somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি সুখের স্মৃতি—করুণাময়ের অপার দান কৃতজ্ঞতায় স্মরণ

০৭ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ একটা সুখের স্মৃতি আমার সহব্লগার ভাইবোনদের সাথে শেয়ার করছি। যদিও বিষয়টি ব্যক্তিগত, তথাপি ব্লগার পথে-ঘাটের লেখা “আমার ছেলে (গল্প)” পোস্টটা পড়ে এ পোস্টটা লিখতে উদ্যত হ’লাম। কেন, সেটা হয়তো পাঠকেরা লেখাটার শেষে গিয়ে বুঝতে পারবেন।

আজ থেকে প্রায় আঠার বছর আগের কথা, দিনটা ছিল ১৭ জুন ১৯৯৯। সেদিন ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল আইসিসি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল, অস্ট্রেলিয়া আর দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে। সে খেলাটা কি যে খেলা ছিল, সেটা যারা খেলা দেখেছেন, তারা ভাল করেই জানেন। আর সে সময় যাদের জন্মই হয়নি অথবা যারা ছোট ছিলেন, তারা এখনো ইউ টিউবে বা ক্রিকইনফো তে গিয়ে দেখতে পারেন। এমন শ্বাসরুদ্ধকর সমাপ্তি খুব কম খেলায়ই ঘটে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম “টাই” ম্যাচ ছিল সেটা।

যাহোক, আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম যে আমরা সেদিন ঘরে বসে টিভিতে ম্যাচটা দেখবো। আমি আর আমার তিন ছেলে সবাই আমরা ক্রিকেট পাগল। বড় হবার পর ছেলেরা ক্রিকেট ছেড়ে ফুটবল পাগল হলেও আমি এখনো ক্রিকেট পাগলই রয়ে গেছি। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপের সময় আমার বড় ছেলের বয়স ৯ বছর, আর মেজ ছেলের ৭। সে সময়তো এখনকার মত কম্পিউটার, স্মার্টফোন ইত্যাদি ছিলনা, এমন কি টিভিতেও সব খেলা দেখা এত সহজ ছিলনা। তাই খেলার বিভিন্ন পরিসংখ্যান মনে রাখার জন্য এবং সেই সাথে এ ব্যাপারে ছেলেদেরকে উৎসাহিত করার জন্য আর্ট পেপার দিয়ে আমি একটা বিরাট ওয়াল চার্ট বানিয়েছিলাম। এটা বানাতে এবং হালনাগাদ করতে ওদেরকেও উৎসাহিত করতাম। একেকদিনের খেলা হয়ে যেত, আর আমি ঐ খেলার গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিসংখ্যান সেই ওয়াল চার্টে টুকে রাখতাম। আমার স্ত্রী এতে প্রথমে মৃদু আপত্তি জানালেও আমাদের তিনজনের বিপুল আগ্রহ দেখে তা নীরবে সয়ে যেতেন। তখনই সেসব পরিসংখ্যান আত্মস্থ করার ব্যাপারে আমার বড় ছেলে আদনানের অসাধারণ পারদর্শিতা লক্ষ্য করেছিলাম। আমার মনে হয়, ঐ ৯ বছর বয়সেই সে বিশ্বকাপের টুকিটাকি নিয়ে যেকোন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে সক্ষম ছিল। তখন থেকে আরো ৭ বছর পর, ও যখন ১৬+, অর্থাৎ ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের সময় ওর ক্রিকেট সম্পর্কীয় আগ্রহ ও জ্ঞান যে আরও পরিপক্ক হবে, তা বলাই বাহুল্য। এত যার আগ্রহ, সে যে সেদিন এই গুরুত্বপূর্ণ খেলা দেখা ছাড়া আর অন্য কিছুতেই মনোনিবেশ করতে পারবেনা, সেটাই স্বাভাবিক ছিল। যাহোক, আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে আজকের এ পোস্টের অবতরণিকা হলেও, এ লেখার মূল প্রতিপাদ্য ক্রিকেট নয়। সে কথায় আসছি, তবে অনুষঙ্গ হিসেবে ক্রিকেট থেকেই যাবে।

১৭ জুন ১৯৯৯ আদনানের জীবনে আরেকটা কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যদিও সেই মুহূর্তে ক্রিকেটকেই বড় বলে মনে হয়েছিল। ঐ তারিখে ১৯৯৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের ঘোষণা আগে থেকেই রেডিও টিভিতে দেয়া হয়েছিল। তবে ফলাফল বিকেল চারটার আগে জানা যাবেনা, আর পরীক্ষার্থীদের নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তা সংগ্রহ করতে হবে। আমার অফিসের একজন অধঃস্তন কর্মকর্তার ছেলেও আদনানের সাথেই একই প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল। সকাল থেকে তিনি আমাকে কয়েকবার টেলিফোনে অনুরোধ করেছিলেন, চলুন আমরা দু’জন ওদেরকে একসাথে নিয়ে গিয়ে ওদের কলেজ থেকে ফলাফল নিয়ে আসি। আমি তাকে লজ্জায় বলতে পারছিলাম না, ফলাফল তো যা হবার তা হবেই। আমরা বাপ বেটা দু’জনে মিলে বরং বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল দেখবো। এ ব্যাপারে সেদিন সকালেই আমি ছেলেকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, সে কখন এমসিসিতে যেতে চায়। ছেলে একটু লাজুকভাবে আমাকে ওপরের ঐ কথাগুলোই বলেছিলো। আমিও ভেবে দেখলাম, তাই তো, “ফলাফল তো যা হবার তা হবেই”। আর তা ছাড়া ঐদিন ছাত্ররা শুধু কোন ডিভিশন পেয়েছে, সেটা জানা যাবে। ডিটেইল্ড রেজাল্ট জানতে তো আরো দুয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। পিতাপুত্রের মধ্যে গোপন সমঝোতা হলো, সেদিন আমরা কলেজে যাবনা, খেলা দেখবো। দুই একদিন পরে গিয়ে পুরো রেজাল্ট নিয়ে আসবো। ওকে দায়িত্ব দিলাম ওর মাকে রাজী করাতে।

এসএসসি পরীক্ষার আগে শেষ ছুটি কাটিয়ে আদনান যেদিন আমাদের বাসা থেকে তার কলেজে যাওয়ার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের ব্যাবস্থাপনায় আয়োজিত বাস ধরতে রওনা হচ্ছিল, সেদিন আমি প্রচন্ড জ্বরে আক্রান্ত ছিলাম। বিছানা থেকে ওঠার মত অবস্থা ছিলনা, তবুও আমি কাপড় পরে ওর সাথে রওনা হ’লাম। কথা বলতে পারছিলাম না, কিন্তু সারাটা পথ প্রাণভরে ওর জন্য দোয়া করে যাচ্ছিলাম। যখন গন্তব্যে পৌঁছলাম, তখন মনটা প্রশান্তিতে ভরে গেল। ওকে বাসে তুলে দিয়ে বিদায় নিলাম, অন্যান্যবারের মত বাস ছাড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারলাম না। সেদিন খেলা দেখছিলাম, আর সেই স্মৃতিটার কথা মনে ভাসছিল। মাঝে মাঝে আবার নিজেকে অপরাধীও মনে হচ্ছিল- যদি পরে রেজাল্ট পেতে কোন অসুবিধে হয়, তবে আমার কলেজে না যাওয়াটাই সবচেয়ে বড় দোষ বলে গণ্য হবে! খেলায় যতই মনোনিবেশ করিনা কেন, মনে মনে একটু অস্থির ছিলাম, কখন চারটা বাজবে!

অবশেষে চারটা বাজলো। চারটার খবরের জন্য খেলা প্রচারে বিরতি দেয়া হলো। অপেক্ষায় থাকলাম, খবর শোনার জন্য। খেলা থেকে খবরে সুইচ হতে হতে কয়েক সেকেন্ড বা মিনিট খানেক দেরী হলো। শুনলাম, ঢাকা বোর্ডের অমুক বিভাগের মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থানটি অধিকার করেছেন অমুক প্রতিষ্ঠানের অমুক। আদনান ক্লাসের ফার্স্ট বয় ছিল, তাই ও মেধা তালিকায় একটা স্থান পাবে, এটা ছিল আমার একটা সঙ্গত আশা। যাহোক, খবরে কিছু শুনলাম না বলে অস্থির হয়ে ফোন করলাম খবরের কাগজে দেয়া অনেকগুলো নম্বর থেকে একটি নম্বরে। কী জানতে চাই, সেটা শুনে তারা মিলিয়ে দিল আরেকটি নম্বরে। কেউ একজন ফোনটা ধরেই আমাকে বললেন, একটু ধরুন। আমি ধরে রইলাম, আর শুনছিলাম তার কথা। তিনি অন্য একটা ফোনে অন্য একজনের সাথে কথা বলছিলেন। তিনি বললেন, ... “হ্যাঁ, এবারে বলুন মানবিক বিভাগের কথা। প্রথম হয়েছে, মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের আদনান আহসান খন্দকার। দ্বিতীয়, ইত্যাদি ইত্যাদি...”। আমি উত্তেজনায় আর টেলিফোনটা হাতে ধরে রাখতে পারছিলাম না। পর্দার ফাঁক দিয়ে দেখলাম, পাঁচ মিনিটের খবর শেষ হবার পর টিভিতে আবার খেলার ধারা বিবরণী প্রচার করা হচ্ছে, আর আদনান তা মনযোগ সহকারে দেখছে। যেহেতু ভদ্রলোক আমাকে লাইনে থাকতে বলেছেন, সেহেতু এখন লাইন কেটে দেয়াটা হবে চরম এক অসৌজন্যমূলক আচরণ। তাই আমি ধৈর্য সহকারে লাইনে থেকে অপেক্ষা করতে লাগলাম। অবশেষে ভদ্রলোক ফ্রী হয়ে আমাকে বললেন, জ্বী বলুন। আমি তাকে বললাম ভাই, আমি যা জানার জন্য ফোন করেছি তা ইতোমধ্যে জেনে গেছি, আপনি যখন নাম টুকছিলেন, তখন আপনাদের কথোপকথন থেকে। তবুও, ঢাকা বোর্ডের মানবিক বিভাগে প্রথম স্থান অধিকারীর নামটা আবার একটু বলবেন কি? তিনি বললেন, আদনান আহসান খন্দকার। আমি বললাম, ধন্যবাদ, আমি এটাই জানতে চেয়েছিলাম। উনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি ওর কেউ হন? আমি বললাম, জ্বী, আমি ওর বাবা।

আদনানকে বুকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানালাম। ওর মা খবর শুনে শাড়ীর আঁচল দিয়ে দু’চোখ মুছে নিয়ে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে হাসি কান্না মিলিয়ে বিচিত্রভাবে হৃদয়াবেগ প্রকাশ করতে লাগলেন। এসব দেখে ওর ছোট দু’ভাইও আপাততঃ খেলা দেখা বাদ দিয়ে আমাদের আনন্দানুভূতি উপভোগ করতে লাগলো। একটু পরে বাসায় প্রথমে “প্রথম আলো” থেকে পরে The daily Star থেকে ফোন এলো। কোথা থেকে ওরা নম্বর পেয়েছিল তা ওরাই জানে। ফোনে আদনানের সাক্ষাৎকার নিল। কী কী জিজ্ঞেস করেছিলো, এতদিন পর তা আজ মনে নেই শুধু তিনটে প্রশ্ন ও তার উত্তর ছাড়াঃ
১। ওর প্রিয় খেলোয়ার—জ্যাকস ক্যালিস
২। ওর প্রিয় বই—গর্ভধারিণী
৩। ওর প্রিয় ব্যক্তিত্ব—বলুন তো কে হতে পারে? :)
তারপর শুরু হলো টিভিতে খবর শুনে আত্মীয় স্বজনের টেলিফোন বার্তা আসা। আবার একই সাথে খেলার উত্তেজনাও বেড়ে যাচ্ছিল। সব মিলিয়ে বাসায় এক চরম উত্তেজনাকর আনন্দানুভূতি বিরাজ করছিলো।

এবারে আসি একটু পেছনের কথায়। আদনানের স্কুল জীবন শুরু হয়েছিলো মাস্কাটের একটি ইন্ডিয়ান ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। আমি তখন সরকারী কর্তব্য পালন উপলক্ষে ওমানের মাস্কাতে কর্মরত ছিলাম। পাঁচ বছর পর যখন দেশে ফিরে এলাম, বয়স অনুযায়ী তখন আদনানের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার কথা। ও এতদিন ইংরেজী মাধ্যম স্কুলে পড়ে এসেছে। এখন ওকে বাঙলা মাধ্যম স্কুলে ভর্তি হবার যোগ্যতা অর্জনের জন্য আমরা স্বামী স্ত্রী মিলে সর্বাত্মকভাবে আত্মনিয়োগ করলাম। তার পরেও সত্যিকার অর্থে ওর বাঙলা লেখা ও পড়ার মান দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীর ঊর্ধ্বে ছিলনা। আমার পোস্টিং হলো রংপুরে। আদনানকে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি করানোর জন্য যে স্কুলে নিয়ে গেলাম, তার প্রধান ছিলেন রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে সদ্য অবসর নেয়া একজন বাঙলার অধ্যাপক, যিনি একজন পিএইচডি ডিগ্রীধারী ছিলেন। তিনি আমাকে ডেকে বললেন, অন্যান্য বিষয়ে ওর মৌলিক জ্ঞান ভাল, কিন্তু বাঙলায় প্রকাশ ক্ষমতা নেই বলে ও তো কোন নম্বর পাবেনা। আমি তাকে আশ্বস্ত করে বললাম, এর আগে ইংরেজী না জানার প্রতিকূলতা কাটিয়ে ও বিদেশী ছাত্রদের মাঝে খুব ভাল রেজাল্ট করেছিলো তা আপনি ওর আগের মার্কশীটগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন। এবারেও সে বাঙলা না জানার প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। আপনি একটা বছর দেখেন, যদি না পারে তবে আমি নিজেই ওকে প্রত্যাহার করে নিব। অগত্যা তিনি রাজী হলেন। এরপর শুরু হলো ওকে বাঙলা শেখানোর আমাদের যৌথ প্রয়াস। কিন্তু ওর এতে বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখতে পেতাম না।

ভাগ্য ভাল হলে যা হয়। একদিন লক্ষ্য করলাম ও একটা “তিন গোয়েন্দা”র বই পড়ছে, খুব কষ্টে বানান করে করে। সেটাতে তার খুব আগ্রহ। জিজ্ঞেস করলাম, কে দিয়েছে? সে জানাল ক্লাসের এক বন্ধু। আমরা বাধা দিলাম না, বরং বললাম, এসব বই যদি সে আরো কিনতে চায়, তবে কিনতে পারে। তাকে স্থানীয় স্টেশন লাইব্রেরীর কার্ড করে দিলাম। সে ইচ্ছেমত বই নিয়ে আসতো, পড়তো আর ফেরত দিত। ক্লাসের অন্যান্য বিষয়ের উপর আর আমরা তেমন জোর দিতাম না। অচিরেই লক্ষ্য করলাম, তার বাঙলা কথোপকথনে যথেষ্ট উন্নতি হচ্ছে। এমনকি আমাদের সাথে কথোপকথনের সময়ও সে মাঝে মাঝে বেশ কঠিন বাঙলা শব্দ ব্যবহার করে নিজেই লজ্জা পাচ্ছে। আমি আজ বলতে পারি, এই “তিন গোয়েন্দা” পড়তে পড়তে বাঙলা গল্পের বই পড়ার যে আগ্রহ তার মধ্যে সৃষ্টি হয়, তা দিনে দিনে গভীর হতে থাকে এবং এর দ্বারা উপকৃত হয়ে সে শুধু পঞ্চম শ্রেণীরই নয়, এমনকি সপ্তম শ্রেণীর ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষার বৈতরণীও নির্বিঘ্নে পার হয়ে যায়। অবশেষে এসএসসিতে বাঙলায় লেটার মার্কস পাওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করে। পরের দিকে ও হুমায়ুন আহমেদ এবং সমরেশ মজুমদার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়সহ আরো বেশ কিছু ভারতীয় ঔপন্যাসিকের বই পড়া শুরু করে। এসএসসিতে ও মোট নম্বর পেয়েছিল ৮৯১, যা তখনকার ৫টি বোর্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর ছিল। এইচ এস সি তে আদনান প্রথম হতে পারেনি, তবে ঢাকা বোর্ডের প্রথম দশ জনের মধ্যে ছিল। সেবার এইচ এস সি তে ৫টি বোর্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে যশোর বোর্ড থেকে প্রথম হয়েছিল যে মেয়েটি, সেও এসএসসিতে প্রথম দশ জনের মধ্যে ছিল। রেজাল্টের এই কাকতালীয় মিল নিয়ে এ দুটি মেধাবী ছাত্র ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় থেকে একে অপরের পছন্দে আসে এবং কালক্রমে আল্লাহ’র ইচ্ছায় ২০০৯ সালে শুভ পরিণয়ে আবদ্ধ হয়। আমার সৌভাগ্য, ঐ ব্যাচের সব চেয়ে সেরা দু’জন ছাত্র ছাত্রী আমারই পরিবারের অংশ, এখনো আমরা কর্তব্যোপলক্ষে কিছু সাময়িক বিরতি ছাড়া একই ছাদের নীচে শান্তিতে বসবাস করে চলেছি।

মানুষের জীবনে ভাল যা কিছু অর্জন, সাধারণতঃ সবই হয় তার মায়ের কারণে। আবার এটাও ঠিক, মায়ের অত্যধিক এবং অন্ধ স্নেহের কারণেই অনেক সময় কেউ কেউ মানুষ হতে পারেনা, তবে সে দৃষ্টান্তের সংখ্যা অনেক কম। বিশেষ করে যাদের হাতের লেখা সুন্দর দেখি, আমি মনে মনে তার অচেনা মাকে একটা স্যালুট দিয়ে রাখি। কারণ মা ই প্রথম হাতে পেন্সিল বা কলম ধরিয়ে দেন, হাতে হাত ধরে হাতের লেখা শেখান এবং নিষ্ঠার সাথে প্রতিদিন এ কাজটি করে যান। তার অক্লান্ত নিষ্ঠার ফলেই একদিন তার সন্তানের কলমে মুক্তো ফুটে ওঠে। আদনানের সাফল্যের পুরো কৃতিত্বটুকু আমি নিঃসঙ্কোচে ওর মাকে দেই, কারণ ঘড়ির সাথে নিজেকে বেঁধে যেভাবে তিনি ছুটোছুটি করে ওদের সবকিছুর দেখভাল করেছেন, এটা মোটেই কোন সহজ কম্ম ছিল না। তাই আমার আজকের এ লেখাটিকে আনন্দের সাথে আমি তার সম্মানেই উৎসর্গ করলাম।

আগেই বলেছি, ব্লগার পথে-ঘাটের লেখা “আমার ছেলে (গল্প)” পোস্টটা পড়ে এ পোস্টটা লিখতে উদ্যত হয়েছি। তিনি তার পোস্টটা শুরু করেছেন এভাবেঃ আমার ছেলের কথা বলব। ছেলে আমার বড় হয়েছে। লুকিয়ে লুকিয়ে পাঠ্যবইয়ের ফাঁকে উপন্যাস রেখে পড়াও শিখে গেছে। -- আমি বলবো, ছেলেকে পড়তে দিন, সে যা পড়তে চায়। দিন শেষে কোন পড়াই বিফলে যায় না।

ঢাকা
০৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

উৎসর্গঃ আফরোজা আহসান
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:২৩
৪০টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×