somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মালয়েশিয়া বো'লে ! ....২১

২৯ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Click This Link

বাটু কেভস

একদিন আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো বাটু কেভস দেখানোর জন্য। এটা ছিলো আমাদের জন্য এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। যথারীতি সিটা গ্লোবালের বাস পারসিয়ারানই আমাদের বাহন।

মালয়ী ভাষায় বাটু অর্থ পাথর। তবে বাটু কেভসের বাটু হচ্ছে চুনাপাথর (লাইমস্টোন)। অনেক জায়গায় চুনাপাথর এক্সপোসড আকারে আছে। কুয়ালা লামপুর থেকে ১৩ কিলোমিটার উত্তরে সেলাঙ্গর রাজ্যের গোমবাক জেলায় এই বাটু কেভসের অবস্থান। তবে এই কেভসের নামকরণ হয়েছে এই পাহাড় থেকে প্রবাহিত সুনগাই বাটু বা বাটু নদীর নামানুসারে। পার্শ্ববর্তী গ্রামটির নামও বাটু কেভস। পন্ডিতদের অনুমান এই বাটু কেভসের বয়স আনুমানিক ৪০ কোটি বছর। ( সে তুলনায় টারশিয়ারী যুগের পাহাড় হিসাবে বাংলাদেশের পাহাড়েরা আকারে আর বয়সে পাহাড়ের বাচ্চাকাচ্চা)

আমরা যখন পৌঁছাই তখন সেখানে কি এক উৎসব চলছিলো। প্রচুর পূণ্যার্থীর সমাগমে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিলো। এখানে একাধিক মন্দির রয়েছে। মূল মন্দিরের নাম শ্রী সুব্রানানিয়াস্বামী মন্দির।

সহিহ ভাবে বললে এর নাম হচ্ছে- বাটুমালাই শ্রী সুব্রানিয়ার সোয়ামী দেবাস্থানম।

দক্ষিণ ভারতীয় ব্যবসায়ী কে.থাম্বুস্বামী পিল্লাই এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা (ইনি কুয়ালা লামপুরের শ্রী মহামারিয়াম্মান মন্দিরেরও প্রতিষ্ঠাতা)। ১৮৯০ সালে তিনি বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। অন্যান্য স্থাপনা তৈরী হয় ১৮৯১ সালে। এই মন্দিরের মূল দেবতা- লর্ড মুরুগান ( কার্তিক)। তিনি তামিলদের কাছে সমর দেবতা রূপে বিশেষ পূজনীয়।

ভূমি থেকে ১০০ মিটার উচ্চতায় গুহাগুলো অবস্থিত। তিনটি বৃহদাকারের এবং বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্রাকারের গুহা রয়েছে। সবচেয়ে বড়োটির নাম মন্দির গুহা। এর রয়েছে ১০০ মিটার উঁচু সিলিং। পূণ্যার্থীদের সে মন্দিরে পৌঁছাতে ২৭২টি সিড়ি বেয়ে উঠতে হয়। ১৯২০ সালে কাঠ দিয়ে এই সিড়ি তৈরী করা হয়েছিলো। এখন পাকা সিড়ি।


ভারতবর্ষের বাইরের সবচেয়ে পরিচিত মন্দিরগুলোর মধ্যে এটি একটি। তামিলদের থাইপুসম হলো এর প্রধান উৎসব। জানুয়ারির শেষ/ফেব্রুয়ারির শুরুতে তামিল ক্যালেন্ডার অনুসারে এই উৎসব পালিত হয়। ভোরে কুয়ালা লামপুর শ্রী মহামারিয়াম্মান মন্দির থেকে বর্ণিল শোভাযাত্রা শুরু হয়ে বাটু কেভে লর্ড মুরুগানের বিগ্রহের সামনের এসে শেষ হয়। প্রায় ৮ ঘন্টা স্থায়ী হয় এই শোভাযাত্রা। গড়ে ১২/১৩ লাখ পূণ্যার্থী এতে যোগ দেন। ২০০৭ সালে ১৫ লাখ মানুষ যোগ দিয়েছিলেন।

পাহাড়ের পাদদেশে লর্ড মুরুগানের প্রায় ১৪০ ফুট উঁচু মূর্তি নির্মান করা হয়। ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে এর উদ্বোধন করা হয়। এটি লর্ড মুরুগানের উচ্চতম মূর্তি। ২ কোটি ৪০ লাখ রুপি ব্যয়ে নির্মিত এই মূর্তিতে ব্যবহার করা হয়েছে ১৫৫০ ঘনমিটার কংক্রিট, ২৫০ টন স্টীল বার এবং ৩০০ লিটার গোল্ড পেইন্ট।

এখানে এসে প্রথমে যে খটকা লাগলো তা হচ্ছে দেবতাদের নাম। মুরুগান নাম দেখে আমি বুঝতে পারছিলাম না আসলে ইনি কে ? আমাদের সাথের একমাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বী পাকিস্তানের মহেশ কুমারও দেখলাম ঠিক মতো বুঝতে পারছে না। হাতে ধরা ধনুক দেখে একবার ভেবেছিলাম রামচন্দ্র কিনা। কারণ হরধনূ ভেঙে তিনি সীতা দেবীকে লাভ করেছিলেন। কিন্তু মন্দিরের চূড়ায় অন্যান্য মূর্তি দেখে সেটাও বোঝা যাচ্ছিলো না।

আবার অন্য মূর্তিগুলোও আমাদের অঞ্চলের মূর্তির সাথে মিলছিলো না। যেমন মূল মন্দিরের প্রবেশদ্বারের ওপরে কার্তিকের যে মূর্তি আছে তাতে দেখা যাচ্ছে কার্তিকের ৬টি মুখ ও ১০টি হাত। বাহন (ময়ূর) দেখে বোঝা গেলো ইনি কার্তিক। ওরা বলে লর্ড মুরুগান।



গনেশ নামটিও দেখলাম জানে না। গণপতি নামটি কিছুটা পরিচিত। তাঁর মূর্তিতেও দেখি ৪টি মুখ। আবার আমাদের অঞ্চলের মতোও তাঁরমূর্তি আছে।





মহাদেবের পরিবারের যে মূর্তি আছে তাতে শিবের পাশে শ্রী দূর্গাকে কালী রূপে দেখানো হয়েছে। (বাংলার শারদীয় পূজায় পার্বতীর আর্যরূপ দেখতে পাই)। তাঁদের দুই পুত্র (গণপতি ও কার্তিক) থাকলেও দুই কন্যা (লক্ষ্মী ও সরস্বতি) আবার নেই।


এখানে আবার গণপতির দুইপাশে আছেন তাঁর দুই বোন লক্ষ্মী ও সরস্বতি।



বেশ কিছু সময় কাটিয়ে এলাম। মহেশ কুমার ২৭২ সিড়ি বেয়ে লর্ড মুরুগানকে প্রনাম করে এসেছেন। তাই তাকে লর্ড মুরুগানের সামনে বেশ খোশ মেজাজে পাওয়া গেলো।



(চলবে)

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১২:৪১
১২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×