somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মনে রবে কিনা রবে?

০২ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(পূর্ব প্রকাশের পর পূর্বের অংশ পড়তে Click This Link )
কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। ঘুম বিদায় নিল মোবাইলের রিংটোন এর আওয়াজে। রিচিভ না করতেই কেটে গেল। মোট বিশ প্লাস মিসড কল। মুমুর আঠারো বার। কল ব্যাক করতেই মুমু বলা শুরু করল,
এখন কেমন আছো?
সুস্থ।
যাবে।
হুম। একটু অপেক্ষা কর।
আচ্ছা। আমি তারাতারি ফ্রেশ হয়ে হোস্টেলে থেকে বাহির হব দেখি মুমু আচ্ছে। আমরা হেটেই যাওয়া শুরু করলাম। হাটলে ১০/১৫ মিনিট লাগে। আমি কথা বলা শুরু করলাম
তুমি কি দ্বীপ ভাইয়ার সাথে দেখা করবে?
তোমার খুব হিংসে হয় বুঝি?
শুধু হিংসা নয়। ওনাকে খুন করতে ইচ্ছে করছে।
তা দরকার নাই। আমি বিয়েতে রাজি নই। অযাথা বেচারা কে মারার কি দরকার? ওসব বাদ দাও।
বাদ দিতে বলছো কেন?
রুহান, তুমি না......?
আমি কি?
এত উত্তেজিত হচ্ছো কেন? এটা রাস্তা। তুমি যদি অবিশ্বাস কর। তাহলে চলো আজকেই বিয়ে করে ফেলি। আমি কোন কথা বলিনা। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হাটতে লাগলাম। ও আবার বলা শুরু করল, বাড়িতে আমি বলে দিয়েছি পরীক্ষার আগে বিয়ে নয়। দ্বীপ ভাইয়া আসলে সব কিছু বুঝিয়ে বলব। ব্যাস হয়ে গেল। আর আমি বাড়ি যাচ্ছিনা যে, যে আমাকে জোড় করে বিয়ের পিড়িতে বসাবে।
কথা বলতে বলতে টিএসসি পৌঁছে যাই প্রচন্ড ভীর। আমি ওর হাত শক্ত করে ধরে ভিতরে প্রবেশ করছি। ভিরের মাঝে হঠাৎ করে আমার হাত ফসকে চলে গেল। এই ভিরের মাঝে ডেকে কোন লাভ নাই তাই ফোন দিলাম। রিসিভ করল না। গেটের কাছে জটলা দেখে পিছনে ফিরে আসলাম। হঠাৎ করে ভিরের মাঝে দেখি মুমুর শাড়ি। চারদিকে ঘেরে ধরেছে বেশ কিছু ছেলে। কিল ঘুশি দিয়ে সরিয়ে ভিতরে ঢুকতে চেষ্টা করছি। হঠাৎ মাথার পিছনে কে যেন আঘাত করল। আমি পড়ে গেলাম।
যখন জ্ঞান ফিরল শুয়ে আছি ঢাকা মেডিকেল কলেজ এ। পায়ের কাছে তনু বসে।
তনু মুমু কই?
ছিল একটু আগে চলে গেল। আজ তিনদিন থেকে একটানা এখানে ছিল। ঘুমানোর জন্য পাঠে দিলাম। আমি কিছু না বলে চোখ বন্ধ করলাম।
রুহান, তনুর দিকে তাকাতেই দেখি মুখটা বিষাদে ভরা।
এই তনু, কিছু হয়েছে? মন খারাপ কেন?
তুই অসুস্থ তাই।
আরে আমি এখন সুস্থ। যা তোরা আনন্দ করগে। পকেট দেখলাম আমার মোবাইল টা নেই। তনুকে বলতে হলনা। ওর সাইডব্যাগ থেকে আমাকে মোবাইল বাহির করে দিল। মোবাইলের সুইচ অন করতেই পেলাম মুমুর ম্যাসেজ " কংগ্রাচুলেশনস, নতুন করে শুরু হউক তোমার নতুন দিন।" আমি রিপ্লে দিলাম "তোমার অপেক্ষায় আছি। " তনু কোন কথা বলে না। আমার মাথার কাছে আসে। ওর হাত দ্বারা কপাল স্পর্শ করে। আমি আবারো চোখ বন্ধ করলাম। হঠাৎ করে কপালে বৃষ্টি ন্যায় কয়েক ফোঁটা পানি পড়ল। চোখ খুলে দেখি তনুর চোখে পানি। তনু নিরব কান্না আমাকে ভাবায়। থাকতে না পেয়ে বল্লাম,
তনু কিছু লুকাচ্ছিস হয়ত! তা কি? তনু ফুঁপিয়ে উঠে। কিছুই ভাবতে পারছি না। কেন যেন মনটা খারাপ হয়ে গেল। ওর কান্না দেখে আমারো চোখে পানি আসল। কাঁদতে মানা করব তাও পাচ্ছি না। কেন কাঁদছে? আমি অসুস্থ বলে না কেউ....? কাঁদুক। কাঁদলে মনটা হালকা হয়। তনু হঠাৎ করে আমার ডান হাত ধরে। আমি বিব্রত হয়ে পরে যাই।
এই পৃথিবীতে তুই, আমি কিংবা কেউ চিরস্থায়ী নই।
হ্যা, ঠিক আছে। আমিতো মরিনি। তুই কাঁদছিস কেন?
কেউ আগে মারা আর কেউ পরে......।
কি শুরু করলি।প্রাইমারিরর টিচারদের মতো। যা ভূমিকা ছাড়াই বল।
তার আগে কথা দে সিরিয়াস কিছু করবি না।
আরে ভাই আগে বলনা। তনু কিছু না বলে আমার হাতে পিনআপ করা একটা কাগজ এনে দেয়। আমি পড়তে শুরু করলাম।
রুহান,
তোমাকে লেখা আমার আজ প্রথম নয়। তবে ধরে নিতে পার এটাই শেষ চিঠি। এটি কোন রোমান্টিক চিঠি নয়। যা প্রথমে বুঝতে পেয়েছো চিঠির ভূমিকা না থাকায়। তুমি যখন চিঠিটা পড়বে তখন আমি তোমাদের পৃথিবীতে হয়ত থাকব না। আর যদিও থাকি তাও তোমার থেকে অনেক দূরে। কোন আত্মাভিমানে নয় বরং আত্মজ্বালায় দূরে যাচ্ছি সহস্র ব্যথা একা সইতে না পেয়ে। আবার কাউকে ভাগ দেওয়ার সাহস ও পেলাম না। তুমিতো জানোই, ছেলেদের সাথে মেয়েদের কত তফাৎ। আর আমি মেয়ে হয়ে জন্মেছি। এটাই আমার অপরাধ। কিন্তু তুমিই বল জন্মের পিছনে কি কারো হাত থাকে? ছেলেরা তোমাদের সমাজে অপরাধ করেও কত মহা দাপটে বেড়ায়। তাদের কেউ কিছু বলেনা। অথচ তাদের হিংস্র থাবায় যে মেয়েরা স্বীকার হয় তারা বাবা-মা, ভাই-বোন, বন্ধুদের এমন কি সমাজে কলঙ্কিত বোঝা, নষ্টা, বারবনিতা। আমার সম্পর্কে তোমাকে কিছুই বলব না। তুমি নিজের চোখেই ঢের দেখেছো। আর হয়ত দেখবে সংবাদপত্রে, নেটে, ফেইসবুক, টুইটারে। তথ্যপ্রযুক্তির যুগ বলে কথা। আমাদের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে গেছে। বুঝতেই পারছো গ্রামে কি শুরু হতে পারে! আমি আর এসব ভাবতে চাইনা। তবে কিছু কথা না বললে নয়। রাতে আমার ফোনে প্রচুর কল, ম্যাসেজ আসতে থাকে। প্রায় প্রতিটা অনলাইন পত্রিকা, ফেইসবুক, টুইটার, ব্লগে আমার ছবি। হয়ত আগামী কাল প্রতিটা পত্রিকায় হেডলাইন হিসাবে আসবে। সে কি লজ্জা! তাই ফোন বন্ধ করে রাখি। বাবা আমার ফোন বন্ধ পেয়ে তনুকে ফোন দিয়ে আমাকে বলতে বলল, তারা আমার মুখ দেখতে চায় না। সমাজে আমার জন্য তাদের মাথা নিচু হয়েছে, মুখ বন্ধ হয়েছে। তাই আমার মরে যাওয়াই উচিৎ। দ্বীপ ভাইয়া নাকি আমাকে নষ্টা মেয়ে বলেছে। আমি ঢাকায় মেডিকেল কলেজ পড়ার নামে নষ্টামী করে বেড়াই। আমার মতো মেয়ে তার বৌ হতে পারে না। আরও ইত্যাদি ইত্যাদি। নিজ কানে শুনে মরে যেতে ইচ্ছে করেছিল। তবুও বাচঁতে চেয়েছিলাম। পরক্ষণে মনে হল তুমি যদি আমায় ছেড়ে যাও! আমাকে তাই ভাবো। না হয় আমাকে ছেড়ে নাগেলে কিন্তু আমার জন্য তোমার সমাজে......। তাই নিরবে চলে গেলাম। ভালো থেক। পাগলামি না করে নিজের স্বপ্ন ও প্রতিজ্ঞা পালন করবে।
হতভাগিনী
মুমু
পুনশ্চঃ তনু তোমাকে খুব ভালোবাসে ওর ডাইরি পড়ে বুঝতে পেয়েছিলাম। তাই এতদিন ওর থেকে তোমাকে দূরে রাখতাম। আজ ওরই হাতে তোমাকে সঁপে দিলাম। তুমি ওকে ফিরাবে না। আমি ওর মাঝেই আছি।
যখন জ্ঞান ফিরল তখন মোবাইলে দেখি রাত ১১:০০টা। তনু অনবরত চুলে ও কপালে হাত বুলাচ্ছে। তনুকে কি বলব ভেবে পেলাম না। কেন যেন পুরুষ জাতির উপর ক্ষোভ আর ঘৃণা দমিয়ে রাখতে পারছি না। কিন্তু এও সত্য এই পুরুষদের সাথে মহা পুরুষ ছিল, আছে, থাকবে। আমাদের সমাজ বড্ড পুরুষ কেন্দ্রিক। অবশ্য নারীবাদীদের অভাব নেই। অভাব নেই ইভটিজার কিংবা ধর্ষকের। অভাব শুধু নৈতিকতা আর বিবেকের উপলব্ধি। জানি না কবে শেষ হবে এই মহা তান্ডব? আর কত নারী অকালেই চলে যাবে?
উফ আর ভাবতে পারছি না। মুমুকে খুব মনে পরছে। চিঠির কথাগুলো যেন মুমুর মুখ থেকে শুনতে পাচ্ছি।
কারো মোবাইল থেকে ভেসে আচ্ছে রবী ঠাকুরের বিখ্যাত গানটি।
মনে রবে কি না রবে
আমারে সে আমার মনে নাই।
ক্ষণে ক্ষণে আসি তব দুয়ারে, অকারণে গান গাই॥
মনে হতে লাগল মুমুই আমাকে বলছে কানে মুখ লাগিয়ে। আমি কি মুমুকে ভুলতে পারব?
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৪৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×