somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাধীনতার রক্ত ঝরা দিন গুলোতে একুশের গান ও এক জন গন সংগীত শিল্পীর ডায়েরী ১ম পর্ব

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একুশ আসলেই আমার অনেক পরিচিত একজন গনশিল্পী গোষ্ঠীর এক অন্যতম শিল্পী আহমেদ হাফিজ কেমন যেনো উদাস হয়ে যায়। স্মৃতি যেনো তাকে স্বাধীনতা পুর্ব আন্দোলনের দিনগুলোতে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াতে থাকে।

ওনার কাছে যখনই যাই তখনই আমাকে তিনি একুশ নিয়ে ছোটো ছোটো কিছু ঘটনা শোনান। আমি একদিন তাকে আগ্রহ ভরে বল্লাম, 'হাফিজ ভাই, এগুলো নিয়ে কিছু লিখেন না কেনো!'
এ কথার পর উনি খানিকক্ষন আমার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে রইলেন। মনে হলো কিছু একটা খুজে ফিরছেন আমার চোখে।আস্তে করে চেয়ার থেকে উঠে ঘরের কোনায় রাখা কাঠের একটি আলমারীর ড্রয়ার হাতড়ে হাতড়ে বের করে আনলেন পুরোনো দুটো ডায়রী।
আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বল্লেন, 'দেখো এ দুটো, চেষ্টা করেছিলাম একটু আধটু, কিন্ত লেখার দক্ষতা না থাকায় কোনোদিনই ঘটনাগুলো পুর্নাংগ ভাবে শেষ করতে পারিনি বুঝেছো'।
তার হাত থেকে ডায়রী দুটো নিয়ে বল্লাম, 'ঠিক আছে হাফিজ ভাই, দেখি আমি চেষ্টা করে পারি কিনা আপনার স্মৃতিগুলোকে ধরে রাখতে'।

আজ সন্ধ্যার অবসরে ডায়রীগুলো খুলে বসলাম। দেখি কোনো দিন তারিখ বা ধারাবাহিকতা নেই। আছে তাতে তার বিচ্ছিন্ন কিছু স্মৃতিকথন। পাতা উল্টাতে উল্টাতে শেষ পর্যন্ত আসলাম।ভাবলাম শেষ থেকেই শুরু করি

আমি এখানে হাফিজ ভাইয়ের ভাষাতেই ঘটনাগুলো তুলে ধরছি :

'মনটা খুব খারাপ ,একটু আগে মনুদার মৃত্যু সংবাদ শুনলাম। উনি মারা গিয়েছেন সপ্তাহ দুয়েক আগেই। কিন্ত আমি কোনো খবরই পাইনি। মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেলো সহসাই। মনে পড়লো সেই দিন গুলোর কথা, যখন মনুদার সাথে ঘুরে বেড়িয়েছি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গনসংগীতের অনুষ্ঠানে গান গাইতে।আমাদের বাকি শিল্পীদের চেয়ে পাঁচ ছয় বছরের বড়ই ছিলেন তিনি। কিন্ত কখনই কোনো বড় ভাই সুলভ আচরণ তার মধ্যে আমরা দেখিনি।

ভাষা আন্দোলনের একটি গান (আমার ভাইয়ের...) চিরদিনের জন্য অবিস্মরনীয় হয়ে গেছে। কিন্ত আরো কিছু গান আছে যা শুনলে এখনও চোখের পাতা ভিজে উঠে। সে রকম একটি গান গাইতো আমাদের মনুদা, বিশিষ্ট গন সংগীত শিল্পী মনিরুল আলম।গন সংগীতের জন্য নিবেদিত প্রান এই শিল্পী।

গানটি ছিলো:


রাস্ট্র ভাষার আন্দোলন করিলিরে বাংগালী,
তোরে ঢাকার শহর রক্তে ভাসাইলি।

ইংরেজ আমলে হাটুর নীচে চালাইতো গুলি,
এখন বাংগালী ভাইয়ে ভাইয়ে উড়ায় মাথার খুলি।

তোতা পাখী পড়তে আইসা খোয়াইলি পরান,
মা এ সে বোঝে পুতের দরদ ভাইরা যার কলিজার জান।

লীগের সরকার আমার ভাইয়ের লাশ কবরে না দেয়,
মুসলীম লীগ ভাই আমার ভাইয়ের লাশ পেট্রোলে পোড়ায়।

মা ও কান্দে, বাপও কান্দে, কান্দে জোড়ের ভাই,
বন্ধু বান্ধব কাইন্দা কাইন্দা কয় 'খেলার দোসর নাই'।



আরও কিছু লাইন ছিল কিনা এখন আর মনে নেই। গানটি লিখেছিলেন এবং সুর দিয়েছিলেন অতি সাধারণ একজন মানুষ, নামটি যতদুর মনে পড়ে সামসুদ্দীন ।

আমরা ছিলাম দ্বীতিয় প্রজন্মের গন সংগীত শিল্পী।গন শীল্পি গোষ্ঠীর আর ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠির প্রতিটি অনুস্ঠানে আমাদের কোরাস গানের মাঝখানে মনুদা অত্যন্ত আবেগের সাথে গাইতেন এই গানটি।অসাধারন লাগতো।দর্শকসারির অনেকের চোখে জল ছলছল করতে দেখতাম।

আবদুল লতীফ এবং শহীদ আলতাফ মাহমুদও গানটি গাইতেন সুরের একটু হের ফের করে।তবে মনুদার কন্ঠে সলো এই গানটির আবেদন ছিলই অন্যরকম। আজ সেই মনুদার মৃত্যু সংবাদটা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।আর মনে পড়লো এই গানটির কথা ।একুশের গানের যে কি শক্তি আর আবেগ ছিল তা এখন আর কাউকে বোঝানো কঠিন।

আরেক জনের কথা মনে পরে, তিনি হলেন আলীম ভাই।বাংলার কিংবদন্তী পল্লী গীতি সম্রাট আবদুল আলীম। থাকতেন ঢাকা শহরে আমাদেরই পাড়ায়।একুশ এলে আমরা পাড়ার ছেলেরা ফাংশান করতাম আর গিয়ে ধরতাম আলীম ভাইকে। আশ্চর্য এই মানুষটি কোনোদিন আমাদের ফিরিয়ে দেন নি।

মনে পড়ে এমনি এক ফাংশনে হঠাৎ দেখি পিছন দিকে দর্শক সারিতে বসে আছেন আলীম ভাই। শীতের রাত, খোলা আকাশের নীচে।আলীম ভাইর গান সবার শেষে। আমরা অপেক্ষা করছিলাম তার জন্য , কিন্ত তিনি আগেই চলে এসেছিলেন।কাউকে জানায় নি যে তিনি এসেছেন।।আমি দেখে সাথে সাথে গিয়ে বল্লাম' আলীম ভাই এখানে তো ভীষন ঠান্ডা আর কুয়াশা , আসুন ক্লাবঘরে গিয়ে বসবেন '।
উনি রাজী হলেন না। একাগ্রমনে সেখানে বসেই আমাদের অনুষ্ঠান দেখতে লাগলেন। কি মহানুভবতা মাটির গান গাওয়া, মাটির মানুষ এই শিল্পীর!
সবার শেষে উনি স্টেজে উঠে গান ধরেছিলেন তার উদ্দাত্ত কন্ঠে। দশটা কি বারোটা বা আরো বেশী । ক্লাবের মাঠ আর আশ পাশ ভরে গিয়েছিল অগনিত দর্শক শ্রোতায়।"


ডায়রীর শেষ পাতাটি এখানেই শেষ হয়েছে। পরের পাতা গুলোতে যা লেখা আছে তা নিয়ে আরেকদিন বসবো।

Click This Link

Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:২৮
৬০টি মন্তব্য ৬০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×