আগের পর্ব -
Click This Link
মিশুক মুনির
শহীদ মুনীর চৌধুরীর মেঝ ছেলে আশফাক মুনীর মিশুক আমাদের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন আমরা যখন ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। একটি প্রকল্পের আওতায় মিডিয়া সেন্টার স্থাপিত হবার কথা, সে সেন্টারের শিক্ষক হিসাবে তিনি এলেন। এখানে আসার আগে তিনি জাতীয় জাদুঘরের অডিও ভিজ্যুয়াল বিভাগের প্রধান ছিলেন।
ড. স্কট হজন যে কর্মসূচীর আওতায় একমাসের ফটোগ্রাফির কোর্স করাতে আসেন সে কর্মসূচির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে আমরা যারা মনোনীত হয়েছিলাম মিশুক স্যার আগের একমাস তাদের আগাম কোর্স করিয়ে রেডী করে দেন। সেই সূত্রে স্যারের সাথে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মিশুক স্যার সেই কালের প্যারালাল ছবির মূল ভরসা ১৬ মিমি ক্যামেরার সেরা কারিগর ছিলেন। তারেক মাসুদের সাথে জুটি গড়ে দুজন মিলে অসাধারণ কিছু কাজ করে অমরত্ব ক্রয় করে গেছেন। সড়ক দুর্ঘটনা দুই বন্ধুর আজীবন বন্ধুত্বকে মরনেও অক্ষুন্ন রেখে দিলো !
ভালো থাকুন স্যার।
কুররাতুল আইন তাহমিনা মিতি
ছুটিকালীন শূন্য পদে কুররাতুল আইন তাহমিনা মিতি যোগ দেন প্রভাষক পদে। কদিন আগে দেখা বড়ো আপা হয়ে গেলেন ম্যাডাম। ইনি ছিলেন মিশুক স্যারের ফুফাতো বোন। মাঝে মাঝে বিবিসিতে রিপোর্টিং করেন। কাগজেও লেখেন। প্রথম আলোর ছুটির দিনে মিশুক স্যারকে নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেনটিও মিতি আপাই লিখেছেন। খুব সুন্দর কোমল গলায় কথা বলতেন তিনি। পড়াতেনও ভালো।
কাজী দিলা
খেলাধুলা আর লেখাপড়ায় সমান ভালো হবার ব্যতিক্রমী নিদর্শন ছিলেন কাজী জেবুন নাহার দিলা। মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম আবার টেবিল টেনিসে একক, দ্বৈত আর মিশ্রদ্বৈতে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ! ( তাঁর পরেই শুরু হয় টিটিতে জোবেরা রহমান লিনুর যুগ) এ যেন রূপকথার নায়িকা। দেখতেও ছিলেন দারুন। পড়াতেনও চমৎকার। এখন আছেন যুক্তরাষ্ট্রে- লড়ছেন ক্যানসারের সাথে।
ড.গীতি আরা নাসরীন
সেকালের আবৃত্তি অঙ্গনের চেনামুখ গীতি আরা নাসরীন এলেন আমাদের প্রভাষক হয়ে। ছাত্রী থাকার সময় ডিপার্টমেন্টে হই চই শুরু হলে ধরে নিতাম গীতি আপা অথবা নাসিম আপা ( নাসিম ফেরদৌস) এসেছেন। সংস্কুতি জগতের ছোঁয়ার কারণে পড়ানোর ভেতরও সংস্কুতির ছোঁয়া পেতাম। এখন তিনি বিভাগের চেয়ার পারসন।
আনিস স্যার
কুমিল্লা বোর্ডে এসএসসি ও এইচএসসিতে স্ট্যান্ড করে পড়তে এসেছিলেন আনিস স্যার। শিক্ষকও হয়েছিলেন। বাম ঘরানার অতি আবেগী মানুষ। পড়াতেন দারুন। আমাকে খুব স্নেহ করতেন। এখন এক গহীন আঁধারজগতে বেদনাময় জীবন যাপন করছেন !
ড.আ আ ম স আরেফীন সিদ্দিক
আমরা যখন বের হয়ে আসি তখনো আরেফীন স্যার ছিলেন সহকারী অধ্যাপক। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব আর সুন্দর পাঠদান কৌশলের জন্য তিনি ছিলেন সবার প্রিয়। শিক্ষক রাজনীতিতে রীতিমতো সুপার হিরো। সাধারনত সব নির্বাচনেই জিততেন। শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক ও সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন দু'বার করে। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। সাংবাদিকতা বিভাগ আগামী বছর সুবর্নজয়ন্তী পালন করবে। ৫০ বছরে একমাত্র তিনিই এ বিভাগ থেকে ভিসি হলেন। একজন ভাইস চ্যান্সেলরের ছাত্র হিসাবে গর্ববোধ করি।
ড. সাখাওয়াত আলী খান
সাংবাদিকতা বিভাগের এলামনাই এসোসিয়েশন বিভাগের প্রাক্তন দুই ছাত্র দিলীপ বড়ুয়া আর আবদুল মান্নান খান মন্ত্রী হওয়ায় পর সংবর্ধনার আয়োজন করে। মঞ্চে দুই মন্ত্রীর সাথে ছিলেন উপাচার্য আরেফীন স্যার, এসোয়িশেনের সভাপতি ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের তখনকার ডীন ড. শেখ আবদুস সালাম, সম্পাদক মো: শামসুল হক ( জেলা জজ/ নারী শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক) আর সুপার নিউমারারারী অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত আলী খান। মঞ্চে উপবিষ্ট বাকী সবাই ছিলেন সাখাওয়াত স্যারের ছাত্র। এক জন শিক্ষকের জীবন কতোটা পরিপূর্ণ হতে পারে এমন প্রতিষ্ঠিত ছাত্রদের সশ্রদ্ধ হাজিরায়- এটা তার বিরল এক উদাহরণ। গভীর পাণ্ডিত্য যে এমন সূক্ষ্ম রসবোধ হয়ে পরম আকর্ষণীয় রূপ পরিগ্রহ করতে পারে তার অনন্য দৃষ্টান্ত সাখাওয়াত স্যার। তাই তাঁর কাছে সবাই এখনো যেতে পারি নির্ভয়ে। জ্ঞানের ভার কিভাবে মানুষকে বিনয়ী ও আকর্ষণীয় করে তোলে সাখাওয়াত স্যার তারও নিদর্শন।
এ যুগে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে পড়া নীতিবোধেরও এক জ্বলন্ত নিদর্শন তিনি। তাঁর মেয়ে সুমনা শারমীন সুমি(বর্তমানে প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক) ছিলো আমাদের সহপাঠী। সুমি যেসব নৈর্বাচনিক বিষয় নিয়েছে তিনি সেই কোর্স পড়াননি। আমাদের ব্যাচের পরীক্ষা কার্যক্রমের সাথে স্যর বিন্দমাত্র সম্পৃক্ত ছিলেন না। যাতে মেয়ের ফলাফল নিয়ে কোন কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি না হয়।
স্যার এখনো বেঁচে আছেন আমাদের আনন্দআশ্রম হয়ে ।
এখানেই শেষ করলাম আমার ব্যক্তিগত স্মৃতিবিজড়িত এই সিরিজ। সাথে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
পুনশ্চ : সাংবাদিকতা বিভাগে আমার শিক্ষকদের মধ্যে ড. মো: তৌহিদুল আনোয়ার ( এখন বেঁচে নেই) ও ড. শেখ আবদুস সালাম প্রেষণে পিআ্ইবি'র মহাপরিচালক পদে কাজ করেছেন প্রায় পাঁচ বছর করে। দুজনই আমার প্রিয় মানুষ। দু'জনই ক্লাসে পড়াবার সময় একেবারেই আকর্ষণীয় ছিলেন না তাঁরা। কিন্তু তাঁদের পাণ্ডিত্য নিয়ে সন্দেহ নেই আমার। ড. গোলাম রহমান স্যারও দারুন মানুষ। ভালো পড়ান। (তাঁর ছোট ভাই আমিনুর রহমান নিঝূ রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সহপাঠী ছিলেন শান্তি নিকেতনে। ছিলেন সরকারী সঙ্গীত কলেজের শিক্ষক। সড়ক দুর্ঘটনা অকালে শেষ করে দেয় তার সকল সম্ভাবনা) শামসুল মজিদ হারুন স্যার ছিলেন অকৃতদার। নিরিবিলি মানুষ। (তাঁর ভাই সেরাজুল মজিদ মামুন প্রায় ত্রিশ বছর সংবাদ পাঠক ছিলেন টিভি ও বেতারে)
নাম নেয়া না নেয়া সকল শিক্ষককে বিনম্র শ্রদ্ধা !
(শেষ)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:২০