যেদিন সঙ্গীত একডেমি তে আর আসবি না বলে হারমোনিয়াম টা ঠেলে দিয়ে আমার থেকে দূরে সরেগেলি !
তোর গানের খাতা টা আমার হাতেই ধরা ছিল বাসু।
সপ্তাহে দুই দিন গানের ক্লাসে এসে দূর থেকে আমার হাতে খাতা'টা ছুড়ে দিয়ে, ওস্তাদ আসার আগের সময়টুকু মাঠে ক্রিকেট খেলতি ।আমার পাশে, অবধারিত ভাবে তুই। ততক্ষণ আমি ডুবতাম তোর খাতার ভাজে, শব্দে শব্দে আর নীলফুল রংছবি'তে।
এমন সব শারদ সন্ধ্যায় ঝুপকরে নেমে আসা অন্ধকার কেটে কেটে বাড়ি ফিরতাম দু'জনে, কী যে তুমুল সুবাস দিত বনসোহাগী হাজার গোলাপ! তোর আমার অগোছালো উচ্ছ্বাস, আর নতুন সারগম শেখার স্বপ্নগুলো পায়ে পায়ে ভিজত বছরের প্রথম সান্ধ্য শিশিরে।
ঘুরপথে গেলে শুরুতে আমি ফিরতাম ঘরে, তাই সোজাপথ টা তুই কখখন নিতে চাইতি না। অথচ আমার আগ্রহ ছিল কাকীমা'র নাড়ু সন্দেশে, ধুপধুনো চন্দনে।
কি সুন্দর রেওয়াজ করতি তুই -
আমি একদিন "বেনুকার সূর " হারমোনিয়ামে ভুল তুলেছিলাম বলে জোরে আমার হাত মুচরে দিয়ে বলেছিল , আর একবার ভুলে গেলে আঙুল ভেঙ্গে দিবি। আমি তোর বড়দা কে বলে দিব বলে ভয় দেখিয়ে ও চুপ করেই ছিলাম;
তখন ও জানতাম আমাদের দুজনের কিছু কথা শুধু আমাদের ই ।
আমার সকালে উঠে মাসজিদে কোরআন শিখতে যাওয়া , এসে সারগম এর রেওয়াজ , স্কুলের দুই বেণী র সাথে সখ্যতা , বিকেলে গোল্লাছুট বউচি খেলা অথবা ছুটির দুপুরে সুনসান নিশ্চুপ নীরবতায় কাঁচাআম লবণের জুটি ;
আর সব কিছুর মতই সহজ ছিলি তুই ।
এখন আমি যত্নে ঘোমটা রাখি আর তোর বউ সিঁথি রাঙায় লাল সিঁদুরে;
ধূতি পাঞ্জাবীর বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় যে একজন সুলতানার পাশা পাশি হাত ধরে চলতে পারে না সেটা বোঝার আগেই আমরা ভালো ছিলাম ।
এই ফেসবুকের যুগে তোর স্ট্যাটাস আপডেট গুলি আমি আর আঙুলে স্পর্শ করতে পারি না, গানের খাতার লেখার মত, শুকিয়ে যাওয়া ফুলের মত। নাকের কাছে এনে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারি না পুরনো সময়ের।
এখন ও আমার শৈশবের ফুল চুরি, আর গলা সাধা তোর গানের খাতার ভাঁজে' ই রয়ে গেলো রে।
https://fineartamerica.com/shop/greeting+cards/pressed+flowers
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৫৭