somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভয় যেখানে জয়ও সেখানে কিন্তু ভয় সব সময় ভীতিকর!

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



যদিও ভ্রমণ সব সময় আরামদায়ক হওয়ার কথা তবুও মাঝে মাঝে তা হয় বেদনাময় কিংবা ভয়ংকর! তেমনই একটি অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে গত পরশুদিন চট্টগ্রাম থেকে আসার পথে। গত ১৪/১২/২০১৭ইং তারিখে গিয়েছিলাম চট্টগ্রামে। উদ্দেশ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আয়োজিত বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগদান করা এবং আমাদের সংগঠন ‘‘চট্টগ্রাম বন্দর মেরিন কন্ট্রাক্টরস শ্রমিক জোট” এর পক্ষ থেকে বিজয় র‌্যালীতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্যে আমি এবং আমাদের “পায়রা বন্দর মেরিন কন্ট্রাক্টরস শ্রমিক জোট” এর সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব মোঃ রুবেল খান সহ চট্টগ্রামে যাই এবং ১৫/১২/২০১৭ইং তারিখে আবার রিটার্ণ টিকেট কনফার্ম করে নেই অর্থাৎ ১৮/১২/২০১৭ইং তারিখ আমরা ঢাকা ফিরবো। কারণ পুরো ডিসেম্বর মাসটাই টিকেট এর খরা মৌসুম চলতেছে বৈকি।



যাই হোক, আমাদের চট্টগ্রামের অনুষ্ঠান শেষে ঢাকা ফিরার অপেক্ষা এবং সেখানে বাকি কাজগুলো সম্পাদন শেষ করার পালা চলছিলো। যথারীতি আমাদের ঢাকা ফিরার দিনও ঘনিয়ে আসতেছে। হঠাৎ করে আমাদের পায়রার সাংগঠনিক এর বাড়ী থেকে জরুরী তলব, তাই কনফার্ম তারিখের একদিন আগেই ঢাকাতে চলে আসতে হয়েছিলো জনাব রুবেলকে। এই পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাক আছে...



বিপত্তি বাঁধলো যখন আমাদের কনফার্ম করা দুটো সীটের মধ্যে একটি সিট শেয়ার করা হয়েছিলো। কারণ আমার সহযাত্রী একদিন আগেই ঢাকা চলে আসার কারণে আমাদের দুটো সীটের জন্যে আমি একাই যাত্রী হিসেবে ছিলাম। সেজন্যে একটি সীট শেয়ার করে আমার ঘাটতি মেটানোর চেষ্টাও অভ্যাহত রেখে একটু বেশি সময় নিয়ে যাত্রার দিন ষ্টেশনে পৌঁছে গেলাম। উদ্দেশ্যে বাড়তি সীটের জন্যে একজন যাত্রী খুঁজে নেয়া। অর্থাৎ আমার খালি থাকা সীটের টাকাটা তুলে নেয়া। যাই হোক, যথা সময়ে আমি একজন কাঙ্খিত যাত্রীও পেয়ে গেলাম। যদিও আমাদের সীট ছিলো প্রথম শ্রেণীর নন এসি ক্যাবিনে। ঐ ক্যাবিনে আমাদের দু’সীট ব্যাতিত আরো চারটি সীট ছিলো, যেখানে ভ্রমণ করছিলেন ব্রাক্ষ্মবাড়িয়ায় একটি বিয়ে বাড়ীর উদ্দেশ্যে আসা পরিবারের সদস্যবৃন্দ।



যথারীতি ট্রেন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। .... অনেক গল্প, সংক্ষিপ্ত করছি! তারপর যা ঘটলো, অবাক হয়ে গেলাম। টিকেট চেক হলো এবং কনফার্ম করলাম আমার সহযাত্রী থেকে প্রাপ্যটুকু, যদিও তিনি আমার প্রাপ্য থেকে ১০টাকা কম দিয়েছেন! তবুও আমি খুশি কারণ ঐ টিকেটটি কাউন্টারে ফেরৎ দিলে আমাকে দেয়া হতো মাত্র ৫০%টাকা যা ঐ লোক থেকে পাওয়া অর্থ থেকে অর্ধেকেরও কম। আর এটাই আমার কাম্য ছিলো। এজন্য আমি কাউন্টারে টিকেট পরিবর্তন না করেই সরাসরি একজন সহযাত্রী খুঁজে নিয়েছিলাম!



এতদিন শুনে আসছি, অপরিচিত লোকের দেয়া কিছু খাবেন না কিংবা অপরিচিতদের সঙ্গী হবে না। আর সেটাই হলো আমার বেলায়! চট্টগ্রাম ষ্টেশন থেকে কিছু দূর ট্রেনটি আসার পরে কয়েকজন পুলিশ যাত্রীদের সাথে থাকা ব্যাগ চেক করার জন্যে ট্রেনে উঠেছিলেন। কিন্তু অবাক হয়ে গেলাম, যখন ঐ পুলিশগুলো অন্য কোনো বগিতে না গিয়ে সরাসরি আমাদের বগিতে এসে রুম তল্লাসি শুরু করলেন। আর তাদের সন্দেহ সঠিক হলো। আমার সাথে শেয়ার করে ওঠা ঐ লোকটি ছিলো আস্ত একটা ইয়াবা ব্যবসায়ী! কিন্তু দেখে তো আমি বুঝতে পারিনি। যথারীতি পুলিশ অফিসারেরা জিজ্ঞাসা শুরু করলেন, কে কোথায় থাকি? কি করি? জিজ্ঞাসাবাদ থেকে ঐ বিয়ে বাড়ীর সদস্যরাও বাকি থাকলেন না!



চেকের প্রথমেই পুলিশ অফিসার বলতে লাগলেন, কার ব্যাগ কোথায় এবং উপরে সিলিং এ রাখা জ্যাকেট টি কার? যখন কেউ স্বীকার করছিলেন না যে, জ্যাকেট টি কার! ঐ ব্যাক্তি ছাড়া আমরা সবাই হতবাক হয়ে গেলাম! তবে সবার থেকে আমিই বেশি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কারণ ঐ লোকটি আমার টিকেটের সাথে শেয়ারিং করা। এবং উক্ত জ্যাকেটটি তার অথচ সে স্বীকার করছে না! এরপর অফিসার ঐ জ্যাকেটি নামিয়ে এনে যখন পকেটে হাত দিলেন তখন আমরা সবাই আশ্চর্য হয়ে গেলাম কারণ আস্ত একটা চিঠির খামে ভরা কয়েকটি ছোট ছোট বাক্স। এবং তার ভিতরে ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে ভরা!



তারপর যখন সবাই এক এক করে পরিচয় দিলাম তখন পুলিশ অফিসারটি তার ঊধ্বর্তন অফিসারকে বললেন, এখানে চট্টগ্রাম বন্দর এর নিরাপত্তার সাথে জড়িত এবং শ্রমিক জোট এর সাংগঠনিক সম্পাদক ভদ্রলোকের সাথে শেয়ারিং করা ব্যাক্তিই আমাদের সন্দেহের তালিকায়। আমরা তাকে পাকড়াও করেছি এবং হাতকড়া পরিয়েছি! স্যার আমরা ওনাকে নিয়ে চট্টগ্রাম রওনা হবো ফেনী থেকে। এর ভেতরে অনেক সময় কথাবার্তা এবং হাল্কা মারসহ কিছু সময় ভেতরে অবস্থান করলেন এবং আমাদের সকলের মোবাইল নম্বর রেখে দিলেন ঐ কর্মকর্তা। তিনি রুম থেকে বের হয়ে ফেনী রেল পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করলেন এবং রেল পুলিশের সহায়তায় আসামীকে আবার কর্ণফুলি ট্রেনে করে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা বলে একজন কন্সটেবলকে দায়িত্ব দিয়ে বের হয়ে গেলেন। ততক্ষণে ট্রেনটি প্রায় ফেনীতে চলে এসেছে।



পুরো ব্যাপারটি হজম করতে আমার সময় লেগেছিলো কারণ এটি আমার জন্যে একটি ভয়ংকর সময় ছিলো এবং আমার দুপুরের ক্ষুদাও মিঠে গিয়েছিলো ভয়ে। যদিও আমার পরিচয় পেয়ে অফিসার আমার সাথে খুবই নরম ও সুন্দর আচরণ করেছেন। যদিও ব্যাপারটি ভীতিকর ছিলো তবুও আমি সকলকে বলবো, তোমরা কিংবা আপনারা কেউ কখনো টাকা নষ্ট হয়ে গেলেও অপরিচিত লোকের দেয়া কিছু খাবেন না কিংবা অপরিচিত লোকের সাথে সফর করবেন না। এটি আমার জীবনে একটি ভয়ংকর ঘটনা বৈকি। যদিও আমি খুবই সম্মানিত হয়েছিলাম অফিসারের আচরণে তথাপি ভয়ও কি কম ছিলো!?

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৫৮
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×