somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

SSC এর মাথা খারাপ করা রেজাল্ট ও আমার কিছু অশোভন মতামত...

১৭ ই মে, ২০১০ বিকাল ৫:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

SSC এর এ বছরের রেজাল্ট আপনারা সবাই দেখেছেন আশা করি।এবারের রেজাল্ট টা ঠিক যতটা উৎসাহব্যঞ্জক,তার থেকেও বেশী হতাশার।কারণটা বলবার আগে একটি পরিসংখ্যান দেখাই...একটু মনোযোগ দিয়ে দেখুন...

২০০১ থেকে ২০১০ পর্যন্ত জিপিএ ৫ পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যাঃ

২০০১ সালে গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর প্রথম বছর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৬। ২০০২ সালে বেড়ে হয় ৩২৭। ২০০৩ সালে এক হাজার ৩৮৯ জন। ২০০৪ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত মোট নম্বরের সঙ্গে চতুর্থ বিষয়ের নম্বর যুক্ত হওয়ায় জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। ওই বছর আট হাজার ৫৯৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিল। ২০০৫ সালে পেয়েছিল ১৫ হাজার ৬৩১ জন। ২০০৬ সালে পায় ২৪ হাজার ৩৮৪ জন। ২০০৭ পেয়েছিল ২৫ হাজার ৭৩২ জন। ২০০৮ সালে পায় ৪১ হাজার ৯১৭ জন। গত বছর পেয়েছিল ৪৫ হাজার ৯৩৪ জন। এ বছর পেয়েছে ৬২ হাজার ১৩৪ জন।(সূত্রঃপ্রথম আলো,১৫ মে,২০১০)

পড়বার পর নিশ্চয়ই ধরতে পেরেছেন আমি কি বলতে চাচ্ছি।শিক্ষার মান আজ কোনদিকে যাচ্ছে কেউ কি বুঝতে পারছেন?এটা একটা ভালো ব্যাপার যে সরকার প্রতি বছরই আমাদের আনন্দ করবার উপলক্ষস্বরূপ একটি দিন আমাদের উপহার দেয়।কিন্তু সে উপহারের মান আজকাল এমন দ্রুতগতিতে কমছে যে তা আর আমাদের জন্য ততটা আনন্দ নিয়ে আসছে না,যতটুকু পেতাম কিছুদিন আগ পর্যন্তও।A+ পাওয়া মানে অবশ্যই একটা বড় ব্যাপার।কিন্তু নতুন নতুন সরকারের আগমনের সাথে সাথেই তাদের মাথাইয় উন্নয়নের ভূত চাপে।তারা উন্নতি করতে চায় সবদিক থেকেই।এ প্রয়াস অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।কিন্তু যে ব্যাপারটা আমাদের লজ্জা দেয়,তা হলো যে তাদের এ প্রয়াস বেশীরভাগ সময়ই পেছনের দরজামুখী।মানে বুঝলেন না?তারা কথাতেই কাজ সেরে ফেলতে চান;কাজে নয়।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রাণপণ চেষ্টা থাকে কিভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের রেজাল্ট ভালো করা যায়।অথচ,যেটা বেশী গুরুত্বের দাবিদার,মানে তাদের শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সঠিক জ্ঞান সমভাবে সবার মাঝে বন্টনের বিষয়টি,তা তাদের মাথায় নেবার সময় কোথায়?কিন্তু তবু প্রতিবছরই আমরা মোটামুটি তাদের কল্যাণেই বলতে পারছি-"বাহ বাহ বাহ ,ছেলেপুলোগুলো মানুষ হচ্ছে দেখা যাচ্ছে..."।অথচ আমরা আসলে কোথায় পড়ে আছি,তা কেবল আমরাই জানি,কারণ ভুক্তভোগী তারা নয়,আমরা।

রেজাল্ট বের হবার পর পরই আমার এক পরিচিত আত্মীয় এর রেজাল্ট শুনলাম।ছেলেটা খুলনা জেলা স্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল।তার রেজাল্ট ৩.১৩।তার জন্য এমন রেজাল্ট আশাতীত ভালো।তার এ রেজাল্ট দেখেই তার চাচা খুশি হয়ে তাকে একটি Brand New PC দিয়ে বসল।দেখে ভালোই লাগলো।যে ছেলের পরীক্ষার আগের এক বছর ঘন ঘন সন্ন্যাসী হবার শখ পয়দা হত,সে অন্তত এবার লাইনে এল...আজ হঠাৎই তার পুরো রেজাল্ট দেখতে মনে চাইল।দেখলাম...এবং অবাক হলাম।তার এক বিষয়ে F গ্রেড থাকা সত্বেও তার রেজাল্ট প্রকাশিত হয়েছে...অতি আশ্চর্যজনক।এমন ব্যাপার দেখার পর মাধ্যমিক শ্রেণীর ফলাফলের ওপর বিশ্বাস রাখা আসলেই কষ্টকর...

আমার আপন মামাতো ভাইয়ের কথা বলি...সে পরীক্ষা দিয়েছিল গ্রাম থেকে(সংযত কারণেই নাম ঠিকানা প্রকাশ করলাম না)...তাদের পরীক্ষার হল যেন এক মস্ত Circus...সেখানে কি হয়না?বই খুলে নকলে সহায়তা থেকে শুরু করে স্যারের পরীক্ষার হলে প্রশ্নের উত্তর বুঝিয়ে দেয়া-সব ই হয়।সাথে সাথে তাদের উপহার ও দেয়া হয়েছিল ফ্রী হিসেবে সঠিক উত্তর পূরণ করা OMR শীট।স্যারদের এত প্রাণপণ চেষ্টার পর তার রেজাল্ট ৪.১৯।তাদের বাবা-মা ছেলের এই রেজাল্টের খুশিতে দশ গ্রামে দেদার টাকা খরচ করে মিষ্টি বিলিয়ে চলেছেন...দেখার মতন ব্যাপার... :-/

SSC পরীক্ষার ধরণ আজ এমনই যে পোলাপান পরীক্ষা দিয়ে এসেই বলে,ভাইয়া ইনশাআল্লাহ গোল্ডেন থাকবে।শুনতেই বুক জুড়িয়ে যায়।A+ ব্যাপারটা এখন ছেলের হাতের মোয়া এর মতন।"পরীক্ষা দাও,A+ জিতে নাও"-এমন অবস্থা।সেজন্য Golden ব্যাপারটিকে আমরা আজো মূল্যায়ণ করি।কিন্তু এমন দিনও হয়তবা দেরী নেই যেদিন পরীক্ষা দেবার পর পরই ফ্রী হিসেবে পোলাপান Golden A+ এর Marksheet পাবে।

আজ বাসে ভার্সিটি যাবার পথে শুনতে পেলাম এক গার্জিয়ান বলছেন পাশের লোককে-"...আমার ছেলে যে স্যারের কাছে পড়েছেন,উনি বোর্ডের নামকরা টিচার।তার কাছে ব্যাচ করে আমার ছেলের সাথে আরো ৯৬ জন পড়েছিল...তাদের সবাই A+(হাসিমুখ)......!!!!" X(

-----এমন কথা আমরা আর শুনতে চাই না।আমরা চাই না প্রতি বছর এমন অসংখ্য Non-Qualified(যদিও তাদের সংখ্যা গুটি কয়েক বলেই আমার বিশ্বাস)ছাত্র-ছাত্রীকে ভালো রেজাল্টের আওতায় এনে তাদের মনে গভীর দুঃখের জন্ম দিতে।কারণ এমন ভালো রেজাল্ট করবার পর সবাই স্বভাবতই চাবে ভালো কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে।কিন্তু আমরা সবাই জানি আমাদের দেশের প্রকৃত অবস্থা কি।গুটিকয়েক কলেজ ছাড়া মানসম্পন্ন কলেজ নেই-ই বলা যায়।অথচ সরকার দেদারছে Brilliant পোলাপান উপহার দিচ্ছে।কিন্তু তার ফলাফল আসলে কি হচ্ছে?ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি না হতে পারার কারণে তাদের মনে যে Frustration এর জন্ম হচ্ছে তাদের,তার দায়ভার কি হাসিনা/খালেদা বা তাদের সরকার নিচ্ছে?

না,নিচ্ছে না।তাদের অত ঠেকা পড়ে নি......




সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×