প্রথম পর্বের জন্য এখানে দেখুন
ওদের দুজনের সম্পর্কের কথা শুনে রাকিব একটু বিচলিত হলেও দ্রুতই মন কে বুঝ দেয় এই ভেবে যে, "বিয়াই বেয়াইন হলেই তো আর সেটা প্রেম বা অন্য কিছু নয় ,, "
ঐ দিনের মত আড্ডা শেষ করে শেষ দুটো ক্লাস করে চলে আসে বাড়িতে ..
আবার শনিবারে কলেজে গিয়ে সবাই আগের দিনের মতই ক্লাস করে আড্ডা দেয় ,,,, আড্ডার ফাকে আজ ,, হিমু তার এক বন্ধু রেজাকে নিয়ে আসে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে ..আর রুমানা , রোজের সাথে আসে তুলি এবং বিথী রানী সরকার নামের এক হিন্দু মেয়ে ...
দলটা দিন দিন আরও ভারি হয়ে উঠছে । আর এটাই স্বাভাবিক ...। কলেজে এক সাথে পড়তে গেলে এমন সার্কেল সবখানেই তৈরি হতে দেখা যায় ....।নতুনদের সাথে পরিচিত হওয়ার পরে তারাও বেশ ফ্রি হয়ে ওঠে কিছুক্ষণের মধ্যে ....
আড্ডার আজকের টপিক সিলেক্ট করা হয় গান
এর মাঝে রেজা বলে
----সুপ্ত খুব ভাল গান করে আমি ওর গান শুনেছি ...
----ওকে তাহলে সুপ্ত থেকেই শুরু ...!!!!
সুপ্ত এই কদিনের মাঝেই মুক্তাকে পছন্দ করতে শুরু করেছে .. আর সেই কথা ও প্রাইভেট পড়তে গিয়ে রাকিবকে বলেছে ...। তাই মুক্তাকে উদ্দেশ্য করেই সুপ্ত শুরু করে গান গাওয়া .....
----
" তুমি বরুনা হলে হব আমি সুনীল
তুমি আকাশ হলে হব শঙ্খ চিল "........
ওর কন্ঠ শুনে তো সবাই ফিদা ......। এই গানটা শেষ হলেই সবাই এক সাথে আবার ওকে আর একটা গান গাওর জন্য ধরে .....
এবার মুক্তার দিকে তাকিয়ে হাসি দেয় সুপ্ত .... রাকিব দেখে মুক্তাও সুপ্তর দিকে তাকিয়ে আছে ...।
রাকিব বলে .....
---- দোস্তো সবাই যখন বলছে গাও না আর একটা !!!!
---- আচ্ছা আচ্ছা তোরা একটু থাম বাবা ... আমি গাইবো .....কথা দিলাম তবে শেষে ....!!!!
এবার এল তৌফিকের পালা .. কিন্তু একটু বেরসিক তৌফিক গান গাইতে রাজি হলো না ...। সবাই একটু বিরক্ত হলেও বন্ধুত্বের খাতিরে এড়িয়ে গেল ..। ওর দেখাদেখি রেজা,, হিমু , তুহিন,, রোজ , রুমানা তানিয়া আর বিথী রানী সরকার কেউ গান গাইলো না ....
সুপ্ত হঠাৎ মুক্তাকে দেখিয়ে বললো
---এবার গান গাইবে ঐ চুপচাপ মেয়েটি !!
--- না না আমি তো গান গাইতে পারি না ....!!!
মুক্তা এই কথা সাথে সাথে রুমানা আর রোজ ওকে চেপে ধরলো ,, এই মিথ্যা বলছিস ক্যান ????
অবশেষে সবার জোরাজুরিতে শুরু করলো মুক্তা ,,,,,,,,,,,
----
"ভাল বাসি ভাল বাসি
সেই সুরে কাছে দুরে
জলে স্থলে বাজাই বাশি
বাজাই বাশি ,,,,,,
ভাল বাসি ভালবাসি "
মুক্তার পরে রাকিব নিজেই বললো
---- আমি এবার একটু গান করি ....। যদিও ভাল হবে না ,,, রিকুয়েস্ট ,, পিলিজ কেউ হাসবা না ...!!!
---- ওকে দোস্তো তুমি শুরু কর......
সবাই এক সাথেই বললো । তখন রাকিব শুরু করলো .....
----
" আমার সারাটা দিন
মেঘলা আকাশ
বৃষ্টি তোমাকে দিলাম ......
আর শ্রাবন সন্ধ্যাটুকু
তোমার কাছেই চেয়ে নিলাম ""
ওর গান শেষে সবাই গান গাওয়া টপিক চেঞ্জ করে ফেললো .....। এবার আসলো কে কয়টা প্রেম করেছে সেইটা বলতে হবে ....... । সবাই বললো কেউ প্রেম করেনি ....। হঠাৎ রুমানা একটা দাবী উত্থাপন করলো
----ওকে তাহলে এক কাজ করা যাক !!!! আমরা সবাই একটা খাতার পেজে এই মর্মে শপথ সহ সাইন করি যে ,,, বন্ধুদের মাঝে কেউ প্রেম করবো না ....। আমরা সবাই বন্ধুই থাকবো ......।
সবাই রুমানার কথায় রাজি হলো....। এবং পরের দিন কলেজে আসার সময় ঐ কাগজটা রেজা নিয়ে আসবে কম্পিউটারে প্রিন্ট আউট করে ...। এসব বলেই সবাই উঠে পড়লো আড্ডা ভেঙে .....।
পরের দিন সবাই ঐ শপথ বাক্য পড়লো এবং তাতে সই করলো ...।
কিন্তু এক মাস যেতে না যেতেই সব শপথই ভেঙে চুরে শেষ .....। সুপ্ত আর মুক্তা হয়ে উঠলো বেশ পপুলার জুটি ....রুমানা প্রেম করলো সুমন নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলের সাথে .... রোজ এর ফ্যামিলি থেকে কার সাথে যেন এনগেজমেন্ট করে রেখেছে আগেই ,,, তানিয়ার পরিবার খুব রেস্ট্রিকটেড তাও ওর পক্ষে প্রেম করা সম্ভব নয় আপাতত , বিথী রানী সরকার সজীব নামের এক কলা বিভাগের ছাত্রের সাথে আগেই ঝুলে আছে ,, তুলি প্রেম করে সরকারি কলেজের অনার্স পড়ুয়া এক ছেলের সাথে ..তুহিন ওর এক ফুপাতো বোনের সাথে ,, আর হিমু হলো একটু অন্য টাইপের ছেলে ,,, সারাদিন ওর মাথায় রাজ্যের অবাস্তব চিন্তা ভাবনা ,, তবে খুব ক্রিয়েটিভ ও ....। খুব ভাল আর্ট করতে পারে ..। টিশার্ট ব্যাগ এই গুলার ডিজাইন করে .আরও নানান ঝামেলাই ঐ ব্যাটা সত্যিই পারফেক্ট হিমু .....।
অন্য দিকে রাকিব একটু ভিতু টাইপের ছেলে ,,,,, মেয়েদের সাথে বেশ দ্রুত কথা বলতে পারে , মিশতে পারে বন্ধুত্ব করতে পারে,, কিন্তু প্রেম করতে পারে না ....।
আর তৌফিক একটু ভিজা বেড়াল টাইপের ...। কারও কাছে ধরা দিতে চাইবে না ,, অথচ ডুবে ডুবে জল খাবে ...। আসলে বিথীর সাথে এক বছর আগেই সম্পর্ক হয়েছে ..,,,। তবে এই কথাটা রাকিব জানে না ......
প্রথম প্রথম বেশ রস কস দেখালেও এখন যেন লেখাপড়াই তৌফিকের কাছে সব ,, বিথীকে তেমন একটা সময় দেয় না .. আর কারণে অকারণে বকাঝকাও করে ..। কিন্তু রাকিবের সাথে বিথীর মেলা মেশাতে ও কিছু মনে করে না । কারণ রাকিবকে ও খুব ভাল করেই চেনে
মাঝে কিছু দিন পড়া লেখার চাপের জন্য আড্ডা বন্ধ থাকলেও ওমন এক আড্ডার সুযোগ ওদের আবার হলো প্রথম সেমিস্টার পরিক্ষার প্রথম দিনে .... সবাই বসে কথা বলার ফাঁকে রাকিব তানিয়াকে বললো ....
---- তানিয়া সবাই তো প্রেম ট্রেম করছে ,, আমার না ওদের উপর খুব হিংসা হচ্ছে ইদানিং .... আমি একটাও প্রেম করতে পারলাম না
রাকিবের এমন কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো ....। তারপর তুলি বললো
---- রাকিব তুমি কাউকে পছন্দ করো না ????
---- করি একজন কে কিন্তু সে তো এখনও অনেক ছোটো
তারপর হঠাৎ তানিয়া বললো
---- রাকিব তুমি বিথীর সাথে প্রেম কর .... আমার এই বোনটা অনেক ভাল বুঝলে ...!!!!
রাকিব সামনাসামনি এমন কথা শুনে কিছুটা ভড়কে যায় ...। তাই দেখে বিথী বলে ....
----- ওর যে ভয় !!! দেখ আবার কাপড় নষ্ট করে ফেললো কিনা !!!
রাকিব জানে ওরা ইয়ার্কি করছে
---- আমি তো তিন পায়ে খাড়া ..। এমন সুযোগ কি মিস করা যায় .!!!
এসব বলতে বলতে সবার সামনেই ও গিয়ে বিথীর পাশে বসে ,, সবাইকে বললো
----দেখো তো মিয়া বিবি কেমন মানিয়েছে .....
রাকিবও চাইছিলো এমন করেই বিথীর কাছাকাছি পৌছাতে ...। যাতে করে এক সময় বিথীও ওকে ফিল করতে শুরু করে ..। কিন্তু তানিয়া ঐ কথাগুলো বললো বিথীকে আনন্দে রাখার জন্য ..। তৌফিকের অভাবটা যেন রাকিবের সাথে একটু অভিনয় করে পোষানো যায় ....!!!!!
প্রথম সেমিস্টার পরিক্ষায় ওদের সার্কেলের সবাই ভাল রেজাল্ট করলো ..। তারপর আবার সেই আগের মতই সব কিছু চলতে লাগলো...।
কিন্তু রাকিব আর বিথীর বিষয়টা কেন জানি সবার কাছে একটু সিরিয়াস মনে হতে লাগলো .. ওদের দুজনের আচরণের কারণে ..। এই বিষয়টা নিয়ে প্রাইভেট পড়তে গিয়েও আলোচনা হতে লাগলো ...।
আবার রাকিব বাড়িতে গেলে বিথী ওর বাবার মোবাইলে কল দিয়ে রাকিবের সাথে কথা বলে খোজ খবর নেয় ...। রাকিবও বিকালে সাইকেল নিয়ে চলে যায় বিথীদের বাসার সামনের ব্রিজের উপর তৌফিক ও অন্যান্য ফ্রেন্ডসদের সাথে আড্ডা দিতে ...
আর এই সব বিষয় ভালভাবে আঁচ করতেই টনক নড়লো তৌফিকের ...। ও বুঝতে পারে বিথী একটু চেঞ্জ হয়ে গেছে ..। তাই নিজেই বুদ্ধি করে ,,, ঐ প্রসঙ্গ না তুলেই অন্য ভাবে বিথীকে সময় দিতে শুরু করে ..। কিন্তু বিথীর বুঝতে কষ্ট হয় না যে, তৌফিক ওর সাথে ভয়ে এখন এমন করছে ...
{চলবে ,,,,,,,,,, }
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১১ সকাল ১১:৫৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




