somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পানি থেকে প্রাণ, স্রষ্টার দান - এ বিষয়ে বিজ্ঞান ও আল-কোরআন

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এ ধরণীতে ঠিক কতকাল পূর্বে জীবনের উন্মেষ ঘটেছে তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কোটি কোটি বছর পূর্বে আবির্ভূত এলজে জাতীয় সামূদ্রিক এককোষী প্রাণীর ফসিলকে জীবনের প্রচীনতম নিদর্শন হিসেবে গণ্য করা হয়।

Cyanobacteria are prokaryotes (single-celled organisms) often referred to as "blue-green algae."
Cyanobacteria are very old, with some fossils dating back almost 4 billion years (Precambrian era), making them among the oldest things in the fossil record.
Cyanobacteria lack cilia, performing locomotion by gliding along surfaces. They are found most frequently in freshwater, but variants exist almost anywhere where there is water, including inside of other organisms such as lichen, plants and protists.
Cyanobacteria at mainly found in the oceans, where they are primary producers and are eaten by many other organisms. The blue-green tinge they give the water is the source of their name, blue-green algae.

পানির স্পর্শে জীবনের সূত্রপাত ঘটে। তাছাড়া সমস্ত জীবেরই দৈহিক গঠনে, জীবনের স্পন্দনে এবং জীবন ধারণের জন্য পানি অপরিহার্য এবং এর কোন বিকল্প নেই। জীবনের স্পন্দনে পানির উপস্থিতিই যে একমাত্র পূর্বশত তা আজ একটি চরম বৈজ্ঞানিক সত্য। কিন্ত্তু আশ্চর্যের বিষয়, সেই ১৪৫০ বছর পূর্বেই ঐশী গ্রন্থ আল-কোরআনে পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির বিষয়ে এই মৌলিক বৈজ্ঞানিক তথ্যটি সংক্ষেপে অথচ কত নিখুত ভাবেই না ব্যক্ত করা হয়েছে-
আল-কোরআন-
সূরা আম্বিয়া -আয়াত নং-৩০
(২১ : ৩০) অর্থ:- যারা অবিশ্বাস করে তারা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে; অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি হতে, তবুও কি তারা বিশ্বাস করবে না?
সূরা ত্বহা- আয়াত নং-৫৩
(২০ : ৫৩) অর্থ:- তিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে চলার পথ করেছেন, তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন এবং তা দ্বারা আমি জোড়ায় জোড়ায় বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি
সূরা নূর- আয়াত নং-৪৫
(২৪ : ৪৫) অর্থ:- আল্লাহ্ সকল প্রকার প্রাণীকে সৃষ্টি করেছেন পানি থেকে। তাদের কতক বুকে ভয় দিয়ে চলে, কতক দুই পায়ে ভর দিয়ে চলে এবং কতক চার পায়ে ভর দিয়ে চলে; আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম।

(২১ : ৩০), (২০ : ৫৩) ও (২৪ : ৪৫) নং আয়াতে 'মা' এর আভিধানিক অর্থ 'পানি'। এখানে সরাসির পানির কথা বলে প্রথমত এই ইংগিত দেয়া হলো যে, প্রণবান সবকিছু অর্থাৎ তা অনুজীব বা উদ্ভিদ বা প্রাণী, যাই হোক না কেন তা সৃষ্টির জন্য পানি অপরিহার্য।

Heterotroph, chemotroph organisms কিংবা Eubacteria, Archaebacteria, Stromatolites আর RNA বা DNA world
এর মধ্যে কোনটাকে আগে আর কোনটা পরে সৃষ্টি করা হয়েছে- আমার এ আলোচনায় সেটি মূল বক্তব্য নয়। প্রাণ সৃষ্টির জন্য যে পানি অপরিহার্য- আল-কোরআনের সেই মেসেজটি আমি এখানে হাইলাইট করতে চেয়েছি। বিজ্ঞানও তাই বলে এবং সে কারনেই বিভিন্ন গ্রহে প্রথমেই পানির সন্ধান করা হয়। এ পৃথিবীতে সমূদ্রই যেহেতু পানির মূল উৎস, তাই এখন পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে সমূদ্রকে এ পৃথিবীতে জীবের প্রাথমিক উৎপত্তি ও আবাসস্থল হিসেবে ধারনা করাটাই স্বাভাবিক। সমগ্র বিশ্বের তথ্য ভান্ডার আল কোরআনে কিন্তু সমূদ্রের কথা না বলে মৌলিক তথ্য হিসেবে 'পানি থেকে প্রাণ' সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। কারন হয়ত এমন কোন গ্রহ থাকতে পারে যেখানে সমূদ্র নয়, বরং অন্য কোন পানির উৎসে প্রাণের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। উৎস যাই হোক না কেন- 'প্রাণ সৃষ্টির জন্য যে পানি অপরিহার্য', সে দিকেই ইংগি ত দেয়া হয়েছে।

এখন সভাবতই প্রশ্ন আসতে পারে যে, জীবন সৃষ্টির জন্য কোথাকার বা কোন ধরনের পানি উপযোগী?

সমূদ্র প্রাচীন প্রাণের আবাসস্থল হলেও, গবেষণার আলোকে অনেক বিজ্ঞানীরা প্রাণের প্রথম উৎপত্তিস্থল হিসেবে স্বচ্ছ সাদু বা মিঠা পানিকেই বিবেচনা করে থাকেন-

One new insight into the evolution of life is that plants first colonized the land not from the oceans, as originally assumed, but from fresh water. Then some land plants invaded the ocean as green seaweed.

Life Might Have Started in Fresh Water

এই তথ্যটিও (২০ : ৫৩), (১৩:১২) ও (১৩:১৩) নং আয়াতে মহান স্রষ্টা আমাদেরকে জানিয়ে দিলেন-
সূরা ত্বহা- আয়াত নং-৫৩
(২০ : ৫৩) অর্থ:- তিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে চলার পথ করেছেন, তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন এবং তা দ্বারা আমি জোড়ায় জোড়ায় বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি
সূরা রা’দ- আয়াত নং- ১২, ১৩
(১৩:১২) অর্থ:- তিনিই তোমাদেরকে বিদ্যুৎ দেখান ভয়ের জন্যে এবং আশার জন্যে এবং পুঞ্জিভুত করেন ঘন মেঘমালা।
(১৩:১৩) অর্থ:- তাঁর প্রশংসা পাঠ করে বজ্র এবং সব ফেরেশতা, সভয়ে। তিনি বজ্রপাত করেন, অতঃপর যাকে ইচছা, তাকে তা দ্বারা আঘাত করেন; তথাপি তারা আল্লাহ সম্পর্কে বিতন্ডা করে, অথচ তিনি মহাশক্তিশালী।

(২০ : ৫৩) নং আয়াত থেকে ধারনা পাওয়া গেল যে, জীবন সৃষ্টার জন্য আকাশ থেকে বর্ষিত পানি ব্যবহৃত হয়েছে। (১৩:১২) নং আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, বাহ্যিকভাবে বিদ্যুতের চমক ভীতির সৃষ্টি করে এবং বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু এই ভীতিকর বজ্রপাত আমাদের জন্য যে আশার কারনও বটে তা আমরা বিজ্ঞানের গবেষণায় আজ জানতে পেরেছি। আমরা এখন নাইট্রোজেন চক্রের বিষয়টি মোটামুটি সবাই জানি এবং এর মাধ্যমে আমরা অবগত হয়েছি যে, বজ্রপাতের সময় প্রচুর তাপ ও চাপে নাইট্রোজেন অণু ভেঙ্গে বাতাসের অক্সিজেনের সাথে মিলিত হয়ে নাইট্রোজেন অক্সাইড উৎপন্ন হয়।

আমরা এটাও জানি যে, বৃষ্টির স্বচ্ছ ও সাদু বা মিঠা পানি বিশুদ্ধ এবং তা পানের উপযোগী হিসেবে গণ্য করা হয়। ঊর্ধাকাশে বজ্রাঘাতের ফলে উৎপন্ন নাইট্রোজেন অক্সাইড এই বৃষ্টির পানির (Fresh Water) সাথে মিশ্রিত হয়ে নাইট্রেটস এ পরণিত হয় এবং পৃথিবিতে নেমে আসে। যা অণুকোষ বা জীবকোষ গঠনের মূল 'আরএন', 'ডিএনএ' ও প্রোটিন প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় 'এমাইনো এসিড' গঠনের অপরিহার্য উপাদান। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, 'পানি' শুধুমাত্র প্রাণ সৃষ্টির জন্য অপরিহার্য উপাদান "নাইট্রেটস" এর উৎপাদন ও বাহনের সাথেই জড়িত নয়, বরং এ পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের আবাসস্থলও এই 'পানি'।

(২০ : ৫৩) নং আয়াতে (তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন এবং তা দ্বারা আমি জোড়ায় জোড়ায় বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি) উদ্ভিদ জগৎ সৃষ্টির ক্ষেত্রে আকাশ থেকে বর্ষিত পানির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। উদ্ভিদ জাতিয় প্রাণ সৃষ্টির ক্ষেত্রে যেহেতু বৃষ্টির পানির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বলে এখানে ইংগিত দেয়া হয়েছে। তাই প্রথমে আবির্ভূত প্রাণটি যদি উদ্ভিদ জগতের অন্তর্ভূক্ত হয়ে থাকে, তবে তা সৃষ্টিতে সরাসরি আকাশ থেকে বর্ষিত বৃষ্টির পানি ও তাতে নিহিত উপাদানসমূহের যে নিশ্চয় বেশ গুরুত্ব রয়েছে- মূলত এ থেকে সে তথ্যই পাওয়া যায়।

আবার (২১ : ৩০) নং আয়াতে (প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি হতে) ও (২৪ : ৪৫) নং আয়াতে (আল্লাহ্ সকল প্রকার প্রাণীকে সৃষ্টি করেছেন পানি থেকে) প্রাণবান সমস্ত কিছু তথা প্রাণী জগৎ সৃষ্টির ক্ষেত্রে শুধু পানির কথা বলা হলো। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোরে কোন উৎসের পানির কথা উল্লেখ করা হয়নি। সুতরাং অণূজীব জগৎ ও প্রাণী জগৎ সৃষ্টির জন্যও যে আকাশের বা ভূগর্ভস্থ বা সমূদ্রের পানি কিংবা একত্রে এই সবগুলো উৎসের পানি ও তাতে নিহিত উপাদানসমূহ ব্যবহৃত হয়েছে - মূলত সে দিকেই দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

এভাবে আল-কোরআনে প্রাণ সৃষ্টি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা দেবার জন্য অতি সংক্ষেপে যে কত নিখুঁত ও নির্ভুল তথ্য প্রদান করা হয়েছে তা যারা বোঝার তারা ঠিকই বুঝে নেবে।

Nitrogen is a component of many organic molecules. It forms an essential part of amino acids (which make up proteins) and DNA.
Nitrogen is essential for all living cells.
• All life requires nitrogen-compounds, e.g., proteins and nucleic acids.
• Air, which is 79% nitrogen gas (N2), is the major reservoir of nitrogen.
• But most organisms cannot use nitrogen in this form.
• Plants must secure their nitrogen in "fixed" form, i.e., incorporated in compounds such as:
• nitrate ions (NO3−)
• ammonia (NH3)
• urea (NH2)2CO

The enormous energy of lightning breaks nitrogen molecules and enables their atoms to combine with oxygen in the air forming nitrogen oxides. These dissolve in rain, forming nitrates, that are carried to the earth.

আপনি যদি এখন প্রশ্ন করেন- এখানে পানির স্থলে তরল পদার্থ বলা যায় কি?

জী ভাই, এই প্রশ্নের উত্তরটি আপনি ৭৬ নং সূরার ১ ও ২ নং আয়াতে খুঁজে পাবেন।

(৭৬ : ১) হাল আতা-আলাল ইনছা- নি হীনুম মিনাদ দাহরি লাম ইয়াকুন শাইআম মাজকুরা।
(৭৬ : ১) অর্থ:- নিশ্চয় এমন কিছু কাল অতিবাহিত হয়েছে- যখন মানবসত্তা উলেখযোগ্য কিছু ছিল না।

(৭৬ : ০২) ইন্না- খালাক্বনাল ইনছা- না মিন নুত্বফাতিন আমশা- জ্বিন নাবতালীহি ফাজ্বাআলনা- হু ছামীআম বাছীর।
নুতফা=(অর্থ) তরল পদার্থের অতি সামান্য অংশ
আমশাজুন =(অর্থ) মিলিত, মিশ্রিত
নাবতালি=(অর্থ) বাছাইকৃত, পাল্টান
(৭৬ : ০২) অর্থ:- আমি তো মানুষকে সংমিশ্রিত পরিচ্ছন্ন পানির বা তরল পদার্থের বাছাইকৃত বা পরিবর্তিত অতি সামান্য অংশ থেকে সৃষ্টি করে তাকে পরিগঠন করেছি শ্রবণ ও দর্শনকারী রূপে।
অথবা {আমি তো মানুষকে (অসংখ্য শুক্রাণূর) সংমিশ্রনের বাছাইকৃত শুক্রাণূ থেকে সৃষ্টি করে তাকে পরিগঠন করেছি শ্রবণ ও দর্শনকারী রূপে।}

যারা আরও বেশি কিছু জানতে চায় এই আয়াত দুটিতে আল্লাহতায়ালা তাদের জন্যও তথ্য দিয়ে দিয়েছেন। জীবনের জন্য পানি তো অপরিহার্য বটেই অর্থাৎ পানি ছাড়া তো সম্ভবই না এবং এখানে বলা হলো এর সাথে আরও কিছু পদার্থের সংমিশ্রন ছিল।
এখন যারা আরও জানতে চায় যে- এই পানির সাথে কিসের সংমিশ্রন ঘটানো হয়েছিল?
তার উত্তরে ৩২নং সূরার ৭নং আয়াতে মহান স্রষ্টা সেই তথ্য দিয়ে দিয়েছন-

(৩২ : ০৭) লাজী-আহছানা কুল্লা শাইয়িন খালাক্বাহূ ওয়া বাদাআ খালাক্বাল ইনছা-নি মিন ত্বীন।
(৩২ : ০৭) অর্থ:- তিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন এবং কাদামাটি হতে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন।

কাদামাটি অর্থাৎ পানির সাথে মাটির সংমিশ্রন ঘটলেই তো কাদামাটি হয়। সুতরাং এ থেকে বুঝে নেয়া যায় যে, (২০ : ৫৩) আকাশ হতে বর্ষিত নাইট্রোজেন (নইট্রেটস) সমৃদ্ধ পানির সাথে (৩২ : ০৭) মাটিতে নিহিত জীবন সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান সমূহের সংমিশ্রন ঘটান হয়েছে। আর তাই (৭৬ : ০২) নং আয়াতে 'আমশাজুন' (অর্থ= মিলিত, মিশ্রিত) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। (বর্তমানে বিজ্ঞানের বদৌলতে আমরা জানতে পেরেছি যে, মানব দেহের গঠন ও বৃদ্ধির জন্য যে সমস্ত খনিজ পদার্থ প্রয়োজন তার প্রায় সবই এই মাটিতেই পাওয়া যায়।) তারপর এই সংমিশ্রিত তরল পদার্থটি (৭৬ : ১) বেশ কিছু কাল প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে তা এমন অবস্থায় পরিবর্তিত হয়েছে যে, এই (নাবতালি) বাছাইকৃত বা পরিবর্তিত (নুতফা) তরল পদার্থের অতি সামান্য অংশ থেকে পর্যায়ক্রমে সকল জীবন তথা মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে।

আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এই (৭৬ : ০২) নং আয়াতে যে আরবী শব্দগুলো {"নুত্বফাতিন আমশা- জ্বিন নাবতালীহি" (সংমিশ্রিত পানির বা তরল পদার্থের বাছাইকৃত বা পরিবর্তিত অতি সামান্য অংশ)} ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো জীবন সৃষ্টির প্রাথমিক অবস্থার সাথে যেমন সামঞ্জস্যপূর্ণ, তেমনি প্রাণী তথা মানবদেহের প্রজনন তন্ত্রে উৎপাদিত বীর্যের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

আল-কোরআন-৫৩ নং সূরা নজম-৪৫ ও ৪৬ নং আয়াতের দিকে লক্ষ করি-
(বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম)

(৫৩:৪৫) ওয়া আন্নাহু খালাকাজ যাওজাইনিজ জাকারা ওয়াল উংসা-

যাওজাইনি = (অর্থ) স্বামী-স্ত্রী, দুই প্রকার, দুই জোড়া (কোরআনের অভিধান- মুনির উদ্দীন আহমদ)

(৫৩:৪৫) অর্থ- এবং তনিই সৃষ্টি করেন পুরুষ ও স্ত্রীর যুগল

(৫৩:৪৬) মিন নুত্বফাতিন এজা তুমনা

নুত্বফাতুন = (অর্থ) পরিচ্ছন্ন পানি, স্ত্রী বা পুরুষের বীর্য ( আল -কাওসার- আধুনিক আরবী বাংলা অভিধান- মদীনা পাবলিকেশান্স) এবং তরল পদার্থের অতি সামান্য অংশ
এজা তুমনা =(অর্থ) স্খলিত/নিক্ষিপ্ত/নর্গিত/ফোটায় ফোটায় আসা

(৫৩:৪৬) অর্থ- নুতফা (বীর্যের বা তরল পদার্থের অতি সামান্যতম বা সূক্ষতম অংশ অর্থাৎ শূক্র) হতে- যখন তা স্খলিত/নিক্ষিপ্ত/নর্গিত হয়।

'নুতফা'- এই আরবী শব্দটির মূল অর্থ হলো 'তরল পদার্থের অতি সামান্য অংশ'- এ কারনে এর অর্থ ক্ষেত্র বিশেষে (sperm) 'শূক্র' হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে।

যেহেতু 'নুতফা' শব্দটির মূল অর্থটি 'পানি বা তরলের সামান্যতম বা ক্ষুদ্রতম অংশ' - এ ধরনের ভাব প্রকাশ করে, তাই (sperm) 'শূক্র' আবিষ্কারের আগে 'নুতফা'- কে 'বীর্য' বা 'বীর্যের ফোটা বা বিন্দু' হিসেবে অনুবাদ করা হত।

(sperm) 'শূক্র' আবিষ্কারের পর যেহেতু পরিষ্কারভাবে বোঝা গেল যে, মানব সৃষ্টির জন্য সম্পূর্ণ 'বীর্য' নয়, বরং 'তরল বীর্যের ক্ষুদ্রতম অংশ' অর্থাৎ একটিমাত্র শূক্রই যথেষ্ট। তাই 'নুতফা' শব্দটির অর্থ মূলত (sperm) 'শূক্র' হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে।

মহান স্রষ্টা মানব সৃষ্টি সংক্রান্ত আয়াতে 'নুতফা' শব্দটি কেন ব্যবহার করেছেন তা যারা চিন্তাশীল ও সত্যানুসন্ধানী তারা ঠিকই বুঝে নিয়েছেন। এভাবে বিজ্ঞানের আবিষ্কারের মাধ্যমে 'নুতফা'- এই আরবী শব্দটির মূল অর্থ 'তরল পদার্থের অতি সামান্য অংশ' এর যথার্থতা স্পষ্টরূপে প্রকাশিত হেয়েছে।

এবার আবার (৭৬ : ০২) নং আয়াতের প্রতি লক্ষ করি-

(৭৬ : ০২) অর্থ:- আমি তো মানুষকে (নুত্বফাতিন আমশা- জ্বিন নাবতালীহি) সংমিশ্রিত তরল পদার্থের বাছাইকৃত অতি সামান্য অংশ থেকে সৃষ্টি করে তাকে পরিগঠন করেছি শ্রবণ ও দর্শনকারী রূপে।

আমরা জানি-
পুরুষের বীর্যের মধ্যে মাত্র ১-৫% হচ্ছে শুক্রাণু; এই শুক্রাণুর মাথার নিউক্লিয়াসে ব্যক্তির বংশগতির তথ্য-পরিচিতি ধারণ করে ডিএনএ (DNA)। প্রতিবার স্খলনের সময় যে পরিমাণ বীর্য বের হয়, তাতে ২০০-৫০০ মিলিয়ন শুক্রাণু অবস্থান করে। আর বীর্যের বাকি অংশ অর্থাৎ তরল অংশ বিভিন্ন জৈব-অজৈব রাসায়নিক পদার্থ মিলে তৈরি, যেমন : অ্যামাইনো এসিড, সুগার, লিপিড, এনজাইম, হরমোন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, দস্তা বা জিংক ইত্যাদি।’

সুতরাং (নুত্বফাতিন আমশা- জ্বিন নাবতালীহি)- এই আরবি শব্দগুলো দ্বারা যে বীর্যকেও নির্দেশ করে তা সহজ্ই বোঝা যায়।

তবে ক্ষেত্র বিশেষে 'নুতফা' শব্দটির সাথে অন্যান্য বিশেষণ যুক্ত হওয়ার কারনে জীবন সৃষ্টি সংক্রান্ত আরও গভীর তথ্যও প্রকাশ করার অবকাশ রয়েছে-

আল-কোরআনের আলোকে জ্ঞানচর্চায় উদ্বুদ্ধ হলে মানুষ ধীরে ধীরে অলীক কল্পনা ও মিথ্যার মায়াজাল থেকে বেরিয়ে আসে। সত্যের স্বচ্ছ জ্যোতিতে তার জ্ঞানচক্ষু হয় শাণিত ও উন্মোচিত। সুদূরপ্রসারী চিন্তাশক্তির সহায়তায় প্রচলিত মতবাদগুলোর মধ্য থেকে প্রকৃত সত্যটি সে সহজেই খুঁজে ও বুঝে নিতে পারে। এটি নিছক কোন বিজ্ঞানের বই নয়। তাই এতে বৈজ্ঞানিক তথ্য ও ত্বত্ত্বগুলোর বিস্তারিত বিবরণ না দিয়ে ঐশী ইংগিত দেয়া হয়েছে মাত্র। সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে একজন ইমানদার যখন আল-কোরআন ও বিজ্ঞানের চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে গভীর চিন্তা-গবেষণায় রত হয়, তখন পরম শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসে জগৎসমূহের স্রষ্টা সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান এক আল্লাহর সামনে মাথা নত করতে সে বিন্দুমাত্র কুন্ঠিত হয় না। আল-কোরআন যে স্বয়ং মহান স্রষ্টা প্রেরিত পথপ্রদর্শনকারী মহাগ্রন্থ তা জ্ঞানী ও সরলমনা বিশ্বাসীরা তখন নির্দিধায় মেনে নেয়।।

বিঃদ্রঃ - লেখার সাথে প্রাসঙ্গিক মন্তব্য ও সমালোচনা সাদরে গ্রহণ করা হবে। অপ্রাসঙ্গিক কোন মন্তব্য মুছে ফেলা হবে এবং কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য পেশ করলে প্রয়োজনে ব্লক করতে বাধ্য হব।
এর সাথে নিচের সকল মন্তব্য ও লিংকগুলো পড়ার জন্য অনুরোধ রইল
Click This Link
Click This Link
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৩৪
২৭টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×