
ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই প্রকাশ্য উৎযাপন চলছে।
যতক্ষণ পর্যন্ত না সরকারপ্রধান হিসেবে ড. ইউনূসকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত এই ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকবে। ড. ইউনূস যদি বাংলাদেশের জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে পরাশক্তির ক্রীড়নক না হয়ে থাকেন, তাহলে তাঁর উচিত হবে দায় স্বীকার করে দোষীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার জন্য সরকার কী করছে, তা দেশের মানুষকে স্পষ্টভাবে জানানো।
ড. ইউনূস সরকার শুধু নিজেই ব্যর্থ হয়নি, পুরো জাতিকেই তিনি পরাজয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছেন। এনজিওবৃত্তির আড়ালে তিনিএতদিন গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের মুখোশই কেবল দেখিয়ে গেছেন। আদতে তারা নিজের প্রয়োজনে জঙ্গিদের ছায়াশক্তি হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তাদের সঙ্গে এতদিন আতাত করে চললেও, গত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র এখন কার্যত জঙ্গিদেরই নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।
জঙ্গিদের লক্ষ্যও পরিষ্কার। বিগত সরকারের চেয়েও বড় ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠা তাদের লক্ষ্য। সর্বাত্মকভাবে জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বগ্রাসী ক্ষমতা অপরিহার্য। সেই লক্ষ্য পূরণ করতে তারা দেশের উদারনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে টার্গেট করেছে। যে প্রতিষ্ঠানগুলো গণতন্ত্র, যুক্তিবুদ্ধি, মুক্তিযুদ্ধ এবং বাঙালি সংস্কৃতির পক্ষে কাজ করে তারাই আক্রমণের লক্ষ্য। এর অংশ হিসেবে ছায়ানট ও উদীচীর মতো প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া হয়েছে। জঙ্গিদের সংবিধানে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার স্থান নেই। তাদের দৃষ্টিতে সংগীত, শিল্পকলা, সংস্কৃতি ও মুক্তচিন্তা সবই নিষিদ্ধ, অতএব এরাই তাদের প্রধান শত্রু।
এই প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় যে ভূমিকার কথা আলোচনায় আসার কথা, সেই মাহমুদুর রহমানের নাম আশ্চর্যজনকভাবে উচ্চারিত হচ্ছে না। শাহবাগ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে আমার দেশ পত্রিকার মাধ্যমে ইসলামপন্থি রাজনীতির জন্য যে আদর্শিক জমিন তিনি তৈরি করেছিলেন, সেটাই আজকের এই উগ্রবাদী বাস্তবতার ভিত্তি। ইমান বনাম নাস্তিকতার ফ্রেম এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ন্যারেটিভ ব্যবহার করে রাজনীতিকে ধর্মীয় আবেগে রূপান্তরিত করার মাধ্যমে তিনি সহিংস ইসলামপন্থি শক্তিগুলোকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গ্রহণযোগ্যতা এনে দেন।
তার পত্রিকার দীর্ঘদিনের প্রতিক্রিয়াশীল বয়ানই আজকের এই মবতন্ত্র, ব্লাসফেমির অভিযোগে সহিংসতা, পত্রিকা অফিস ও সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের আদর্শিক ছক তৈরি করেছে। আজ যখন কটূক্তির অভিযোগে মানুষ পুড়িয়ে মারা হয়, কিংবা সংস্কৃতি ও মুক্তচিন্তার প্রতিষ্ঠানগুলোতে আগুন দেওয়া হয়, তখন এসব ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে লালিত উগ্রপন্থি ধ্যানধারণারই চূড়ান্ত প্রকাশ।
যেহেতু এই পথে তাদের প্রধান বাধা প্রথম আলো বা ডেইলি স্টারের মতো মুক্তবুদ্ধির পত্রিকা, তাই এসব প্রতিষ্ঠানকে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর শরিয়াভিত্তিক আমার দেশ ও নয়া দিগন্ত-এর মতো পত্রিকাগুলো ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার চুড়ান্ত ন্যারেটিভ তৈরি করছে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


