somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছবিতে উত্তরবঙ্গ :তৃতীয় পর্ব- দিনাজপুর

০৩ রা মে, ২০১১ রাত ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কান্তজিউ মন্দির
দিনাজপুরের জমিদার মহারাজা প্রান নাথ ও তার পুত্র রামনাথ কর্তৃক এই মন্দিরের নির্মান কাজ শুরু হয় ১৭০৪ সালে আর শেষ হয় ১৭৫২ সালে। টেরাকোটার নিপুন কাজ করা অসাধারন সুন্দর এই মন্দিরটি বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রন্ততাত্তিত নিদর্শন।









কান্তিজিউ মন্দির দেখে আমি পুরা পাগল হয়ে গেছি। ছবিতে যতনা সুন্দর দেখাচ্ছে মন্দিরটা তারচেয়ে অনেক বেশি সুন্দর! :)

রামসাগর
দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দক্ষিনে আউলিয়াপুর ইউনিয়নে বিখ্যাত রামসাগর দীঘি অবস্থিত। ১৭৫০ সালে রাজা রামনাথ প্রজাদের সেচ সুবিধা ও পানির সমস্যা দূরীকরণের জন্য এই দীঘি খনন করেন ।


কথিত আছে রাজা রামণাথের আমলে বৃষ্টির অভাবে রাজ্যে খরায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। প্রচুর মানুষ অনাহারে প্রাণ হারায়। রাজা প্রচুর শ্রমিক লাগিয়ে এ দীঘিটি খনন করেন। কিন্তু বিধি বাম! দীঘিতে উঠলোনা এক ফোঁটা পানি। চরম হতাশ রাজা ভেবে ভেবে যখন কোন কুল কিনারা পাচ্ছিলেন তখন একদিন স্বপ্নাদেশ পেলেন দীঘিতে যুবরাজ নিজের জীবন বিসর্জন দিলে পানিতে ভরে উঠবে এ জলাশয়। স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী রাজার ছেলে ঠিকই দীঘিতে প্রাণ বিসর্জন দিলেন আর আশ্চর্যজনকভাবে তখনই কুলকুল ধ্বনিতে দীঘি পানিতে ভরে উঠলো । আর তার নাম অনুসারে এ দীঘির নাম হয়ে গেলো রামসাগর।



দীঘিটির দৈর্ঘ্য ৩৩৯৯ ফুট আর প্রস্হ ৯৯৮ ফুট।




দীঘির চারপাশে নানা প্রজাতির গাছ। আর নাম না জানা পাখির কলরব। সাথেই রয়েছে গোটা বিশেক হরিণের আস্তানা।



রাজবাড়ি
দিনাজপুরের রাজবাড়িটি আজ প্রায় ধ্বংসস্তুপ। কৃষ্ণমন্দির আর রাজবাড়ির প্রধান ফটক ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।

১৭০০ শতকে তৈরি করা কৃঞ্চ মন্দির এর গঠনশৈলী সত্যি মুগ্ধ করার মতন


মন্দিরের পাশেই ছোট একটি দেবতার মূর্তি। এই দেবতা মূলত বিষ্ণুর বাহন হিসেবে কাজ করতো। এর নাম গাড়ুদা। গাড়ুদা মূলত এক ধরণের পাখি।






রাজবাড়ির প্রধান ফটক


জানা যায়, দিনাজপুরের রাজ বংশের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ৪শ’ বছর ধরে প্রায় ১৬৬ একর জায়গা জুড়ে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছিল বিশাল প্রাসাদ। এ রাজবাড়িতে রয়েছে আয়না মহল, রানী মহল ও ঠাকুরবাড়ি মহল। এছাড়াও ফুলবাগ, হীরাবাগ, সবজিবাগ, পিলবাগ, দাতব্য চিকিৎসা, অতিথি ভবন, কর্মচারীদের আবাসিক এলাকা, প্রশাসনিক ভবন ও প্রসাদের মধ্যে কয়েকটি বিরাট দীঘি রয়েছে। দ্বিতল আয়না মহলে নীচে উপরে মিলে ২২টি করে মোট ৪৪টি কক্ষ রয়েছে। এই ভবনে মূল্যবান মার্বেল পাথর ও স্টটিকমতি খচিত ছিল। এছাড়াও রাজ প্রাসাদ এলাকায় জলসাগর, তোষাখানা, পাঠাগারসহ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভবন অবস্থিত। আয়না মহলের উত্তরে রানীর দেউড়ি পেরিয়ে রানী মহল অবস্থিত।



জনমুখে প্রচলিত রাজপরিবারের ইতিহাসটা এরকম- দিনাজ রাজা অথবা দিনরাজ রাজা রাজবাড়ি তথা রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতা। তার নামানুসারেই দিনাজপুর জেলার নামকরন করা হয়েছে। কালক্রমে রাজা প্রাণনাথ রাজপরিবারের দায়িত্ব গ্রহন করেন। তিনিই কান্তনগর মন্দির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। প্রাণনাথের মৃত্যুর পর অবশিষ্ট কাজ তার পালকপুত্র রামনাথ সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ভূমিকম্পে কান্তনগর মন্দিরে ক্ষতি সাধিত হলে মহারাজা গিরিজানাথ মন্দিরটি সংস্কার করেন। এ রাজবাড়ির বেশির ভাগ স্থাপত্য ও ভবন অষ্টাদশ শতাব্দীতে প্রাণণাথ আর রামণাথ নির্মাণ করেন।



জানা যায়, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এই রাজপ্রাসাদের প্রতি বৈষম্য ও বিমাতাসুলভ আচরন ও অবহেলার চোখে দেখে আসছিল। তৎকালীন মহারাজা জগদীশনাথের আমলে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলে তিনি স্বপরিবারে ভারতে চলে যান।


পুরনো বাড়ি পেয়ে আমার কলিগের একটু মন চাইলো লুকোচুরি খেলতে





দিনাজপুর রাজবাড়ি থেকে বেশিরভাগ জিনিসই জাতীয় জাদুঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু গৌরবময় এই রাজবাড়ি আজ ধ্বংসের মুখে। ঠিকমত সংরক্ষন করলে এই রাজপ্রসাদেই গড়ে তোলা যেত সমৃদ্ধ এক জাদুঘর।

ছবিতে উত্তরবঙ্গ : প্রথম পর্ব- বগুড়া
ছবিতে উত্তরবঙ্গ : দ্বিতীয় পর্ব- রংপুর

***আমার যত ভ্রমণ ও ছবিব্লগ***
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১১ দুপুর ১২:৫১
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×