এইচ এস সি পরীক্ষা দেবার পর সবাই চোখে রঙ্গিন চশমা দিয়ে স্বপ্ন দেখে তাড়াতাড়ি প্রতিষ্ঠা লাভ করতে । সেক্ষেত্রে অনেকেরই পছন্দে থাকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া । পত্রিকায় রংচটা বিজ্ঞাপন দেখে আর মেরিন প্রফেশন সম্পর্কে ধারনা না থাকার কারনে অনেকেই ভর্তি হয় । দ্রুত প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক ছাত্র বুয়েট , মেডিকেল , ঢাকা ভার্সিটির মত স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে চান্স পেয়েও ভর্তি হয় মেরিন একাডেমিতে এবং ভুল করে ।
আসুন জেনে নিই মেরিনে পড়ার খুটিনাটি---
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কীঃ
সমুদ্রগামী বানিজ্যিক জাহাজগুলোর নেভিগেশন, চলাচল এবং ইঞ্জিন প্রপালশন সম্পর্কিত ইঞ্জিনিয়ারিং মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং নামে পরিচিত ।এই ইঞ্জিনিয়ারিং এর ২টি ভাগ রয়েছে---
১)নটিক্যালঃ জাহাজের নেভিগেশন, স্ট্যাবিলিটি নিয়ে পড়াশুনা ।এই শাখায় পড়ে ধাপে ধাপে হয় ক্যাপ্টেন ।
২)ইঞ্জিনিয়ারিংঃ জাহাজের ইঞ্জিন প্রপালশন , মেইনটেনেন্স নিয়ে পড়াশুনা ।এই শাখায় পড়ে ধাপে ধাপে হয় চীফ ইঞ্জিনিয়ার ।
এখানে একটা ব্যাপার পরিষ্কার করা দরকার যে – বাংলাদেশ নেভী আর মেরিন এক না । মেরিনে পরে কোনো ডিফেন্স বা ফোর্সে যোগদানের কোনো সুযোগ নেই ।
কোথায় পড়া যায়ঃ
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার একমাত্র সরকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেরিন একাডেমী । এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে ।মেরিন একডেমীতে চান্স না পেলে বেসরকারীতে ভর্তি হয় অনেকে ।কিন্তু সেখানে পড়তে হলে আপনাকে গুনতে হবে কমপক্ষে ১২-১৪ লাখ টাকা যেখানে সরকারীতে লাগে ৪-৫ লাখ টাকা । এরপর চাকরীর নিশ্চয়তা নিয়ে আশঙ্কা আছেই ।
কেমন পেশা মেরিনঃ
কথায় আছে “ marine profession is not for mama’s boy” । এককথায় এই পেশাটা অনেক ঝুকিপুর্ন , বিপদজনক আর থাকে অনেক মানসিক চাপ । একারনে বেতনও তুলনামুলুক বেশি । একাডেমিক লাইফে তাই সেভাবেই একজন ক্যাডেটকে প্রস্তুত করা হয় । মুলত একাডেমিক লাইফ ও জাহাজে ক্যাডেট লাইফটাই বেশি কষ্টের । তারপর মোটামোটি আরাম পাওয়া যায় । ট্রেইনি হিসেবে জাহাজে কাজ করতে মেরিন একাডেমির ৪৭ তম ব্যাচের এক ক্যাডেটের চোখ নষ্ট হয়ে যায় ।ক্যাডেট লাইফ সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্ক দেখতে পারেন ।
লিংক ১
লিংক ২
চাকরীর বাজারঃ
অতীতে মেরিন প্রফেশন ছিল দারুন । চাকরীর সংকট বা বেতন নিয়ে কোনো সমস্যা ছিল না ।কিন্তু বর্তমানে অর্থনৈতিক মন্দা সহ বিভিন্ন কারনে বেতন ও চাকরীর সংখ্যা কমে গিয়েছে ।বর্তমানে মেরিন প্রফেশন যে কারণে সংকটের সম্মুখীন তা হল চাকরীর সমস্যা । বিশেষ করে একাডেমি থেকে পাশ করে বের হয়া ফ্রেশ ক্যাডেটরা চাকরী পাচ্ছেনা । সরকারী সহ বিভিন্ন বেসরকারী একাডেমী থেকে প্রতিবছর প্রায় ৮০০-১০০০ ক্যাডেট বের হচ্ছে । কিন্তু সে তুলনায় চাকরীর সংখ্যা নগন্য ।তাই পাশ করে বের হয়ে অনেকের বেকার বসে থাকতে হয় ।তাছড়া বিভিন্ন ভুয়া এজেন্ট দ্বারা প্রতারনা-ভোগান্তিতো আছেই ।
সম্প্রতি বিভিন্ন অবৈধ প্রতিষ্ঠান থেকে ভুয়া সার্টিফিকেট ইস্যু করার অভিযোগ করেছে আইএমও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে । যদি এই অভিযোগ সত্য প্রমানিত হয় তবে বাংলাদেশকে ‘হোয়াইট লিস্ট’ থেকে বাদ দিবে আইএমও । ফলে বাংলাদেশি সার্টিফিকেটধারী মেরিনারদের জন্য কোনো বিদেশী জাহাজে চাকরী করা সম্ভব হবেনা । তখন মুখ থুবরে পরবে এই প্রফেশন ।
তাছাড়া ভিসা জটিলতা তো আছেই । নিচের লিংকে দেখেতে পারেন ।
দুর্নীতি, অনিয়ম ও বিপর্যয়ঃ মেরিটাইম বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ
কারা পড়বেঃ
বেশিরভাগ পিতামাতাই মেরিন সম্পর্কে পূর্ণ ধারনা না থাকার কারণে সামর্থ্য না থাকা সত্বেও সন্তানকে পাঠান মেরিনে পড়তে । অনেকে সন্তানের দিকে তাকিয়ে জায়গা জমি বেচে দেন । পরে যখন দেখেন চাকরীর এই করুন অবস্থা তখন হতাশা আর কপাল চাপরানো ছাড়া কিছুই করার থাকেনা ।এত টাকা খরচ করে পড়ানোর পর আর অন্য কোথায়ও পড়ানো সম্ভব হয় না অনেকেরই । তাই সামর্থ্যবান পিতামাতারাই পারবেন সন্তানদের মেরিনে পড়াতে ।
অন্যান্য সব জায়গার মত এখানেও লবিং , দুর্নীতি আছে ।মামা-চাচা বা পরিচিত কেউ থাকলে জব নিয়ে কোনো টেনশন থাকেনা । তাই অর্থনৈতিক সাপোর্ট থাকলে পেশা হিসেবে মেরিন ভাল ।
দ্রুত প্রতিষ্ঠার আশায় না বরং সবকিছু জেনেশুনে যাচাই করে মেরিনে ভর্তি হোন ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:২২