somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মমতা

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-আম্মা গরু নিতেন না? কাইল তো কুরবান! রাস্তাত কত মানুষেরে দেখছি কত্ত বড় বড় গরু কিইন্না লইয়া যায়।
-কুরবানের আনন্দ কি আর সবার লাইগ্যা আহে বাপজান!?
-ক্যান?!আমরা কুরবান দিতাম না? গোস্ত খাইতাম না?
-খাইতি না কিল্লাইগা! আমি কাইল সক্কাল সক্কাল ঘুম থেইক্যা উইঠাই বাইরে যাইয়্যাম গোস্ত আইনতে।
হালিমা আমাদের সমাজের একজন ভিখারিনী। পনেরো বছর পাড় হতে না হতেই মধ্যবয়স্ক ঠেলাগাড়ি চালক করিমের সাথে বিয়ে হয়।বিয়ের এক বছরের মাথায় করিম দুনিয়া ছাড়ে। তার বিদায়ের পর পরই উত্তরাধিকার আসে পৃথিবীতে। কিভাবে
ছেলেটা মানুষ করবে তা নিয়ে খুব চিন্তায় পড়ে গেলো হালিমা। এক ধনীর বাড়িতে যায় কাজের সন্ধানে।বাড়ির মালিক মধ্যবয়স্ক।
সেও একদিন সুযোগ খুঁজে নিলো। তারপর আর কি!আত্মহত্যার কথা ভাবে হালিমা। যতবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে ততবারই বাবুর
কথা মনে পড়ে। বেঁচে থাকাটা দরকার ছিলো স্বামীর দেয়া প্রদীপের জন্য।এই প্রদীপ কখনো নিভে যেতে দিবে না সে। তাই
সমাজের মানুষগুলোর প্রতি মাথা নত করে ভিক্ষার পথ বেছে নেয়। বাবু বড় হতে থাকে হালিমার ভিক্ষার উপার্জনে।

ছয় বছরের ছেলেটা বুঝতে শিখেছে কোরবান কি জিনিস! তাই আজ মাকে অভিমান নিয়ে ধরেছে গরু কিনতে। হালিমা সকালে গোস্ত নিয়ে আসবে বললে বাবু কোনোভাবেই তা মানতে রাজি নয়। তার
আজই একটা বিরাট গরু লাগবে।অন্য বাচ্চাদের মতো গরু নিয়ে খেলবে।গরুর মুখে খড়কুটা তুলে দিবে। রাত এগারোটা পাড় হয়েছে। ছেলেটার আব্দার বেড়েই চলছে। তার চোখে মুখে পানি। বড় রাস্তার পাশের ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে আনা ভারি বিছানাটা তার চোখের
পানিতে ভিজে যাচ্ছে।
-আম্মা তুমি যাও না ক্যান? গরু আনো না ক্যান?
-বাপজান আমার কাছে ত ট্যাকা নাই। গরু কি দিয়া কিইন্নাম।
হালিমা নিজেও তার চোখের পানি আটকাতে পারলো না। ছেলের কান্নায় তার বুক ফেটে যাচ্ছে।হালিমা ছেলেকে আঁকড়ে
ধরে কান্নার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। এই পরিস্থিতিতে ছেলেকে না সামলে নিজেই মরা কান্না জুড়ে দেয়।
আসলে মায়েদের অন্তর যতটা নরম হয় ততটাই সস্তা হয় তাদের চোখের পানি। সন্তানের কষ্টে খরচ করার জন্য সৃষ্টিকর্তা নিজেই
হয়তো আলাদাভাবে তাদের চোখের নিভৃতে একটা নলকূপ বসিয়েছেন। আর সেই নলকূপের পানি হালিমার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে।
রাত্রির গভীরতা বাড়ছে। হালিমা ছেলেকে নিয়ে শুয়ে আছে। বাবু গভীর নিদ্রায় তলিয়ে। চারদিক নিশ্চুপ। সকাল হলেই কোরবানের
আমেজ ছড়িয়ে পড়বে চারদিকে।। এই ছোট্ট বাবুর চোখটাই শুধু কান্নায় ভিজবে।

সকাল আটটা। শয়ে শয়ে মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করে ফিরছে। সবার মধ্যেই খুব তাড়াহুড়োর একটা ভাব। কিছুটা সময় পর
একটা গরু চুরি যাওয়ার আনাগোনা শুরু হয়। চারদিকে খুব চেঁচামেচি হচ্ছে।। লোকজন গরু খোঁজতল্লাশিতে বেড়িয়ে পড়ে।
বাবু একটা লাল গরু নিয়ে আনন্দমেলা জমিয়েছে। শেষরাত থেকেই এই আনন্দ বিরতিহীনভাবে চলছে। মাঝেমাঝে গরুর মুখে
খড়কুটা তুলে দেয়। পাশেই হালিমা বসা। সন্তানকে চোখের আড়াল করছে না। বাবু জানে না অল্প সময় পর তাদের সাথে কি
হতে যাচ্ছে।! হালিমার চোখ বড় রাস্তার দিকে। বিরাট মাত্রার ঝড়ের জন্য অপেক্ষায় আছে তার দেহ-মন।

#সাড়ে_পাঁচ_ঘন্টা_পূর্বে
______________
এই রাতে এইটুকুন একটা ছেলেকে একলা রেখে বের হওয়াটা ঠিক হচ্ছে না। কিন্ত ঘুুমন্ত ছেলের মুখে কান্নার শুকনো দাগ
হালিমাকে আর থামাতে পারলো না। বেরিয়ে পরলো রাতের অন্ধকারে। বড় রাস্তার দুপাশে বিশাল বিশাল দালান। দারোয়ানের চোখ ফাঁকি দিয়ে একটা দালানের দেয়াল টপকে ভিতরে প্রবেশ করলো। দারোয়ানের মুখে রোমাল ছুঁইয়ে পা
টিপতে টিপতে ভিতরে এগুতে থাকে। রোমালে কি ছিলো আমার জানা নেই। তা শুধু হালিমাই জানে। এইবার একটা লাল গরু
বাঁধন থেকে খুলে গেইটের দিকে আগায়। গরুটা হালিমার কষ্টের পরিমাণ অনুভব করতে পারছে। হয়তো সে কারণেই শান্ত থেকে
হালিমাকে সহযোগীতা করছে। তা না হলে একটা গরু এতটা শান্ত থাকার কথা নয়। নিরবে গেইট খুলে গরু নিয়ে সোজা ঘরমুখো হয়
হালিমা।

#বর্তমান
__________
হালিমার দৃষ্টি এখনো বড় রাস্তার দিকে। লোকজন ছুটে আসছে। সবার হাতে ছোট-বড় লাঠি।হালিমা ছেলেকে টান দিয়ে কোলে
তুলে নিলো।এবার যৌবনকালের সমস্ত শক্তি ঢেলে দিলো দৌঁড়ের মধ্যে। কিন্তু কতদূরই বা যাওয়া যায়। খানিক সময়ের মধ্যেই ধরা
দিতে হয়। খুব মারধোর চলতে থাকে। হালিমার কান্নায় আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে।
কান্নার স্বরে মিনতি করে যাচ্ছে সে । তার মিনতি বা কান্না কোনটাই লোকজনের দৃষ্টি কাড়ে না। লাঠির একটা আঘাত লাগে তার
মাথার ঠিক মাঝখানে। ছেলেটাকে একপাশে জোরপূর্বক আটকে রাখা হয়। তার চোখের পানিও যেন থামতে চায় না।
হালিমার ভিক্ষুক প্রতিবেশীরা পুরো ঘটনাটা খুব আমেজ নিয়ে উপভোগ করে। কিছুক্ষণ মধ্যে জায়গাটা জনশূন্য হয়ে যায়।
বৃষ্টির মাত্রা কমে আসছে। হালিমা মাটিতে পরে আছে। তার দেহ থেকে গড়িয়ে পড়া রক্ত বৃষ্টির পানিতে ধুইয়ে গেছে। বাবু তার
দেহের পাশে বসে মা মা করে কাঁদছে আর গাল টিপে দিচ্ছে।মাঝেমাঝে কপালে চুমুও খাচ্ছে।
কি ভাবছেন? হালিমা জীবিত আছে কি না? নাহ! হালিমা আর জীবিত নেই। সে দুনিয়াকে বিদায় জানায় নি। দুনিয়া তাকে বিদায় করে
দিয়েছে। তাও আবার জোরজবরদস্তি করে। আমি জানি না বাবু নামের ছয় বছরের বাচ্চাটার ভবিষ্যৎ কি! অন্যকেউ জানে কি
না সেও আমার অজানা।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×