somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চারমিনার ইসলামিক শিল্পকলার এক অনন্য নিদর্শন ( ছবি+ভ্রমণ)

০১ লা জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চারমিনার
চারমিনার নামটি আমাদের অনেকের কাছেই অত্যন্ত সুপরিচিত। গত বছরের কাছাকাছি এই সময়ে আমার কুড়ি দিনের দীর্ঘ ভারত ভ্রমণ তালিকায় অনেক কিছুর সাথে ছিল চারমিনার ।


চারমিনারের জানালায় ইসলামিক স্থাপত্যের নমুনা সেই পাথরের জাফরি কাটা নকশা
চারশ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক শহর হায়দ্রাবাদের হৃদপিন্ড হিসেবে পরিচিত জগৎ বিখ্যাত চারমিনার কে আরেকবার ঘুরে দেখার বাসনায় অন্ধ্র প্রদেশকে বেছে নিলাম।
সকাল দশটায় নাস্তা সেরেই হাজির হোলাম আগেরদিন সন্ধ্যায় ট্রেন থেকে নেমেই এক ঝলক দেখা মুসলিম স্থাপত্য কলার এক অনন্য সৃষ্টি চারমিনার চত্বরে ।


চারমিনারে প্রবেশের বিশালাকৃতির ফটক
ভারতবর্ষের দুটি বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থাপনা যা সারা বিশ্বের মানুষ একনজর দেখেই চিনে নিতে পারে। একটি হলো প্রিয়তমা স্ত্রীর সমাধিকে স্মরনীয় করে রাখার জন্য আগ্রায় সম্রাট শাহজাহান কর্তৃক সৃষ্ট জগৎ বিখ্যাত তাজমহল। দ্বিতীয়টি অন্ধ্রপ্রদেশের রাজধানী হায়দ্রাবাদের কেন্দ্রে মুসী নদীর পুর্ব তীরে নির্মিত বিখ্যাত এই চারমিনার।


চারমিনারের নির্মাতা সুলতান কুলী কুতুব শাহ (৫ম) ১৫৮০-১৬১২ খৃঃ
ভারতের মধ্যযুগের ইতিহাসে অন্ধ্রপ্রদেশের বিখ্যাত কুতুবশাহী রাজবংশের পন্চম সুলতান ছিলেন হায়দ্রাবাদ নগরীর প্রতিষ্ঠাতা কুলী কুতুব শাহ। ফার্সী এবং উর্দু ভাষায় কবিতা লিখতে তিনি ছিলেন পারঙ্গম।


খিলানের ধার ঘেষে অপরুপ কারুকাজ
এই কুতুব কুলী শাহই ছিলেন বিখ্যাত চারমিনার, মক্কা মসজিদসহ আরো অনেকগুলো ঐতিহাসিক স্থাপনার নির্মাতা। সব কিছু রেখে আজ শুধু দেখুন সেই জগৎবিখ্যাত চারমিনার আমার চোখে। এখানে উল্লেখ করি একটি বিজ্ঞাপনের কথা । ভারতের বিখ্যাত চারমিনার সিগারেটের প্যকেটেও কিন্ত এই সৌধের ছবি ব্যবহ্বৃত হয়ে থাকে।


মাঝখানে গম্বুজ আর তার চারিদিক ঘিরে এমন খিলানাকৃতির পথ
কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে ১৫৮৯ সনে কুতুবশাহী বংশের রাজধানী গোলাকুন্ডা থেকে হায়দ্রাবাদে সরিয়ে নিয়ে আসার পর সেখানে ভয়াবহ প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সুলতানের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ১৫৯১ খৃঃ এ হায়দ্রাবাদ শহর থেকে সম্পুর্ন ভাবে প্লেগ নির্মুল হয়। সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতার চিন্হ স্বরূপ সে বছরই তিনি শহরের ঠিক কেন্দ্রস্থলে নির্মান করেন চারমিনার ।


গম্বুজের ঠিক মাঝখানে পদ্মফুলের আকৃতির ডিজাইন
আবার কেউ কেউ বলে থাকেন সুলতান কুতুব কুলী শাহ ঠিক এখানেই তার প্রিয়তমা স্ত্রী বাগমতীর সাক্ষাৎ লাভ করেছিলেন।


চারমিনারের বাইরের দৃশ্য
যিনি পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে প্রধান মহীষির আসন অলংকৃত করেছিলেন। সেই প্রেমের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্যই এই সৌধ।তবে এটা নির্ভরযোগ্য তথ্য নয়। প্রথম তথ্যটিই সর্বজনগ্রাহ্য।


গম্বুজের ভেতরের দিকে অলংকরন
বর্গাকৃতির পারস্য স্হাপত্যশৈলীতে নির্মিত জগৎ বিখ্যাত চারমিনার নির্মিত হয়েছে মার্বেল, চুনাপাথর আর গ্রানাইট এ। চৌকোনা এই ভবনটির প্রতিটি দিকই দৈর্ঘ্যে ২০ মিটার লম্বা।


একটি খিলানের মাঝে আমি
সৌধের চারিদিকে চার স্তর বিশিষ্ট চারটি সুদৃশ্য মিনার উচ্চতায় মাটি থেকে ৪৯ মিটার, যার মাথায় রয়েছে মুকুটের মত অপুর্ব কারুকাজ।


চারমিনারের গম্বুজের ভেতরে শেয়ালের মুখ এর প্রতিকৃতি
ইসলামিক শিল্প কলায় যেখানে ফুল লতা পাতা আর ক্যালিগ্রাফি ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না সেখানে প্রানীর ছবি বিশেষ করে শিয়ালের মাথার চিত্র এক অভুতপুর্ব ঘটনা।
মিনারের ভেতর দিকে পেচিয়ে ওঠা ১৪৯ টা সিড়ি ভেঙ্গে একদম উপরে উঠলে পুরো শহরটি চোখের সামনে ভেসে উঠে।


চারমিনারের বাইরের দিকে অপরূপ কারুকাজ
এই মিনারটির চারদিকে ১১ মিটার চওড়া এবং ২০ মিটার উচু চারটি বিশাল খিলান রয়েছে । আর এই খিলান বরাবর শহরের বুক চিরে চারদিকে চলে গেছে চারটি প্রশস্ত রাজপথ।


ভেতর থেকে গোলাকার নকশাকরা গম্বুজ
খিলানগুলোর উপরে দুটি তালার প্রথমটিতে মাদ্রাসা আর তার উপরে মসজিদ অবস্থিত।


খিলানের ভেতরের দিক
বিশালাকায় এই ভবনকে কেন্দ্র করেই প্রায় তিন বর্গমাইল এলাকা জুড়ে ঐতিহাসিক শহর হায়দ্রাবাদ বিরিয়ানী, মুক্তা, রেশমী বেলোয়ারী চুড়ির রিনিঝিনি আর আতরের গন্ধে ভরপুর।


দোতলা থেকে রাস্তা
পুরোনো এই শহরের সৌন্দর্য, সুগন্ধ, ঐতিহ্য এবং স্বাদের অপরূপ সম্পদ সম্ভার এখানের পাথরে পাথরে মিশে আছে আর সেই সাথে আছে ইতিহাস।


চারমিনারের পাশে এক বেলোয়ারী চুড়ির দোকানে
রাতের চারমিনার আরো আকর্ষনীয় পর্যটকদের কাছে। বিশেষ করে রমজান এবং ঈদের সময় একে কেন্দ্র করে ঢল নামে মানুষের।


রাতের চারমিনার
এর পশ্চিম দিকে রয়েছে বিখ্যাত মক্কা মসজিদ। পবিত্র মক্কাশরীফ থেকে মাটি এনে ইট তৈরী করে নির্মিত হয়েছিল বিখ্যাত এই মসজিদের প্রধান খিলান যার ফলে এই মসজিদের নাম মক্কা মসজিদ।


বিখ্যাত মক্কা মসজিদ
দশ হাজার মুসল্লীর ধারনক্ষমতা সম্বলিত বিশাল মক্কা মসজিদ পৃথিবীর অন্যতম এক বিশাল মসজিদ। পর্যটকদের জন্য অবশ্য দর্শনীয় এই মসজিদ মুহাম্মদ কুলি কুতুব শাহ এর সময়ে ১৬১৪ সালে এটা নির্মনের পরিকল্পনা করা হলেও এটা সম্পূর্ণ হয় ১৬৮৭ সালে যখন সম্রাট আওরঙ্গজেব গোলকু্‍ন্ডাকে মুঘল সাম্রাজ্যভূক্ত করেন।

এরই সাথে কুতুব শাহী বংশের যবনিকাপাত ঘটেছিল, কিন্ত মক্কা মসজিদ সহ চারমিনার তার স্বমহিমায় আজও টিকে আছে, আর ধরে রেখেছে তার শত বছরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ।


কুলী কুতুব শাহ এবং রাতের চারমিনারের ছবি দুটো নেট থেকে নেয়া। বাকিগুলো আমাদের ক্যমেরায় তোলা।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৮
৪৫টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×