দেশে কোটা নিয়ে গতকালকে রাত আনুমানিক ৩টার দিকে শাহবাগ এবং টিএসসি’তে যা ঘটে গেলো তা অকল্পনীয়! আমাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে, আমরা সবাই মেধাকে মূল্যায়ন করতে চাই কিন্তু একজন মেধাবীকে যায়গা তৈরি করে দিতে কখনোই প্রস্তত নই! যদিও পুলিশি আচরণে ডিএমপি কমিশনার দুঃখ প্রকাশ করেছেন তথাপি এটা কি পুলিশের কাজ ছিলো?!
আমাদের দেশের নির্বাহীরা কিংবা প্রশাসনে থাকা কর্তাব্যক্তিরা কি এই ব্যাপারে ছাত্র/ছাত্রীদের সাথে আলাপ করে সমস্যার সমাধান করতে পারতেন না? কিন্তু সেটা না করে বরং রাতের আঁধারে একটি মেধাবী গোষ্ঠীর উপর বর্বর আচরণ করা হলো, এটা কি পাকিস্তানিদের পক্ষ থেকে বাঙ্গালীদের উপর চালানো বর্বরতার চেয়ে কোনো অংশে কম হবে কি?!
যাই হোক পরিশেষে আন্দলোনরত সকল ছাত্র/ছাত্রীদের আশা জাগিয়ে কোটা প্রথা নিয়ে কেবিনেট সবিচ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিলেন ব্যাপারটা পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। কিন্তু বিধিবাম ছাত্র/ছাত্রীদের তথা মেধাবীদের প্রতি কোটা প্রথার মূল্যায়ন সরকার এই মুহুর্তে করতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিলো!!!
অধ্যাপক আসিফ নজরুলের ভাষ্যমতে- ১৯৭২ সালের সংবিধানে মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা সম্পর্কে কিছু বলা নেই। এই সংবিধান প্রণীত হয়েছিল যে গণপরিষদে, সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চাকরিতে কোটা প্রদানের কথা উত্থাপিতই হয়নি।
গণপরিষদে কেবল সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদের অধীনে নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান প্রসঙ্গে পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা ও নিহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয় (বাংলাদেশ গণপরিষদের বিতর্ক, দ্বিতীয় খণ্ড, ১৯৭২, পৃষ্ঠা ৪৭০-১)।
সামাজিক নিরাপত্তার উদার ব্যাখ্যা করলে শুধুমাত্র পঙ্গু বা নিহত মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের জন্য চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ বৈধ হতে পারে, অন্যদের জন্য নয়। জনসংখ্যার অনুপাতে এই কোটা হতে পারে বড়জোর ১ শতাংশ। বাকী ৯ শতাংশ হতে পারে নারী, প্রতিবন্ধী আর ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য।
কোটা কোনভাবেই মোট চাকরীর ১০ শতাংশের বেশী হোয়া উচিত না। এটাও উচিত না, কোটা পুরন না হলে পদ শুন্য রেখে দেয়া। মুক্তিযোদ্ধারা এজাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের সম্মানিত করতে হবে অন্যভাবে। আমি দৃঢভাবে বিশ্বাস করি, ঢালাও ভাবে কোটা বরং অসম্মানিত করে তাঁদের।
এখন দেখা যাক এই দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা কত জন মেধাবী কোন খাতে তাদের ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে কোটা বাঁধার সম্মুখীন হতে পারেন...
পরিকল্পণা মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যা এই মুহুর্তে ১৫,২৫,১৮১৫০ জন। তবে ওয়ার্ল্ডওমিটার ইনফোর হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশের এই মুহুর্তে মোট জনসংখ্যা ১৬,৬৩,৬৮১৪৯ জন। যদি আমরা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী কোটার শতকরা হিসেব দেখি তাহলে কি দাঁড়ায় নিচে দেখা যাক...
দেশের মোট জনসংখ্যা = ১৫,২৫,১৮১৫০ জন।
----------মুক্তিযোদ্ধা = ২ লাখ। কোটা = ৩০%
প্রতিবন্ধী = ২০লাখ ১৬ হাজার। কোটা = ১%
উপজাতি = ১৫ লাখ ৮৬ হাজার। কোটা = ৫%
-------------- দেশের মোট নারীর কোটা = ১০%
--------------------------- জেলা কোটা = ১০%
------------------ সংরক্ষিত মোট কোটা = ৫৬%
৯৭.৩৭% মানুষের জন্য কোটা ৪৪%! আর মাত্র ২.৬৩% মানুষের জন্য কোটা ৫৬%! এখন মনে করুন ৩৮ তম বিসিএস-এ সরকারীভাবে ২০২৪ জন ক্যাডার নিয়োগ দেয়া হবে। তাদের ইন্টারভিউ কল করা হয়েছে। যারা উত্তীর্ণ হবেন তাদের মধ্যে-
মুক্তিযোদ্ধা =২ লাখের জন্য =৩০% কোটা
প্রতিবন্ধী =২০লাখ ১৬ হাজারের জন্য =১%
উপজাতি =১৫লাখ ৮৬ হাজারের জন্য =৫%
নারীদের জন্য =১০% এবং
বিশেষ জেলার জন্য =১০% নির্ধারিত, তাহলে থাকলো বাকি কত?
সর্বমোট ২.৬৩% মানুষের জন্য = ৫৬% কোটা = ১১৩৪ টি বিসিএস ক্যাডার পদ বরাদ্দ। আর সাধারন প্রতিযোগী মেধাবী ৯৭.৩৭% মানুষের জন্য ৪৪% কোটা = ৮৯০ টি পদ বরাদ্দ।
এর মানে আপনি যত মেধাবীই হোন না কেন, চাকরি পাবেন না। আপনার চেয়ে কম মেধাবী, তার জন্য কোটা খালি থাকার কারনে চাকরি পেয়ে যাবে অনায়াশেই।
২.৬৩% লোক ১১৩৪ টি পদ পাবে বিনা কন্ট্যাস্টে। আর ৯৭.৩৭% লোক ৮৯০ টি পদের জন্য লড়তে হবে। এরপর ঘুষ, মামা, খালু তো লাগবেই।
তাই কোটা সংস্কার সময়ের দাবী বলে মনে করি। অথচ সেদিন দেখলাম এক ব্যক্তি জাফর ইকবালের উপর হামলা করল! আর সাথে সাথে কিছু ঢেউটিন মার্কা পাবলিক চেতনারদন্ড খাড়া কইরা টাইমলাইনে ভাসাই দিয়েছিল...এ বলিই য়া যে-
"যে জাতি গুণির কদর করে না; সেখানে গুনির জম্ম হয় না"! কিন্তু গতকাল রাতের আঁধারে এতোগুলি গুণির উপর নির্বিচারে হামলা হইলো, অথচ তাদের চেতনারদন্ড আজ নিথর হয়ে আছে!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৫