somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টি সম্পর্কে বিজ্ঞান ও আল-কোরআনের নিখুঁত মৌলিক তথ্য সমৃদ্ধ আলোচনা

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
এ ধরণীতে ঠিক কতকাল পূর্বে জীবনের উন্মেষ ঘটেছে তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। Heterotroph, chemotroph organisms কিংবা Eubacteria, Archaebacteria, Stromatolites আর RNA-Virus এর মধ্যে কোনটাকে আগে আর কোনটা পরে সৃষ্টি করা হয়েছে- আমার এ আলোচনায় সেটি মূল বক্তব্য নয়। Fossil record অনুসারে কোন fossil কে এ পৃথিবীতে প্রাপ্ত প্রাণের প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হয় তা এখন মোটামুটি সবারই জানা। আমার জানা মতে এ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রাপ্ত fossil record এর তথ্য অনুযায়ী এ পৃথিবীতে কোটি কোটি বছর পূর্বে আবির্ভূত এলজে জাতীয় সামূদ্রিক এককোষী প্রাণীর fossil কে জীবনের প্রচীনতম নিদর্শন (Symbol, proof) হিসেবে গণ্য করা হয়।

বিজ্ঞান-
Cyanobacteria are prokaryotes (single-celled organisms) often referred to as "blue-green algae."
Cyanobacteria are very old, with some fossils dating back almost 4 billion years (Precambrian era), making them among the oldest things in the fossil record.
Cyanobacteria lack cilia, performing locomotion by gliding along surfaces. They are found most frequently in freshwater, but variants exist almost anywhere where there is water, including inside of other organisms such as lichen, plants and protists.
Cyanobacteria at mainly found in the oceans, where they are primary producers and are eaten by many other organisms. The blue-green tinge they give the water is the source of their name, blue-green algae.

পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের আবির্ভাব সম্পর্কে গবেষণা চালছে এবং বিভিন্ন জন বিভিন্ন মতবাদ বা তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছেন-

Pioneer organism
The fundamental idea of the origin of life according to the iron-sulfur world theory can be simplified in the following brief characterization: Pressurize and heat a water flow with dissolved volcanic gases (e.g. carbon monoxide, ammonia and hydrogen sulfide) to 100°C. Pass the flow over catalytic transition metal solids (e.g. iron sulfide and nickel sulfide). Wait and locate the formation of catalytic metallo-peptides. Some crucial aspects of this theory have been confirmed experimentally

বর্তমানে একদল বিজ্ঞানী পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টি সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছেন তা হলো-
ভাসেলডরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর উইলিয়াম মার্টিন এবং গ্লাসগোতে স্কটিশ এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ সেন্টারের প্রফেসর মাইকেল রাসেল এর মতে:- প্রাণ সৃষ্টির আগে কোষের জন্ম হয়। প্রথমে কোষ জীবন্ত ছিল না। এটি মৃত ছিল এবং এর সৃষ্টি হয় আয়রন সালফাইড হতে। বিজ্ঞানীগণ গবেষণা করে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হন যে, জীবনের সৃষ্টি হয়েছিল সমূদ্রের তলদেশে অন্ধকারে জলমগ্ন ক্ষুদ্র পাথুরে পরিবেশে অর্থাৎ আয়রন সালফাইড পাথরের তৈরি অতি ক্ষুদ্র প্রোকষ্ঠ ইনঅরগ্যানিক ইনকিউবেটরে। তাদের বর্ণনা অনুসারে সতন্ত্র ও সংরক্ষিত কোন স্থানে বা আধারে প্রথমে জীব কোষের গঠন সম্পন্ন হয়। প্রথমে কোষ মৃত ছিল। পরবর্তীতে তা প্রাণের মলিকিউলে পূর্ণ হয় অর্থাৎ কোষে প্রাণ সঞ্চার ঘটে। তবে কেমন কোরে প্রান সঞ্চার হলো তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।
Proto-ecological systems
Russell adds a significant factor to these ideas, by pointing out that semi-permeable mackinawite (an iron sulfide mineral) and silicate membranes could naturally develop under these conditions and electrochemically link reactions separated in space, if not in time.
Despite this, it is not clear whether the proposed mechanism of abiogenetic life could actually work, or was how life did start.

আল-কোরআন-

সূরা নূর- আয়াত নং-৪৫
(২৪ : ৪৫) অর্থ:- আল্লাহ্ সকল প্রকার প্রাণীকে সৃষ্টি করেছেন পানি থেকে। তাদের কতক বুকে ভয় দিয়ে চলে, কতক দুই পায়ে ভর দিয়ে চলে এবং কতক চার পায়ে ভর দিয়ে চলে; আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম।
সূরা ত্বহা- আয়াত নং-৫৩
(২০ : ৫৩) অর্থ:- তিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে চলার পথ করেছেন, তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন এবং তা দ্বারা আমি জোড়ায় জোড়ায় বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি।

পানির স্পর্শে জীবনের সূত্রপাত ঘটে। তাছাড়া সমস্ত জীবেরই দৈহিক গঠনে, জীবনের স্পন্দনে এবং জীবন ধারণের জন্য পানি অপরিহার্য এবং এর কোন বিকল্প নেই। জীবনের স্পন্দনে পানির উপস্থিতিই যে একমাত্র পূর্বশত তা আজ একটি চরম বৈজ্ঞানিক সত্য। কিন্ত্তু আশ্চর্যের বিষয়, সেই ১৪৫০ বছর পূর্বেই ঐশী গ্রন্থ আল-কোরআনে পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির বিষয়ে এই মৌলিক বৈজ্ঞানিক তথ্যটি সংক্ষেপে অথচ কত নিখুত ভাবেই না ব্যক্ত করা হয়েছে-

সূরা মুরসালাত-আয়াত নং-(২০ - ২৩)
(৭৭ : ২০) আলাম নাখলুক্বকুম মিম মা- য়িম মাহীন।
(৭৭ : ২০) অর্থ:- আমি কি তোমাদেরকে তুচ্ছ পানি থেকে সৃষ্টি করিনি ?
(৭৭ : ২১) ফাজ্বা‘আলনা-হু ফী ক্বারা-রিম মাকীন।
(৭৭ : ২১) অর্থ:- অতঃপর আমি তা রেখেছি সংরক্ষিত আধারে।
(৭৭ : ২২) ইলা- ক্বাদারিম মা’লূম।
(৭৭:২২) অর্থ:- এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত।
(৭৭ : ২৩) ফাক্বাদরনা- ফানি’মাল ক্বা- দিরূন।
(৭৭ : ২৩) অর্থ:- অতঃপর আমি পরিমিত আকারে সৃষ্টি করেছি, আমি কত নিপুণ স্রষ্টা।
সূরা সিজদাহ্-আয়াত নং-(৭ - ৯)
(৩২ : ০৭) লাজী-আহছানা কুল্লা শাইয়িন খালাক্বাহূ ওয়া বাদাআ খালাক্বাল ইনছা-নি মিন ত্বীন।
(৩২ : ০৭) অর্থ:- তিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন এবং কাদামাটি হতে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন।
(৩২ : ০৮) ছুম্মা জ্বাআলা নাছলাহূ মিন ছুলা-লাতিম মিম মা-য়িম মাহীন।
(৩২ : ০৮) অর্থ:- অতঃপর তিনি তার বংশধারা বা ভিত্তি স্থাপন করেছেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে।
(৩২ : ০৯) ছুম্মা ছাওয়্যা-হু ওয়া নাফাখা ফীহি মির রূহিহী ওয়া জ্বাআলা লাকুমুছ ছামআ ওয়াল ওয়াবছা-রা ওয়াল আফ্য়িদাহ ; ক্বালীলাম মা-তাশকুরূন।
(৩২ : ০৯) অর্থ:- অতঃপর তিনি ওকে সুষম করেছেন এবং তাঁর নিকট হতে ওতে রূহ (প্রাণ) সঞ্চার করেছেন এবং পরিগঠন করেছেন তোমাদের কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরন। তোমরা অতি সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
সূরা দাহর-আয়াত নং-১ ও ২
(৭৬ : ১) হাল আতা-আলাল ইনছা- নি হীনুম মিনাদ দাহরি লাম ইয়াকুন শাইআম মাজকুরা।
(৭৬ : ১) অর্থ:- নিশ্চয় এমন কিছু কাল অতিবাহিত হয়েছে- যখন মানবসত্তা উলেখযোগ্য কিছু ছিল না।
(৭৬ : ০২) ইন্না- খালাক্বনাল ইনছা- না মিন নুত্বফাতিন আমশা- জ্বিন নাবতালীহি ফাজ্বাআলনা- হু ছামীআম বাছীর।
(৭৬ : ০২) অর্থ:- আমি তো মানুষকে সংমিশ্রিত পরিচ্ছন্ন পানির বা তরল পদার্থের বাছাইকৃত বা পরিবর্তিত অতি সামান্য অংশ থেকে সৃষ্টি করে তাকে পরিগঠন করেছি শ্রবণ ও দর্শনকারী রূপে।
সূরা নূহ- আয়াত নং- ১৩, ১৪, ১৭
(৭১:১৩) অর্থ- তোমাদের কি হল যে, তোমরা আল্লাহতায়ালার শ্রেষ্টত্ব আশা করছ না।
(৭১:১৪) অর্থ- অথচ তিনি তোমাদেরকে বিভিন্ন পর্যায়ে সৃষ্টি করেছেন।
(৭১:১৭) অর্থ- আল্লাহতায়ালা তোমাদেরকে মাটি থেকে উদগত করেছেন।

আলোচনা-
সুতরাং আল-কোরআন ও বিজ্ঞানের তথ্যগুলো পর্যালোচনা করলে ঝুঝে নেয়া যায় যে, মহাবিজ্ঞানময় সৃষ্টিকর্মের ধারাবাহিকতায় এই ভূপৃষ্ঠে এমন কিছু সময় অতিবাহিত হয়েছে যখন জীবনের কোন স্পন্দন ছিল না। (৭৬:১) ফলে মানবসত্তা তথা সকল জীবিত সত্তাগুলো তখন প্রাণহীন অর্থাৎ অনুল্লেখযোগ্য অবস্থায় কাদামাটি (৩২:৭) অর্থাৎ তুচ্ছ (৭৭:২০) পানি ও মাটির বিভিন্ন উপাদানসমূহের মিশ্রিত অতি সামান্য অংশের মাঝে প্রক্রিয়াধীন ও ধাপে ধাপে পরিবর্তনশীল অবস্থায় কালাতিপাত করছিল।

বর্তমানে বিজ্ঞানের বদৌলতে আমরা জানতে পেরেছি যে, (৭১:১৭) মানব দেহের গঠন ও বৃদ্ধির জন্য যে সমস্ত খনিজ উপাদান প্রয়োজন তার প্রায় সবই এই পৃথিবীর মাটিতেই পাওয়া যায়। প্রকৃত প্রাণ সৃষ্টি করার জন্য যে শুধু গবেষণাগারই যথেষ্ট নয়, তা যারা বোঝার ঠিকই বুঝে নিয়েছেন। তবে কাদামাটির (Clay) উপাদান থেকে যে জীবনের সূচনা হতে পারে- তা নেয়ে অনেক আগে থেকেই গবেষণা চলছে-

অতি সম্প্রতি একটি গবেষণায় এ সম্পর্কে যথেষ্ট প্রমাণ মিলেছে-

(Clay-armored bubbles show minerals played key role in origin of life- Monday, February 7th, 2011)
The discovery of inorganic, semipermeable clay vesicles has shed light on how minerals could have played a key role in the origins of life.
”Clay-armored bubbles” form naturally when platelike particles of montmorillonite collect on the outer surface of air bubbles under water.
Scientists have studied montmorillonite, an abundant clay, for hundreds of years, and the mineral is known to serve as a chemical catalyst, encouraging lipids to form membranes and single nucleotides to join into strands of RNA.
Because liposomes and RNA would have been essential precursors to primordial life, researchers have suggested that the pores in the clay vesicles could do double duty as both selective entry points and catalytic sites.
The findings have been published in the journal Soft Matter. (ANI)

প্রাণ সৃষ্টির জন্য কাচামাল হিসেবে যে পানি এবং পানি বাহিত উপাদানলোকে ব্যবহার করা হয়েছে (২১ : ৩০) নং আয়াতে (প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি হতে) সেই ইংগিত দেয়া হয়েছে। আবার (২০ : ৫৩) নং আয়াতে (তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন এবং তা দ্বারা আমি জোড়ায় জোড়ায় বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি) উদ্ভিদ জগৎ সৃষ্টির ক্ষেত্রে আকাশ থেকে বর্ষিত পানি ও (২৪ : ৪৫) নং আয়াতে (আল্লাহ্ সকল প্রকার প্রাণীকে সৃষ্টি করেছেন পানি থেকে) আয়াতে প্রাণী জগৎ সৃষ্টির ক্ষেত্রেও পানির কথা বলা হলো। পানি অর্থাৎ আকাশ থেকে বর্ষিত পানি এবং এ পৃথিবীর মাটির সংমিশ্রিত সারনির্জাস অর্থাৎ (৭৬:২) পানি, অজৈব ও জৈব খনিজ উপাদানসমূহের মিশ্রনের অতি সামান্য অংশকে ব্যবহার করা হয়েছে তা অনুমান করা যায়। একদা অণুজীব সৃষ্টির মত উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে উঠলে আল্লাহর বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ও পরিবেশে, (৭৭:২১) সংরক্ষিত কোন স্থানে বা আধারে (তা বিজ্ঞানে বর্ণিত সমূদ্রের তলদেশের ইনঅরগ্যানিক ইনকিউবেটরে বা এ ভূপৃষ্টের কোন বিশেষ পরিবেশে বা অন্য কোন গ্রহে বা মহাকাশের যে কোন স্থানেই হোক না কেন) জীবন সৃষ্টির এই উপকরণগুলোকে একটি (৭৭:২২) নির্দিষ্টকাল ব্যাপী প্রক্রিয়াজাত করা হয়। ফলে অতি সূহ্ম (৭৭:২৩) 'আর.এন.এ', 'ডিএনএ' ও 'প্রোটিন' অণুগুলোর গঠন সম্পন্ন হয়। আধুনিক বিজ্ঞানের ধারণা অনুযায়ী সূহ্ম 'ডিএনএ'-এর যে অংশ একটি পলিপেপটাইড উৎপাদনের সংকেত বহন করে সেই অংশকেই গঠনগত 'জীন' বলে। বংশধারার নিয়ন্ত্রণকারী একক হলো এই 'জীন'। ১৯০৩ খৃষ্টাব্দে Johannsen বংশধারার নিয়ন্ত্রক বস্তুকে জীন নাম দেন। সুতরাং (৩২:৮) 'ডিএনএ' অণু গঠনের ফলে এবং এতে আল্লাহ্ প্রদত্ত জীন বাহিত বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণেই অণুকোষ তথা জীবের বংশধারা বা ভিত্তি রচিত হয় এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সরল এককোষী অণুজীবগুলোর কাঠামো বা আকৃতি গঠিত হতে থাকে। (৩২:৯) কাঠামো গঠিত হওয়ার সাথে সাথে মহান আল্লাহতায়ালার ইচ্ছায় অণুকোষগুলো প্রাণের মলিকিউলে পূর্ণ হয় অর্থাৎ অণুজীবগুলোর মধ্যে প্রাণের সঞ্চার ঘটে। ফলে অণুজীবগুলো পর্যায়ক্রমে জীবন লাভ করে। অতঃপর আল্লাহর বেঁধে দেয়া প্রকৃতিগত বিশেষ নিয়মে এক একটি জীবন্ত ও স্বতন্ত্র অণুজীব থেকে যুগে যুগে অসংখ্য অণুজীব জন্ম নিতে থাকে।

মহাকালের প্রবাহের কোন এক পর্যায়ে বহুকোষী জীবজগৎ সৃষ্টির মত উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে উঠলে নিয়ন্ত্রিত নির্দিষ্ট সময় ও প্রাকৃতিক পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রোমসোমের অধিকারী ও আল্লাহ প্রদত্ত জীন বাহিত সতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এক একটি সতন্ত্র প্রজাতির মাতৃ-জীবকোষ অর্থাৎ ডিম্ব-কোষের গঠন পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করে আল্লাহতায়ালার ইচ্ছায় সেগুলোর মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করা হয়। তেমনি মানব সৃষ্টির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে উঠলে (৩২:৯) ৪৬টি অর্থাৎ ২৩ জোড়া ক্রোমসোমের অধিকারী মাতৃ-মানবকোষ সৃষ্টি করা হয়। এই মাতৃ-মানবকোষে আল্লাহ প্রদত্ত জীন বহিত মানব বৈশিষ্ট্যগুলোর উন্মেষ ঘটিয়ে (৩২:৯) সুষমভাবে গঠন করা হয় এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালার ইচ্ছা ও অলৌকিক শক্তির পরশে এতে প্রাণের (রূহ্) সঞ্চার ঘটে।

আল-কোরআনে মহান স্রষ্টা আল্লাহতায়ালা বলেন-
সূরা বনি ইস্রাঈল (১৭:৮৫) তোমাকে ওরা রূহ্ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, রূহ্ (জীবন/গায়েবী শক্তি) আমার প্রতিপালকের আদেশঘটিত। এ বিষয়ে তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দেয়া হয়েছে।

এভাবে (৭১:১৪) পর্যায়ক্রমে প্রতিটি স্বতন্ত্র প্রজাতির বৈশিষ্ট্যধারী জীবকোষ থেকে প্রতিটি স্বতন্ত্র প্রজাতির মূল পুরুষ ও স্ত্রী বৈশিষ্ট্যধারী জীবদের প্রত্যেককে তথা মাতৃ-মানবকোষ থেকে প্রথম মানব ও মানবিকে আল্লাহর বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ও পরিবেশে পরিমিতভাবে ও পূর্ণাঙ্গরূপে কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরনের অধিকারী করে সৃষ্টি করা হয়। এরপর থেকে প্রতিটি প্রজাতির জীব তথা মানুষের ক্ষেত্রেও বংশ রক্ষার জন্য প্রাকৃতিক স্বাভাবিক নিয়মগুলো বেঁধে দেয়া হয়েছে। (৩২:৮) এই নিয়মগুলোর (যৌন ও অযৌন জনন) অধীনে অবাধ বংশবিস্তারের ফলে ও সীমানির্দেশিত বিবর্তনের কারণে প্রতিটি প্রজাতির মধ্য থেকে সেই প্রজাতির অন্তর্গত নানা শ্রেণীর ও প্রকারের বিবর্তিত ও বংশবিস্তারক্ষম জীবেরা আজও জন্ম নিচ্ছে। মহান স্রষ্টা এই জীবদের মধ্য থেকে যাদেরকে বিলুপ্ত করতে চেয়েছেন তাদের বিলুপ্তি ঘটেছে এবং যাদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছেন তারা আজও বেঁচে আছে।

আমাদের মনে রাখতে হবে-
(৩২:৮, ৯), (৭৬:১, ২), (৭৭:২০- ২৩) নং আয়াতে প্রদত্ত তথ্যগুলো জীবন সৃষ্টির প্রাথমিক অবস্থার সাথে যেমন সামঞ্জস্যপূর্ণ, তেমনি প্রাণী তথা মানবদেহের প্রজনন তন্ত্রে জীবন সৃষ্টির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
বিস্তারিত জানতে হলে নিচের পোষ্টটি দেখে নিতে পারেন-
পানি থেকে প্রাণ, স্রষ্টার দান - এ বিষয়ে বিজ্ঞান ও আল-কোরআন

সীমানির্দেশিত বিবর্তন বলতে যা বোঝাতে চেয়েছি তা হলো- এক একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির জীবদের মধ্যে, এমনকি মানুষের মধ্যেও নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রোমসোম বাহিত জেনেটিক নিয়ন্ত্রনের আওতায় স্রষ্টা প্রদত্ত নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যসমূহের আদান প্রদান জণিত বিবর্তন অবশ্যই ঘটছে এবং তা ঘটছে একটি নির্দিষ্ট সীমার অভ্যন্তরেই।

মানবজাতির মধ্যে বৈচিত্র্যের কারণ হিসেবে সহজভাবে বলা যায়-
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রাথমিক পর্যায়ে এককোষী অণুজীব সৃষ্টির মধ্য দিয়েই সম্ভবত জীবনের আবির্ভাব ঘটে। কিন্তু তাই বলে শুধুমাত্র প্রাকৃতিক ও পারিপার্শ্বিক কারণে ও অধীনে গতানুগতিক জন্মপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই অণুকোষ থেকেই বংশানুক্রমে বিবর্তিত হতে হতে বানরেরা জন্ম নিয়েছে এবং এই বানরদের মধ্য থেকেই বিবেকবান মানব জাতির জন্ম হয়েছে এই ধারনাটি মোটেই সঠিক নয়। কারন আমরা জানি- প্রত্যেকটি নির্দিষ্ট প্রজাতির জীবকোষে সেই প্রজাতিটির জন্য নির্ধারিত নির্দিষ্ট সংখ্যক জীন বহিত বৈশিষ্ট্যগুলো বিদ্যমান থাকে। গতানুগতিক স্বাভাবিক জন্ম প্রক্রিয়ার অধীনে নির্ধারিত স্বাভাবিক জীন বাহিত বৈশিষ্ট্যগুলোর আদান প্রদান ঘটে। ফলে একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির প্রাণীদের মাঝে জেনেটিক নিয়ন্ত্রনের আওতায় একটি নির্দিষ্ট সীমানার অভ্যন্তরেই বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও পরিবেশগত বৈষম্যের কারণে আকৃতি ও প্রকৃতিগত কতিপয় বায়োলজিকাল পরিবর্তন অর্থাৎ সীমানির্দেশিত বিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। আর এ কারনেই আমার ও আপনার রং কালা আর প্রিন্সেস ডায়না সাদা। কিন্তু তাই বলে একটি নির্দিষ্ট জীব প্রজাতি থেকে কখনই স্রষ্টা প্রদত্ত নির্দিষ্ট জীন বাহিত বৈশিষ্ট্যের সীমানা অতিক্রম করে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ভিন্ন জীব প্রজাতির জন্ম হয় না। সুতরাং মানুষের পূর্বপুরুষ মানুষই। এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহতায়ালার শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি একই আদি পিতা-মাতার সন্তান-সন্ততি হিসেবে এই পৃথিবীর সব মানবমন্ডলী পরস্পর একই সূত্রে গাঁথা ও পরম আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ।

আল-কোরআন-সূরা হুজুরাত-আয়াত নং ১৩
(৪৯:১৩) অর্থ- হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।

প্রকৃতিতে এত বৈচিত্র্যের কারন হিসেবে বলা যায়-
স্রষ্টা বিভিন্ন জীব তথা মানুষের বংশবিস্তারের জন্য গতানুগতিক কতিপয় নিয়ম (যৌন ও অযৌন জনন) বেঁধে দিয়েছেন। সেই সাথে সীমানির্দেশিত বিবর্তনের আওতায় ক্রমান্বয়ে বৈচিত্রময় জীব-জগৎ তথা বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত এবং বিভিন্ন ভাষা ও বর্ণের অধিকারী বংশবিস্তারক্ষম আধুনিক মানব সন্তান-সন্ততি রূপে আমারা এখনও পৃথিবীতে বিরাজ করছি। এখানে স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, এই জাতি, গোত্র ও বর্ণের পার্থক্য মর্যাদার মাপকাঠি নয়। বরং এটি তাদের বাহ্যিক পরিচিতি মাত্র। কোন জাতি বা গোত্রের মানুষেরা কাল, সাদা, ধনী, গরীব হতে পারে। কিন্তু জাতি বা গোত্রগত বিহ্যিক পরিচয় ভিত্তিক প্রাধান্যের কারনে কেউ যেন অহংকার না করে। কারন আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত অর্থাৎ বেশি মর্যাদাবান যে যত বেশি পরহেযগার।

আল-কোরআনের আলোকে জ্ঞানচর্চায় উদ্বুদ্ধ হলে মানুষ ধীরে ধীরে অলীক কল্পনা ও মিথ্যার মায়াজাল থেকে বেরিয়ে আসে। সত্যের স্বচ্ছ জ্যোতিতে তার জ্ঞানচক্ষু হয় শাণিত ও উন্মোচিত। সুদূরপ্রসারী চিন্তাশক্তির সহায়তায় প্রচলিত মতবাদগুলোর মধ্য থেকে প্রকৃত সত্যটি সে সহজেই খুঁজে ও বুঝে নিতে পারে। এটি নিছক কোন বিজ্ঞানের বই নয়। তাই এতে বৈজ্ঞানিক তথ্য ও ত্বত্ত্বগুলোর বিস্তারিত বিবরণ না দিয়ে ঐশী ইংগিত দেয়া হয়েছে মাত্র। সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে একজন ইমানদার যখন গভীর চিন্তা-গবেষণায় রত হয়, তখন পরম শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসে জগৎসমূহের স্রষ্টা সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান এক আল্লাহর সামনে মাথা নত করতে সে বিন্দুমাত্র কুন্ঠিত হয় না। সেইসাথে আল-কোরআন যে স্বয়ং মহান স্রষ্টা প্রেরিত পথপ্রদর্শনকারী মহাগ্রন্থ, জ্ঞানী ও সরলমনা বিশ্বাসীরা তা নির্দিধায় মেনে নেয়।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৩:৫৪
৩৬টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×