রাজা ভুমিবল আদুলেয়াদজে
আমরা ছোটবেলা থেকে পড়ে এসেছি এক দেশে ছিল এক রাজা। কিন্ত আমি আজ বলছি এমন একজনের কথা যে ছিল না এখনো আছে। অর্থাৎ এক দেশে আছে এক রাজা। তাঁর আছে এক রানী, এক রাজপুত্র তিন রাজকন্যা আর তার প্রিয় সুবর্নভুমির প্রিয়তম জনগন ।
এই রাজা ৬৯ বছর ১৫৪দিন ধরে দেশের শাসন ক্ষমতা পরিচালনা করছেন জনগনের অত্যন্ত শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় । থাইল্যান্ডের ইতিহাসে যত রাজা ছিল তার মাঝে সবচেয়ে দীর্ঘদিন ধরে রাজত্ব করছেন তিনি।থাইল্যান্ডের বিখ্যাত চক্রী রাজবংশের রাজা আনন্দ মাহীদলের পুত্র বর্তমান রাজা ভুমিবল আদুলেয়াদজে নবম রামা উপাধিতেও ভুষিত।
থাইল্যান্ডের জনগনের কাছে অত্যন্ত সন্মানিত, পবিত্র এবং জনপ্রিয় রাজা ভুমিবল ১৯২৭ সনের ৫ই ডিসেম্বর আমেরিকার কেম্ব্রিজ ম্যাসাচুসেটস এর অবার্ন হাসপাতালে জন্মগ্রহন করেন। সংস্কৃত ভাষায় ভুমিবল অর্থ জমির শক্তি। আর একারনেই পরবর্তী জীবনে রাজা ভুমিবল থাইল্যান্ডের ভুমি অর্থাৎ কৃষিক্ষেত্রে এক বিপ্লব সাধন করেছিলেন।
রাজা ভুমিবলের কৃষি বিপ্লব
যাই হোক রাজা ভুমিবলের যখন দুই কি আড়াই বছর বয়স তখন তার পিতা রাজা মাহীদল মারা যান। এরপর অনেক ঘটনা ঘটেছিল থাইল্যান্ডের রাজপরিবার ও রাজা ভুমিবলের জীবন ইতিহাসে। সেটা আরেকদিন বলবো। আজ শুধু বাইক ফর ড্যাডের ভুমিকায় এসব সংক্ষিপ্ত বিবরণ।
৯ই জুন ১৯৪৬ সনে সিংহাসনে বসেন রাজা ভুমিবল। তার থেকে বছর পাঁচেকের ছোট ১৬ বছরের সিরিকিটকে ভালোবেসে বিয়ে করেন ১৯৫০ সনে তার করোনেশনের ঠিক এক সপ্তাহ আগে। জেনেভায় পড়াশোনা করার সময় গাড়ি এক্সিডেন্টে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ভুমিবল। তাকে প্রায়ই দেখতে যেতেন সুইজারল্যান্ডের থাই এম্বেসডরের কিশোরী কন্যা সিরিকিট। সেখানেই তাদের ভালোবাসার সুত্রপাত আর তার পরিনতি বিয়ে যা আজো টিকে আছে দুজনার প্রতি দুজনার ভালবাসায়।
রাজা ভুমিবল আর রানী সিরিকিট বর্তমানে এক রাজপুত্র আর তিন রাজকন্যার পিতামাতা ছাড়াও গোটা দেশের জনগনের পিতামাতাও বটে।
আমেরিকায় জন্মগ্রহন আর সুইজারল্যান্ডে শিক্ষিত রাজা ভুমিবলের মুলমন্ত্র ছিল দেশের উন্নয়ন।তার জন্য যে সমস্ত কার্যকারী পদক্ষেপ তিনি নিয়েছিলেন তার সুফল পাচ্ছে থাইবাসীরা। জ্ঞ্যান-বিজ্ঞান, কারিগরী শিক্ষা, কৃষিক্ষেত্র, স্বাস্থ্য , রাস্তাঘাট অর্থাৎ পুরো দেশের ভৌত অবকাঠামোর অবিশ্বাস্য পরিবর্তন ও তার আধুনিকীকরন, অর্থাৎ বিশ্বের উন্নত একটি দেশের রূপকার হলেন এই কিম্বদন্তী রাজা ভুমিবল । তার প্রতিটি পদক্ষেপই ছিল জনকল্যানমুখী এবং যুগান্তকারী।
রানী সিরিকিট নিজেও প্রচুর দাতব্য কার্য্যক্রম পরিচালনার সাথে যুক্ত ছিলেন। । রানী ২০১২ তে স্ট্রোক করার পর তার চলাচল ও সীমিত হয়ে পড়েছে। ৮৮ বছরের রাজাও খুব অসুস্থ। প্রকাশ্যে বের খুব কমই হচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে। বর্তমানে তাদের দ্বিতীয় কন্যা অত্যন্ত মেধাবী রাজকন্যা শ্রিনিধন মহাচক্রী পিতা মাতার বিভিন্ন কার্য্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
রাজার জন্মদিন ১৯২৭ সনের ৫ই ডিসেম্বর। এদিন থাইল্যান্ডে ফাদার্স ডে হিসেবে পালিত হয়। আর রানীর জন্মদিন ১২ই অগাষ্ট সেদিন পালিত হয় মা দিবস। বিশাল আয়োজনের মধ্যে দিয়ে এই দিবস দুটো সারা থাইল্যন্ড জুড়ে পালিত হয়ে থাকে। রানীর রঙ এর প্রতীক ফিরোজা ও সাদা আর রাজা ভুমিবলের রঙ হলুদ। রানীর জন্ম দিন অর্থাৎ মা দিবসে ছোট বড় বেশিরভাগ থাই জনগন ওই রঙের পোশাক পড়ে বিভিন্ন উতসবে অংশ নিয়ে থাকে। যা গতবার দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বৌদ্ধ মন্ত্রোচ্চারনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়ে নাচ গান এবং সবশেষ হয়েছিল আতশবাজির মাধ্যমে।
রানী সিরিকিট
রাজপুত্র মহা ভাজিলালংকর্নের নেতৃত্বে এবার রাজা ভুমিবলের ৮৮তম জন্মদিনে এক বিশেষ কার্য্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে । ১১ ই ডিসেম্বর ২০১৫ বিকেল তিনটায় শ্রদ্ধেয় পিতার জন্মদিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে ২৯ কিমি দীর্ঘ এক বাই সাইকেল র্যালী পরিচালিত হবে রাজধানীর নির্দিষ্ট পথে। এই ইভেন্টের উদোক্তা রাজপুত্র সাইকেল রাইডের অংশগ্রহনকারীদের মাঝে বিতরণ করবেন বিনা মুল্যে এক লক্ষ টিশার্ট রিষ্ট ব্যান্ড ও পানির বোতল । এখানে উল্লেখ্য যে রাজা ভুমিবল শুধু তার পুত্র কন্যার কাছেই ড্যাড নন, উনি সমগ্র থাই জাতির প্রিয়তম/শ্রদ্ধেয় পিতা।
এক সময়ের কর্মঠ রাজা ভুমিবল
এই ইভেন্টের মাধ্যামে এদের লক্ষ্য হচ্ছে ইউনাইটেড থাইল্যান্ড, বাইক ফর ড্যাড অর্থাৎ এক থাইল্যান্ড আর থাই জনগনের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ উন্নয়ন। সাইকেল ব্যবহারের মাধ্যমে পেট্রোলের কালো ধোয়া আর ট্রাফিক জ্যামের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া আর একই সাথে হবে শরীরচর্চা। রাজা ভুমিবল যেহেতু থাইল্যান্ডের জনগনের চোখে পিতার মতন প্রিয়তম, শ্রদ্ধেয়, সন্মানিত, সুতরাং তার জন্মদিনকে উপলক্ষ করে দেশব্যাপী এবারের স্লোগান বাইক ফর ড্যাড।
রাজা ভুমিবলকে জড়িয়ে ধরে আছে একমাত্র পুত্র মহা ভিজিলালংকর্ন
১১ই ডিসেম্বর এই ইভেন্টে থাইল্যান্ড ছাড়াও পৃথিবীর ২২টি দেশে বসবাসরত দেশপ্রেমিক থাইরা অংশ নেবে।
বড় বড় শপিং মল ছাড়াও পথে ঘাটে বিক্রি হচ্ছে হলুদ রঙের টি শার্ট আর তাতে বুকের কাছে লেখা বাইক ফর ড্যাড।। এর কোন কোনটির হাতা ফিরোজা অর্থাৎ রানীর রঙ ও রয়েছে।
আমার কেনা টিশার্ট
সারা থাইল্যান্ড জুড়ে চলছে এর বিনম্র প্রচারনা। অনেক দোকানের সামনে বাক্স রয়েছে। তাতে আপনি ইচ্ছে করলে কিছু টাকা দিতে পারেন যা কোন দাতব্য কাজে ব্যয় হবে। রাজা রানী দুজনাই প্রচুর টাকা পয়সা দাতব্য কাজে ব্যয় করে থাকেন। আমরাও রাজা ভুমিবলের দীর্ঘ জীবন কামনা করে একটি টি শার্ট কিনে আনলাম স্মৃতি হিসেবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ ভোর ৬:৪৪