(ভেবেছিলাম এই পোস্ট সেপ্টেম্বর মাসেই দিব । কিন্তু ভেবে দেখলাম ঐ মাসে অনেক ব্যস্ত থাকব হয়ত, কাজেই লেখার সময় পাব না । তাই এখনই দিলাম । আপনারা নিজের নিজের অভিজ্ঞতা বলতে পারেন )
নব্বই দশকের নিয়মিত সিনেমা দর্শকরা বলেন, সেই সময় নাকি সালমান শাহের একটা সিনেমা হলে আসলে মিনিমাম ৩-৪ সপ্তাহ একটানা চলতই । এমনও রেকর্ড নাকি আছে তিনমাস হাউস্ফুল চলার পর পরে হল থেকে নামিয়ে কিছুদিন পর আবার ঐ সিনেমা চালালে আবার ১ মাস হাউসফুল । একই সিনেমা একই সাথে দুইটা সিনেমা হলে রিলিজ দেয়া হলেও নাকি দর্শকের ঢল কমত না । কিন্তু এখন সেই সালমানও নেই, সেই আমেজও নেই ।
সালমানের শেষদিকের ফিল্মগুলো নিয়ে তেমন কোন আলোচনা হয় না । আমার কাছে ব্যাপারটা একটা রহস্যের মত ছিল । তাঁর জীবদ্দশায় মুক্তিপ্রাপ্ত সর্বশেষ সিনেমা ছিল “স্বপ্নের পৃথিবী” । প্রেম-ভালবাসা, নাচ-গান, ড্রামা, একশন মিলিয়ে সবদিক দিয়েই পুরোপুরি বাণিজ্যিক ছবি ছিল এটি । এর পরের প্রায় প্রতিটি সিনেমায় অদ্ভুত কিছু না কিছু ছিলই ।
১৯৯৬ এর সেপ্টেম্বরে সালমান শাহের মৃত্যুর পর মুক্তিপ্রাপ্ত সর্বপ্রথম সিনেমা “সত্যের মৃত্যু নেই” । এই ফিল্মটা যদিও আমার ভাল করে তেমন একটা দেখা হয়নি তবুও এটুকু জানি যে সিনেমাটিতে সালমানের অভিনীত “জয়” চরিত্রটিকে মিথ্যা খুনের মামলায় আসামী হিসেবে দেখানো হয়েছিল । এবং ছবিতে জয়ের ন্যায়পরায়ণ মা(শাবানা) ছেলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যাওয়ায় ফাঁসির আদেশ দেন । এরপর জেলে সালমানের দুর্দান্ত অভিনীত “চিঠি এল জেলখানাতে……” গান দেখে অশ্রুসজল হয়ে পড়ে সদ্যমৃত নায়কের ফ্যানরা । এই সিনেমাতে নাকি ফাঁসির আগে গোসল করানোর একটি দৃশ্যও নাকি আছে । আপনারা যারা যার সিনেমাটি হলে গিয়ে দেখতে পেরেছেন তারা একটু কষ্ট করে ঐ সময়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করুন প্লিজ……এই সিনেমাটিতে দেখানো হয়েছে জয়(সালমান) এর চেয়ে তার ভাই রানার প্রতি মায়ের বেশি খেয়াল । রানা ব্যারিস্টারি পাশ করেছে শুনে বাবা আলমগীর সালমানকে বলেন, “থ্রি চিয়ার্সটা তোমার জন্য করতে পারলে আরো বেশি খুশি হতাম……” এই শুনে সালমান অভিমানী মন্তব্য করে বলে তোমরা রানার কাছ থেকেই বেশি আশা করেছ আর তাই পেয়েছ……এই বলে একটু আগে ইংরেজী একটা ছড়া বলে খুশি মনে সাইকেল চালিয়ে বাসায় ঢোকা সালমান কাঁপা কাঁপা গলায় ঐ একই রাইম বলে সাইকেল কাঁধে নিয়ে উপরে উঠে যায়……আমি অবাক হয়ে বসে ভাবতে থাকি, “এইটা আমি কোন মাত্রার এক্টিং দেখলাম!!!”
এর পরের মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি “জীবন সংসার” । এই মুভিতে আমার তেমন কোন অসঙ্গতি চোখে পড়েনাই । তবে মনে পড়ার মত একটা জিনিস বলতে পারি । শাবনূর সালমানকে ইমোশনাল ব্ল্যাক্মেল করার জন্য বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করার নাটক করে । এমন সময় সালমান ব্যাকুল হয়ে নিজের করা “মদ্যপ” নাটকের জন্য বারবার কৈফিয়ত দিতে থাকে । নায়ক নায়িকার মৃত্যু যাতে না হয়, সেইজন্য ব্যাকুল হয়ে আছে অথচ নায়ক নিজেই আর নেই……জানি না সিনেমা হলের দর্শকদের কেমন লেগেছিল ।
এর পরের ছবি “মায়ের অধিকার” । এই মুভিটির সবচেয়ে বড় অদ্ভুত অসঙ্গতি হল এক দৃশ্য থেকে আরেক দৃশ্যে সালমানের চুলের স্টাইল । ছোট চুলের সালমান ক্যাপ পড়ে ফাইটিং করছে অথচ একটু পরেই দেখা যায় তাঁর ববি দেওলের সমান চুল! মনে হয় এই সমস্যাটা সালমানের সিডিউলের কারণে হয়েছে । এরপর সিনেমাটির বেশ কয়েকটি জায়গায় এমন অসঙ্গতি দেখা গেছে । বাড়িতে ঢোকার সময় চুল একরকম, বাড়িতে ঢোকার সময় চুল আরেক রকম । যাই হোক, সিনেমাটির শুটিং-ডাবিং সালমান কোনক্রমে শেষ করেছিল বলেই আমার ধারণা । সালমানের সাথে হুমায়ুন ফরিদীর মামা-ভাগ্নে কেমিস্ট্রি দারুণ জমেছিল । এসব এখন পুরোপুরি ইতিহাস!......
এরপরের ছবি “চাওয়া থেকে পাওয়া” । সিনেমাটা দেখতে তেমন একটা ভাল লাগেনি । একারণে শেষ পর্যন্ত দেখার ইচ্ছাও হয়নি । সালমান ছবিটিতে বেপরোয়া প্রেমিকের রোলে অভিনয় করেছিলেন । এই মুভিতে দর্শক এক নতুন সালমানকে আবিস্কার করে । যদিও এই সালমানকে আমার তেমন একটা পছন্দ না……কারণ এসমস্ত হতাশাপূর্ণ একটিং দেখলে মানুষটার দুর্ভাগ্যের কথাই বেশি মনে পড়ে । মুভিটি সম্পর্কে আপনাদের কোন অভিজ্ঞতা থাকলে বলতে পারেন ।
১৯৯৭ সালের ১৮ এপ্রিল মুক্তি পায় “প্রেম পিয়াসী” সিনেমাটি । ছবিটির কাজ অসমাপ্ত ছিল । ছবিটির একটা গানেও সালমান অংশ নিতে পারেননি । গানের দৃশ্যে সালমানের ডামি ব্যবহার করা হয়েছে । এমনকি পুরোপুরি শুটিং ও শেষ হয়নি । স্টাইলিশ সালমান তো ছিলেনই, আর সেইসাথে ছিল নায়ক-নায়িকার চিরাচরিত ব্যাক্তিত্বের সংঘাত । বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, “প্রেমপিয়াসী” ছবির ডাবিং এর কিছু অংশ ছিল সালমানের শেষ চলচ্চিত্র সম্পর্কিত কোন কাজ । সিনেমাটা দেখতে গিয়ে দেখি, যেই অংশে সালমানের কণ্ঠ শেষবারের মত শোনা যায় সেই অংশটি কিছুটা হলেও কমিক । শাবনূরের রাগী রাগী কথা বেপরোয়া প্রেমিক সালমানের প্রেম ভাঙ্গাতে পারছেনা এবং সালমানের এক একটা চটুল কথা নায়িকার গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে । এখন প্রশ্ন, ডাবিংটা যেহেতু অভিনয়ের একটা অংশ তাহলে ধরে নেয়া যায় এই অংশের ডাবিং হওয়ার সময় চটুল মেজাজে থাকাই স্বাভাবিক । এফডিসির সাউন্ড কমপ্লেক্সে এই দৃশ্য থেকেই সালমান-সামিরার দাম্পত্য কলহ নতুন করে শুরু হয়েছিল? কে জানে? “প্রেম পিয়াসী” ছবিটিতে সালমানের শেষ দিকের অভিনয় দুর্দান্ত ছিল । সিনেমাটির শেষে নায়ক-নায়িকা দুইজনকেই সুইসাইড করতে দেখানো হয়েছে ।
(চলবে)
"প্রেম পিয়াসী" ছবিতে সালমান
খুনসুটিময় সেই অংশটি
স্ট্রাইপ টি-শার্ট পরা লোকটি সালমান নয়, কারণ কোনভাবেই মুখ ভালভাবে দেখানো হয়নি.........
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১:১৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



