"আজ মাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে এলাম।
মনটা একটু খারাপ লাগছে বটে! কিন্তু
ভালোও লাগছে এই ভেবে যে একটা কাজ
ভালোভাবে শেষ করতে পারলাম। মার
... প্রতি দায়িত্বও শেষ হলো।
সংসারটা এবার নতুন করে গুছিয়ে নেব। মার
ঘরটা গেস্টরুম বানাতে হবে। বাসায়
একটা গেস্টরুম ছিল না বলে লুনার কত
অভিযোগ—বাসায় গেস্ট এলে ওর
নাকি মানসম্মান চলে যায়। ঠিকই
তো বলেছে, গেস্টরুম একটা প্রয়োজন
বৈকি! মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর বুদ্ধিটাও
তার। আমারও যে মত ছিল না,
তা নয়। মারও বোধ হয় এটাই ইচ্ছা ছিল।
কারণ, তিনি আমাদের মতামতের
কোনো বিরোধিতা করেননি।
তা ছাড়া বাবার মৃত্যুর পর মা খুবই
নিঃসঙ্গ ছিলেন। আমি ও লুনা—দুজনই
চাকরিজীবী, অফিসে যাই। মাকে কে সময়
দেবে? ওখানে গিয়ে মা নিশ্চয়ই
ভালো থাকবেন।
সমবয়সী অনেককে পাবেন সঙ্গী হিসেবে।
নাহ্, কাজটা ভালোই করেছি। আমার সব
স্বপ্ন আমার পরিবারকে ঘিরে।
লুনাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। আমাদের
দুজনের সংসারে অনাবিল আনন্দ
বয়ে এনেছে আমাদের সোনার
টুকরো ছেলে।
তাকে পেয়ে আমার জীবনটা সত্যিই অন্য রকম
হয়ে গেল। আমার সব মনোযোগ
এখন স্ত্রী-পুত্রের দিকে। বাবা-
মাকে দেখার সময় কই?
যেদিন বাবা মারা গেলেন, সেদিন একটু
অপরাধবোধ মনে জেগেছিল।
মনে হয়েছিল, আমার অবহেলার জন্যই
কি বাবা চলে গেলেন? বাবা স্ট্রোক
করেছিলেন। হয়তো ভেতরে ভেতরে আরও
অসুখ দানা বেঁধেছিল, কিন্তু মুখ
ফুটে কখনো কাউকে কিছু বলেননি তিনি।
বাবাকে দেখতে তো সুস্থই দেখাত, তাই
কখনো তাঁকে ডাক্তারের কাছে নেওয়ার
প্রয়োজন বোধ করিনি।"
............... পরিশিষ্ট এতক্ষণ নিজের
লেখা ডায়েরির কয়েকটি পাতা পড়ছিলেন
আবীর চৌধুরী।
তাঁর চোখের কোণে পানি। এখন তাঁর বয়স
পঁচাত্তর। পাঁচ বছর
আগে লুনা তাকে ছেড়ে চলে গেছে। আর
তাঁর আদরের ছেলে আনন্দ চৌধুরী আজ
সকালে তাঁকে রেখে গেল বৃদ্ধাশ্রমে।