somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অকুতোভয় সার্জেন্ট জহুরুল হক

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



"তাঁকে কখনো কাঁদতে দেখা যায়নি। কোনো কারণে কারো কাছে মাথা নত করেননি।"
সহযোগীদের কাছে শহিদ সার্জেন্ট জহুরুল হক।।

কথা বলছিলাম একজন সার্জেন্ট জহুরুল হকের, আগরতলা মামলার অন্যতম গর্বিত আসামী। পাক বিমান বাহিনীর একজন সার্জেন্ট তিনি। ১৯৬৮ সালের ২৬ জানুয়ারী বিমান বাহিনী থেকে তাঁর অবসর গ্রহণ করার কথা ছিল। এরই মাঝে, ১৯৬৮ সালের ০৬ জানুয়ারি দু্জন সিএসপি অফিসার সহ ২৮ জন বাঙালিকে গ্রেফতার করা হয়। সরকারীভাবে জানানো হয়, ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বরে অভিযুক্তরা ভারতীয় অর্থ ও অস্ত্রের সাহায্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ ঘটিয়ে কেন্দ্র থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে চেয়েছিল।
এর আগে একই অভিযোগে ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামি করে সর্বমোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার “রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্যদের বিচার” নামে একটি মামলা দায়ের করে, যা ঐতিহাসিকভাবে”আগরতলা ষড়যন্ত্র” নামে পরিচিত।
১৯৬৮ সালের ২২ জানুয়ারি, সার্জেন্ট জহুরুল হককে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ১৭ নং আসামী হিসেবে গ্রেফতার করা হয়। প্রথমে তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, পরে কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে আটকে রাখা হয়।
১৯৬৮ সালের ১৯ জুন মামলার শুনানি শুরু হয়। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে অবস্থিত ‘সিগন্যাল অফিসার মেসকে’ মামলার স্থান হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। ১৯৬৯ সালের ০৬ ফেব্রুয়ারি ছিল মামলার শেষ তারিখ।

বঙ্গবন্ধু ফাঁসিতে ঝুলানোর পায়তারাই শাসক গোষ্ঠী। সারা বাঙলায় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে কেন্দ্র করে গণআন্দোলন শুরু হয়, ঐতিহাসিকভাবে যা আমাদের কাছে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান বলে পরিচিত। বাঙালি জনতার দাবি ছিল একটাই, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্যদের মুক্তি প্রদান।
এই লক্ষ্যে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১৯৬৯ সালের ০৪ জানুয়ারি ঐতিহাসিক ১১ দফা কর্মসূচী পেশ করে। ৭ ও ৮ জানুয়ারি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে রাজনৈতিক ঐক্য ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি গঠন করা হয়। ২০ জানুয়ারি, ছাত্রদের মিছিলে গুলিবর্ষনের ঘটনায় নিহত হন ছাত্র আমানুল্লাহ আসাদুজ্জামান। ২৪ জানুয়ারি, পুলিশের গুলিতে নিহত হন কিশোর ছাত্র মতিয়ুর রহমান।

সার্জেন্ট জহুরুল হক বন্দীনিবাসে থাকাকালীন সময়ে তাঁকে প্রহরার দায়িত্বে নিয়োজিত পাকিস্তানী সৈনিকের হাতে থাকা রাইফেলের গুলিতে বিদ্ধ হন। ১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ তারিখের সন্ধ্যায় ক্যান্টমেন্টে সৈনিকদের খাবারের উচ্ছিষ্ট সংগ্রহের জন্য বাঙালি শিশুরা ভিড় করে। এতে অবাঙালি সৈনিকেরা কয়েকজন অভুক্ত শিশুকে ধরে এনে বন্দী শিবিরের সামনে অমানবিকভাবে প্রহার শুরু করে।
কয়েকজন বন্দী এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানালে হাবিলদার 'মনজুর শাহ' বন্দীদের নিজ নিজ কামরায় ফিরে যেতে আদেশ করেন। জহুরুল হক সে আদেশ উপেক্ষা করে মনজুর শাহের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়ে পড়েন। এতে মনজুর শাহ প্রচণ্ডভাবে রাগান্বিত হয়ে রাইফেলের বেয়োনেট লাগিয়ে তাঁর দিকে ধেয়ে আসেন। কিন্তু সার্জেন্ট জহুরুল হক পাশ কাটিয়ে আক্রমণকারীর হাত থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নেন এবং বিজয়ী বীরের মতো কামরার দরজায় গিয়ে তাকে রাইফেল ফেরত দেন।
পরদিন অর্থাৎ ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ তারিখ ভোরবেলা জহুরুল হক ঘর থেকে বের হলে মনজুর শাহ তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। ঐ গুলিটি তাঁর পেটে বিদ্ধ হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে কম্বাইন্ড মিলিটারী হাসপাতাল বা সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ঐদিন রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

জনগণ রোষে ফেটে পরে। সারা বাংলায় সহিংশ আইয়ুব বিরুধি বিক্ষোভ শুরু হয় ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট শুরু হয়, প্রতিবাদে ১৬ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট পালন হয়। মাওলানা ভাসানির পল্টনে এক জনসভায় বলেন, 'প্রয়োজন বোধে করাচি বিপ্লবের মতো জেলের তালা ভেঙ্গে শেখ মুজিবকে নিয়ে আসা হবে।উপস্থিত লাখো জনতা স্লোগান দেই, ' জেলের তালা ভাঙবো-শেখ মুজিবকে আনবো '
ভাসানির ইমামতিতে, জহুরুল হকের গায়েবানা জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এবং শুরু হয় সহিংশ প্রতিবাদ। তোলে উঠে আইয়ুব শাহীর মসনদ।

জানি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ,আমাদের ইতিহাস আমরাই নিজেরাই সরিয়ে রাখছি। তবে যেতে হবে বহুদূর । জয় বাংলা।

তথ্যসূত্র :১। উইকিপিডিয়া
২। বাঙালির জাতীয়রাবোধ ও মুক্তিযুদ্ধ (ডা.মাহফুজ রহমান)

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:২৮
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×