somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“একফোটা অশ্রু”

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
৩য় পর্ব



বাবা কয়েক দিন হলো ঢাকায় আসছে। এই ভাবে যে আজাদ সাহেব দেশে আসবে সেটা কখনও ভাবেনি। কত আনন্দ উৎসব করে মেয়ের জন্য কত কিছু নিয়ে আসবে। মেয়ে তা দেখে কতই না খুশি হবে। কিন্তু এটা কি হয়ে গেলো। মেয়েকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে বসে আছে। আর বিরবির করে বলছে আমি আমার মেয়েকে কোথাও যেতে দিবো না; প্রয়োজনে আমি চলে যাবো দুনিয়া থেকে, রিয়াকে আমি যেতে দিবো না। ওকে আমি কোথাও যেতে দিবো না। বাবা মনে হয় আজ অনেক দিন পর মেয়েকে পেয়ে বুকের জমানো কষ্ট, কান্না, দুঃখ সব উজার করে দিচ্ছে।

বাবা ডাক্তারকে কতভাবে বোজাচ্ছে আমার মেয়েটাকে বাচান, আমি আমার সারাজীবনরে সব কিছু দিয়ে বাচাতে চাই রিয়াকে। দয়া করে আপনি সব ব্যবস্থা করনে ডাক্তার সাহেব। কিন্তু ডাক্তার সাহেব তো কয়েকদিন ধরে অপ্রাণ চেষ্ট করছে। সবটাই কেমন জানি গুলিয়ে আসছে, সব দিক থেকেই ব্যর্থ হচ্ছে।বিদেশী বড় বড় ডাক্তারদের রিয়ার রির্পোট দেখালো।কিন্তু তারাও সেই একই কথা বলছে অনেক দেরি হয়ে গেছে, বাচানো যাবেনা। রিয়ার সব রির্পোট পরিক্ষ-নিরিক্ষা করে কোন কিছুই পজেটিভ পাচ্ছে না। আজ ১৫টি দিন ধরে রিয়াকে নিয়ে সবাই হাসপাতাল হাসপাতাল দৌড়াচ্ছে, কিন্তু কোন ডাক্তারই ভালো কোন খবর দিতে পারছে না।

প্রায় ২০ দিন পর ডাক্তার আজাদ সাহেবকে ডেকে বলল, আর পারছি না আজাদ সাহেব, আমি দুঃখিত। অনেক চেষ্টা করেছি অনেক, আমি ব্যর্থ। আমি মেয়েটাকে বাচানো জন্য অনেক চেষ্টা করছি, কিন্তু আমি পারছি না। হেরে যাচ্ছি বার বার। আপনি বিশ্বাস করেন ওকে বাচানো জন্য আমি নিজেকে সপে দিয়েছি। না ডাক্তার সাহেব আপনি এটা বলবেন না, আপনি বলেন আমি ওকে বিদেশী ডাক্তার দেখাবো। আমার সমস্ত টাকা-পয়সা সম্পত্তি বিক্রি করে রিয়াকে নিয়ে যাবো বিদেশে। আমি আপনার হাত জোর করে বলছি আপনি এভাবে বলবেন না। ডাক্তর বলল দেখেন আজাদ সাহেব, যদি দেশের বাহিরে নিয়ে বাচাতে পারতেন তাহলে আমিই বলতাম ওকে দেশের বাহিরে নিয়ে যান। কিছু দিন হয়তো রক্ত দিয়ে দিয়ে রাখতে পারবেন, তবে বেশি দিন নয়, পনের দিন কিংবা এক মাস।

রিয়া সবার আকুতি মিনুনি শুনছে আর ভাবছে আজ আমাকে বাচানোর জন্য সবার কত আগ্রহ। অথচ কেউ আর আমাকে বাচাতে পারবে না। রিয়ার সব কিছু বোঝার মতো ক্ষমতা না হলেও কিছুটা বুঝার মতো হয়েছে। আজ বাবার সারাজীবনরে উর্পজনার টাকা দিয়েও রিয়াকে বাচাতে পারবে না। মা বাবার সারা শরীরের রক্ত দিয়েও বাচাতে পারবে না। রিয়া বেডে শুয়ে শুয়ে সবার হতাশ মুখখানা দেখছে। কিন্তু কেউ কিছু করতে পারছে না। একটা মানুষ যখন পৃথিবীতে থাকে তখন তার বেচে থাকার মর্মটা কেউ বোঝে না, আর বুঝতেও চায়না, জনতে চায়না। যখন মারা যায় কিংবা মৃত্যুর পথযাত্রী হয় তখন সবার আকুতরি আর শেষ থাকেনা। রিয়া সবার মনের অবস্থাটা বুজতে পেরেছে, কিন্তু রিয়ার মনের অবস্থাটা কি কেউ বোজতে পেরেছে, হয়তো পারেনি। যদি পরতো তাহলে রিয়ার পাশে এসে বসতো, শান্তনা দিতো। বাবা মা তারাও কি ভুলে গেলো আমাকে। পাশেই তো বেডে শুয়ে আছে রিয়া তাদের সব কথাই তো শুনতে পাচ্ছে।বাচতে যদি না পারি তাহলে কেনো এতো তারাহুরো, ছেড়ে দেক না এসব। মরণের সময় সবাই একটু পাশে থাকুন তাতেই তো শান্তি পাবে রিয়া।

ডাক্তার এসে বাবাকে বলল, আপনারা সময় নষ্ট না করে মেয়েটাকে বাড়ি নিয়ে যান। সেখানে হয়তো আরো ভালো থাকবে। গ্রামের পরিবেশটা এখান থেকে আরো ভালো পাবেন। রিয়া আত্মীয়-স্বজন, খেলার সাথি ওদের সবার সাথে ভালো থাকবে। আর ওর মনের ইচ্ছে গুলো পুরণ করুন দেখবে আপনাদের কাছেও ভালো লাগবে। কিন্তু আজাদ সাহেব তো এগুলো শুনে পাগল প্রায়। ডাক্তার সাহেব আপনি এই সব কি বলছনে আমি আমার মেয়েকে বিদেশে নিয়ে যাবো সেখানে আরো ভালো ডাক্তার দেখাবো। ডাক্তার বাবু ধমক দিয়ে বলল নিয়ে যেতে পারেন আমার কোন সমস্যা নাই। তবে তাতে কাজ হবে না, আরে ভাই আমি কি কম চেষ্টা করছি বিদেশে নিয়ে আপনি যাদের দেখাবেন আমি তো তাদের দেখিয়েছি। আমেরিকা, জাপান, ইন্ডিয়া সব ডাক্তারকে আমি রিয়ার রির্পোট দেখিয়েছে, রিয়াকে দেখিয়েছি। এরপর আমি আর কি করতে পারি বলুন? তারপরও যদি আপনাদের মনে সন্দেহ থাকে নিয়ে যান না, নিয়ে যান।
তবে একটি কথা মনে রাখবেন, আফসোস করবেন সবাই। যেটুকো ওর সাথে কথা বলতে পারবেন, হাসিখুশি থাকতে পারবেন, ওকে কাছ থেকে দেখতে পারবেন, সেই টুকো হারাবেন

রিয়া বাবার কোলে দৌড়িয়ে এসে বলল বাবা আমি বিদেশ যাবোনা; আমাকে বাড়িতে নিয়ে চলো। আমি আম্মুর সাথে, তোমার সাথে, ভাইদের সাথেই থাকবো। কোথাও যাবো না। বাবা তুমি না বলেছিলে দেশে এসে তুমি আমার জন্য একটি বিল্ডিং উঠিয়ে দিবে, চলো না বাবা আমরা দেশে যেয়ে বিল্ডিং উঠাই। মৃত্যু যেনো রিয়াকে অনেক কাছে টেনে নিয়ে গেছে। রিয়া বলল, বাবা আমাকে যদি তোমরা বাচাতে না পারো তাহলে কি হবে বিদেশ নিয়ে, শুধু শুধু টাকা নষ্ট হবে। সত্যিই কি রিয়ার মৃত্যু খুব কাছে চলে এসেছে, তা না হলে এতো সুন্দর গুছিয়ে গুছিযে কথা বলে কি ভাবে।

বাবা আমি সবার সাথে বাড়িতে যেয়ে খেলবো, আমাকে তুমি বাড়িতে নিয়ে যাও। শান্তামনির সাথে, দিদারের সাথে, আমি খেলবো। জানো বাবা, আমার স্কুলেও অনেক বন্ধু আছে; কিন্তু ওরা আমাকে খুব মারে, বকে, কেউ আমাকে ভালোবাসে না, শুধু তুমি, মা আর ভাই ছাড়া। তারপরও ওদের আমার দেখতে মন চায়, ওদের সাথে দেখা করতে ইচ্ছে করে, খেলতে ইচ্ছে করে। চলো বাবা আমরা চলে যাই বাড়িতে।

রিয়ার এতো সুন্দর কথা শুনে হাতপাতালের রুমের সবার মনে অজান্তে দাগ কেটে উঠলো। মনে হয় হাসপাতালটিই নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। প্রতিটি দেওয়ালও যেনো রিয়ার জন্য কাদছে, চোখের পানিরাও চোখে বাধা মানছে না। ডাক্তার, নার্স, আয়া, হাসপাতালের অন্যান্য রোগীরা সবাই কেমন রিয়ার মুখের দিকে অসহয় ভাবে তাকিয়ে আছে। আর সৃষ্ট্রিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছে যেনো রিয়া মেয়েটা ভালো হয়ে যা। কিন্তু বিধাতা কি আজ কারো প্রার্থনা শুনবেন!
চলবে........
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৮ সকাল ১০:১৬
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×