somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার দীপুদা- ২

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার দীপুদা - ১
পরদিন খুব ভোরে তুমি ফিরে গেলে। আর আমার দিন কাঁটেনা। সারাদিনমান কি এক ঘোরের মাঝে আমি। বিহ্বল হয়ে ঘুরে বেড়াই। অকারনে কান্না আসে আমার। নিজের মনে হাসি। লুকিয়ে আয়না দেখি। মনে হয় আয়নার মাঝে চেয়ে আছো তুমি। নিজের দুই গালে দেখি আরক্তিম আভা। শুধু মনে পড়ে বট আর অশত্থের ছাঁয়ে সেই পৌষের বিকেলবেলাটাই। এই ঘোর আমার বহুদিন ছিলো। এই ঘোর থেকেই আমি একটা সময় মানে যখন তুমি আমার থেকে বহু দূরে চলে গেলে তখনও বহু কবিতা লিখেছি জানো? লিখেছি অনেক অনেক তোমাকে না পাঠানো চিঠি। সে সব চিঠিতে লেখা আছে তোমাকে না বলা কত শত কথা। খুব সযতনে বাক্সে তোলা আছে চিঠিগুলো।

সে যাইহোক, কিছুদিনের মাঝেই তোমার রেজাল্ট বের হলো। তোমার সেই অসাধারণ রেজাল্টের খবর আমাদের মফস্বল শহরে চাউর হতে বেশি সময় নিলো না। তোমার প্রাইমারী স্কুল, পুরো বাড়ির মানুষজন সহ যেন পুরো শহরটাই জেনে গেলো সেই সুসংবাদটি ঝড়ের গতীতে। কিন্তু সেবারে শুধু একদিনের জন্য তুমি এলে। পুরো বাড়িতে উৎসবের সাড়া পড়ে গেলো। তুমি এ বাড়ির সকলের নয়নের মনি, সোনার টুকরো ছেলে। চাচীতে চাচীতে বা তাদের ছেলেমেয়েদের মাঝে মনে মনে রেশারেশি থাকলেও তোমার বেলায় যেন সবাই উদার।

তখনকার দিনে পড়ালেখা ছাড়া বাবা মায়েরা আর কোনো বিষয়েই সন্তানের কোনো গুণের সমাদর করতে রাজী ছিলেন না যেন। সেই পড়ালেখাতেই তোমার এত সাফল্য তাই তুমি সকলের আদরনীয়। তুমি ভালো ছাত্র ছিলে বটে তাতে যদিও কারোই সন্দেহ ছিলো না তবুও তোমাকে বলতে গেলে আমরা পড়তেই দেখতাম না অথচ রাতদিন পড়ে পড়েও আমাদের শীপলুদা ওরফে ভেবলুদা সাতবারেও এস এস সি পাস না করতে পেরে মোড়ের ধারে বিশাল ডিপার্টমেন্ট স্টোর খুলে বসেছিলো।

সে যাইহোক লিখতে বসেছি একটি বিশেষ স্মৃতির কথা অথচ ফিরে যাচ্ছি বার বার ছেলেবেলার নানা বর্নীল স্মৃতিতে। দীপুদা তোমার সেই সন্মোহিত দৃষ্টিতে কি যে ছিলো সেদিন আমি জানিনা। আমি থরথর কাঁপছিলাম বেতশ লতার মত। সম্বিতই হারিয়েছিলাম হয়তো বা। ঐ বট গাছে ভুত থাকে ছেলেবেলা থেকেই শুনেছি তবে কখনও দেখিনি বলেই হয়ত মনে ভয়টা কাজই করতোনা। তবে সেদিন সেই পৌষের বিকেলের হিম হিম সন্ধ্যায় পিঠের উপর হঠাৎ নিঃশ্বাসের সেই ঘটনায় নিজেই হিম হয়ে যেতে যেতে পিছে ফিরে দেখেছিলাম তোমাকে। চিৎকার করেই উঠতাম হয়তো ভূত ভেবে। তুমি আমার মুখ চেপে ধরলে। হয়তো ধরা পড়ে যাবার ভয়েই। কিন্তু তারপর কি যে হলো তোমার! পৌষের সেই আসন্ন সন্ধ্যায় তোমার বলিষ্ঠ আলিঙ্গনের মাঝে আমার মুদ্রিত হয়ে আসা চোখে তখন শুধুই এক অজানা অনুভব। অধরের কানে যেন অধরের ভাষা। নাহ সে অনুভব ভাষায় লেখা সম্ভব না। শুধু মনে আছে ঐ শীত বিকেলেও ঘেমে উঠেছিলাম আমি। কতক্ষন সেখানে ছিলাম আমরা জানিনা। সকলে মিলে আশে পাশে আমাদের নাম ধরে ডাকছিলো দীপু, দীপুদা, শিখা, শিখা। আমার কানে সেসব ডাক পৌছুচ্ছিলও না আমি কান পেতে শুনছিলাম তোমার বুকের ধুপ ধুপ ধুপ ধুপ স্পন্দন.......

এরপর থেকেই কান পাতলেই আমি শুনতে পেতাম তোমার বুকের সেই স্পন্দন। ধুপ ধুপ ধুপুধুপ। সেই ঘটনা এ কয়েকদিনের রাত দিনের ভাবনায় স্থায়ী আসন গেঁড়ে নিয়েছিলো আমার। শয়নে স্বপনে জাগরণে আমি শুধু তোমাকেই দেখেছিলাম। কিন্তু যখন তুমি রেজাল্টের পরে মাত্র একটি দিনের জন্য আসলে এ বাড়িতে। তোমার সাথে চোখাচোখি হলেও নিভৃতে কোথাও একটা সেকেন্ডের জন্যও তোমাকে শুভেচ্ছাটুকু জানাতেও একটু একাকী সময় বা সুযোগ হলো না আমার মানে পেলাম না । সকাল থেকেই চলছিলো তোমার এই অসাধারণ ফলাফল উপলক্ষ্যে আত্মীয় অভ্যাগতদের আগমন ও খাবারের আয়োজন। আয়োজনটাও করা হয়েছিলো বাড়ির পিছের ঐ বিশাল মাঠেই। যেখানে আমরা বনভোজন থেকে শুরু করে বউচি, গোল্লাছুট, লুকোচুরি খেলে কাঁটিয়েছি এবং আমার সেই গোপন স্মৃতির স্থান। বাড়ির ছেলেমেয়েদের বিয়ে শাদী, আকীকাতে বা কোরবাণীর গরু ছাগল কাটার কাজেও এই মাঠটিকেই অনায়াসে ব্যবহার করা হত। আমরা চাচাতো, ফুফাতো বা শরিক ঘরের ভাইবোনেরা মিলে কম তো ছিলাম না । বিয়ে হয়ে যাওয়া ভাইবোনেরা বাদ দিয়েও আমরা ছিলাম ২১ জন।

দীপুদা সেই যে গেলে আর এলে না তুমি। এই দিকে এর কিছুদিন পরেই মেজো ফুপু মানে তোমার মাও চলে গেলেন রাজশাহী। তোমার বাবা মানে আমার ফুপা ততদিনে ফিরে এসেছেন পাকাপাকি ভাবেই বিদেশ থেকে। কাজেই ফুপু তার নিজের সংসারে চলে গেলেন। শুনলাম তুমি আর্মিতে যোগ দিয়েছো। সেখানেও খুব কম ছুটি ছাটায় আসো। আর্মিতে নাকি খুব কঠোর পরিশ্রম আর অনুশীলন চলে। তুমি নাকি কালো ভূত হয়ে গেছো। এমনই সব খবর পাই আমি মা চাচী বা বাড়ির লোকজনের কাছে থেকে। কিন্তু তুমি আর আসো না।

এভাবে আমি বড় হয়ে গেলাম। বলতে গেলে একরকম তোমার পথ চেয়ে চেয়েই। আমার এস এস সি পরীক্ষা এলো। চলেও গেলো। রেজাল্টও হলো। তোমার মত সারা বোর্ডে প্রথম না হলেও প্রথম বিভাগে স্টার মার্ক নিয়েই পাস করলাম আমি। এর মাঝে মেজোফুপুও বেড়িয়ে গেলেন কিছুদিনের জন্য । তোমার এস এস সি এর পরে এটাই তার প্রথম আসা না উনি এই ২/৩ বছরে বেশ কয়েকবারই এসেছেন এবং তার কাছেই শুনেছি তুমি এখন দারুণ ব্যাস্ত । বাড়ী আসারও সময় নেই তোমার আর।

আমার ভীষন অভিমান হয়। দীপুদা, তোমার কি আমার কথা একবারও মনে পড়ে না? সেই বিকেলের কথা কি সে একেবারেই ভুলে গেলে তুমি ! কি করে মানুষ ভুলে যায়? এই রকম কোনো স্মৃতি বা ঘটনা কি ভুলে যাওয়া সম্ভব! বিস্মিত হই আমি। বুকের মধ্যে উথলে ওঠে ব্যাথার নদী, অভিমানের জোয়ার। আমি পলি পড়া মাটির মত তোমাকে চাপা দিয়ে রাখি বুকের গহীন জমিনের বালুচরে। এক বিকেলের মধুর স্মৃতি ক্রমে ক্রমে পরিনত হয় ব্যথার সাগরে। এই পৃথিবীর একটা প্রাণীও জানে না কি অপরিসীম কষ্ট বা ব্যথার একটি সাগর বয়ে চলি আমি বুকের গভীরে।

দীপুদা মনে হয় আমাকে সত্যিই একেবারেই ভুলে যায় ......
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:২৭
৪২টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×