somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার কথা - ৯

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
'আমার কথা - ৮' পড়তে চাইলে এখানে পড়ুনঃ আমার কথা - ৮


My Alma Mater, MCC, etched permanently in my heart. The foundation of my education was laid in this building by capable scholars and leaders. This is the front view of the main Academic Building of the then Momenshahi Cadet College, now known as Mirzapur Cadet College.
(Photo credit: Mahbub Shaheed Bhai, Cadet No. 3)
যতই রিক্সা এগোচ্ছিলো, ততই আমার ভেতরে উত্তেজনা বাড়ছিলো। আমরা সরু পীচঢালা যে পথ ধরে এগোচ্ছিলাম, তার ডানপাশ দিয়েই একটা মাটির পায়ে চলা পথ ধরে কিছু সাধারণ মানুষ যাতায়াত করছিলো। বৃষ্টিতে ভিজে সে পথটা ভীষণ কর্দমাক্ত হয়ে গিয়েছিলো। আশেপাশে গাছপালা আর খাল নালা দেখছিলাম। পুরোপুরি গ্রামীণ পরিবেশে রিক্সা এগিয়ে যাচ্ছিলো। হঠাৎ সামনে দেখা গেল এক চমৎকার স্থাপত্যের সাদা বিল্ডিং। আরো একটু অগ্রসর হলে আরো কিছু বিল্ডিং নজরে এলো। সাদা শার্ট, সাদা ট্রাউজার্স আর কালো টাই পরা কিছু জেন্টলম্যানকে দেখা গেলো, সাথে খাকী ইউনিফরম পরা কিছু সেনাসদৃশ ব্যক্তি। সবুজের মাঝে হঠাৎ এই শুভ্রতার আবির্ভাবে সবকিছুই কেমন যেন ঝলমলে হয়ে উঠলো। একটা জায়গায় এসে আমাদেরকে রিক্সা থেকে নামতে হলো। ব্যাগসহ আমাকে এবং আমার মত আগত অন্যান্য ক্যাডেটদেরকে একটা বড় হলরুমে নিয়ে যাওয়া হলো, যার নাম পরে জেনেছি ‘কলেজ অডিটোরিয়াম’। সেখানে আমাদেরকে আমাদের সাথে আগত অভিভাবক ও অতিথিদের থেকে পৃ্থক করা হলো। কে কোন হাউজে থাকবে তা জানিয়ে দেয়া হলো। আমার জন্য বরাদ্দ ছিল ‘জিন্নাহ হাউজ, স্বাধীনতার পরে যেটাকে ‘ফজলুল হক হাউজ’ নামে নতুন নামকরণ করা হয়েছিলো।

একটা স্বাগত সম্ভাষণের পর আমাদেরকে হাউজে নিয়ে যাবার জন্য প্রস্তুত করা হলো, তার আগে সুযোগ দেয়া হলো আমাদের অভিভাবকদের সাথে শেষ কথাবার্তা সেরে ফেলার জন্য। ইতোমধ্যে দেখলাম আব্বা অন্যান্য কয়েকজন অভিভাবকের সাথে পরিচিত হয়ে আলাপরত। তাঁরই সমবয়সী একজনের সাথে তিনি এগিয়ে এসে আমাকে তাঁর পুত্র হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমি সালাম দিলাম। পরে জেনেছি তিনি ছিলেন আমার সতীর্থ মুজিব(২৩০) এর বাবা। আব্বা আমাকে বললেন, কোন অসুবিধা হলে আমি যেন আ্মার শিক্ষকগণকে জানাই। এছাড়া তিনি আমাকে প্রতি সপ্তাহে অন্ততঃ একটা করে চিঠি লেখার পরামর্শ দিলেন। তিনি আমাকে অভয় দিয়ে বললেন, এখানে আমার কোন অসুবিধে হবেনা, কারণ এখানকার সবাই ভদ্র ও মার্জিত। আমি আশ্বস্ত হলাম।

আব্বাকে পায়ে ধরে সালাম করার সময় আব্বা আমার মাথায় তার স্নেহের হাত বুলালেন। আমি বিগলিত হলাম, অনেক কষ্টে অশ্রু সংবরণ করলাম। তারপর আব্বা আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফিরতি পথ ধরলেন। এখানে আসার সময় আমরা দুজনা একসাথে ছিলাম। এখন ফেরার পথে আব্বা একা। একা একা ফিরতে তার মনটা কতটা খারাপ লাগবে সেকথা ভেবে ব্যথিত বোধ করলাম। একটানা তাকিয়ে থাকলাম তাঁর দিকে, যতক্ষণ পর্যন্ত দেখা যায়। একসময় তাঁর অবয়বটা অদৃশ্য হয়ে গেলো। তবে জগতে কোন ব্যথাই স্থায়ী নয়। বিধাতা মানুষের মনে যেমন ব্যথার অনুভূতি দেন, তেমনি ব্যথা ভোলারও যথেষ্ট উপকরণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখেন। আব্বা দৃষ্টির আড়ালে চলে যাবার পর আমি আমার নতুন ঠিকানায় আশ্রয় নেয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম এবং আহ্বানের অপেক্ষায় রইলাম। এদিক সেদিক একটু হাঁটাহাঁটি করে দূর থেকে আমার ‘হাউজ’টাকে দেখে নিলাম। আর বিস্তীর্ণ খেলার মাঠ আর সাদা ডাইনিং হলটাকে দেখে অবাক বিস্ময়ে চেয়ে রইলাম। ভাবতে থাকলাম, এমন গহীন গ্রামে এত সুন্দর দালান কোঠা আর খেলার মাঠ কে তৈরী করে দিলো?

আমার ‘হাউসে’ আসার পর থেকে মনটা ভালো হয়ে গেলো। আমাকে দোতলার মাঝামাঝি একটা ৮ বেডের রুমে রাখা হয়েছিলো। রুমে আমার জিনিসপত্র রেখে একটু বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম, চোখ জুড়িয়ে গেল। সামনে তাকালেই দেখা যায় সাদা ডাইনিং হলটা আর আমাদের মতই আরেকটা হাউস, যার নাম তখন ছিলো লিয়াকত হাউস, বর্তমানে সোহরাওয়ার্দি হাউস। সবচেয়ে ভালো লাগলো ডানদিকে কোণাকুণি তাকাতে। বিস্তীর্ণ ফুটবল মাঠের উপর দিয়ে দেখা যায় দূরে কয়েকটি দালান, যেগুলো পরে জেনেছি শিক্ষক ও স্টাফদের আবাস ছিলো, আর তার ফাঁক দিয়ে আরও দূরে দেখা যায় নদীর মত কিছু একটা। আসলে ওটা ছিলো নীচু জলাভূমি, কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে যা ফুলে ফেঁপে নদীর আকৃ্তি নিয়েছিলো। আমাদের কক্ষের ৮ জনের মধ্যে ৬ জনই আমরা নবাগত ক্যাডেট, আর দরজার কাছের দুই বেডে আমাদের চেয়ে দুই ক্লাস জ্যেষ্ঠ দুই সিনিয়র ক্যাডেট, যথাক্রমে আবেদ আহাদ চৌধুরী ভাই এবং ইফতেখার আহমেদ (অথবা হাসান) চৌধুরী ভাই। প্রথমজন রুম ক্যাপ্টেন আর দ্বিতীয় জন তার সহকারী। তাদের উভয়কে মনে হলো অত্যন্ত মৃদুভাষী এবং অতি সজ্জন ব্যক্তি। কয়েকদিন পরে অবশ্য টের পেয়েছিলাম যে দু’জন অতি সজ্জন ছিলেন ঠিকই, তবে মৃদুভাষী হিসেবে একজন ছিলেন আসলেই স্বভাবগত, আরেকজন আরোপিত। নতুন ক্যাডেটদের সামনে একটু ‘ভাব’ আনার জন্যই দ্বিতীয়জন মৃদুভাষী সেজেছিলেন। শ্রোতা পেলে তার মত আলাপী লোকের জুড়ি মেলা ভার, এটুকু বুঝতে আমাদের জন্য দু’তিন দিনই যথেষ্ট ছিলো।

চলবে…
(ইতোপূর্বে প্রকাশিত)

ঢাকা
১২ জুলাই ২০১৫
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৩৫
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×