ভুল-ত্রুটি নিয়েই তো মানুষ। ভুল হবার পর তা স্বীকার করলে ও ক্ষমা চাইলে তবেই তো ক্ষমা পাবার প্রশ্ন আসে। আর এই ক্ষমাপ্রাপ্তরা মহান আল্লাহতায়ালার বিধান মতে ন্যায় ও সত্যের পথে থেকে জীবন উৎসর্গ করলে শহীদের দরজা পাবার যোগ্যতা লাভ করে থাকেন। এমনকি একজন ইমানদার শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মনেপ্রাণে যুদ্ধে যাবার ইচ্ছা নিয়ে পথের মাঝে বা রোগাক্রান্ত অবস্থায় বিছানায় শুয়ে মৃত্যুবরণ করলেও শহীদের দরজা পাবার জন্য বিবেচিত হতে পারেন। আবার লোক দেখানোর জন্য যুদ্ধের ময়দানে বীরদর্পে যুদ্ধ করে মরণ হলেও শহীদ হওয়া যায়না।
মানবতার বিরুদ্ধে চরম অন্যায় হতে দেখেও নানা অজুহাতে নিশ্চুপ থাকাটা কি একজন সাচ্চা মুসলিমের জন্য শোভা পায়? বিশেষ করে একজন নেতা, যার দিকনির্দেশনার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে, আপন জন্মভূমি ও জনগণের বিপদে তাদের পাশে না থেকে কোন মানবদরদি নেতার পক্ষে হাত গুটিয়ে মুখে রুমাল দিয়ে চুপচাপ বসে থাকাটা কি ঠিক? অন্যায়ের সাথে আতাত থাক বা না থাক, এতবড় জুলুমকে মুখবুজে প্রশ্রয় দিয়ার পরও কি বিছানায় শুয়ে শুয়ে শহীদের স্বপ্নে বিভোর থাকাটা পাগলামি নয়? ব্যক্তিগত জীবনে একজন সাধারন মুসলিম যতই শরীয়তী পথের অনুসারী হিসেবে পরিচিত হোক না কেন। মনের খবর মহান স্রষ্টাই ভাল জানেন। বিশেষ করে একজন নেতা যদি মারাত্মক ভুল করে বসেন, তাহলে যতদ্রুত সম্ভব প্রকাশ্যে তা স্বীকার করার মত সৎসাহস থাকা চাই। তা না হলে জনসাধারনের কাছে ক্রমান্বয়ে তার গ্রহণযোগ্যতা কমবে বৈ বাড়বে না।
আল-কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন-
সূরা আল বাক্বারাহ (মদীনায় অবতীর্ণ)
(০২:১২৪) অর্থ- যখন ইব্রাহীমকে তাঁর পালনকর্তা কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা করলেন, অতঃপর তিনি তা পূর্ণ করে দিলেন, তখন পালনকর্তা বললেন, আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা করব। তিনি বললেন, আমার বংশধর থেকেও! তিনি বললেন, আমার অঙ্গীকার অত্যাচারী/ উৎপীড়ক/ সীমালঙ্ঘনকাররি/ পাপিষ্ঠদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
সূরা হুদ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(১১:১১৩) অর্থ- আর অত্যাচারী/ উৎপীড়ক/ সীমালঙ্ঘনকাররি/ পাপিষ্ঠদের প্রতি ঝুঁকেও পড় না- পড়লে অগ্নি তোমাদেরকেও স্পর্শ করবে। আর আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন সাহায্যকারী নাই। অতএব কোথাও সাহায্য পাবে না।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলার নিরীহ নারী, পুরুষ ও শিশুদের উপর মুসলমান সৈন্যদের এবং তাদের সহযোগীদের দ্বারাই যে অত্যাচার ও হত্যাকান্ড চালানো হয়েছিল তা তো সত্য এবং অনেক প্রমান আছে। আর এই অত্যাচারে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিল সেই শাসকেরা মুসলিমই ছিল। কিন্তু মুসলিম হওয়া সত্বেও তারা মহান স্রষ্টার সাহায্যের অঙ্গীকার থেকে বঞ্চিত হলো। (০২:১২৪) কারন আল্লাহতায়ালা নিজেই তো ঘোষণা করেছেন যে, তাঁর অঙ্গীকার অত্যাচারীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। এমন কি সেই অত্যাচারি গোষ্ঠি যদি মহান আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত মানবজাতির নেতা ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশধর অর্থাৎ মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত হয়, তথাপি তারাও এ অঙ্গীকার থেকে বঞ্চিত হবে।
তখন ইসলামের নামধারী দলগুলো, বিশেষ কোরে রাজনৈতিক অঙ্গনে যারা স্বক্রিয় ছিলেন- 'মিঃ গোলাম আযম' তাদের নেতা ছিলেন। মতাদর্শের ভিন্নতার কারনে হয়ত রাজনৈতিক ময়দানে তারা সরব ছিলেন এবং অনেক প্রমান আছে। কিন্তু প্রকৃত ইসলামের অনুসারী হলে তো পরবর্তীতে সংঘটিত এই অন্যায় ও অত্যাচার মুখ বুজে মেনে নেয়ার কথা না। কিসের স্বার্থে কোন প্রতিবাদ পর্যন্ত করলো না? বরং প্রতিবাদের ময়দানে সরব না হয়ে বরং নীরবে সম্মতি জানালো!! অন্যায়কে অন্যায় বলার মত সিদ্ধান্ত নিতেও তারা গড়িমসি করল! আওয়ামীলিগের সাথে রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা থাকাতে পারে। কিন্তু সেই ক্রান্তিকালে পৃথক প্লাটফর্মে থেকেও তো অন্যায়ের প্রতিবাদ করা ও ন্যায়ের পথ অবলম্বন করা যেত। তখন পাকিস্থানের রাজনীতিকরা কি আল-কোরআন ও সুন্নাহর আইনকে রাষ্ট্র পরিচালনায় ১০০% বাস্তবায়ন করার পক্ষপাতি ছিল? না, তারা শুধু রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য মুসলমানদের সেন্টিমেন্টকে ব্যবহার করেছে এবং এখনও করছে। মহান আল্লাহতায়ালার নিরীহ বান্দাদের উপর চোখের সামনে এত বড় একটা অন্যায় ও অনাচার হতে দেখেও আল্লাহর দলের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে ঘোষণাকৃত দল জামাতের নেতারা এর প্রতিবাদ পর্যন্ত করেনি। বরং তাদের কথা ও কর্মের দ্বারা অত্যাচারি শাসকচক্রের প্রতি ঝুঁকে পড়ার আভাসই মেলে। (১১:১১৩) হয়ত এ কারনেই আল্লাহতায়ালা তাঁর সাহায্যের হাত সরিয়ে নিয়েছেন। তাদেরকে এখনও খেসারত দিতে হচ্ছে এবং আরও কতদিন দিতে হবে তা আল্লাহতায়ালাই ভাল জানেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের এ ভুল স্বীকার কোরে মহান আল্লাহতায়ালা ও জনগনের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত। এই বৃদ্ধ বয়সে এসেও যেন তার মত একজন জ্ঞানী মুসলিমের ক্ষমা চাওয়া ও পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়, সেই কামনাই করি।
.............................................
অসহনশীলদের আমি ভীষণ অপছন্দ করি-
("দুষ্ট গরুর চেয়ে শুন্য গোয়াল ভাল"- তাই আমার ব্লগ থেকে দুষ্ট গরুদের ঝেটিয়ে বিদায় করতে আমি বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ করি না।)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১২