পরীক্ষা শেষ। এক মাসের মত বন্ধ। বাসায় ও যেতে ইচ্ছা করছে না। তাই কয়েকদিন হলে পড়ে আছি বাউন্ডুলের মত আমরা কজন।
সন্ধ্যায় বদরুল বলল,চল শহিদুল্লাহ হলের পুকুর পাড়ে গিয়ে বসি। সারাদিন রুমে বসে থেকে ল্যাপটপ আর মোবাইল টিপতে টিপতে হাত আর মাথা দুইটাই ব্যথা হয়ে গেছে।তাই আমরা চারজন বের হলাম। সন্ধ্যা থেকেই টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছিল। শহিদমিনারের আশেপাশে ঘোরাঘুরির পর রাতের খাবার সেরে যখন পুকুরপাড়ে বসলাম তখন রাত দশটার মত। পরিবেশটাই ছিল গল্প জমে উঠার মত। ভূতেরগল্প।একথা ওকথা বলতে তাই কখন যে ভূতের গল্পশুরু হয়ে গেল খেয়ালই করি নি।আর ভূতেরগল্প হল চেইনরিএকশনের মত। একজনেরটা শুনে আরেক জনের মনে পড়ে যায় তার খালার শাশুড়ীর ভায়ের ঘটনা, মামার বন্ধুর শালার ঘটনা, ফুফাতো বোনের জাএর বোনের ঘটনা ইত্যাদি ইত্যাদি। সবই এক্কেবারে সত্যি!!! ওদের নিজ চোখে দেখা! গল্পে গল্পে কখন যে সময় চলে যাচ্ছিল খেয়াল করিনি। হটাৎ লক্ষ্য হল যে আশপাশটা সুনসান হয়ে এসেছে। বদরুল বলল, রাততো কম হল না। এইবার উঠলে হয়না? তাছাড়া চারপাশটা ও খালি হয়ে এসেছে।
বদরুল আমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভীতু। ওকে একটু ভয় পাইয়ে দেয়ার জন্য আমি বললাম, তাছাড়া এই পুকুরটারও কিন্তু বদনাম আছে, অলরেডি এখানে বেশ কয়েকজন মারা গিয়েছে। আমার কথায় বদরুল বেশ ভয় পাচ্ছিল দেখে স্যার*( আমাদের যে রুমমেটটা সবসময় একটু পন্ডিতের মত কথা বলে আর সব বিষয়ে সিরিয়াস ,ওকে আমরা স্যার ডাকি) বলল, আরে সাঁতার না জেনে পুকুরে নামলেতো মরবেই। এই কথাগুলো বলতে বলতে আমরা গেইটের দিকে যাচ্ছিলাম। গেইটে পৌঁছে দেখি গেইট বন্ধ। আমরা একটু অবাক হলাম ।ছেলেদের হলের গেইট সাধারণত বন্ধ থাকে না। একটু চিন্তিত হয়েও পড়লাম। তখন দেখি দূর থেকে একজন লোক আসছে। হাতে একটা পুটলি। অন্ধকারে চেহারা ঠিক দেখা যাচ্ছিল না। লোকটা এসে বলল, আপনারা ??
আমরা বললাম, আমরা পুকুরপারে ঘুরতে এসেছিলাম।এখন নিজেদের হলে ফিরে যেতে চাচ্ছি। কিন্তু গেইট বন্ধ। লোকটা বলল, আমি এইখানকার একজন দারোয়ান। এই গেইটতো রাতে আর খোলা যাবে না। তবে আমি কার্জন হলের ভিতর দিয়ে একটা রাস্তা জানি। আপনারা সেখান দিয়ে দেয়াল টপকিয়ে বেরিয়ে যেতে পারবেন। তবে আগে আমি রাতের খাবারটা সেরে নেই।
কি আর করা? লোকটা অই অন্ধকারের মধ্যেই একপাশে বসে পুটলি খুলে খাওয়া শুরু করল। আমাদের মধ্যে ,ছদরুলএর আবার খাই খাই স্বভাব। কাউকে খেতে দেখলেই ওর খিদা চাগিয়ে ওঠে। লোকটার খাবার শব্দ শুনে মনে হচ্ছিল লোকটা মনে হয় হাড় জাতীয় কিছু খাচ্ছিল।কিংবা চিপস। ছদরুল বলল, মামা কি খাচ্ছেন?আমাককে ও একটুদিন। আমি দাম দিয়ে দেব। লোকটা তখন বলে উঠলো, সব খাবার কি আর দাম দিয়ে কেনা যায়? আমার কাছে লোকটার আচরণটা অদ্ভুত লাগছিল। তাই ওকে আর না ঘাঁটাতে ছদরুলকে ইশারা করলাম। ভালোয় ভালোয় আমাদের কে বের করে দুক। খাওয়া শেষে লোকটা কিছু না বলেই হাঁটা শুরু করে দিল। কি আর করা। আমরা ও অনুসরণ করতে লাগলাম। কার্জন হলের জায়গাটা আলো আঁধারীতে ঘেরা। এর মধ্যে লোকটার পিছু পিছু হাঁটতে লাগলাম। লোকটা বেশ দ্রুত আর আগে আগে হাঁটছিল। এইভাবে আমারা অনেকক্ষণ হাঁটলাম। কার্জনহলে বেশকয়েকটা ভবন আছে জানতাম। তাই বলে এত্ত!! আমার মনে হচ্ছিল আমরা মনে হয় পঞ্চাশ ষাটটা ভবন ফেলে এসেছি। শেষে আর না পেরে বদরুল বলল, মামা আর কতদূর?
লোকটা কোন জবাব না দিয়ে বেশ গাছপালা ঘেরা একটা রাস্তার মধ্যে ঢুকল। আমরা ও দৌড়ে রাস্তাটাতে উঠলাম। কিন্তু লোকটাকে হারিয়ে ফেললাম। আশপাশে তাকাতেই খেয়াল হল যে আকাশ ফর্সা হয়ে এসেছে। দূরে কোথায় যেন ফজরের আযান ও শোনা গেলো। অই রাস্তা ধরে এগোতে থাকলাম। একটু পরেই একলোককে জগিং করতে দেখলাম। ছদরুল জিজ্ঞেস করল, ভাই এটা কোন জায়গা?
_" রমনা পার্ক!! কেন, ঘুরতে এলে আর নাম জানো না? সকাল বেলাতেই কি মালটাল খেলে নাকি? " লোকটা বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল।
বি ঃদ্রঃ গল্পের শিরোনামেই বলা হয়েছে এটা একটা বানোয়াট ভূতে গল্প। গল্পের কাহিনি আমার অনুর্বর মস্তিস্কের কল্পনা। গল্পে ব্যবহার করা পুকুরপাড় আমার দেখা সের পুকুরপাড় গুলোর মধ্যে একটি। সুতরাং এই কাহিনীকে বেশি গুরুত্ব দেবার কিছু নাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:৪০