এখন যে বিষয় গুলো নিয়ে কথা বলবো, এগুলো ‘কয়েক টুকরো ইতিহাস’ নামে একটা কবিতাতেও আছে ভিন্ন ভিন্ন তিনটি অনেচ্চেদে। তাও একটু টু দ্যা পয়েন্ট বলার চেষ্টা করছি। কবিতাটি পড়তে চাইলে ব্রাউজ করতে পারেন Click This Link লিংকে।
ক্ষুদিরাম বসু জন্মের পূর্বে তার মায়ের আরও দু'টি সন্তান অকালে মারা যায়, ক্ষুদিরামও মারা যাবে এই আশংকায় তার মা তৎকালীন হিন্ধু ধর্মের নিয়মানুযায়ী ক্ষুদিরামের দিদি'র কাছে মাত্র তিন মুঠো খুদের (শস্য-দানা) বিনিমিয়ে বিক্রি করে দেয়, তাও তার সন্তান যেন বেঁচে থাকে।মহান বিপ্লবী এই মুক্তিকামী মানুষটির আসল নাম আমিও জানি না, তবে এতোটুকু জানি যে, বিক্রিত হয়ে যাওয়ার পর থেকে ঐ ছেলেটির নাম হয় ক্ষুদিরাম। ক্ষুদিরামের নামের দাম যদি তিন মুঠো খুদ হয়, তবে আমি তিন টুকরো শব্দের দ্বারা (আমি তোমাকে ভালোবাসি) আমার নামটাও পাল্টে নিতে পারি, কবিতায় এই জন্যই বলেছি।
শৈশবে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের চিত্রশিল্পের প্রতি আগ্রহ দেখে তিনির মা তার গলার হার বিক্রি করে তার ছেলেকে ‘কলকাতা আর্ট কলেজে’ তাকে ভর্তি করিয়ে দেন। সেই জয়নুল যখন বড় হলেন, ১৯৭০ সালে গ্রাম-বাংলার 'নবান্ন' উৎসব নিয়ে তিনি ৬৫ ফুট দীর্ঘ একটি চিত্রকর্ম করেন যার নাম দিয়েছিলেন 'নবান্ন'। আসলে ৬৫ ফুট দীর্ঘ একটা বিখ্যাত চিত্রকর্ম করতে হয়তো তার চেয়ে অনেক বড় একটা হৃদয় থাকা লাগে। আর আমার চিত্রপটে যাকে এঁকেছি, সেই চিত্র-কর্মটি আমার কাছে কোন ভাবেই ৬৫ ফুটের চেয়ে ছোট নয়। তাই কবিতায় আপাতপক্ষে ৬৫ ফুট দীর্ঘ হৃদয়ের কথা বলেছি।
মাস্টারদা সূর্যসেন তার শেষ চিরকুটে লিখে গিয়েছিলেন, 'আদর্শ ও একতা' । এই মানুষটাকে তৎকালীন ব্রিটিশ বাহিনী নির্মম অত্যাচারে জর্জরিত করে তার লাশের সাথে লোহা বেঁধে ফেলে দিয়েছিলো ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের মাঝামাঝি একটা জায়গায়। ব্রিটিশ'রা উনার লাশকে ডুবাতে পেরেছেন ঠিকই, তবে মাস্টারদা আজোও ভেসে আছেন কোটি বাঙ্গালির হৃদয়ে।
জমিদারের দেওয়ান ছিলেন নদের চাঁদ আর রূপবতী মহুয়া ছিলেন সরদার হুমরা বেদের পালিত কন্যা। সাপের খেলা দেখতে গিয়ে মহুয়ার রূপে মুগ্ধ হয়ে নদের চাঁদ তাকে প্রণয় নিবেদন করেন। মহুয়াও নদের চাঁদের প্রণয়ে সাড়া দিয়েছিলো। তবে বাধা হয়ে দাঁড়ান সরদার হুমরা বেদে। উপায়ান্তর না দেখে, একদিন নদের চাঁদ মহুয়াকে নিয়ে পালিয়ে যান। হুমরা বেদেও তা জানতে পারে এবং দলবল নিয়ে তাদের পিছু ধাওয়া করে। শেষে তারা মহুয়া এবং নদের চাঁদকে ধরে ফেলে। হুমরা বেদে নদের চাঁদকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। সরদার মহুয়ার হাতে বিষলক্ষা ছুরি দিয়ে বলে ‘যা নদের চাঁদকে মেরে ফেল।’ বিষলক্ষা ছুরি নিয়ে মহুয়া নদের চাঁদের দিকে এগিয়ে যান। নদের চাঁদের সামনে পৌঁছে সেই ছুরি দিয়ে তিনি তার নিজের বক্ষ বিদীর্ণ করেন, নদের চাঁদ মহুয়ার এই আত্মত্যাগ সহ্য করতে না পেরে প্রেমের প্রতিদান স্বরূপ বিষলক্ষা ছুরি দিয়ে নিজের জীবনও আত্মাহুতী দেন।আমি নদের চাঁদ না যে জীবন দিয়ে দিবো, এজন্যই বলেছি আমি হুমরা বেদে’র জীবন নিয়ে নিবো।
জনকল্যাণে দীঘি খনন করেছিলেন কমলা রানী, সে দীঘিতে পানি উঠছে না দেখে জনশ্রুতি অনুযায়ী গঙ্গা দেবী'র পূজা করতে গিয়ে মাঝ দীঘিতে গিয়ে আর উঠে আসতে পারেননি কমলা। বহু সাহিত্য, গান আর লোকগাথায় আজও কমলা সুন্দরী, অনেক প্রানবন্ত।আমি তাকে লোকগাথায় নয়, আমার জীবনে প্রানবন্ত দেখতে চাই।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২১