somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের সংস্কৃতি জগতে পরিবারতন্ত্র ! ..৫

১৯ শে জুন, ২০১১ সকাল ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব-
Click This Link

২০০২ সালে এক কাজে ফরিদপুর যাই। ডিসি সাহেবের রুমে বসে পুরনো ডিসিদের তালিকা দেখতে দেখতে চোখ আটকে গেলো একটি নামে-খান বাহাদুর আবদুল হালিম চৌধুরী। তিনি ফরিদপুরের (এখনকার বৃহত্তর ফরিদপুরের ৫ জেলা মিলে ছিলো তখনকার ফরিদপুর) জেলা প্রশাসক ছিলেন ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত। ঘটনাক্রমে ২০০২ সালের ডিসি ইসমাইল জবিউল্লাহ (পরে সচিব হয়ে অবসরে গেছেন) আর খান বাহাদুর সাহেবের বাড়ী একই জেলায়-বৃহত্তর নোয়াখালীর লক্ষ্মীপুর।

খান বাহাদুর সাহেব পিতা হিসাবেও ছিলেন সার্থকনামা- ১৪ ছেলে মেয়ে। সবার বড়ো জনের নাম কবীর চৌধুরী। বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদ। বর্তমানে জাতীয় অধ্যাপক। মেঝ ছেলের নাম মুনীর চৌধুরী। কিংবদন্তী অধ্যাপক, নাট্যকার,লেখক। আমাদের শ্রেষ্ঠ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের একজন। মুনীর চৌধুরীর স্ত্রী লিলি চৌধুরী নাটকে অভিনয় করতেন। তাঁদের ছেলে আশফাক মুনীর ১৬ মিটার মুভি ক্যামেরায় আমাদের দেশের সেরাদের একজন। এস এম সুলতানের জীবনীভিত্তিক তারেক মাসুদের 'আদমসুরত' ছবির ধারাবর্ণনা দিয়েছেন আশফাক মুনীর। খান বাহাদুরের কনিষ্ঠ সন্তানের নাম ফেরদৌসী মজুমদার-আমাদের সেরা মঞ্চ ও টিভি অভিনেত্রীদের একজন। তাঁর বর রামেন্দু মজুমদার বেতার টিভির এককালের বিখ্যাত সংবাদ পাঠক, মঞ্চনাটক আর নাট্যশিক্ষার গুরু। তাঁদের কন্যা ত্রপা মজুমদার আর তার বর আপন আহসানও নাট্যজগতে প্রতিষ্ঠিত।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকায় যে সোনালী নামগুলো আছে তাঁদের মধ্যে দুই সহোদরের থাকার নজীর মাত্র একটি-শহীদুল্লাহ কায়সার আর জহীর রায়হান। ঘটনাক্রমে খানবাহাদুরদের মতো এরাও বৃহত্তর নোয়াখালীর লোক। বর্তমান জেলা ফেনী। শহীদুল্লা কায়সারের সারেং বৌ কিংবা সংসপ্তক দেখে আবেগাপ্লুত হননি এমন মানুষ কম পাওয়া যাবে। শহীদের স্ত্রী পান্না কায়সার এবং কন্যা শমী কায়সার আমাদের সংস্কৃতি জগতের পরিচিত মুখ। জহীর রায়হান প্রথমে বিয়ে করেছিলেন অভিনেত্রী সুমিতা দেবীকে। তাঁদের পুত্র অনল রায়হানও সংস্কৃতি জগতের চেনা মুখ। জহীর পরে বিয়ে করেছিলেন আরেক অভিনেত্রী সুচন্দাকে। সুচন্দার বোন ববিতা আর চম্পা আমাদের শীর্ষ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। ববিতা সত্যজিত রায়ের ছবিতে আর চম্পা গৌতম ঘোষের ছবিতেও কাজ করেছেন। এখনকার নামী চিত্রনায়ক রিয়াজ সম্পর্কে এদের ভাই হন।

সারা জাকের আর আলী জাকেরের প্রেম কাহিনী নিয়ে কিছুদিন আগেই টিভি চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন দেখেছেন সবাই। মঞ্চ আর টিভি নাটকে অভিনয় ছাড়াও সংস্কৃতির নানা ক্ষেত্রে তাঁদের সরব বিচরণ। তাঁদের পুত্র ইরেশ জাকের এখন সংস্কৃতি জগতে সুপরিচিত। সারার মামী ড. সিদ্দিকা কবীর তাঁর রেসিপির জন্য রীতিমতো তারকা বনে গেছেন।

ড. ইনামুল হক আর লাকী ইনাম দীর্ঘদিন ধরে আমাদের অভিনয় জগতে আলো ছড়িয়ে চলেছেন। তাঁদের কন্যা হৃদি হক আর প্রৈতি হকও মিডিয়া জগতে চেনা মুখ। হৃদির বর লিটু আনাম আর প্রৈতির বর সাজু খাদেম স্বনামেই পরিচিত। লাকী ইনামের ছোট ভাইয়ের বউ হলেন আমাদের নামী গায়িকা শাকিলা জাফর।

আবুল হায়াত ছিলেন ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী। অভিনয়ের টানে চাকরী ছেড়ে দেন। চলচ্চিত্র আর নাটকে আমাদের সেরা অভিনেতাদের একজন তিনি। তাঁর দুই কন্যা বিপাশা আর নাতাশা জনপ্রিয় অভিনেত্রী এবং তাদের বর (যথাক্রমে) তৌকির আহমেদ ও শাহেদ শেরিফ খান আমাদের দুই জনপ্রিয় অভিনেতা।

গতকাল নাট্যজন আতাউর রহমানের সত্তর বছর পূর্তিতে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। তাঁর ভাই মুজিবুর রহমান দিলুও শক্তিমান অভিনেতা।

ড. হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক। এ বিষয়ে বাংলায় একটি বইও লিখেছেন তিনি। আমাদের বইয়ের আলমারীতে এক সময় পশ্চিম বাংলার বইয়ের রাজত্ব ছিলো। সেই অবস্থা বদলে বাংলাদেশের লেখকদের বই ঢোকানোর মূল কারিগরদের শীর্ষ নামটি হুমায়ূন আহমেদ। নাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি তুমুল জনপ্রিয়। তার স্ত্রী শাওনও অভিনেত্রী এবং কণ্ঠশিল্পী। হুমায়ূনের ভাই ড.মুহাম্মদ জাফর ইকবাল অধ্যাপনা, গবেষনা, বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার আন্দোলন আর লেখালেখিতে এক সমীহজাগানিয়া নাম। তাঁদের আরেক ভাই আহসান হাবীব চিত্রশিল্পী। তাঁর সম্পাদিত ম্যাগাজিন উন্মাদ খুবই জনপ্রিয়। সম্প্রতি হুমায়ূনদের মা আয়েশা ফয়েজ আত্মজীবনীমূলক বই ''জীবন যখন যেমন'' লিখে বাজীমাত করে দিয়েছেন।

(চলবে)

পরের পর্ব-
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১১ সকাল ১০:৩৩
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×