কয়েকদিন আগে মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোড এলাকায় অবস্থিত (আসাদ গেটের সন্নিকটে) ওয়াই.এম.সি. স্কুলে মেয়েকে পৌঁছে দিয়ে রিকশায় ফিরছিলেন আমার এক নিটাত্মীয়া। গলির ভেতর থেকে আসাদ এভিনিউতে কিছু দূরে এসে রিকসার চেন পড়ে গেলো। সেই চেন রিকশাওয়ালা আর ঠিকমতো তুলতেই পারলো না। (আসলে না তোলার ভান করেছে) তখন রিকসাওয়ালা নিজেই আরেকটা রিকসা ডেকে তাকে তুলে দেবার ব্যবস্থা করলো। কিন্তু রিকসায় ওঠার আগে রিকসা ওয়ালা একটা কাগজে মোড়া ছোট প্যাকেট দেখিয়ে বললো, "আপা, এই প্যাকেটা রাস্তায় পেলাম। খুলে দেখি ওতে আছে একটা স্বর্ণের বার। কিছু টাকা দিয়ে আপনি এটা নেন।"
আমার সে আত্মীয়া বললেন, আমি কেন নেব? তখন রিকসাওয়ালা বললো, আমি এটা বেচতে গেলে স্বর্ণকাররা মনে করবে আমি এটা চুরি করেছি। সে আমাকে বিপদে ফেলবে। আমরা গরীব মানুষ। আমাদের তো বিপদের শেষ নেই। আপনি বলতে পারবেন, আপনার আত্মীয় বিদেশ থেকে এনে আপনাকে দিয়েছেন।
বার বার অনুরোধ করার পরও আমার সে আত্মীয়া রাজী হননি। তিনি বললেন, তার কাছে টাকা নেই। টাকা নেই বলেই তিনি মোবাইল বের করলেন। তখন রিকসাওয়ালা বললো, কাকে ফোন করছেন ? জবাবে জানালেন,তিনি তার স্বামীকে ফোন করছেন। তখন রিকসাওয়ালা বললো, ম্যাডাম, সব কথা স্বামীকে বলার দরকার কি ? আপনার কাছে যেহেতু টাকা নেই, আপনি গলার চেন আর মোবাইলটা দেন। আমি সোনার বারটা আপনাকে দিয়ে দেই। নতুন করে ডাকা রিকসাওয়ালাও তাতে সমর্থন জানালো। দুই রিকসাওয়ালার চাপাচাপিতে মহিলা কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে গেলেন। সোনার বারটা ধরে দেখার জন্য বারবার হাতে দিতে চাচ্ছিলো রিকসাওয়ালা। কিন্তু মহিলা রাজী হলেন না। তার হঠাৎ করে মাথা ঘোরাতে শুরু করে। মাথাও কাজ করছিলো না। অবচেতন মনে বারাবার মনে পড়েছে তার মায়ের উপদেশ-পরের জিনি কখনো নেবে না। তিনি কিঝুটা জোর করে হেঁটেই রওয়ানা দিলেন। একটু এগিয়ে আরেকটা রিকসায় চেপে বাসায় চলে এলেন। বাসায় এসে বিছানায় পড়লেন। কিভাবে বাসা পর্যন্ত এসেছেন তা তখন তার মনে পড়ছিলো না।
পরদিন স্কুলে গিয়ে পরিচিত ভাবীদের কাছে এ অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে জানতে পারেন তারই মেয়ের বান্ধবীর মা এর দু'দিন আগে ওখানেই সোনার বারওয়ালা রিকসাওয়ালার পাল্লায় পড়েছিলেন। সোনার বারটি ধরে দেখার পরই অল্প সময়ের ভেতর তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। জ্ঞান ফেরার পর দেখেন, তাঁর গলারচেন, হাতের চুড়ি, মোবাইল আর টাকা নেই হয়ে গেছে।
সোনার বারটি হাতে না নেবার কারণেই যে আমার আত্মীয়া বেঁচে গেলেন সেটা তিনি বুঝতে পারলেন।
আর কেউ যাতে এ পাল্লায় না পড়েন সে বাবদে সতর্ক করার জন্যই আমার আত্মীয়ার আভিজ্ঞতাটা আর ছিনতাইয়ের এ নতুন কৌশলটা সবার সাথে শেয়ার করলাম।