানে এবার কোরবানীর গরু কেজির মাপে বিক্রি হয়েছে। কেজি ৩৫০ টাকা। গড়ে একটা চামড়ার ওজন হয় ১৫ কেজি। এই দরে একটা চামড়ার দাম পরিশোধ করতে হয়েছে ৫২৫০ টাকা। চামড়ার সর্বোচ্চ ব্যবহার কল্পে সেই চামড়া সিন্ডিকেট ওয়ালাদের কাছে ১২০ টাকায় না বেচে খেয়ে ফেলা হবে অধিক লাভ জনক। আর একবার যদি বাঙ্গালী এটা খাওয়া শুরু করে তথন মাংস দোকানেই চামড়া কেজি দরে বিক্রি শুরু হয়ে যাবে। ইদ ম্যাগাজিনে দুই পাতা জুড়ে থাকবে ‘গরুর চামড়ার তিন পদ’ নামের আর্টিকেল আর কেকা ফেরদৌসি টিভি অনুষ্ঠানে নিয়ে আসবেন, ‘গরুর চামড়ার তেহারী’ নামের কোন মজাদার রেসিপি।
একমাত্র এভাবেই সিন্ডিকেট ওয়ালাদের ‘’–ন্দে বাঁশ আর হাতে হারিকেন’ ধরিয়ে দেয়া সম্ভব।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৫২