
ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা সমাজে ভয় ও অস্থিরতা বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই যাচাইহীন অভিযোগ, গুজব বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো তথ্যের ভিত্তিতে উত্তেজিত জনতা সহিংস হয়ে উঠছে। এতে নিরপরাধ ব্যক্তি হামলার শিকার হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সম্পদ, এবং বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ধর্মীয় অনুভূতিকে কেন্দ্র করে এই ধরনের মব সন্ত্রাস শুধু আইনশৃঙ্খলার জন্যই হুমকি নয়, বরং ধর্মের মূল শিক্ষার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। ইসলামী চিন্তাবিদরা বলছেন, তৌহিদের মূল শিক্ষা হলো ন্যায়, সংযম ও আল্লাহর কাছে দায়বদ্ধতা কিন্তু দলবদ্ধ সহিংসতা সেই শিক্ষার প্রতিফলন নয়।
আইন ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, মব সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হলে তা দীর্ঘমেয়াদে সমাজকে আরও সহিংস করে তুলবে। অপরাধের অভিযোগ থাকলে তা তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, কোনো গোষ্ঠী বা জনতার নয় এ বিষয়ে আইনের শাসন নিশ্চিত করা জরুরি বলে তারা মনে করছেন।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো এবং উসকানিমূলক বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তথ্য যাচাই ছাড়া কোনো কিছু বিশ্বাস বা প্রচার না করাই হতে পারে এই সমস্যার প্রথম প্রতিরোধ।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় একদিকে যেমন কঠোর আইনি পদক্ষেপ প্রয়োজন, তেমনি ধর্মীয় ও সামাজিক নেতৃত্বের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা আসা দরকার ধর্মের নামে সহিংসতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব
আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব, আর সচেতন থাকা নাগরিকের। অপরাধের অভিযোগ থাকলে আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার হবে এই নীতিতে অটল থাকতে হবে। একই সঙ্গে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক ও অভিভাবকদের দায়িত্ব হলো স্পষ্টভাবে বলা: ধর্ম কখনোই মব সন্ত্রাস সমর্থন করে না।
করণীয় কী?
ক) গুজব যাচাই করুনঃ শেয়ার করার আগে নিশ্চিত হন।
খ) আইনের প্রতি আস্থা রাখুনঃ নিজের হাতে বিচার নয়।
গ) ধর্মের সঠিক শিক্ষা প্রচার করুনঃ দয়া, ন্যায় ও সংযম।
ঘ) সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হনঃ নীরবতা অপরাধকে শক্তিশালী করে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, সচেতন নাগরিক ভূমিকা এবং ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যার সমন্বয়েই কেবল তৌহিদি জনতার নামে সংঘটিত মব সন্ত্রাসের মতো ঘটনাগুলো রোধ করা সম্ভব।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:০৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




