আগের পর্ব - ছেলেবেলা (২য় পর্ব)
গৃহস্তের উঠানে শুঁকোতে দেয়া ধান খাচ্ছে, এক কাক আর চড়ুই।
দুষ্ট কাক চড়ুইকে বলল, দোস্ত, চল, বাজি ধরি।
তোমার সামনে অল্প কয়েকটা ধান আর আমার সামনে অনেক বেশী।
চল দেখি, যে আগে তার সামনের ধান খেয়ে শেষ করতে পারবে, সে জিতবে। আর যে জিতবে, সে আরেকজনের গায়ের মাংস খাবে।
চড়ুই বোকাসোকা পাখি।
সাত পাঁচ না ভেবেই রাজী হয়ে গেল।
ধান খাওয়া শুরু করে দেখল তার ছোট ঠোঁটে সে বেশী খেতে পারছিল না, কিন্তু কাক খুব তাড়াতাড়ি খেয়ে যাচ্ছে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই কাক তার ভাগের ধান শেষ করে, চড়ুইকে বলল – দোস্ত, তুমি হেরে গেছ। আমি এখন তোমার গোশত খাব।
চড়ুই, অবাক হয়ে বলল – আমি তো ভেবেছিলাম, আমরা মজা করছিলাম! আর, আমি যে ছোট, তুমি ঠোকর দিলে তো আমি মরেই যাব।
কাকের কথা একটাই, সে বাজিতে জিতেছে, তাই শর্ত মোতাবেক তাকে এখন চড়ুইয়ের গোশত খেতে দিতেই হবে।
শেষমেশ কোন কথাতেই কাককে নিবৃত্ত না করতে পেরে, চড়ুই বলল - আচ্ছা, বাজিতে যখন হেরে গেছি, তোমার শর্ত মতই হবে।
তুমি আমার গোশত খাবে। তবে, আমার একটা অনুরোধ আছে। সেটা হল – ঐ ঠোঁট দিয়ে তুমি কত ময়লা আবর্জনা খাও। আমার গোশত খাওয়ার আগে, দয়া করে তোমার ঐ নোংরা ঠোঁট নদীর পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার করে এসো।
চড়ুই এঁর অনুরোধ শুনে কাক মহাখুশী। সে এই অনুরোধ রাখতে রাজী হয়ে নদীর পাড়ে গিয়ে, নদীকে বলল –
নদী ভাই, নদী ভাই,
দিবা পানি, ধোব ঠোঁট,
তবে খাব চড়ুইর গোশত।
নদী কাকের কথা শুনে বলল – তোর এই নোংরা ঠোঁট পানিতে ডোবালে, আমার পানি নোংরা হয়ে যাবে।
তুই কুমারের কাছ থেকে একটা ঘটি নিয়ে আয়। ঘটিতে পানি ভরে, পাড়ে বসে ঠোঁট ধুয়ে নিস।
কাক তখন উড়াল দিয়ে কুমোরের বাড়ি গিয়ে, কুমোরকে বলল-
কুমোর ভাই, কুমোর ভাই,
দিবা ঘটি, ভরব জল, ধোব ঠোঁট,
তবে খাব চড়ুইর গোশত।
কুমোরের কাছে বানানো ঘটি ছিল না। তাই, কাককে মাটি নিয়ে আসতে বলল। সেই মাটি দিয়ে সে ঘটি বানিয়ে দিবে।
মাটি খোঁড়ার জন্যে ধারালো কিছু না পেয়ে, মাঠে এক মোষ দেখে ভাবল – মোষের শিং হলে মাটি খুঁড়তে সুবিধা হবে। তাই, মোষের কাছে গিয়ে বলল –
মইষ ভাই, মইষ ভাই,
দিবা শিং, খুঁড়ব মাটি, বানাব ঘটি,
ভরব জল, ধোব ঠোঁট,
তবে খাব চড়ুইর গোশত।
মোষ সব শুনে রাজী হল। কিন্তু সমস্যা হল, শিং ভাঙ্গা নিয়ে। আরেকটা মোষের সাথে লড়াই করে, শিং ভেঙ্গে কাককে দিতে হবে। তাই, সে কাককে বলল, ঘাস নিয়ে আসতে। সেই ঘাস খেয়ে, তার শক্তি বাড়বে। তারপর, লড়াই করে শিং ভেঙ্গে কাককে দিবে। ঘাস কাটতে কাঁচি লাগবে। তাই কাক তখন গেল কামারের কাছে। গিয়ে বলল-
কামার ভাই, কামার ভাই,
দিবা কাঁচি, কাটব ঘাস,
খাবে মইষ, করবে লড়াই, পড়বে শিং,
খুঁড়ব মাটি, বানাব ঘটি,
ভরব জল, ধোব ঠোঁট,
তবে খাব চড়ুইর গোশত।
কামার বলল, আচ্ছা। তুই এখনই গৃহস্থের কাছ থেকে আগুন নিয়ে আয়। আমি লোহা পুড়িয়ে তোকে কাঁচি বানিয়ে দিব। কাক গৃহস্থের বাড়িতে উড়ে গিয়ে বলল-
গিরস্ত ভাই, গিরস্ত ভাই,
দিবা আগুন, বানাব কাঁচি, কাটব ঘাস,
খাবে মইষ, করবে লড়াই, পড়বে শিং,
খুঁড়ব মাটি, বানাব ঘটি,
ভরব জল, ধোব ঠোঁট,
তবে খাব চড়ুইর গোশত।
গৃহস্থ সব শুনে রাজী হল, আগুন দিতে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল, আগুন নেয়া নিয়ে। কাক কিভাবে আগুন নিবে?
প্রথমে ঠোঁট দিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হল। এরপরে বলে, পায়ে বেঁধে দাও। বাঁধার সময়, গরম লাগাতে বলে, পাখায় দিয়ে দাও। তখন, গৃহস্থ কাকের পাখায় আগুন বেঁধে দিল।
কাক যেই না উড়াল দিয়েছে, সেই আগুন দপ করে জলে উঠে কাকের গায়ে ধরে গেল, আর কাক পুড়ে মরল।
চড়ুইয়ের খুশী দেখে কে।
লাফাতে লাফাতে বলতে লাগল-
খা কাউয়া খা,
আমার ধোক্করডা খা।
এসব মনে করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম, মনে করতে পারিনি
ছবিঃ গুগল মামার সৌজন্যে।
শেষ অংশ - ছেলেবেলা - শেষ পর্ব ( যাত্রার শুরু)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ২:৩৭