somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওয়াটার ট্যাক্সি স্বদেশ বিদেশে

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিদেশের এক ওয়াটার ট্যাক্সি
এই তো মাত্র দু-তিনদিন আগেই বসে বসে একটি কথা খুব ভাবছিলাম। আর যে কোন কিছু ভাবার পেছনে একটি গুঢ় কারনতো অবশ্যই থাকে বৈকি। আমার ভাবনার বিষয়টি ছিল আমাদের দেশের মানুষের এক ভয়াবহ দু:স্বপ্ন ট্রাফিকজ্যাম। বর্তমানে আমাদের নগরবাসীরা যানজটে কি পরিমান কষ্ট আর নাকাল হচ্ছে তা ভুক্তভোগীরা ভালো করেই অবহিত। খুব জরুরী কাজ ছাড়া ঢাকাসহ প্রধান প্রধান নগরবাসীরা বাইরে বেরুনোর কথা চিন্তা করতেও ভয় পায়, আতংকিত হয়। আধা ঘন্টার পথ তিন ঘন্টা লেগে যায় যেতে যেতে।


দুপাশে বাধানো এই পথ শুধু সাইকেলচারী আর পথচারীদের জন্য বরাদ্দ
আমার সাময়িক নিবাসের পেছনে এক খাল পথ দেখতে দেখতেই আমার মনে এই ভাবনার উদয় হলো। আচ্ছা আমাদের দেশও তো খাল বিলে ভরা। তা আমরা এদের কাজে লাগাই না কেন বিশেষ করে যাতায়তের জন্য ? বিশেষ করে আমাদের রাজধানী শহরে।


ব্যাস্ত নগরীর দুটি ব্যাস্ত জনপদের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা খাল,যার দুপাশে রয়েছে বাধানো পায়ে চলা পথ
এই পথে চলতে গিয়ে কখনো আপনি সাইকেলের ক্রিং ক্রিং শুনতে পাবেন না। আস্তে করে মৃদু গলায় আপনাকে তাদের ভাষায় ধন্যবাদ জানাবে পথ ছেড়ে দেয়ার জন্য।


সে খালপথে চলছে ট্যাক্সি
এ পানিপথ ব্যবহারের জন্য কোন স্বচ্ছসলিলা জল প্রবাহের প্রয়োজন আছে কি? ওরা তো এই কালো ময়লা পানি পথকেই তাদের কাজে ব্যবহার করছে। দুদিকে সিমেন্ট বাধানো পাকা রাস্তা যা শুধু নির্ধারিত সাইকেল আর পদযাত্রীদের জন্য। খালের দু পাশ জুড়ে সারিবদ্ধভাবে ঝোলানো সাদা সিরামিকের টবে বোগনভিলিয়া ফুলের সারি।


এটা হলো সেই ঘাট যা আমার সাময়িক বাসার পেছনে, চুপচাপ অপেক্ষারত যাত্রীরা
ফুলে ফুলে শোভিত পথের মাঝখানে এই ছোট খাল দিয়ে প্রতিদিন শত শত যাত্রী ওয়াটার ট্যাক্সি নামে ইঞ্জিন চালিত দ্রুত গতির নৌকায় এ পথে তাদের গন্তব্যে যাতায়াত করে। আমি ও এ পথ দিয়ে সকাল বিকাল হাটার সময় খুব গভীর মনযোগ দিয়ে লক্ষ্য করি তাদের। দেখে মনে হয় কেউবা শিক্ষালয়ে কেউবা চাকরীর জন্য ছুটে চলেছে সে পথে।


বিশাল তরুরাজী আর ফুল ফলে ছেয়ে থাকা পথ
খালের দুধারেই রয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা যেমন: স্কুল, শপিং মল, কাচা বাজার, ছোট খাটো রেস্টুরেন্ট কাম বাসা, মন্দির মসজিদ, খেলার মাঠ সবকিছুই। অর্থাৎ দুদিকে দুটি জনপদ। যার সামনের দিকে রয়েছে চার লেনের চওড়া প্রধান সড়ক ছাড়াও উপর দিয়ে চলে যাওয়া এক্সপ্রেস ওয়ে। যে পথে চলছে স্বল্প ভাড়ায় প্রচুর বাস আর মিটার ট্যাক্সি।


এই মন্দিরের গা ঘেষেই সহবস্থান এ রয়েছে মসজিদ
তারপরও তারা পেছন দিক দিয়ে বয়ে যাওয়া এই খাল পথকে কাজে লাগিয়েছে অত্যন্ত কার্যকর ভাবে। আমাদের দেশ হলে এতদিনে বর্জ্য ফেলে ভরাট এটাকে দখল করা হয়ে যেত। অত্যন্ত দু:খ হয় এসব লিখতে আর ভাবতে।


ঐপাশে এক ছোট্ট বাসার ভেতরের এক দিকে দোকান
এই খাল পথে সরকার নিয়ন্ত্রিত ওয়াটার ট্যাক্সি ছাড়া আর কোন ব্যক্তিগত জলযান নেই। নেই ঘাটে ঘাটে কোষা নৌকা বাধা। তবে ভাবছেন খালের দুধারের লোকজন সেই প্রধান সড়ক না ঘুরে এধার থেকে ওধারে কি ভাবে যাতায়ত করে? সে ব্যবস্থাও আছে বৈকি।


এপারের জনপদ থেকে ওপারের মসজিদ, মন্দির আর স্কুলে যাবার জন্য রয়েছে ভেলা

এর জন্য কিছু দূর পর পর ছোট ছোট সেতু, যার উপর দিয়ে দুই লেনে গাড়ি চলাচলের পথ ছাড়াও রয়েছে লোক চলাচলের জন্য দুদিকে রেলিং দেয়া পথ। এছাড়াও এর এক জায়গায় রয়েছে ভেলা যা পাড়ি দিয়ে বাচ্চারা ঐপারে স্কুলে যাচ্ছে, যাচ্ছে মসজিদ মন্দিরে, শপিং মলে কিম্বা খেলার মাঠে। এই খাল পথটির দুটি লাইন রয়েছে রাজধানীর বুকে, যেমন আছে আকাশ রেল আর পাতাল রেলের।


কখনো ছেলেটি, কখনো তার মা বা ভাই পা দিয়ে ঠেলে ঠেলে লোহার তার পেচানো পুলির সাহায্যে ভেলাটিকে এপার ওপার করছে সারাদিন।


মসজিদ আর বৌদ্ধ মন্দিরের পরেই আছে সবুজ গাছে গাছে ঢাকা এক স্কুল ভবন
যাই হোক গত দুদিন ধরে এসব নিয়ে ব্লগে একটা পোষ্ট দিবো ভাবছি, এরই মাঝে পত্রিকায় দেখলাম আমাদের ঢাকায়ও ওয়াটার ট্যাক্সি নামছে যে খালগুলোয় যার কথা আমরা ভাবছিলাম গত কয়েকদিন ধরে। এ খবরটি পড়ে ভীষন খুশী হোলাম,আবার আশংকিত হোলাম বৈকি। কারন বেশ কয়েক বছর আগে ঢাকার চারিদিক দিয়ে অনেক আশা নিয়ে এমন এক নৌপথ শুরু হয়,।যা কিনা দুদিন পরেই মুখ থুবড়ে পড়ে।


আমাদের বিলাস বহুল ওয়াটার ট্যাক্সি যাতে যাত্রীরা কেক বিস্কিট খেতে পারবে।
পত্রিকায় দেখলাম আমাদের দেশের সেসব বিলাশ বহুল ওয়াটার ট্যাক্সির ছবি যার দাম ৮৫ লাখ টাকা, আর যেখানে আপনি কেক বিস্কিট ও খেতে পারবেন।
কিন্ত ওরা তুলনামুলক ভাবে আমাদের থেকে ধনী দেশ হয়েও তাদের নৌকা অর্থাৎ ওয়াটার ট্যাক্সিগুলো কাঠের তৈরী। ঝকঝকে পরিষ্কার রঙ করা কাঠের পাটাতনের উপর ঘন ভাবে সারি সারি সরু বেঞ্চ পাতা।


ঢেউ তুলে সাঝের আধারে ছুটে চলা নৌকা।
আমাদের দেশের পত্রিকায় ছাপানো ওয়াটার ট্যাক্সির দেয়া ছবির মত কোন আরামদায়ক সিট এখানে নেই। সবাই পাশাপাশি বসে আছে আর যায়গা না হলে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে তাদের গন্তব্যে।


ওই পাশেও রয়েছে এমনি গাছ আর ফুল।
এ পথে যানযট নেই। যার যার গন্তব্য আসার সাথে সাথে দ্রুত নেমে যাচ্ছে আর কেউবা উঠছে। এত যে লোক নৌকায় তারপর ও নেই কোন হৈ চৈ চেচামেচি, না ভাড়া নিয়ে কোন হট্টগোল। প্রতিটি যাত্রী অত্যন্ত সততার সাথে নিজ নিজ গন্তব্যের নাম বলে টাকা বাড়িয়ে দিচ্ছে আর কন্ডাকটার নিঃশব্দে টিকিট আর বাকি পয়সা এগিয়ে দিচ্ছে। এক স্টেশন থেকে উঠে পরের স্টেশনে নেমে গেলে ভাড়া দিতে হবে না।


ভাড়া নিচ্ছে কন্ডাক্টর


এমনি সেতু বেশ কিছু দূর দূর যাতে গাড়ি আর মানুষ পার হচ্ছে
গুরুত্বপূর্ণ লোকালয়ে রয়েছে একটি করে ল্যান্ডিং স্টেশন। কতগুলো স্টেশন বেশ পর পর , কিছু কিছু আবার বেশ খানিকটা দুরত্বে।


এমন একটি ল্যান্ডিং স্টেষন


সারি সারি পাতা কাঠের বেঞ্চে যাত্রীরা বসে আছে চুপচাপ নিজ নিজ গন্তব্যের অপেক্ষায়।
বাইরে দেখতে যেমনই হোক ভেতরটা ঝক ঝকে তক তকে পরিস্কার সেই ওয়াটার ট্যাক্সিতে কেউ কেক বিস্কিট খাচ্ছে না। বলতে গেলে সময় কই সেই অল্প সময়ের যাত্রা পথে খাওয়া দাওয়া করার! আর ওদের দেশে যানবাহনে খাওয়া নিষেধ ও বটে। হয়তো যানবাহন বা রাস্তাঘাটে চিপসের প্যাকেট আর ঝালমুড়ির ঠোংগা ফেলার তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়তো তাদের অতীতেও ছিল।


যত দ্রুত গন্তব্যে ছুটে চলা যায়
আর আমাদের দেশে ঐ স্বল্প দুরত্বে অল্প সময়ের জন্য কোথাও যাবার জন্য যাত্রীদের কেক- বিস্কিট আর কোক খেতেই হবে! আর সেগুলোর মোড়ক আর কোকের বোতলের গন্তব্য কোথায়? যেদেশে চলতি গাড়ি থেকে মানুষ সদ্য ঝাড়ু দেয়া পথে চিপসের খালি প্যাকেট আর পানির বোতল ফেলে যায় সেখানে অবধারিত গন্তব্য হবে সেই খালপথ।


এই দুষিত পানিকে তারা পরিস্কার করার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এশিয়ার একটি দেশ হয়েও এদেশের নাগরিকরা পানিপথ হোক আর রাজপথই হোক পথের মাঝে ঠোঙাু ছুড়ে মারার কথা কল্পনাও করতে পারে না। আমরাও আমাদের দেশ থেকে এসব দূর করতে পারি শুধুমাত্র দরকার আমাদের একটু সচেতনতা আর সদিচ্ছার। খুব কষ্ট হয় যখন অন্য দেশ দেখতে গিয়ে নিজের দেশের চিত্রটিও উঠে আসে চোখের সামনে। আমরা ধনে জনে দরিদ্র নই, দরিদ্র মানসিকতায়।


মসজিদের সামনে থেকে ভেলায় করে পার হচ্ছে ছোট স্কার্ট পড়া মেয়েটি
শেষে এটা বলেই শেষ করি তা হলো আমাদের এসব কাজে যারা সংশ্লিষ্ট তারা কি চিন্তা ভাবনা নিয়ে চলাফেরা করে তা খুব জানতে ইচ্ছে করে। এখানে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন শুনেছি ইউনিভারসিটির প্রফেসররা।
বাস্তব অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য একদিন ঘুরে এলাম এই পথ দিয়ে।তবে আমার দেখা খালপথ আর তার চারিপাশ দেখুন আমার মোবাইলে তোলা ছবির মাধ্যমে।


রাতের আলোয় শহরের কেন্দ্র থেকে ফিরে আসা যাত্রিরা


রাতের আলোয় ঝলমল ওয়াটার ট্যাক্সি

আমি কায়োমনবাক্যে বাংলাদেশের এই কর্মসূচীর সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করছি।


ঝোড়ো বাতাসে ফুলে ওঠা ঢেউ ভেংগে ছুটে চলা ট্যাক্সি।


বিকেলের নরম আলোয় জলের বুকে দ্রুতগতিতে ছুটে চলা এক ওয়াটার ট্যাক্সি
অনেক কিছু লেখার ছিল, ছবি ছিল কিন্ত ট্যাব আর মোবাইল দিয়ে সম্ভব হলো না। আর মেঘলাদিনের ছবিগুলো অত পরিষ্কার আসে নি বলে দু:খিত।


বাধানো পথের পাশে সেই চির পরিচিত বাগান বিলাস।
সব ছবি আমাদের মোবাইল স্যমসং গ্যালাক্সি আর আপেলের আই ফোনে তোলা।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৯
৪১টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×