ফোনটা বেজে উঠল।
স্ক্রীনে তাকালাম।রিমি।এত সকালে?
শুক্রবার সকাল।ঘুমিয়ে ছিলাম।রিমি খুব ভাল করেই জানে শুক্রবার সকালে আমার একটাই কাজ। শুধু ঘুম আর ঘুম।তাহলে এত সকালে রিমির ফোন কেন?
এই সুযোগে আপনাদেরকে আমার রুটিনটা বলে নেই। আমি একটা ছোটখাট বেদরকারি আইমিন বেসরকারি চাকরি করি। বাকি দুই বন্ধুর সাথে মিলে মেস করে থাকি। সারাসপ্তাহ কুত্তা পরিশ্রম করার পর বৃহস্পতিবার রাতে স্বাভাবিকভাবেই একটু আমোদ ফুর্তি না করলে চলে না। আবীরের খুব তাস পেটানোর শখ, শুভ্রর আবার কার্ডের সাথে একটু গলা না ভেজালে চলে না।
বলছি না, আমি একেবারে দেবদূত। তাস আমিও পেটাই, গলা শুকিয়ে গেলেতো একটু ভেজাতেই হয়।কিন্তু এমনও না যে এসব ছাড়া আমার চলে না।চেষ্টা করে দেখেছি, এই দুটো ছাড়াই আমি একের পর এক বৃহস্পতিবার রাত পার করতে পারি, তবে শুভ্রই যেহেতু টাকাটা দেয়, তাই বন্ধুর মন রাখার জন্যই ... ... বুঝতেই পারছেন।
যাক সে কথা। প্রসঙ্গে ফিরে আসি। তাস পেটানো শেষ হলে আমরা তিন বন্ধু মিলে মুভি দেখতে বসি। তিনটি ব্যাচেলর ছেলে, সপ্তাহ শেষের রাত- সবসময় জীবনমুখি সিনেমা দেখা হয় না।
সব শেষ করে ঘুমাতে প্রায়ই ভোর হয়ে যায়।
এই রুটিনের জন্যই শুক্রবার সকালে আমি কোন কাজ রাখি না, এমনকি রিমির সাথেও দেখা করি না। রিমির জন্য আমার শুক্রবার বিকালগুলো বরাদ্দ।
রিমি আমাকে চেনে, আমার লাইফস্টাইল জানে। পরিচয় হওয়ার পর থেকে গত দুবছরে মনে হয় না এমন কোন বিকাল গেছে যেটা রিমির সাথে কাটেনি। তাহলে আজ এই সকালে ফোন কেন?
ইমার্জেন্সি?
ফুহ। রিমির ইমার্জেন্সি মানেই বান্ধবীর গায়ে হলুদ, ম্যাচিং করা লিপস্টিক পাচ্ছি না।সাথে করে মার্কেটে নিয়ে যেতে হবে।নাহয় থর পার্ট থ্রি'র টিকেটটা সকালেই কেটে রাখতে হবে, বিকালে টিকেট পাওয়া যাবে না।
কোন দরকার নেই এখন ফোন রিসিভ করার।
ফোনটা কেটে দিলাম।
দুই
ফোনটা আবার বেজে উঠল।
কলার একই। রিমি।
ঘড়ির দিকে তাকালাম। সকাল ৬.৩০।
মানে মাত্র আধঘন্টা হল শুয়েছি। এর মধ্যে মেয়েটা চারবার কল করেছে। সত্যিই কোন ইমার্জেন্সি মনে হচ্ছে। আজকের ঘুমটা তাহলে মাটি।
-হাই বেবি।
-তুমি কোথায়?
-একটু হাই হ্যালোও করবা না?
-রাখ তোমার হাই হ্যালো। সময় কম, তুমি কোথায়-সেটা বল।
-শুক্রবার সকালে আর কোথায় থাকব? বাসায়।
-আমাদের এখানে আসতে কতক্ষণ লাগবে?
-এত সকালে আসব?
-হ্যা।
-কেন? কি সমস্যা?
-এত কথা বলার সময় নেই। জলদি আস।
-আরে আজব, কি হইছে বলবা তো।
-এত কথা বলে সময় নষ্ট কর কেন? এখানে আমার জীবন মরণ সমস্যা, তোমার কি কোন বিবেক-বুদ্ধি নাই।
রিমির টোন শুনে সত্যিই অবাক হয়ে গেলাম।মেয়েটা অস্থির প্রকৃতির-সন্দেহ নেই। কিন্তু আজকের অস্থিরতা মাত্রা ছাড়ানো। সামান্যতম সময় কথা বলে নষ্ট করতে চাচ্ছে না।যাব নাকি ওর বাসার সামনে?
-কি হল?
-আধা ঘন্টা সময় দাও, আসতেছি।
-না, পনের মিনিট।
-পনের মিনিটে কিভাবে আসব?
-জানিনা। আর শুন।
-কি?
-তোমার ওই মরা-ধরা বাইকটা আনবা না। প্রচুর শব্দ করে। সিএনজি নাহয় উবারে আস। আর গাড়ি গলির মুখে রেখে ভিতরে ঢুকবা।
-আমি কিন্তু কিছুই বুঝতেছি না।
-বোঝার দরকার নাই। জলদি আস। রাখলাম।
ফোনটা কেটে গেল।
তিন
পয়তাল্লিশ মিনিট পর।
-এই বাবু, এই। মুখ এমন ভোঁতা করে রাখছ কেন?
-আমি বাঙ্গালীর ছেলে, আমার নাক-মুখ সবই ভোঁতা। চোখা কাউকে চাইলে আরব পোলাপানের সাথ প্রেম করতা।
-ওরে আমার বাবুটা রাগ করছে। শো শুইইট।
রিমি আমার গাল টানাটানি করতে লাগল।
মেজাজটা ভয়ানক খারাপ হচ্ছে।ঘড়ির দিকে তাকালাম। সোয়া সাতটা।
-ভাই, আর কতক্ষণ লাগবে?
-এইতো স্যার, প্রায় চলে আসছি। সকাল বেলাতো, রাস্তা খালি। তাড়াতাড়িই পৌছে যাব।
রিমি হঠাৎ বলে উঠল,এই, তুমি এত টেনশান কর কেন? কিচ্ছু হবে না।
আমার হঠাত ইচ্ছা করল মেয়েটাকে একটা চড় মারি। কিচ্ছু হবে না। বললেই হল?
এই সুযোগে আপনাদেরকে তাহলে গত ৪৫ মিনিটের গল্প বলে নেই। রিমির ফোন পেয়েই উঠে বসলাম।কোনরকমে লুঙ্গিটা বদলে একটা প্যান্ট পড়েই দৌড় দিলাম নিচে। সিএনজিওয়ালারা যতই 'সঙ'-বাদ সম্মেলন করুক, মানতেই হবে এই উবার জিনিসটা খুব কাজের।এই সাত সকালেও একটা ট্যাক্সি পেয়ে গেলাম।
রিমির বাসায় পৌছাতে সময় লাগল পনের মিনিট।
গলির মুখে গাড়ি দাড় করিয়েই যতটা নিঃশব্দে ঢুকে গেলাম গলিটার ভেতর।রিমি আগে থেকেই লাগেজ নিয়ে তৈরি ছিল।
খাইছে আমারে।
মেয়েটা কি আমার সাথে পালাবার প্ল্যান করেছে?
-যাক, আসছ তুমি। আমি ভেবেছিলাম ... রিমি ওর কথা শেষ করতে পারল না।আমাকে জড়িয়ে ধরে ফোঁপাতে লাগল।
-এসবের মানে কি? আমি জানতে চাইল।
রিমিকে বিরিক্ত মনে হল। এই সামান্য জিনিস বোঝার মতও বিবেক বুদ্ধি কি নাই তোমার?
ঘটনা কি? এই মেয়ে আজ এত 'বিবেক, বিবেক' করে কেন? যাত্রাপালা দেখে আসছে নাকি?
-কি হল? রিমি আবার বলল।
-সেটাতো তুমি বলবা।
-চল।
-কোথায়?
-আমরা পালাচ্ছি।
-অ্যাঁ।
-অ্যাঁ না, বল হ্যা।
-আর ইউ সিরিয়াস?
-ডু ইউ সি মি লাফিং?
আমি তাও ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম।
-কি সমস্যা?
-তোমার বাসার লোকজন কোথায়?
-ওদেরকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না।আমি ব্যবস্থা করেই এসেছি।
-মানে কি? খুনখারাপি করছ নাকি আবার?
-উফ, উলটাপালটা সিনেমা দেখে তোমার মাথা গেছে।সবাই বেঁচে আছে। রাতের খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিলাম। সবাই ঘুমে। এত তাড়াতাড়ি উঠবে না।
-আর তোমাদের দারোয়ান?
-ঐ ব্যাটা আর জীবনেও ঘুম থেকে উঠবে না।
-মানে?
-এত মানে মানে কর কেন? ট্রলিটা ধর। তাড়াতাড়ি এখান থেকে সরে পড়তে হবে।
রিমি গলির মুখের দিকে এগুতে থাকে। রক্তমাখা রডটা তখনো হাতে শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে।
===============================================================
মোট দুই পর্বে শেষ করার প্ল্যান আছে। আজ পোস্ট করলাম প্রথম পর্ব।যত দ্রুত সম্ভব শেষ পর্ব পোস্ট করার ইচ্ছা আছে।
আমার লেখা আরও সাইকোথ্রিলারঃ
আমাদের নতুন পুরানো ঘর
রাতের আঁধারে
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৫০