ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম আগমনের ইতিহাস কম-বেশী আমাদের সকলেরই জানা। এ অঞ্চলে ইসলাম আগমনের প্রাক্কালে তা প্রায় অপরিবর্তীত থাকলেও, পরবর্তিতে স্বল্প বিদ্ব্যান মৌলানাদের মাধ্যমে তা অনেকাংশেই পরিবর্তীত হয়েছে। অশিক্ষিত জনগণ এবং দূর্বোধ্য আরবী ভাষা, এ পরিবর্তনের কারণসমূহের মধ্যে অন্যতম। সে সময়ের ইসলাম এ অঞ্চলে নানা ঘাত-প্রতিঘাত পার করলেও বর্তমানে তা অত্যন্ত সাবলীল। তাই সে সময়কার ভুলগুলো এখনি সংশোধনের উত্তম সময়।
ভুলঃ আমার জানামতে, বাংলাদেশের প্রায় সকল মসজিদে জুমু'আর খুতবা চলাকালে একটা লাল রংয়ের বৈদ্যুতিক বাতি (বিদ্যুৎ থাকা সাপেক্ষে) জ্বলতে থাকে। যার মানে, এ সময়ে নামায পড়া নিষেধ। যেসব মসজিদে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, সেখানে খুতবা চলাকালে আপনি সালাত আদায় করতে দাঁড়ালে মসজিদের প্রায় সকল মুসল্লি আপনার দিকে তাচ্ছিল্য ভরা চোখে তাকাবে। পারলে আপনাকে টেনে বসিয়ে দিবে। হয়ত, জুমু'আ-র সালাত শেষে ইমামের বকুনীও জোটতে পারে যদি কপাল খারাপ থাকে।
# তাহলে কি আপনি কোন পাপ করে ফেলেছেন?
-না, করেননি।
যুক্তিঃ
"আবূ নু'মান (র.)......জাবির ইবন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (কোন এক) জুমু'আর দিন নবী (সাঃ) লোকদের সামনে খুতবা দিচ্ছিলেন। এমনি সময় এক ব্যক্তি আগমন করল। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে অমুক! তুমি কি সালাত আদায় করেছ? সে বলল, না, তিনি বললেন, উঠ, সালাত আদায় করে নাও"- (অনুচ্ছেদ-৫৮৬, খন্ড-২, সহীহ্ বুখারী)।
"আলী ইবন আবদুল্লাহ (র.)....জাবির ইবন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক জুমু'আর দিন নবী (সাঃ) খুতবা দেওয়ার সময় এক ব্যক্তি প্রবেশ করল। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, সালাত আদায় করেছ কি? সে বলল, না, তিনি বললেনঃ উঠ, দু' রাকা'আত সালাত আদায় করে নাও"- (অনুচ্ছেদ-৫৮৭, খন্ড-২, সহীহ্ বুখারী)।
নিঃসন্দেহে, সারাবিশ্বের সকল কিতাবসমূহের মধ্যে সর্বাধিক উৎকৃষ্ট হলো কুরআন এবং তার পরেই সহীহ্ বুখারী শরীফ।
আমরা মুসলমান হওয়ার পূর্বেই নির্দিষ্ট মাযহাব বা পীরের দলভুক্ত হয়ে যাই। নিজেদের অগোচরে এটা ঘটে, এটা অনেকটা পৈত্রিকসূত্রে প্রাপ্ত। যেমনটা হয়ে থাকে ভোটার হওয়ার পূর্বে রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে। ধরলাম, মাযহাব বা পীরের দলভুক্ত হওয়া আল্লাহ প্রাপ্তি বা জান্নাত প্রাপ্তি'র জন্য অতি গূরুত্বপূর্ণ। তাহলে, সাহাবীদের বেলায় কি হবে? তারা তো কোন মাযহাব বা পীরের মুরিদ নন। বলতে পারেন, তাদের সময় নবী করীম (সাঃ) নিজে ছিলেন। বেশ তো আপনার কথার সূত্র ধরেই বলি, এখনও মীমাংসিত বিষয়সমূহে অপরিবর্তীত কোরআন ও হাদীস আছে এবং অমীমাংসিত বিষয়সমূহের জন্য আছে ইজমা ও কিয়াস। তাছাড়া, মাযহাবের ইমাম বা পীর কেউ ই আপনার দায়ভার হাশরের ময়দানে নিবেন না, একমাত্র রাসূলে পাক (সাঃ) ই আপনার জন্য আল্লাহ্'র কাছে ফরীয়াত করবেন। ইমাম আবূ-হানীফা (র.) সহ সকল ইমামই স্পষ্টকরে বলেছেন, তাদের আলোচনা করা বিষয়সমূহের উপর যদি কোন সহীহ্ হাদীস পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই সহীহ্ হাদীসের নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে হবে। তাই, যারা অজ্ঞাত তারা মাফ পেলেও যারা জ্ঞাত তারা কোন মতেই একমাত্র আল্লাহ্'র করুনা ছাড়া মাফ পাবেন না। তাই, পীর বা মাযহাব যাই ধরুন না কেন, কোরআন এবং হাদীসে যা মিমাংসীত হয়েছে তা নিয়ে মনগড়া যুক্তি উত্থাপন বাদ দিয়ে আজই সহীহ্ ইসলামের পথে আসুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১১