somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হায় হায়, কই যাই!? স্কুল, মাদ্রাসাতেও নিস্তার নাই!? সমকামীদের কঠিন সাজা চাই-

১৬ ই জুলাই, ২০১১ সকাল ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম আলোর মতি ঠিক আছে তো? মতিভ্রম হলে যতদ্রুত সম্ভব মনোজগতে নাম লেখানোই মঙ্গল। যদিও কোন পত্রিকাই আঁধার মুক্ত নয়, তারপরও এখনো অব্দি আমি আলোকেই পড়ি। আলোর সাইনবোর্ড সেঁটে আঁধারের সাথে আপোষ করার মাত্রাটা আজকাল বড্ড চোখে লাগছে। প্রথম আলোর প্রতি আমার প্রীতি ও ভীতির অনেক কারণের মধ্য থেকে একটি আজ প্রকাশ করতে বাধ্য হলাম।

গত ১৪ জুলাই ২০১১, প্রতিদিনের অভ্যাস মত সকালে নাস্তা খেতে খেতে প্রথম আলোর পাতায় চোখ বুলচ্ছিলাম। প্রত্রিকার ৪ ও ৭ পৃষ্ঠার দুটো খবরের দিকে দৃষ্টি পড়তেই সমাজের অবক্ষয় ও নিরাপত্তাহীনতার চিত্রটা কোন পর্যায়ে নেমে গেছে তা অনুভব করতে চেষ্টা করালাম। এখন প্রায়ই যে এমন ঘটনা ঘটছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যে সমাজে পুলিশ কর্মকর্তা কলেজ ছাত্রিকে জোর করে রাস্তা থেকে তুলে হোটেলে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে এবং মাদ্রাসা শিক্ষক হাফেজি শাখার ছাত্রকে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করে, সেই সমাজের পরিণতির কথা ভাববার বিষয় বৈকি। কিন্তু কোন রহস্যজনক কারনে ঘটনার লিংক ইন্টারনেটের খাতা থেকে পাতা সমেত উধাও করে দেয়া হয়েছে তা আমার বোধগম্য নয়। মাঝে মাঝে প্রথম আলোর এরূপ রহস্যময় আচরণ আমাকে সত্যিই খুব অবাক ও ব্যথিত করে। এ ধরনের কোন ঘটনা আগে ঘটেনি বা ঘটছে না, তা বললে ভুল হবে। তবে এসব সেন্সেটিভ বিষয ছাপিয়ে তা নিয়ে লুকোচুরি খেলা রহস্যজনকই বটে। কোন ভুয়ো সংবাদ ছাপানোর পর তা লিংক থেকে মুছে দিলেই কি পার পাওয়া যায়? বরং ক্ষমা চেয়ে পাল্টা সংবাদ ছাপানোই তো উচিত ছিল এবং সেটাই বুদ্ধিমানের কাজ হতো। আশাকরি অতি সত্বর এ বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ নেয়া হবে। আপাতত প্রথম আলোর প্রতি যতটুকু আস্থা আছে তার উপর ভর করে সংবাদটি সত্য বলেই ধরে নিলাম। আপনাদের নিজের বা অন্য কারো ঘরে পত্রিকাটি থাকলে অনুগ্রহ করে স্বচক্ষে মিলিয়ে নিতে পারেন। আমার এই পোষ্টটি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের এরূপ সকল অমানবিক ঘটনার প্রতিবাদ স্বরূপ এবং সকল ভুক্তভোগিদের স্মরণে নিবেদন করলাম।

মিডিয়ার বদৌলতে ব্ল্যাকমেইল করে ভিখারুন্নেসা স্কুলের ছাত্রীর শিক্ষকরূপী ধর্ষক পরিমল ইতিমধ্যে বেশ কুখ্যাতি অর্জন করলেও, এই পুলিশ কর্মকর্তা কিংবা মাদ্রাসার শিক্ষকটির কপালে তা জুটবে কিনা জানিনা। অপরাধ ঢাকবার জন্য যে কোন ধরনের পক্ষপাতিত্ব ও সহায়তা করাও বড় মাপেরই অপরাধ। এই মনুষ্যত্বহীন মানব রোবটগুলোর কর্মক্ষেত্র মানব সমাজ ও কোমলমতি মানব শিশুদের ঘিরে হলেও তাদের মানসিকতা ও বিবেকহীন আচরণ পশুকেও হার মানায়। তারা যে একই জঙ্গলের হায়না, তাদের আচরণই তার প্রমাণ বহন করছে। একদিকে নিরাপদ জনপদ গড়ার কর্ণধার এবং আরেকদিকে সুনাগরিক ও ধার্মিক গড়ার কারিগর, তাদেরই যদি এমন দশা হয়- তাহলে আমরা যাব কোথায়? এ প্রশ্নটি শুধু আমার নয়, সবারই।

সভ্য সমাজে, বিশেষ করে ইসলামি সমাজ ব্যবস্থায় পুরুষ ও নারীর মাঝে কেবলমাত্র বিবাহের মাধ্যমেই যৌন সম্পর্ক করার বৈধ বিধান রয়েছে। বিবাহ বিহীন যে কোন প্রকার যৌন মিলনই অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। স্বেচ্ছায় বিবাহ বিহীন অর্থাৎ অবৈধ যৌন সম্পর্ক করাকে ব্যভিচার বলা হয়। তাই ধর্মীয় দৃষ্টিতে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ বটে। আল-কোরআন অনুসারে ব্যভিচারের শাস্তি কি এবং এর সাথে জড়িতদের কেন শাস্তি দেবার কথা বলা হয়েছে তা এখন আর কারো অজানা নেই।

মানুষের মধ্যে আরেক ধরনের যৌন সম্পর্ক গড়ে উঠতে দেখা যায় যাকে সমকামীতা বলা হয়। এটি একটি বিকৃত রুচির অপরাধ। বিকৃত মানসিকতা সম্পন্ন একই লিঙ্গের মানুষেরা যখন যৌন কামনা চরিতার্থ করার জন্য বিকৃত উপায় অবলম্বন করে, তখন তাকে 'সমকামিতা' বলে। এই অপকর্মটি কোন ধর্মেই গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু ‘ ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ মহল, এমন কি ইসলামের আলেম সমাজও এটির শাস্তির ব্যাপারে আশ্চর্য জনক ভাবে দ্বিধা-বিভক্ত। কোন কোন দেশে কঠিন শাস্তি দেয়া হলেও অনেক দেশেই এর শাস্তি সম্পর্কে ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত কিংবা অজ্ঞতা বশত শিথিলতা রয়েছে। এ কারনেই সব যুগেই কম-বেশি সমকামীতার ঘটনা ঘটেই চলেছে। এরা নাকি আজকাল দলও পাকাচ্ছে। শুধূ তাই নয়, বর্তমানে সমকামী গোষ্টি পৃথিবীতে সমকামীতাকে বৈধতা দেবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। পুরুষে পুরুষে ও নারীতে নারীতে বিবাহ বন্ধনের নামে বিকৃত সমাজ গঠন এখন ঐ শয়তানদের একমাত্র মিশন। আর ভাববার সময় নেই। এদের বিষদাঁত এখনই ভেঙ্গে দিতে হবে। তা না হলে কিন্তু ভবিষ্যত প্রজন্ম গহীন অন্ধকারে তলিয়ে যেতে বাধ্য। সমকামীতার সামাজিক, আত্মিক এবং স্বাস্থ্যগত বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে নুতন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্তমানে মরণব্যাধী এইডস্ এর বিস্তৃতির অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম যে 'সমকামীতা' তা এখন আর কারও অজানা নয়।

অনেকের মনেই হয়ত এ প্রশ্ন দানা বেধেছে-
আল-কোরআনে সমকামীদের শাস্তি সম্পর্কে কোন নির্দেশনা আছে কি?
কে কোন দৃষ্টিতে দেখবেন বা কে কি বলবেন সেটা তার ব্যপার। একজন মুসলিম হিসেবে আমি নিশ্চয় আমার ধর্মীয় বিশ্বাস ও বিধান, বর্তমান প্রেক্ষাপট ও নিজস্ব চেতনার আলোকে মতামত ব্যক্ত করার অধিকার রাখি। যেহেতু ইসলামের মূল বিধান মানেই পবিত্র কোরআন। তাই এই ঐশী গ্রন্থ থেকেই জঘন্য পাপ সমকামীতার শাস্তি ও পরিণাম সম্পর্কে তুলে ধরছি-

৪ নং সূরা আন নিসা (মদীনায় অবতীর্ণ ক্রম-৯২)
১৫: অর্থ- আর তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যারা অশ্লীল পাপাচারে লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চার জনকে সাক্ষী হিসেবে তলব কর। অতঃপর যদি তারা সাক্ষ্য প্রদান করে তবে সংশ্লিষ্টদেরকে গৃহে আবদ্ধ রাখ, যে পর্যন্ত মৃত্যু তাদেরকে তুলে না নেয় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য পথ করে দেন।
১৬: অর্থ- তোমাদের মধ্য থেকে যে দুইজন সেই অশ্লীল পাপাচারে লিপ্ত হয়, তাদের উভয়কে শাস্তি প্রদান কর। অতঃপর যদি উভয়ে তওবা করে এবং নিজেদের সংশোধন করে, তবে তাদের থেকে হাত গুটিয়ে নাও। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, দয়ালু।
১৭: অর্থ- অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন যারা ভূল বশত মন্দ কাজ করে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন সর্ববিষয়ে জ্ঞানী ও কুশলী।

(০৪:১৫) ও (০৪:১৬) নং আয়াতে (الْفَاحِشَةَ) "আল ফা-হিশাতান" এই শব্দটি দ্বারা সকল ধরণের 'অশ্লীল পাপাচারকে' বোঝানো হয়েছে। সূক্ষ্মভাবে খেয়াল করলে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, অশ্লীল পাপাচার বলতে শুধু নারী ও পুরুষের মাঝে অবৈধ সম্পর্কই নয়, বরং যারা সমকামী অর্থাৎ যারা নারীর সাথে নারীর এবং পুরুষের সাথে পুরুষের যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলে কিংবা যারা হিজরাদের সাথে এমনকি পশুর সাথেও (Bestiality) অশ্লীল যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলে তারা সবাই অশ্লীল পাপাচারী হিসেবে গণ্য হবে এবং তাদেরকে শাস্তি প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিবাহিত নারী ও পুরুষের মাঝে যৌন সম্পর্ক স্থাপন মানব স্বভাবসুলভ ও বৈধ। কিন্তু শুধুমাত্র বিবাহিত বৈধ সম্পর্ক না থাকার কারণে এই মানব স্বভাবসুলভ সম্পর্ক অবৈধ হিসেবে গণ্য হয়। এছাড়া অন্য সকল ধরণের অশ্লীল পাপাচার ও যৌন সম্পর্ক একই সাথে অবৈধ এবং মানব স্বভাববিরুদ্ধ। ব্যভিচারিণী এবং ব্যভিচারী; (২৪:০২) তাদের প্রত্যেককে স্পষ্টভাবে একশত বেত্রাঘাত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু অশ্লীল পাপাচারে লিপ্ত অন্যান্য অপরাধীদের জন্য শাস্তির নির্দেশ দেয়া হলেও তাদের কার শাস্তির মাত্রা ও ধরন কিরূপ হবে তা উহ্য রাখা হয়েছে। সুতরাং মানব স্বভাববিরুদ্ধ সকল অশ্লীল পাপাচারীকে বেত্রাঘাতের সাজা তো দেয়া যাবেই, অপরাধের মাত্রা হিসেবে প্রয়োজনে শাস্তির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করার ব্যাপারে কোন দ্বিমত থাকতে পারেনা। তাছাড়া যারা জোরপূর্বক অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক বালক কিংবা নারীকে যৌন হয়রানি করে, পিশাচ রূপী সেই ধর্ষকদেরকে আরও কঠিন সাজা দেয়ার এখতিয়ারও বিজ্ঞ বিচারকের জন্য খোলা রাখা হয়েছে।

সূরা আল আ’রাফ ( মক্কায় অবতীর্ণ )
(০৭:৮০) এবং আমি লূতকে প্রেরণ করেছি। যখন সে তার সম্প্রদায়কে বলল, 'তোমরা এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বের কেউ করেনি ?'
(০৭:৮১) তোমরা তো কাম তৃপ্তির জন্য নারীদেরকে ছেড়ে পুরুষদের কাছে গমন কর, তোমরা তো সীমালঙ্ঘন করেছ
(০৭:৮২) তাঁর সম্প্রদায় উত্তরে শুধু বলল, 'বের করে দাও এদেরকে শহর থেকে, এরা এমন যারা পবিত্র থাকতে চায়।'
(০৭:৮৩) অতঃপর আমি তাকে ও তাঁর পরিবার পরিজনকে বাঁচিয়ে দিলাম, কিন্তু তার স্ত্রী। সে তাদের মধ্যেই রয়ে গেল, যারা রয়ে গিয়েছিল।
(০৭:৮৪) আমি তাদের উপর প্রচন্ড (প্রস্তর) বৃষ্টি বর্ষণ করলাম। সুতরাং অপরাধীদের পরিণতি কেমন হয়েছিল তা লক্ষ্য কর।

সূরা আশ-শো’আরা ( মক্কায় অবতীর্ণ )
(২৬:১৬০) লূতের সম্প্রদায় রাসূলগণকে মিথ্যাবাদী বলেছে।
(২৬:১৬১) যখন তাদের ভাই লূত তাদেরকে বললেন, তোমরা কি ভয় কর না ?
(২৬:১৬২) আমি তোমাদের বিশ্বস্ত রাসূল।
(২৬:১৬৩) অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।
(২৬:১৬৪) আমি এর জন্যে তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না। আমার প্রতিদান তো বিশ্ব-পালনকর্তা দেবেন।
(২৬:১৬৫) সারা জাহানের মানুষের মধ্যে তোমরাই পুরূষদের সাথে কুকর্ম কর;
(২৬:১৬৬) এবং তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্যে যে স্ত্রীগনকে সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে তোমরা বর্জন করে থাক; তোমরা এক মারাত্মক সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়
(২৬:১৬৭) তারা বলল, হে লূত, তুমি যদি বিরত না হও, তবে অবশ্যই তোমাকে বহিস্কৃত করা হবে।
(২৬:১৬৮) লূত বললেন, আমি তোমাদের এই কাজকে ঘৃণা করি।
(২৬:১৬৯) হে আমার পালনকর্তা, আমাকে এবং আমার পরিবারবর্গকে তারা যা করে, তা থেকে রক্ষা কর।
(২৬:১৭০) অতঃপর আমি তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে রক্ষা করলাম।
(২৬:১৭১) এক বৃদ্ধা ব্যতীত, সে ছিল ধ্বংস প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।
(২৬:১৭২) এরপর অন্যদেরকে নিপাত করলাম।
(২৬:১৭৩) তাদের উপর এক বিশেষ বৃষ্টি বর্ষণ করলাম। ভীতি-প্রদর্শিতদের জন্যে এই বৃষ্টি ছিল কত নিকৃষ্ট।
(২৬:১৭৪) নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন রয়েছে; কিন্তু তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী নয়।

সূরা নমল ( মক্কায় অবতীর্ণ )
(২৭:৫৪) স্মরণ কর লূতের কথা, তিনি তাঁর কওমকে বলেছিলেন, তোমরা কেন অশ্লীল কাজ করছ? অথচ এর পরিণতির কথা তোমরা অবগত আছ!
(২৭:৫৫) তোমরা কি কামতৃপ্তির জন্য নারীদেরকে ছেড়ে পুরুষে উপগত হও? তোমরা তো এক বর্বর সম্প্রদায়।
(২৭:৫৬) উত্তরে তাঁর কওম শুধু এ কথাটিই বললো, লূত পরিবারকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। এরা তো এমন লোক যারা শুধু পাকপবিত্র থাকতে চায়।
(২৭:৫৭) অতঃপর তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে উদ্ধার করলাম তাঁর স্ত্রী ছাড়া। কেননা, তার জন্যে ধ্বংসপ্রাপ্তদের ভাগ্যই নির্ধারিত করেছিলাম।
(২৭:৫৮) আর তাদের উপর বর্ষণ করেছিলাম মুষলধারে বৃষ্টি। সেই সতর্ককৃতদের উপর কতই না মারাত্নক ছিল সে বৃষ্টি।

সূরা আল আনকাবুত ( মক্কায় অবতীর্ণ )
(২৯:২৮) আর প্রেরণ করেছি লূতকে। যখন সে তার সম্প্রদায়কে বলল, তোমরা এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে পৃথিবীর কেউ করেনি।
(২৯:২৯) তোমরা কি পুরুষদের কাছে গমন করে থাক, রাজপথগুলো বিচ্ছিন্ন করে থাক এবং তোমাদের জনসভাগুলোতে জঘন্য কাজ করে থাক? জওয়াবে তাঁর সম্প্রদায় কেবল একথা বলল, আমাদের উপর আল্লাহর আযাব আন যদি তুমি সত্যবাদী হও।
(২৯:৩০) সে বলল, হে আমার পালনকর্তা, (الْمُفْسِدِينَ) দুস্কৃতকারীদের/বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য কর।
(২৯:৩১) যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ সুসংবাদ নিয়ে ইব্রাহীমের কাছে আগমন করল, তখন তারা বলল, আমরা এই জনপদের অধিবাসীদেরকে ধ্বংস করব। নিশ্চয় এর অধিবাসীরা জালেম
(২৯:৩২) সে বলল, এই জনপদে তো লূতও রয়েছে। তারা বলল, সেখানে কে আছে, তা আমরা ভাল জানি। আমরা অবশ্যই তাকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে রক্ষা করব তাঁর স্ত্রী ব্যতীত; সে ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত থাকবে।
(২৯:৩৩) যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ লূতের কাছে আগমন করল, তখন তাদের কারণে সে বিষন্ন হয়ে পড়ল এবং তার মন সংকীর্ণ হয়ে গেল। তারা বলল, ভয় করবেন না এবং দুঃখ করবেন না। আমরা আপনাকে ও আপনার পরিবারবর্গকে রক্ষা করবই আপনার স্ত্রী ব্যতীত, সে ধ্বংস প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত থাকবে।
(২৯:৩৪) আমরা এই জনপদের অধিবাসীদের উপর আকাশ থেকে আযাব নাজিল করব তাদের পাপাচারের কারণে।
(২৯:৩৫) আমি বুদ্ধিমান লোকদের জন্যে এতে একটি স্পষ্ট নিদর্শন রেখে দিয়েছি

'সমকামিতা' যে মারাত্মক ধরনের সীমালঙ্ঘন এবং অশ্লীল কাজ তা আল-কোরআনের (০৭:৮০, ৮১) এবং (২৬:১৬৬) নং আয়াতে স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে। সেই সাথে এই ধরনের কুকর্মের সাথে জড়িতদের (২৯:৩০) নং আয়াতে ফাসাদ সৃষ্টিকারী অর্থাৎ দুস্কৃতকারী/বিপর্যয় সৃষ্টিকারী এবং (২৯:৩১) নং আয়াতে জালিম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই 'সমকামিতাকে' ব্যাভিচারের সাথে সম্পৃক্ত না করে সন্ত্রাস বা বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কারন গুলোর সাথে বিবেচনা করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। আর যে জাতি সমকামীতাকে প্রশ্রয় দেবে তাদের ধ্বংসের জন্য স্বয়ং স্রষ্টাই যথেষ্ট।

এবার (০৫:৩৩)নং আয়াতের দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক-

আল-কোরআন- ৫নং সূরা মায়েদা- আয়াত, ৩৩
(০৫:৩৩) যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং ভূপৃষ্ঠে সন্ত্রাস বা বিপর্যয় সৃষ্টির অপচেষ্টা করে, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি।

(فَسَادً) = ধ্বংস, ক্ষতি -"কোরআনের অবিধান" - "মুনির উদ্দীন আহমদ"
(فَسَادً) = ধ্বংস করে দেওয়া, নষ্ট করা, বলপূর্বক কারো সম্পদ কেড়ে নেওয়া - "আল-কাওসার" - "আধুনিক আরবী-বাংলা অভিধান"- "মদীনা পাবলিকেশান্স"

(২৯:৩০, ৩১) নং আয়াতের বক্তব্যর রেশ টেনে এখানেও (فَسَادً) 'ফাসাদ' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে এবং তাদের শাস্তির বিধান পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। আল্লাহর বিধানের বিরোধিতাকারী ও সকল প্রকার বিপর্যয় সৃষ্টিকারী অপরাধীদের যে পাত্র, ক্ষেত্র ও অবস্থা ভেদে ভিন্ন ভিন্ন শাস্তি দেয়া যেতে পারে, এখানে সেই সম্পর্কে স্পষ্ট ইংগিত দেয়া হয়েছে।

শিশু/ বালকটির কোমল মনে ধর্মগুরুর বেশে পাশবিক প্রশ্ন বোধক চিহ্ন এঁকে দেয়ার অপরাধে চরম শাস্তিই ঐ ভন্ডের একমাত্র প্রাপ্য। এর বাহিরে অন্য কিছু ভাবাও পাপ। এ ধরনের আরো কত শত শত কোমল অন্তরে আঁধারের বীজ রোপিত হয়েছে ও হচ্ছে তা মহান স্রষ্টাই ভাল জানেন। সবই আল্লাহতায়ালার পরীক্ষা মাত্র। এ সমাজের আলোকপ্রাপ্ত আলেম সাহেবদের কাছে অনুরোধ- সত্যকে চেপে না রেখে বরং তা যতই কঠিন ও অপ্রিয় হোকনা কেন, সঠিক সময়ে প্রকাশ করা এবং পাপীর উপযুক্ত শাস্তি বিধানের জন্য সোচ্চার হওয়াই তো প্রকৃত ইমানদারের কাজ। কিন্তু আপনারা যদি নিশ্চুপ থাকেন তাহলে আল্লাহতায়ালার গজব যে অবশ্যম্ভাবী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এ আযাব থেকে আপনি, আমি কেউই নিস্তার পাব না।

আল কোরআনের বিধানে সমকামী সমাজ গঠনের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। লোকচক্ষুর অন্তরালে যদি কদাচিত দু-একটি উদাহরণ পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই তাদের উভয়কেই শাস্তি ভোগ করতে হবে। তবে আজকের বিষয়টি ব্যতিক্রমধর্মী। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগী ছাত্রটি কোনরূপ সাজা নয়, বরং প্রতিবাদ ও সত্য প্রকাশ করার জন্য সে শুধু বাহবা ও পুরষ্কার পাবারই যোগ্য। এখানে সমকামী ব্যক্তিটি ধর্মের বিধি নিষেধ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অয়াকিবহালই শুধু নয়, অন্যকে জানানোর দায়িত্ব প্রাপ্তদের একজনও বটে। তাছাড়া সে পবিত্র কোরআনের হাফেজি শিক্ষার একজন অতি সম্মানিত ছাত্রকে জোর করে তার সমকামী আচরনের দ্বরা যৌন নিপীড়ন/ ধর্ষণ করেছে। সুতরাং সে যে কতটা ভয়ঙ্কর ও অমানবিক অপরাধের সাথে জড়িত তা সহজেই অনুমেয়। পৃথিবীতে তাকে তো শাস্তি পেতেই হবে। তার স্বীকারোক্তি সাপেক্ষে এই শাস্তি হলো মৃত্যুদন্ড। আর রজমের মাধ্যমেই জনসমক্ষে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে হবে।

তবে অন্য সমকামীদের ক্ষেত্রে বিচারক তার সিদ্ধান্ত অনুসারে ফাঁসি বা বুলেট বিদ্ধ করে হত্যা বা শূলীতে চড়ানো বা বিপরীত দিক থেকে হাত-পা কর্তন অথবা দেশ থেকে বিতাড়নের সাজাও দিতে পারেন। এক্ষেত্রে সমকামীরা বিবাহিত না অবিবাহিত তা দেখার কোন প্রয়োজন নেই। তবে তাদের বয়স, ধর্মের বিধান সম্পর্কে কতটুকু বিজ্ঞ বা অজ্ঞ সেই অনুসারে ইসলামী আইন সম্পর্কে বিজ্ঞ বিচারক তাদের শাস্তির মাত্রা নির্ধারণ করতে পারেন।

ইসলামে সর্ব প্রথমে মহান স্রষ্টা আল্লাহতায়ালার উপর ইমান আনার সাথে সাথে সকল প্রকার অসৎ, অশ্লীল ও মন্দ কর্ম পরিহার ও সৎ পথে চলার শিক্ষা ও দীক্ষা দেয়া হয়। তাই ইসলামী সমাজের সাথে সম্পৃক্ত কোন ব্যক্তি যদি এরপরও এ ধরনের পাশবিক কর্মে জড়িয়ে পরে, তাহলে তাকে শাস্তি দেয়া ছাড়া অন্য কোন অপশন নেই। ক্ষেত্র ও পাত্রের অবস্থা ভেদে শাস্তিরও তারতম্য হতে পারে বলেই তো সর্বজ্ঞ মহান আল্লাহতায়ালা ভিন্ন অপশনগুলো আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। 'সমকামিতা' ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। তাই পার্থিব শাস্তিই সব নয়। পরকালেও তাদের জন্যে রয়েছে কঠিন আযাব। প্রতিটি মাজহাবেই সমকামীদের জন্য শাস্তির বিধান দেয়া হয়েছে। রাসূলের (সাঃ) হাদিছ অনুসারে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় মানব প্রকৃতি বিরোধী কর্মের দ্বারা অস্বাভিক পরিবেশ সৃষ্টির অপরাধে প্রাপ্ত বয়স্ক বিধান সম্পর্কে জ্ঞাত ও স্বেচ্ছা প্রনীত সকল সমকামীদের হত্যার নির্দেশই দেয়া হয়েছে।

ভিখারুন্নেছার ভুক্তভোগী ছাত্রী ও মাদ্রাসার ছাত্র এবং তাদের পরিবারের সত্যপ্রিয় মনোভাব ও সাহসিকতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের ছোট করতে চাইনা। বর্তমানে তাদের প্রকৃত মানসিক অবস্থা তারা এবং আল্লাহতায়ালা ছাড়া কেউই বুঝার ক্ষমতা রাখে না। মহান স্রষ্টা যেন তাদের মনের সব যন্ত্রণা দূর করে দেন। অন্যায়ের সাথে আপোষ না করে সত্য প্রকাশ করার অছিলায় মনের সব অন্ধকার দূর করে দেন এবং ইহকালে সরল পথে চলার ও পরকালে পরম শান্তি প্রাপ্তির জন্য মনোনীত করেন- সেই দোয়াই করি।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য (বিশেষ করে ৮ ও ১০ নং) এবং তার জবাবগুলো দেখে নেবেন-
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৯
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×