somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সালমানের শেষ ফিল্মগুলো নিয়ে কিছু কথাঃ পর্ব-এক

২৩ শে মে, ২০১২ দুপুর ১২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(ভেবেছিলাম এই পোস্ট সেপ্টেম্বর মাসেই দিব । কিন্তু ভেবে দেখলাম ঐ মাসে অনেক ব্যস্ত থাকব হয়ত, কাজেই লেখার সময় পাব না । তাই এখনই দিলাম । আপনারা নিজের নিজের অভিজ্ঞতা বলতে পারেন )

নব্বই দশকের নিয়মিত সিনেমা দর্শকরা বলেন, সেই সময় নাকি সালমান শাহের একটা সিনেমা হলে আসলে মিনিমাম ৩-৪ সপ্তাহ একটানা চলতই । এমনও রেকর্ড নাকি আছে তিনমাস হাউস্ফুল চলার পর পরে হল থেকে নামিয়ে কিছুদিন পর আবার ঐ সিনেমা চালালে আবার ১ মাস হাউসফুল । একই সিনেমা একই সাথে দুইটা সিনেমা হলে রিলিজ দেয়া হলেও নাকি দর্শকের ঢল কমত না । কিন্তু এখন সেই সালমানও নেই, সেই আমেজও নেই ।
সালমানের শেষদিকের ফিল্মগুলো নিয়ে তেমন কোন আলোচনা হয় না । আমার কাছে ব্যাপারটা একটা রহস্যের মত ছিল । তাঁর জীবদ্দশায় মুক্তিপ্রাপ্ত সর্বশেষ সিনেমা ছিল “স্বপ্নের পৃথিবী” । প্রেম-ভালবাসা, নাচ-গান, ড্রামা, একশন মিলিয়ে সবদিক দিয়েই পুরোপুরি বাণিজ্যিক ছবি ছিল এটি । এর পরের প্রায় প্রতিটি সিনেমায় অদ্ভুত কিছু না কিছু ছিলই ।
১৯৯৬ এর সেপ্টেম্বরে সালমান শাহের মৃত্যুর পর মুক্তিপ্রাপ্ত সর্বপ্রথম সিনেমা “সত্যের মৃত্যু নেই” । এই ফিল্মটা যদিও আমার ভাল করে তেমন একটা দেখা হয়নি তবুও এটুকু জানি যে সিনেমাটিতে সালমানের অভিনীত “জয়” চরিত্রটিকে মিথ্যা খুনের মামলায় আসামী হিসেবে দেখানো হয়েছিল । এবং ছবিতে জয়ের ন্যায়পরায়ণ মা(শাবানা) ছেলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যাওয়ায় ফাঁসির আদেশ দেন । এরপর জেলে সালমানের দুর্দান্ত অভিনীত “চিঠি এল জেলখানাতে……” গান দেখে অশ্রুসজল হয়ে পড়ে সদ্যমৃত নায়কের ফ্যানরা । এই সিনেমাতে নাকি ফাঁসির আগে গোসল করানোর একটি দৃশ্যও নাকি আছে । আপনারা যারা যার সিনেমাটি হলে গিয়ে দেখতে পেরেছেন তারা একটু কষ্ট করে ঐ সময়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করুন প্লিজ……এই সিনেমাটিতে দেখানো হয়েছে জয়(সালমান) এর চেয়ে তার ভাই রানার প্রতি মায়ের বেশি খেয়াল । রানা ব্যারিস্টারি পাশ করেছে শুনে বাবা আলমগীর সালমানকে বলেন, “থ্রি চিয়ার্সটা তোমার জন্য করতে পারলে আরো বেশি খুশি হতাম……” এই শুনে সালমান অভিমানী মন্তব্য করে বলে তোমরা রানার কাছ থেকেই বেশি আশা করেছ আর তাই পেয়েছ……এই বলে একটু আগে ইংরেজী একটা ছড়া বলে খুশি মনে সাইকেল চালিয়ে বাসায় ঢোকা সালমান কাঁপা কাঁপা গলায় ঐ একই রাইম বলে সাইকেল কাঁধে নিয়ে উপরে উঠে যায়……আমি অবাক হয়ে বসে ভাবতে থাকি, “এইটা আমি কোন মাত্রার এক্টিং দেখলাম!!!”

এর পরের মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি “জীবন সংসার” । এই মুভিতে আমার তেমন কোন অসঙ্গতি চোখে পড়েনাই । তবে মনে পড়ার মত একটা জিনিস বলতে পারি । শাবনূর সালমানকে ইমোশনাল ব্ল্যাক্মেল করার জন্য বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করার নাটক করে । এমন সময় সালমান ব্যাকুল হয়ে নিজের করা “মদ্যপ” নাটকের জন্য বারবার কৈফিয়ত দিতে থাকে । নায়ক নায়িকার মৃত্যু যাতে না হয়, সেইজন্য ব্যাকুল হয়ে আছে অথচ নায়ক নিজেই আর নেই……জানি না সিনেমা হলের দর্শকদের কেমন লেগেছিল ।

এর পরের ছবি “মায়ের অধিকার” । এই মুভিটির সবচেয়ে বড় অদ্ভুত অসঙ্গতি হল এক দৃশ্য থেকে আরেক দৃশ্যে সালমানের চুলের স্টাইল । ছোট চুলের সালমান ক্যাপ পড়ে ফাইটিং করছে অথচ একটু পরেই দেখা যায় তাঁর ববি দেওলের সমান চুল! মনে হয় এই সমস্যাটা সালমানের সিডিউলের কারণে হয়েছে । এরপর সিনেমাটির বেশ কয়েকটি জায়গায় এমন অসঙ্গতি দেখা গেছে । বাড়িতে ঢোকার সময় চুল একরকম, বাড়িতে ঢোকার সময় চুল আরেক রকম । যাই হোক, সিনেমাটির শুটিং-ডাবিং সালমান কোনক্রমে শেষ করেছিল বলেই আমার ধারণা । সালমানের সাথে হুমায়ুন ফরিদীর মামা-ভাগ্নে কেমিস্ট্রি দারুণ জমেছিল । এসব এখন পুরোপুরি ইতিহাস!......

এরপরের ছবি “চাওয়া থেকে পাওয়া” । সিনেমাটা দেখতে তেমন একটা ভাল লাগেনি । একারণে শেষ পর্যন্ত দেখার ইচ্ছাও হয়নি । সালমান ছবিটিতে বেপরোয়া প্রেমিকের রোলে অভিনয় করেছিলেন । এই মুভিতে দর্শক এক নতুন সালমানকে আবিস্কার করে । যদিও এই সালমানকে আমার তেমন একটা পছন্দ না……কারণ এসমস্ত হতাশাপূর্ণ একটিং দেখলে মানুষটার দুর্ভাগ্যের কথাই বেশি মনে পড়ে । মুভিটি সম্পর্কে আপনাদের কোন অভিজ্ঞতা থাকলে বলতে পারেন ।

১৯৯৭ সালের ১৮ এপ্রিল মুক্তি পায় “প্রেম পিয়াসী” সিনেমাটি । ছবিটির কাজ অসমাপ্ত ছিল । ছবিটির একটা গানেও সালমান অংশ নিতে পারেননি । গানের দৃশ্যে সালমানের ডামি ব্যবহার করা হয়েছে । এমনকি পুরোপুরি শুটিং ও শেষ হয়নি । স্টাইলিশ সালমান তো ছিলেনই, আর সেইসাথে ছিল নায়ক-নায়িকার চিরাচরিত ব্যাক্তিত্বের সংঘাত । বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, “প্রেমপিয়াসী” ছবির ডাবিং এর কিছু অংশ ছিল সালমানের শেষ চলচ্চিত্র সম্পর্কিত কোন কাজ । সিনেমাটা দেখতে গিয়ে দেখি, যেই অংশে সালমানের কণ্ঠ শেষবারের মত শোনা যায় সেই অংশটি কিছুটা হলেও কমিক । শাবনূরের রাগী রাগী কথা বেপরোয়া প্রেমিক সালমানের প্রেম ভাঙ্গাতে পারছেনা এবং সালমানের এক একটা চটুল কথা নায়িকার গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে । এখন প্রশ্ন, ডাবিংটা যেহেতু অভিনয়ের একটা অংশ তাহলে ধরে নেয়া যায় এই অংশের ডাবিং হওয়ার সময় চটুল মেজাজে থাকাই স্বাভাবিক । এফডিসির সাউন্ড কমপ্লেক্সে এই দৃশ্য থেকেই সালমান-সামিরার দাম্পত্য কলহ নতুন করে শুরু হয়েছিল? কে জানে? “প্রেম পিয়াসী” ছবিটিতে সালমানের শেষ দিকের অভিনয় দুর্দান্ত ছিল । সিনেমাটির শেষে নায়ক-নায়িকা দুইজনকেই সুইসাইড করতে দেখানো হয়েছে ।
(চলবে)



"প্রেম পিয়াসী" ছবিতে সালমান


খুনসুটিময় সেই অংশটি


স্ট্রাইপ টি-শার্ট পরা লোকটি সালমান নয়, কারণ কোনভাবেই মুখ ভালভাবে দেখানো হয়নি.........
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১:১৪
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×