বাংলাদেশ ক্রমশ প্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে,উন্নীত হয়েছে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে । দেশের সামগ্রিক উন্নতি ও সমৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যাপক সংস্কার সাধিত হয়েছে শিক্ষাক্ষেত্রে । পরিবর্তনের ছোঁয়ায় নতুন রুপ লাভ করেছে শিক্ষাক্ষেত্রের সকল কাঠামো ।
যুগের পরিক্রমায় পরিবর্তন আসবে এটাই স্বাভাবিক হয়তো এজন্য কোন এক ব্যাচ অসুবিধার সম্মুখিন হবে , পরবর্তী আগত অনাগতরা সুফল পাবে । কিন্তু বাংলাদেশে এ পর্যন্ত শিক্ষাক্ষেত্রে যত পরিবর্তন এসেছে সব সময়ই ক্ষতির / অসুবিধার সম্মখিন হয়েছে ২০১৪ এর H.S.C ব্যাচ । তার কিছু নমুনা তুলে ধরলাম----
১/ লাখো ছাত্র-ছাত্রির স্বপ্নের ঠিকানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় , বুয়েট কিন্তু ২০১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী দের থেকেই ঢাবি,জগন্নাথ,বুয়েট সহ দেশের অধিকাংশ ভার্সিটিতে তারা একবারই ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারবে দ্বিতীয়বার নয় যা পূর্বে দেয়া যেত।
২/এমনিতেই ২০১৪ ব্যাচ দ্বিতীয়বার অধিকাংশ জায়গায় পরীক্ষা দিতে পারবে না তার উপর প্রথম বার পরীক্ষা দিয়ে যে ভাল কোথাও চান্স নেবে তাও সম্ভব হয়নি ২০১৩ এর দ্বিতীয়বার ভর্তি প্রত্যাশিদের জন্য । কারণ তারা ভর্তি প্রস্তুতির সময় পেয়েছে পুরো ১ বসর ৪ মাস সেখানে ২০১৪ ব্যাচ পেয়েছে ৪ মাস।
৩/ ২০১৪ ব্যাচই প্রথম S.S.C-২০১২ এবং H.S.C-২০১৪ তে সর্বপ্রথম সকল বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্ন-পদ্ধতির মাধ্যমে বোর্ড পরীক্ষা দেয়।
যেখানে শিক্ষকদের না ছিল এ সৃজনশীল সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান না ছিল বই। ২০১৪ ব্যাচ পুরাতন ৬০০-৬৫০ পেইজ এর বই পুক্ষানুপুঙ্খ পরে পরীক্ষা দেয় আর বর্তমানে ২০০-২৫০ পেইজ এ সব শেষ । বই ই যখন দিতে না পারবে তখন পদ্ধতির যাতাকলে পিষে অমানুষিক নির্যাতন কেন করা হল আমাদের।
যেসব প্রতিষ্টান এখন দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ চালু রেখেছে তারাও পরীক্ষা নেবে নতুন কারিকুলাম এর বই থেকে যা ২০১৪ ব্যাচ এর পঠিত বই থেকে আলাদা।
৪/সরকারের অসতর্কতা ও প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন না করার কারনে প্রশ্ন ফাস কেলেঙ্কারির স্বীকার ২০১৪ H.S.C ব্যাচ । মেধার মুল্যায়ন না হওয়ায় ভাল খারাপ একি কাতারে তবে কি লাভ ছিল ১২/১৩ বছর ধরে এত কষ্ট আর পরিশ্রম করার ফলাফল যদি হয় অলস ফাকিবাজদের মতই ।
২০১৪ ব্যাচের গলার উপর নতুন খড়্গ (মেডিক্যাল এ ক্যারি-অন সিস্টেম বাতিল)
২০১৪ ব্যাচের যেসকল মেধাবিরা সকল প্রতিকুলতা অতিক্রম করে মেডিকেলের আঙ্গিনায় পদার্পণ করেছে তারা এখানে এসেও সরকারের পক্ষপাতমুলক আচরনের সম্মুখিন । তাদের থেকে তুলে দেয়া হচ্ছে মেডিকেলের ক্যারিওন সিস্টেম । অর্থাৎ সাপ্লিমেন্টারী দিয়ে পাস করার আগে আর ক্লাস করা যাবে না।
সাধরন মানুষদের মধ্যে খুবই প্রচলিত ধারনা হল যে ডাক্তার যত বেশি ফেল করে সে তত বেশি জ্ঞানি , পরীক্ষক যারা তারাও অনেক সময় মনে করেন ধুর একবার দুইবার ফেল না করলে কিসের উচ্চতর ডিগ্রি । ফলাফল মেডিকেলে ফেল খুবই কমন একটা বিষয় । আরও কিছু কারণ ত আছেই
> লিখিত পরিক্ষার চেয়ে মৌখিক পরীক্ষায় মার্কস বেশি তাই ভালো ছাত্রকে কোন শিক্ষক ইচ্ছা করলেই ফেল করাতে পারে।
>পাস মার্কস ৬০। কোন ফার্স্ট বা সেকেন্ড ক্লাস নেই কেবল পাস আর ফেল ।
বাস্তবতা হল সম্প্রতি সরকার সেখানে প্রথম পেশাগত পরীক্ষায় ফেল করাদের সরাসরি ফাসির ব্যাবস্থা করেছেন। ফেল করাদের আর কেউই নিজ ব্যাচের সাথে ক্লাস করতে পারবে না ক্যারিওন বন্ধের কারনে।
>> যেহেতু নভেম্বরে সাপ্লিমেন্টারী দিয়ে ক্লাস করতে হবে আবার পরের বসর মে মাসে দ্বিতীয় পেশাগত পরীক্ষা দিতে হবে সেহেতু প্রথম ৬ মাস ক্লাস + ওয়ার্ড না করে কিভাবে সেখানে পাস সম্ভব। পুনরায় তাকে সাপ্লি দিতে হবে। নভেম্বরে সে যদি আবার ফেল করে তবে সব শেষ ।এতে মেডিকেলেও সেশন জট শুরু হবে । মেডিকেলে সেশন জট নেই কেন কারো মনে কি প্রশ্ন জাগেনি -এতোদিন ক্যারিওন চালু ছিল তাই লাগেনি।
মেডিকেলে এসে প্রচুর পড়ার চাপে অনেকেই হতাশ হয়ে পরে কি করবে বুঝে ওঠার আগেই প্রথম প্রফেশনাল পরীক্ষা চলে আসে, অনেকের অসুক / পারিবারিক বিপদ ত হতেই পারে ।
>> ফেল করাদের জন্য সর্বচ্চ শাস্তি ত জারি করা হয়েছেই কিন্তু ৪০/৫০ বছরের পুরনো ৩০-৪০% ফেল করানোর মানসিকতা ত আর শিক্ষকদের যায়নি । তারা ফেল করিয়েই যাচ্ছে কিন্তু পূর্বে ক্যারিওন এর কারনে সবাই রেগুলার নিজ ব্যাচের সাথে ক্লাসও করেছে আর নিজ দায়িত্তে সাপ্লিমেন্টারীর প্রস্তুতি নিয়েছে - পাস করেছে এবং মে মাসে দ্বিতীয় পেশাগত পরিক্ষাতেও ভাল করেছে ।
>>> তবে আমরা কেন সে সুযোগ পাব না। উল্টো এতে লাভ বেসরকারি মেডিকেলের তারা আগের মতই ফেল করিয়ে শিক্ষার্থী দের কাছ থেকে সেসন চার্জের কথা বলে হাতিয়ে নেবে লক্ষ লক্ষ টাকা।
উপসংহারে বলব মেডিকেলে যত ভাল ছাত্রই হোক যে কেউ ফেল করতে পারে । আমার পরিচিত এক ভাই ই যে কিনা বুয়েটে এবং আইবিএ (বিবিএ) তে প্রথম বারই চান্স পেয়েছে সেও মেডিকেলে এসে হতাশার কারনে ফেল করে। তাই মেডিকেলে সরকার এর ক্যারি অন চালু রাখা উচিত। নয়তো ২০১৪ ব্যাচের পর থেকে চালু করতে হবে কারণ এমনিতেই আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। তবে আর নয় সরকারের উচিত এ ব্যাপারটি বিবেচনা করা ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:১০